টেপা আর টেপির গল্প: যে গৃহস্থালি উপকথা আজও প্রাসঙ্গিক
অনেক বছর আগে এই গ্রামেই বাস করত এক নিঃসন্তান বয়স্ক দম্পতি। গ্রামের মানুষ বুড়োকে ডাকত ‘টেপা’, আর বুড়িকে ডাকত ‘টেপি’। তাদের মধ্যে টেপা ছিলেন অত্যন্ত বদমেজাজি। তিনি প্রায় সময়ই টেপির সাথে রাগারাগি করতেন, এমনকি মাঝে মধ্যে মারধরও করতেন। বুড়ির কান্নার রেশ চলত অনেকক্ষণ ধরে।
পেত্নির সহানুভূতি এবং কেরামতি
তাদের বাড়ির এক বিশাল তেঁতুল গাছে থাকত এক পেত্নি। টেপা-টেপির প্রতিদিনের ঝগড়া ও বুড়ির উপর অত্যাচার দেখে পেত্নির ভীষণ মায়া হলো।
একবার মার খেয়ে টেপি মন খারাপ করে বারান্দায় বসে আছেন। পেত্নি গাছ থেকে নেমে এসে বুড়ির সামনে দাঁড়াল।
টেপি: (পেত্নিকে দেখে চমকে) পেত্নি: ভয় পেয়ো না। আমি তোমাকে সাহায্য করতে এসেছি। তোমার টেপা তো গোসলের আগে শরীরে তেল মাখে, তাই না? টেপি: হ্যাঁ মাখে। পেত্নি: তাহলে কাজটা সহজ হবে। তুমি একটা তেলের বোতলের ভিতরে লুকিয়ে থাকবে। খেলা জমে যাবে! টেপি: আমি আস্ত মানুষ বোতলের ভিতরে ঢুকব কীভাবে? পেত্নি: এটা আমার কেরামতি। তোমাকে বোতলের ভিতরে ঢুকানো আমার কাছে পানির মতো সোজা। তুমি শুধু তেলের বোতলটা নিয়ে এসো।
পেত্নি তাকে বোঝাল, এই মন্ত্রবলে টেপা এমন শিক্ষা পাবে যে জীবনে আর কোনোদিন গালমন্দ করবে না বা গায়ে হাত তুলবে না। পেত্নি তার মন্ত্রবলে বুড়িকে সহজেই তেলের বোতলের ভিতরে ঢুকিয়ে দিল।
পড়ুন – আগের দিনে গ্রাম বাংলায় কিভাবে বিয়ের পাত্রপাত্রী ব্যাবস্থাপনা।

তৈলাক্ত শিক্ষা
বুড়ো টেপা বাড়ি ফিরে টেপিকে কোথাও খুঁজে পেল না। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে সে গোসলের জন্য তেলের বোতল হাতে নিল। যেই না বোতলের মুখ খুলল, অমনি বেরিয়ে আসল বুড়ি টেপি!
বোতল থেকে আস্ত মানুষ বের হতে দেখে টেপা ভয় পেয়ে গেল। হাতের বোতল পড়ে গেল মাটিতে, সমস্ত তেল মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ল।
জ্ঞান ফিরতেই রাগে উন্মত্ত হয়ে সে ধরতে গেল বুড়িকে। কিন্তু তেল পড়ে পিচ্ছিল মেঝেতে আছাড় খেল টেপা। উঠে দৌড়ে টেপিকে ধরতে গেল, কিন্তু তৈলাক্ত পিচ্ছিল টেপি সহজে ছুটে গেল। জোরাজুরিতে বুড়ো দরজার চৌকাঠের উপর পড়ল। কোমরে প্রচণ্ড ব্যাথা পেয়ে চিৎকার করে উঠল টেপা।
টেপি দূরে দাঁড়িয়ে হেসে বলল:
“কী মিনসে, কেমন লাগে? মরদগিরি দেখাও, তাই না?”
ব্যথা-যন্ত্রণায় কোঁকাতে কোঁকাতে টেপা বলল, “মরে গেলাম রে টেপি, আমার কোমরে তেল মালিস করে দে। আমি আর কোনোদিন গালমন্দ করব না, মারধরও করব না। এখন গরম তেল আর রসুন দিয়ে ছ্যাঁক দে আমার কোমরে।”
ভিডিও দেখুন – বাংলার সবুজ ঘাস আর মাটিতে বৃষ্টি পরার দৃশ্য।

গল্প শেষের শিক্ষা
সেই থেকে আর কোনোদিন টেপা বুড়িকে মারধর করত না। যতদিন বেঁচেছিল, তারা শান্তিতেই ছিল।
রাহেলা বেগম গল্পের শেষে নাতিকে বললেন, “টেপা আর টেপির গল্প তো শুনলি। তুই একটু এদিক-ওদিক খেয়াল করিস তো, কোনো গাছের ডালে পেত্নি আছে কি না!”
যখন গল্পই ছিল বিনোদন
যখন স্মার্ট ফোন, টেলিভিশন, কম্পিউটার—এমন নানান ধরনের ডিভাইস ছিল না, তখন বড়দের মুখে গল্প শোনাটাই ছিল বিনোদন। টেপা আর টেপির গল্পের মতো অসংখ্য লোককথা ছড়িয়ে আছে বাংলার আনাচে-কানাচে। এই গল্পগুলো শুধু বিনোদনই দিত না, বরং জীবনের সহজ সরল শিক্ষাগুলোও সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলত।
কিছু ক্রেতার উপর দোকানদাররা খুব বিরক্ত হন। কোন সে ক্রেতা ?

পুরনো দিনের গল্প শুনতে যারা ভালোবাসে তাদের কে পোস্টটি শেয়ার করে দিন। সেলিম হোসেন – ১৩/০৯/২০২৪ ইং – ছবি গুলো প্রতীকী – টেপা আর টেপির গল্প

