ডায়াবেটিস কেন হয় কিশোরদের কিশোরীদের
কম বয়সীদের । খবরে প্রকাশ, তেরো বছরের বালক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, হারিয়েছে চোখের দৃষ্টি। বিশ বছরের তরুন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, হাসপাতালের বিছানায়। স্বাস্থ্য বিভাগের জরিপ বলছে ১৫-৩৫ বছরের ছেলে মেয়ে সাত ভাগ ই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, ৬১ ভাগের দেহে সুপ্ত অবস্থায় আছে ডায়াবেটিস।
ডায়াবেটিস কেন হয় ? অল্প বয়সীরা কেন এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ? আমরা বিস্তারিত জানব।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ২০২৩ সালে ডায়াবেটিস নিয়ে তথ্য প্রকাশ করে। অধিদপ্তরের ভাষ্য অনুযায়ী, ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে অষ্টম। বাংলাদেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৩১ লাখ। এদের মধ্যে ২০ থেকে ৮০ বছর বয়সীদের মধ্যে ১৪ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ এই রোগে ভুগছেন।
ডায়াবেটিস মুলত ২ প্রকার। টাইপ ১ এবং টাইপ ২।
টাইপ ১ ডায়াবেটিসে শরীরে প্রয়োজনীয় ইনসুলিন তৈরি হয়না। ইনসুলিনের অভাবে রক্তে চিনি বেড়ে যায়। শরীরে এই অবস্থাকেই বলে টাইপ ১ ডায়াবেটিস।
আর টাইপ ২ ডায়াবেটিসে শরীরে পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি হয়। এই ডায়াবেটিস রোগীদের কোষ চর্বিতে ভর্তি থাকে। কোষে অতিরিক্ত চর্বি জমার কারনে রক্তের চিনি কোষে ঢুকতে পারে না। তাই রক্তে চিনির মাত্রা বেশি থাকে। শরীরের এই অবস্থাকে বলা টাইপ টু ডায়াবেটিস।
টাইপ ১ ডায়াবেটিসের রোগীরা খুবই হালকা পাতলা হয়। আর টাইপ ২ ডায়াবেটিসের রোগীরা অনেক মোটাতাজা হয়। ডায়াবেটিসের শতকরা ৯০ জন রোগী টাইপ ২ ।

১. জিনগত কারণ
ডায়াবেটিস কেন হয় ? বাবা-মা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তাহলে ছেলে মেয়েদেরও ডায়াবেটিস হতে পারে। বিশেষ করে কম বয়সে। এতদিন এমন ধারনা করতেন ডাক্তাররা। সময় বদলেছে। নতুন নতুন গবেষণার ফলাফল এসেছে।
সেখানে দেখা যাচ্ছে, যে পরিবারে বাবা মা ডায়াবেটিস আক্রান্ত। তাদের খাবার দাবার, লাইফস্টাইল অসাস্থ্যকর। একই লাইফস্টাইলে বেড়ে উঠছে সন্তানেরা। একারনেই তারাও আক্রান্ত হয়ে পড়ছে ডায়াবেটিসে। চাইলেই এসব সন্তানেরা ঔষধ ছাড়াই সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন।
২. জীবন নিয়ে দুশ্চিন্তা
বেড়েই চলেছে সামাজিক প্রতিযোগিতা। কম বয়সীরা দিনের অনেক সময় কাটাচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে। যেমন ফেসবুক-ইন্সটাগ্রামে অন্যের জীবন উদযাপন দেখছে। তাদের সাফল্য, আনন্দের ছবি-ভিডিও অল্প বয়সীদের মন মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলছে।
এসব দেখে অবচেতন মনেই, নিজের জীবন, সাফল্য নিয়ে দুশ্চিন্তা কম বয়সীদের মাঝে। এই দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত চিন্তার ফাঁদে পা দিলে শরীরে এমন কিছু হরমোনের প্রভাব বাড়ে। যা কিনা ইনসুলিন হরমোনের কাজে বাধা দেয়।
অগ্ন্যাশয় তার কাজ ঠিকমত করতে পারে না। ইনসুলিন উৎপাদন ব্যাহত হয়। ইনসুলিন চাহিদামত শরীরে আসতে পারে না। রক্তে জমা থেকে যায় খাবারের ক্ষুদ্র কনা শর্করা। রক্তে এই শর্করার জমে থাকাটাই সহজ কথায় ডায়াবেটিস টাইপ ২।

৩. হাই ক্যালোরি খাবার
ডায়াবেটিস কেন হয়, এ প্রশ্নের আরেকটা উত্তর, ফুড ইন্ডাস্ট্রির জয়জয়কার। চারিদিকে নানান স্বাদের খাবারের বাহার। রেস্টুরেন্ট, বেকারি, রাস্তার ধারের দোকান কত কি। এখানে নিয়মিত বিক্রি হয় মিষ্টি, কেক, বিরিয়ানি, বার্গার, পিৎজা, পেস্ট্রির মতো হাই ক্যালোরি ফুড। শিশুদের স্কুলের সামনের দোকানে ফোলা বেলুনের মত ঝুলে থাকে চিপস এর প্যাকেট।
শিশু, কিশোর, কিশোরীদের এসব খাবারের প্রতি দারুন লোভ। তারা এ খাবার গুলো প্রচুর খান। আর এই কারণেই তাদের রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়ে। অনেক বাবা মা আগ্রহভরে সন্তানদের এসব খাবার খাওয়ান। সর্বনাশ করেন সন্তানের জীবনের। শিশু, তরুন, তরুণীরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন।
৪. থলথলে মোটা শরীর
খেলাধুলার পর্যাপ্ত মাঠ ঢাকা শহরে নেই। জেলা শহর গুলোতেও নেই। ঘুরে বেড়ানর পার্ক নেই। এ কারনে কিশোর কিশোরীদের সময় কাটে স্মার্ট ফোন, পিসিতে। তারা বসে বা বিছানায় শুয়ে গেমস খেলেন, বিভিন্ন ভিডিও দেখেন।
শারীরিক পরিশ্রম নেই। শরীর থেকে ঘাম বের হয় না। কিন্ত খাবার গ্রহন করেন প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি। আর এই কারণেই তাদের ওজন বাড়ে। ওজন স্বাভাবিকের গণ্ডি পেরিয়ে গেলে ডায়াবেটিসের ফাঁদে পড়ার আশঙ্কা বাড়বে। খুব স্বাভাবিক বিষয়।
পড়ুন – দ্রুত ওজন কমাবেন কিভাবে ?

নিশ্চিত করে বলা যায়, এই শিশুদের ৫,১০,১৫ বা ২০ বছর পরে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হবেই। ফলাফল রক্তে অতিরিক্ত শর্করা, অতিরিক্ত শর্করা মানেই ডায়াবেটিস।
ডায়াবেটিস মুলত ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স। অর্থাৎ রেজিস্ট্যান্স থেকে দূরে থাকলেই ডায়াবেটিস উধাও। কোন ভয় নেই ভীতি নেই। আগামী প্রজন্ম কে সুস্থ রাখতে, তাদের কে সুস্থ জীবন উপহার দিতে আমাদের সচেতনতা প্রয়োজন।
শিশুদের সাস্থ্যকর ন্যাচারাল খাবারে অভ্যস্ত করতে। সুন্দর করে সালাদ তৈরি করা যেতে পারে। তাদের জন্য চিয়াসিডের পুডিং, সতে সবজি, ফুলকপির বিরিয়ানি কত কিছু রান্না করা যেতে পারে। ইউটিউবে হাজার হাজার হেলদি রান্নার রেসিপি আছে। সেসব খাবার আমরা তৈরি করব। তাদের সামনেই আমরাও খাবার টেবিলে সেই খাবার গুলো খাব।
ঔষধ ছাড়াই আজীবন সুস্থ থাকার উপায়।

তাদের খেলাধুলার ব্যবস্থা করতে হবে। বোঝাতে হবে জীবনে প্রতিযোগিতা আছে, কিন্ত এটা নিয়ে দুশ্চিন্তা নেই। তোমার আজকের কাজ গুলো ভালোভাবে সম্পন্ন কর। ভবিষ্যৎ এমনিতেই সুন্দর হবে।
স্মার্ট ফোন শিশুদের কে অলস করে ফেলে, মানসিক সাস্থ্যের ক্ষতি করে। স্মার্ট ফোন তাদের হাতে না দেয়া উত্তম। নিজেরা ব্যায়াম করব। শিশুদের সাথে নিয়ে ব্যায়াম করব। তারা উৎসাহিত হবে।
ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ ভালো হয়। কিভাবে ভালো হবে ? প্রয়োজন হেলদি লাইফ স্টাইল। ভিডিও টি দেখুন সব কিছু একেবারেই সহজ মনে হবে।

সেলিম হোসেন – ০২/০২/২০২৪ ইং
Information source : Dr Eric berg, Dr Mujibul Haque, Dr Jahangir Kabir, Dr Mujibur Rahman, Dr Mandell, Dr Jason Faung, Dr Sten Ekberg and many medical health journals.