থাইরয়েড থেকে মুক্তি: লাইফস্টাইল পরিবর্তন ও রাসায়নিক বর্জন
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা (Thyroid Disorder) মহামারি আকার ধারণ করেছে। ঘরে ঘরে চলছে থাইরয়েডের চিকিৎসা, ওষুধ সেবন এবং ডাক্তারের কাছে ছোটাছুটি। কিন্তু সামান্য কিছু সচেতনতা এবং জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনেই এই সমস্যা থেকে স্থায়ী মুক্তি মিলতে পারে। থাইরয়েড একটি এন্ডোক্রাইন গ্রন্থি, যা শরীরের গুরুত্বপূর্ণ হরমোন উৎপাদন করে। এই হরমোনের তারতম্য দেখা দিলে আমাদের শরীরে মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয়।
থাইরয়েড সমস্যার মূল লক্ষণগুলি
থাইরয়েড সমস্যা মূলত দুই ধরনের হতে পারে—হাইপারথাইরয়েডিজম (অতিরিক্ত হরমোন উৎপাদন) এবং হাইপোথাইরয়েডিজম (কম হরমোন উৎপাদন)।
| সমস্যা | সাধারণ লক্ষণসমূহ |
|---|---|
| হাইপারথাইরয়েডিজম | অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন (অ্যারিথমিয়া), উদ্বেগ বা নার্ভাসনেস, চোখ ফুলে যাওয়া, ওজন হ্রাস। |
| হাইপোথাইরয়েডিজম | চরম ক্লান্তি, অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি, বিষণ্ণতা, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, চুল পড়া। |
পড়ুন – ভাইরাল হওয়ার নেশায় কি সর্বনাশ।

হাইপোথাইরয়েডিজমের প্রধান কারণ: রাসায়নিক কসমেটিকস?
চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, থাইরয়েড সমস্যার একটি প্রধান কারণ হতে পারে শরীরে ক্ষতিকর রাসায়নিকের প্রবেশ। বর্তমানে কেমিক্যাল-নির্ভর কসমেটিকস, যেমন সিরাম, ক্রিম, লোশন, এবং বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহারের প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
জরিপ অনুযায়ী, প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন নারী থাইরয়েডের সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এই সমস্যার জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানযুক্ত প্রসাধনীগুলি প্রধানত দায়ী হতে পারে। ত্বক বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব কেমিক্যাল ত্বকের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে এন্ডোক্রাইন সিস্টেমকে (যা হরমোন উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে) ব্যাহত করে।
বিক্রেতারা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে আকর্ষণীয় অফার ও ভুয়া প্রচারণার মাধ্যমে এই প্রসাধনীগুলো বিক্রিতে উৎসাহিত করেন, যার ফলে আমাদের ত্বক ও স্বাস্থ্যের উপর গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

সুস্থ থাকার গোপন রহস্য: প্রাকৃতিক জীবনধারা
থাইরয়েড বা ত্বকের সমস্যা থেকে দূরে থাকতে হলে আমাদের জীবনধারাকে যতটা সম্ভব প্রকৃতির কাছাকাছি নিয়ে যেতে হবে।
যেসব মানুষের ত্বক সুস্থ, ব্রন বা মেছতার সমস্যা নেই এবং যারা থাইরয়েড মুক্ত—তাদের জীবনযাত্রার দিকে তাকালে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে: শারীরিক পরিশ্রম ও প্রকৃতির সান্নিধ্য।
উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের বেদে সম্প্রদায়ের নারীরা যারা সারাদিন চলাফেরা করেন এবং খোলা হাওয়ায় পরিশ্রম করেন—তারা দীর্ঘকাল ধরে শারীরিক গঠনে ও ত্বকের গ্ল্যামারে উজ্জ্বল থাকেন। এর প্রধান কারণ:
- পর্যাপ্ত শারীরিক ব্যায়াম: দিনের বেশিরভাগ সময় হাঁটাচলা ও পরিশ্রমের কারণে তাদের প্রাকৃতিকভাবে শরীরচর্চা হয়ে যায়।
- ভিটামিন ডি: দিনের আলোয় থাকার কারণে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে সূর্যের আলো লাগে, ফলে ভিটামিন ডি তৈরি হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- রাসায়নিক বর্জন: যেহেতু তাদের প্রসাধনী ব্যবহারের সক্ষমতা কম, তাই ক্ষতিকর রাসায়নিক তাদের শরীরে প্রবেশ করে না।
জিনে নিন – অসুস্থ শরীরে কতবার খাবেন।

বলিউড অভিনেত্রী দিশা পাটানির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রহস্য
বলিউড অভিনেত্রী দিশা পাটানি তার ফিট শরীর ও মেকআপবিহীন উজ্জ্বল ত্বকের জন্য সুপরিচিত। তিনিও রাসায়নিকমুক্ত প্রসাধনী ব্যবহারের পক্ষে।
একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, সুস্থ ত্বকের জন্য তিনি শৈশবে কখনও ফেসওয়াশ ব্যবহার করেননি। তাঁর মায়ের শেখানো ঘরোয়া পদ্ধতি অনুযায়ী, তিনি দই ও বেসন ব্যবহার করে মুখ পরিষ্কার করতেন। এই রাসায়নিক-মুক্ত জিনিস ব্যবহারের কারণেই তার ত্বক উজ্জ্বল দেখায়।
তাঁর মতে, ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখতে ঘুমানোর আগে মুখ ধুয়ে ন্যাচারাল ময়েশ্চারাইজার লাগানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি খুব বেশি প্রসাধনী ব্যবহার না করে বরং ভালো ঘুমানোর উপর জোর দেন, যা ত্বককে ভেতর থেকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
হেলদি লাইফ স্টাইল ন্যাচারালি থাইরয়েড থেকে মুক্তি দিবে। আজীবন সুস্থ থাকবেন।
থাইরয়েড নিয়ে রিসার্চ পেপার দেখুন

থাইরয়েড থেকে মুক্তির উপায়: স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল
থাইরয়েড সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কোনো ওষুধের প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন কেবল একটি স্বাস্থ্যকর ও সচেতন জীবনধারা।
- রাসায়নিক বর্জন: সব ধরনের কেমিক্যাল-নির্ভর কসমেটিকস ব্যবহার বন্ধ করুন। এর পরিবর্তে, ঘরে তৈরি বা প্রাকৃতিক উপাদান-ভিত্তিক প্রসাধনী ব্যবহার করুন।
- স্বাস্থ্যকর খাবার: আপনার সৌন্দর্য আপনার খাদ্যাভ্যাসে নিহিত। স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন।
- পর্যাপ্ত ঘুম: রাত ১০টার মধ্যে ঘুমাতে যান। সঠিক ঘুম শরীরের হরমোন ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিন পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করুন।
- স্ট্রেস দূর করুন: মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা কমিয়ে ফেলুন।
এই সহজ এবং প্রাকৃতিক লাইফস্টাইল অনুসরণ করলে আপনি থাইরয়েড সমস্যা এবং অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি রোগ থেকে সহজেই মুক্ত থাকতে পারবেন।
থাইরয়েডে আক্রান্ত আত্মীয় বা বন্ধুকে পোস্টটি শেয়ার করে দিন। সেলিম হোসেন – ২০/০২/২০২৪ ইং – ছবি গুলো প্রতীকী
Reference : Dr Eric berg, Dr Mujibul Haque, Dr Jahangir Kabir, Dr Mujibur Rahman, Dr Mandell, Dr Jason Faung, Dr Sten Ekberg and many medical health journals.

