তাকদির কি তাকদির নিয়ে ২ টি ঘটনা
বর্ষা কালে আকাশ বিভিন্ন রুপ ধারন করে। আজ ভাদ্রের ৯ তারিখ। শরৎকাল। তবুও আকাশে বর্ষাকালের রুপ । কখনো কালো মেঘে ছেয়ে যাচ্ছে পুরো আকাশ। ঝমঝম করে বৃষ্টি নামে। আবার কখনো গুড়ি গুড়ি। গোসলে শাওয়ারের পানি গরম ! আমরা বুঝতে পারি, ঝক ঝকে রোদ আকাশে। আরও আছে সাদা মেঘের পাহাড়।
বিকেলে কখনো কখনো শান্ত সাদা কালো মেঘ দেখা যায়। ঐ সাদা কালো মেঘের উপর দিয়ে ধীর গতিতে উড়ে যায় পাতলা মেঘ। মেয়েদের জর্জেট ওড়নার মত হাল্কা ছাই রঙা। দারুন দৃশ্য ! আবার কখনো ঘন কালো মেঘ দ্রুতলয়ে উড়ে যায়। যেভাবে বাসায় ফেরার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে অফিস ফেরত কর্মীরা। বাস আসলে, সবাই একসাথে বাসে ওঠার প্রতিযোগিতায় দৌড়ায়।
বিষণ্ণ মন ! আকাশের দিকে তাকান, এক অদ্ভুত ভালো লাগা অনুভব করবেন। প্রতিদিনই জীবনে নতুন চাপ আসে। আসতেই থাকে। কেউবা প্রতিনিয়ত কর্মের চাপে থাকেন। চাকরিটা টা কি থাকবে ? যদি না থাকে তাহলে কি হবে ? কেউবা ব্যবসার দুশ্চিন্তায়। রিজিক নির্ধারিত। চিন্তার কিছু নেই। খোলা আকাশ দেখুন দুচোখ ভরে। মন হাল্কা হয়ে যাবে।

তাকদির কি তা নিয়ে ঘটনা ১
১৩৭৬ হিজরি সাল। জুবাইল শহরের একদল জেলে মাছ ধরতে গেলেন সমুদ্রে। তিন দিন তিন রাত সাগর চষে বেড়ালেন। কোন মাছ পেলেন না। অথচ তাদের কাছাকাছি আরেক নৌকার জেলেরা প্রচুর মাছ ধরছিল।
এ অবস্থায় একজন জেলে বলল, আমরা নিয়মিত নামাজ পড়ি সঠিক সময়ে। কিন্ত ওই নৌকার জেলেরা নামাজ পড়েনা। ওদের জালে আল্লাহ এত মাছ দিচ্ছেন এদিকে আমরা কিছুই পাচ্ছি না।
শয়তান কুমন্ত্রনা দিল। জেলেরা নামাজ ছেড়ে ডিল। ফজর, জোহর, আছর কোন নামাজই পড়ল না। সন্ধ্যার আগে জালে একটি মাছ উঠল। মাছ টি কাটতেই, পেট থেকে বেড়িয়ে এল বড় একটি মুক্তা। সবাই নেড়ে চেড়ে দেখল। খুবই মুল্যবান।

দলের মুরুব্বি মুক্তাটি সাগরে ছুঁড়ে ফেলল। বলল ‘ আমরা আল্লাহর নাফরমানি করার সময় আমাদের জালে মাছ উঠেছে। মুক্তা পেয়েছি। এটি আমাদের জন্য অকল্যানের। আমরা এখানে থাকব না। চল এখান থেকে দূরে চলে যাই।
তিন মাইল দূরে গিয়ে তারা সাগর পাড়ে তাবু টাঙাল। পানিতে আবার জাল ফেলল। এবারে একটি বিশাল আকৃতির মাছ উঠল জালে। মাছটি কাটার পরে পেট থেকে মুক্তা বের হল। কি তাজ্জব ব্যাপার ! ঠিক সেই মুক্তাটিই। সবাই অবাক হয়ে, একসাথে বলে উঠল ‘ আলহামদুলিল্লাহ’।
মুরুব্বী বললেন ‘ আমাদের তকদিরে মুক্তা ছিল। নাফরমান অবস্থায় আল্লাহ মুক্তা দিয়েছিলেন। আর অনুগত অবস্থায়ও দিলেন। আমাদের ভুল কে আল্লাহ ক্ষমা করেছেন। রিজিক নিয়ে বিষণ্ণ হওয়ার কারন নেই। যা তকদিরে আছে তা আসবেই।’
মহান আল্লাহ সুরা ফাতিরে বলেন ‘ আল্লাহ মানুষের প্রতি কোন অনুগ্রহ অবারিত করতে চাইলে কেউ বা নিবারনকারী নেই এবং তিনি কোন কিছু নিষিদ্ধ করতে চাইলে কেউ তা উন্মুক্তকারী নেই। তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।’ আয়াত নং ২০

তাকদির কি তা নিয়ে ঘটনা ২
একদিন সকাল বেলা। সূর্য দিগন্ত থেকে কিছু উপরে উঠে এসেছে। সবেমাত্র সূর্যের আলোর রক্তিম লালিমা মুছে গেছে। উজ্জ্বল আলো দিতে শুরু করেছে। হজরত আলী ( রঃ ) বাড়ি থেকে বের হলেন। কুফার মসজিদের নিকট গেলেন। চাশতের নামাজের জন্য মসজিদে ঢুকবেন।
মসজিদের বাইরে এক কিশোর কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন। তাকে বললেন ‘ তুমি আমার ঘোড়ার লাগাম টি ধরে রাখ, যেন ঘোড়াটি কোথাও চলে না যায়। আমি দু’রাকাত নামাজ পরেই চলে আসছি।’
আলী ( রঃ ) মসজিদে প্রবেশ করলেন। মনে মনে নিয়ত করলেন, বের হয়ে ছেলেটিকে কাজের পারিশ্রমিক হিসেবে এক দিরহাম দিবেন।
আলী ( রঃ ) সালাত শেষ করে মসজিদ থেকে বের হলেন। কিন্ত কিশোর কে দেখতে পেলেন না। লাগামহীন অবস্থায় ঘোড়াটি দাঁড়িয়ে আছে। আলী ( রঃ ) বুঝতে পারলেন, কি ঘটেছে। তিনি একজন লোককে বাজারের উদ্দেশ্যে পাঠালেন।

আলী ( রঃ ) ধারনা করেছিলেন, লাগাম টি ( ঘোড়ার মুখের সাথে আটকানো বেল্টের মত জিনিস ) বিক্রির জন্য ছেলেটি বাজারের দিকেই গিয়েছে। লোকটি বাজারে গিয়ে কিশোর কে দেখতে পেল। ছেলেটি লাগাম বিক্রির জন্য দর হাঁকছে। আলী ( রঃ ) প্রেরিত লোকটি এক দিরহামে লাগাম টি কিনে নিলেন।
লাগাম নিয়ে ফিরে এলেন আলী ( রঃ ) এর কাছে। বিস্তারিত বললেন আলী ( রঃ ) কে। ঘটনা শুনে আলী ( রঃ ) বললেন ‘ সুবহানআল্লাহ, আল্লাহর কসম, এই এক দিরহাম তাকে হালাল ভাবেই দিতে চেয়েছিলাম। কিন্ত প্রত্যাখ্যান করল এবং হারাম পন্থায় গ্রহন করল।
বান্দা যেখানেই যাক, যেখানেই থাকুন এবং যে অবস্থায়ই থাকুক আল্লাহর এখতিয়ারে থাকেন। সবসময়ই আল্লাহ তায়ালা তার অফুরন্ত দয়া এবং অনুগ্রহ দিয়ে তাকে ঘিরে রাখেন।
সুরা তালাকে আল্লাহ বলেন, ‘ আর মুত্তাকিকে আল্লাহ এমন উৎস থেকে রিজিক দান করেন, যা সে কল্পনাও করতে পারে না। আয়াত নং ৩

এবারে জানি তাকদির কি
আমাদের চলার স্বাধীনতা দিয়ে দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছে। এখানে আসার পর আমরা যা যা করব, তা আগেই লিখিত রয়েছে। আমাদের কর্মকাণ্ড পূর্ব থেকেই আল্লাহর কাছে লিখিতভাবে সুরক্ষিত। এটাই তাকদির বা ভাগ্য। ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ তাকদিরে বিশ্বাস রাখা। তাকদিরে বিশ্বাস আমাদের হতাশা ও দুশ্চিন্তা কমায়। আল্লাহ আমাদের ভালো মন্দ সব কিছুই জানেন। আলহামদুলিল্লাহ

যে বন্ধু হতাশাগ্রস্ত তাকে পোস্টটি শেয়ার করে দিন। সেলিম হোসেন – তাং ২৪/০৮/২০২৫ ইং – প্রতীকী ছবি গুলো পেক্সেলস থেকে নেয়া।