পান্তা ভাত – কি আছে এতে ? পান্তা ভাত খেলে কি মোটা হয় ? Is fermented rice unhealthy ? 1 Funny story

পান্তা ভাত
পান্তা ভাত মিশে আছে জিনে  

ভোরের আলো ফোটার আগেই গোয়াল থেকে গরু গুলো ছেড়ে দেয়া হত। প্রস্তত করা হত লাঙল জোয়াল। এরপর কৃষক খেয়ে নিতেন পান্তা ভাত। তারপর ক্ষেতে লাঙল চলত সূর্য গরম হওয়া পর্যন্ত। এটাই ছিল আমাদের পূর্ব পুরুষদের  দৈনন্দিন রুটিন ওয়ার্ক।        

আমাদের জিনের পরিচিত খাবার। আমাদের পাকস্থলির পরিচিত খাবার। এটা আমাদের উপকারী খাবার। 
এই ভিজিয়ে রাখা ভাত নিয়ে প্রথম বৈজ্ঞানিক গবেষণা টি করেন। ডঃ মধুমিতা বরুয়া। আসাম ইউনিভার্সিটির অধ্যাপিকা। এরপর আরও বেশ কিছু গবেষণা হয়।

পড়ুন – এই ভিজিয়ে রাখা ভাত নিয়ে বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল। 

পান্তা ভাত

পান্তা ভাতের উপকারিতা

কি আছে এতে ? 

পর্যাপ্ত মিনারেল – আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, জিঙ্ক।
ভিটামিন – বি৬, বি১২, কে।

১০০ গ্রাম লাল চালের ভাতে আয়রন থাকে ৩.৫ মিলিগ্রাম। সেখানে পান্তা ভাতে পাওয়া যায় ৭৩.৯ মিলিগ্রাম। অর্থাৎ ২১ গুন বেশি।
১০০ গ্রাম লাল চালের ভাতে ক্যালসিয়াম থাকে ২১ মিলিগ্রাম। সেখানে পান্তা ভাতে পাওয়া যায় ৮৫০ মিলিগ্রাম। অর্থাৎ ৪০ গুন বেশি।

এছাড়াও পটাসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক এর পরিমান  অনেক বেড়ে যায়।
এতে রয়েছে উপকারী ব্যাকটেরিয়া অর্থাৎ প্রবায়োটিক। শরীরকে ইনফ্লামেশন থেকে রক্ষা করে। আমরা জানি “ইনফ্লামেশন” হার্ট এটাক, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ এবং আরও অনেক রোগের কারন।
এতে আরও আছে গ্লুকোসাইড নামের ফ্লাভনয়েডস যা দেহ কে ক্যান্সার থেকে রক্ষা করে। 

পান্তা ভাত

জেনে নিন – সরিষার তেল কতটা সাস্থ্য উপযোগী। 

যেভাবে তৈরি করবেন। 

লাল চালের ভাত রান্না করুন। ঠাণ্ডা করুন। এরপর এতে পানি ঢেলে দিন। ৯-১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। ১২ ঘণ্টার বেশি ভেজালে গুনাগুন কমে যাবে। 

খাওয়ার সময় যোগ করতে পারেন। মাছ, ডিম, মাংস, সবজি, কোনও ভর্তা, কাচামরিচ, শুকনো মরিচ, পেঁয়াজ, পিঙ্ক সল্ট ইত্যাদি। যেটা আপনার ভালো লাগে সেটাই মিশিয়ে নিতে পারেন।

 জেনে নিন – দ্রুত সহজে ওজন কমানোর প্রথম ধাপ।  

পান্তা ভাতের ক্ষতিকর দিক। 

পান্তা ভাত খেলে ঘুম আসে, কিন্ত কেন ? ১২ ঘণ্টার বেশি সময় ভাত ভিজিয়ে রাখলে ইথাইল এলকোহল তৈরি হয়। যা পানিতে মিশে যায়। ভাতের সঙ্গে এই ইথাইল অ্যালকোহল মিশ্রিত পানি খেলে ঘুম পায়। তাই সঠিক নিয়মে তৈরি করুন। পান্তা ভাত খেলে কি মোটা হয় ? না, এখানে শর্করাটা  ভেঙে যায়। এটা খেলে ইনসুলিন কম নিঃসৃত হয়। তাই ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে না। 

আমাদের গ্রাম বাংলায় হাজারও গল্প প্রচলিত আছে, তার মধ্যে পানিতে ভেজানো ভাত নিয়ে গল্পটি আপনাদের বলি। গ্রামীণ কোন একটি পরিবারের স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে অমিল। স্ত্রী স্বামীকে সুনজরে দেখত না বিধায় তার সাথে প্রতারণামূলক কাজকর্ম করতো। স্বামীকে ঠকানোর ধারাবাহিকতায় অন্যান্য কার্যক্রমসহ খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে স্বামীকে বেশ পীড়া দিত। এব্যাপারে স্ত্রী যা করত, নিজে গরম খাবার খেয়ে স্বামীকে পান্তা ভাতসহ বাসী খাবার খাওয়াতো। এই ভাবে চলতে থাকলেও একদিন স্বামীর নিকট ধরা পড়ে যায়। তখন এ ঘটনাকে অনিচ্ছাকৃত প্রমান করতে স্বামীকে শুনিয়ে স্ত্রী ছড়াটি বলে:  “পান্তা ভাতের জল, যেন তিন মরদের বল; আমি অভাগী গরম খাই, কখন যেন মরে যাই।”

পান্তা ভাত

বৈশাখে পান্তা ভাত 

রমনা বটমূলে পহেলা বৈশাখের আয়োজন হয় প্রতি বছর। এতে পান্তার আয়োজন শুরু হয় ১৯৮৩ সালে, কয়েক জন যুবক আইডিয়াটি প্রকাশ করেন। তখন উঠতি বয়সের ছেলেরা আড্ডা দিতে দিতে পান্তা-পেঁয়াজ-কাঁচা মরিচের কথা তোলেন। আর তাদের মধ্যে একজন বটমূলে পান্তা-ইলিশ চালুর প্রস্তাব দেন। তখন তাদের মধ্যে এ প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। এ সূত্র ধরে তাদের নিজেদের ভেতর থেকে পাঁচ টাকা করে চাঁদা তোলা হয়।

অতপর রাতে ভাত রেঁধে পান্তা তৈরিপূর্বক কাঁচা মরিচ, শুকনো মরিচ, পেঁয়াজ এবং ইলিশ মাছ ভাজাসহ ভোরে ঠিকই কথা মতো তারা প্রথমে বটমূল এবং পরে রমনা রেস্টুরেন্টের সামনে হাজির হন। তাদের সাথে মাটির সানকিও ছিল। মুহূর্তের মধ্যে শেষ হয়ে যায় পান্তা-ইলিশ। সেই থেকে বর্ষবরণের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক পান্তা-ইলিশের পদচারণা শুরু হয়। আর এখন তো ফরমাল রেওয়াজ হয়ে পান্তা ইলিশ পহেলা বৈশাখের পার্ট এন্ড পার্সেল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পান্তা ভাত

আর এখন পান্তা ইলিশ এমনই আর্কষণীয় আইটেম হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, কেবল রাজধানী নয়। সারা বাংলাদেশের বড় বড় মেলায় স্থাপিত স্টলে পান্তা ইলিশ ব্যাপক ভাবে বিক্রি হয়ে থাকে। ১লা বৈশাখে পান্তা ইলিশ বিক্রির বিষয়টি রীতিমত আবেগ। কেননা এটি দিনে দিনে বেড়ে চলেছে। আর এর জনপ্রিয়তা দেখে মনে হয় আগামীতে হয়ত উৎসব অর্থনীতির বড় একটা প্যারামিটার হয়ে দাঁড়াবে। তাছাড়া অনেক সংস্কৃতিমনা পরিবারেও পান্তা ইলিশের আয়োজন করা হয়ে থাকে।

সেলিম হোসেন – তাং ০১/০৬/২০২৪ ইং – ছবি গুলো প্রতীকী 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *