তাকদির কি তাকদির নিয়ে ২ টি ঘটনা যা ঈমান বাড়িয়ে দিবে What is fate? 2 facts about fate that will increase faith

তাকদির কি

তাকদির কি ? রিজিক ও ভাগ্য নিয়ে ইসলামের শিক্ষা 

জীবনের চাপ এবং দুশ্চিন্তা প্রতিনিয়ত আমাদের তাড়া করে। কখনও কর্মজীবনের অনিশ্চয়তা, কখনও বা ব্যবসার উদ্বেগ। রিজিক বা জীবিকা নিয়ে আমাদের মনে হাজারো প্রশ্ন জাগে। এই দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির জন্য ইসলামের একটি মৌলিক স্তম্ভে বিশ্বাস রাখা অত্যন্ত জরুরি—আর তা হলো তাকদির (Destiny) বা ভাগ্য।

খোলা আকাশের দিকে তাকালে যেমন মন হালকা হয়, তেমনি তাকদিরে পূর্ণ বিশ্বাস আমাদের মনকে প্রশান্তি এনে দেয়। কারণ, আমাদের কর্ম ও জীবনের সমস্ত ঘটনা পূর্ব থেকেই মহান আল্লাহর কাছে লিখিত এবং সংরক্ষিত।

তাকদির কী?

তাকদির হলো এমন বিশ্বাস যে, এই পৃথিবীতে আমাদের চলার স্বাধীনতা দিয়ে পাঠানো হলেও, আমরা যা যা করব, তা আগেই আল্লাহর ইলম (জ্ঞান) অনুযায়ী লিখিত রয়েছে। আমাদের কর্মকাণ্ড পূর্ব থেকেই আল্লাহর কাছে লিখিতভাবে সংরক্ষিত। ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো এই তাকদিরে বিশ্বাস রাখা।

এই বিশ্বাস আমাদের হতাশা ও দুশ্চিন্তা কমায়, কারণ আল্লাহ আমাদের ভালো-মন্দ সব কিছুই জানেন।

মহান আল্লাহ সূরা ফাতিরে বলেছেন: “আল্লাহ মানুষের প্রতি কোনো অনুগ্রহ অবারিত করতে চাইলে কেউ তা নিবারণকারী নেই এবং তিনি কোনো কিছু নিষিদ্ধ করতে চাইলে কেউ তা উন্মুক্তকারী নেই। তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।” (আয়াত নং ২০)

তাকদির কি তাকদির নিয়ে ২ টি ঘটনা
তাকদির কি তাকদির নিয়ে ২ টি ঘটনা

তাকদিরের প্রকারভেদ: ভাগ্য কি পরিবর্তন হয়? 

তাকদির বা ভাগ্য মূলত দুই প্রকার, এবং এই প্রকারভেদের মাধ্যমেই বোঝা যায় যে ভাগ্যের কিছু অংশ পরিবর্তন করা সম্ভব।

প্রকারভেদ বৈশিষ্ট্য উদাহরণ
১. তাকদিরে মুবরাম (অপরিবর্তনীয়) এই তাকদিরের পরিবর্তন সম্ভব নয়। এটি আল্লাহর চূড়ান্ত ফায়সালা। জন্ম ও মৃত্যু: কখন, কোথায় জন্ম ও মৃত্যু হবে তা পূর্বনির্ধারিত। লিঙ্গ পরিচয়, মৌলিক প্রাকৃতিক ঘটনা (যেমন সূর্যের উদয়)।
২. তাকদিরে মুয়াল্লাক (পরিবর্তনযোগ্য/শর্তসাপেক্ষ) এই তাকদির পরিবর্তনযোগ্য। চেষ্টা, অধ্যবসায়, দোয়া ও দানের মাধ্যমে এর পরিবর্তন ঘটতে পারে। রিজিক (পরিশ্রমের মাধ্যমে বাড়ে), সুস্বাস্থ্য (ভালো খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের মাধ্যমে লাভ করা যায়), সাফল্য (চেষ্টা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে অর্জন করা)।

অতএব, যে তাকদীর পরিশ্রম কিংবা অধ্যবসায়ের মাধ্যমে পরিবর্তন করা যায়, সেই তাকদীরের জন্য আল্লাহর কাছে চাওয়া এবং চেষ্টা করা আমাদের কর্তব্য।

তাকদির কি তাকদির নিয়ে ২ টি ঘটনা
তাকদির কি তাকদির নিয়ে ২ টি ঘটনা

তাকদির ও রিজিক নিয়ে শিক্ষণীয় দুটি ঘটনা

তাকদিরের উপর বিশ্বাস আমাদের রিজিক নিয়ে দুশ্চিন্তা দূর করতে সাহায্য করে। নিচে দুটি ঘটনা দেওয়া হলো যা এই শিক্ষাকে দৃঢ় করে:

১. তাকদির কি জানতে মুক্তার ঘটনা: রিজিক ছুটে যাবে না

১৩৭৬ হিজরি সাল, জুবাইল শহর। একদল জেলে তিন দিন তিন রাত সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়েও কোনো মাছ পেলেন না। অথচ তাদের পাশের নৌকার জেলেরা প্রচুর মাছ ধরছিল। হতাশ হয়ে একজন জেলে বললেন যে, তারা নিয়মিত নামাজ পড়া সত্ত্বেও রিজিক পাচ্ছেন না, অথচ নামাজ না পড়া অন্য জেলেদের জালে মাছ আসছে। এরপর তারা নামাজ ছেড়ে দিলেন।

সন্ধ্যার আগে তাদের জালে একটি মাছ উঠল। মাছটি কাটতেই তার পেট থেকে একটি বড় ও মূল্যবান মুক্তা বেরিয়ে এলো। দলের মুরুব্বি মুক্তাটি সাগরে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন। তিনি বললেন, “আমরা আল্লাহর নাফরমানি করার সময় এই মুক্তা পেলাম, এটা আমাদের জন্য অকল্যাণের হতে পারে। চল, আমরা এখান থেকে দূরে চলে যাই।”

তারা তিন মাইল দূরে গিয়ে আবার জাল ফেললেন। এবারে জালে বিশাল আকৃতির একটি মাছ উঠল। মাছটি কাটার পর তার পেট থেকেও ঠিক সেই মুক্তাটিই বেরিয়ে এলো! সবাই অবাক হয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে উঠল।

শিক্ষা: মুরুব্বি বললেন, ” তাকদির কি বুঝলে? আমাদের তকদিরে এই মুক্তা ছিল। নাফরমান অবস্থায় আল্লাহ মুক্তা দিয়েছিলেন, আবার অনুগত অবস্থায়ও দিলেন। রিজিক নিয়ে বিষণ্ণ হওয়ার কারণ নেই, যা তকদিরে আছে তা আসবেই।”

তাকদির কি তাকদির নিয়ে ২ টি ঘটনা
তাকদির কি তাকদির নিয়ে ২ টি ঘটনা

২. হজরত আলী (রা.) ও বালকের ঘটনা: হালাল-হারামের পথে রিজিক 

একদিন সকালে হজরত আলী (রা.) কুফার মসজিদের নিকট এলেন। তিনি চাশতের নামাজের জন্য মসজিদে প্রবেশ করার আগে এক কিশোরকে দেখে বললেন, “তুমি আমার ঘোড়ার লাগামটি ধরে রাখো, আমি দু’রাকাত নামাজ পরেই চলে আসছি।”

হজরত আলী (রা.) নামাজে দাঁড়িয়ে মনে মনে স্থির করলেন যে মসজিদ থেকে বের হয়ে ছেলেটিকে পারিশ্রমিক হিসেবে এক দিরহাম দিবেন।

নামাজ শেষ করে তিনি মসজিদ থেকে বের হলেন, কিন্তু কিশোরটিকে দেখতে পেলেন না। ঘোড়াটি লাগামহীন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। হজরত আলী (রা.) বুঝতে পারলেন, ছেলেটি লাগামটি চুরি করে বাজারে বিক্রি করতে গেছে। তিনি একজন লোককে এক দিরহাম দিয়ে বাজারের উদ্দেশ্যে পাঠালেন। লোকটি বাজারে গিয়ে দেখল, ছেলেটি লাগামটি বিক্রির জন্য দর হাঁকছে। লোকটি এক দিরহামে লাগামটি কিনে নিয়ে হজরত আলী (রা.)-এর কাছে ফিরে এলো।

ঘটনা শুনে হজরত আলী (রা.) বললেন: “সুবহানাল্লাহ, আল্লাহর কসম! এই এক দিরহাম তাকে হালাল পথেই দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সে তা প্রত্যাখ্যান করল এবং হারাম পন্থায় তা গ্রহণ করল।”

তাকদির কি তাকদির নিয়ে ২ টি ঘটনা
তাকদির কি তাকদির নিয়ে ২ টি ঘটনা

শিক্ষা: এই ঘটনার মাধ্যমে বোঝা যায়, রিজিক আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। কিন্তু সেই রিজিক বান্দা কোন পথে (হালাল নাকি হারাম) গ্রহণ করবে, সেই এখতিয়ার বান্দার হাতে। তাকদির যেখানেই থাকুক, আল্লাহ তার অফুরন্ত দয়া এবং অনুগ্রহ দিয়ে বান্দাকে ঘিরে রাখেন।

সূরা তালাকে আল্লাহ বলেন: “আর মুত্তাকিকে আল্লাহ এমন উৎস থেকে রিজিক দান করেন, যা সে কল্পনাও করতে পারে না।” (আয়াত নং ৩)

শেষকথা

তাকদিরে বিশ্বাস আমাদের জীবনকে আরও সহজ ও শান্তিময় করে তোলে। রিজিক নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে, পরিশ্রম, চেষ্টা ও আল্লাহর কাছে চাওয়া—এই তিনটির সমন্বয় ঘটানোই হলো তাকদিরের প্রতি আমাদের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি।

তাকদির নিয়ে ডঃ খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গির কি বলছেন 

তাকদির কি তাকদির নিয়ে ২ টি ঘটনা
তাকদির কি তাকদির নিয়ে ২ টি ঘটনা
যে বন্ধু হতাশাগ্রস্ত তাকে পোস্টটি শেয়ার করে দিন। সেলিম হোসেন – তাং ২৪/০৮/২০২৫ ইং – প্রতীকী ছবি গুলো পেক্সেলস থেকে নেয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *