টেপা আর টেপির গল্প। গ্রাম বাংলার গল্প কথা। এ যুগেও আনন্দ দেয় 1 Bangladeshi village story

টেপা আর টেপির গল্প

টেপা আর টেপির গল্প

চৈত্র মাস, আকাশে ঝকঝকে রোদ। দুপুর গড়িয়ে সূর্যটা সবেমাত্র পিছনে হেলেছে। বাড়ির পিছনে আমগাছ তলায় বসায় আছে রাহেলা বেগম। সামনে বিশাল ফসলের মাঠ। ফসল কাটা হয়েছে। এরপর লাঙল দেয়ায় বড় বড় ইটের ঢেলা তৈরি হয়েছে। ঢেলার উপর রোদ পরে চকচক করছে। ফাঁকা ফসলের মাঠ হাল্কা বাতাস ছুটে আসছে অবিরাম।

আম গাছটা অনেক বড়, প্রচুর আম ঝুলছে গাছে। আমের আটি এখনো হয়নি। মসুর ডালে আম দিয়ে রান্না করে খাওয়া চলছে। এখন তো বড় আম গাছ দেখাই যায় ন। সবই বাণিজ্যিক চিন্তা থেকে লাগানো। কিন্ত এই বাংলায় ৩০ বছর আগেও প্রচুর বড় বড় আম গাছ ছিল।

রাহেলা বেগমের সাথে আজ স্বামীর বেশ ঝগড়া হয়েছে। ভাত নিয়ে ঝগড়া। লাল রঙের মোটা আমন চালের ভাত। ভাত কেন ঝর ঝরে হয়নি। তাই নিয়ে বুড়োর রাগ। আমন চালের ভাত সামান্য পানি বেশি হলেই রান্নায় নরম হয়ে যায়। কিন্ত বুড়ো অল্প রাগতে পারে না। তার রাগ সবসময় বেশি হয়ে যায়। রাগ করে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে। আধ মাইল দূরে ঘোষ পাড়ায়,গল্প গুজব করে বিকেল নাগাদ ফিরবে। এটা তার পুরনো অভ্যাস।

পড়ুন – আগের দিনে গ্রাম বাংলায় কিভাবে বিয়ের পাত্রপাত্রী ব্যাবস্থাপনা। 

টেপা টেপির গল্প

টেপা আর টেপির গল্প 

সুতা আর কাগজ নিয়ে ব্যস্ত নাতি রাহেলার কাছে এসে বসল। নাতির বয়স নয় বছর। সারাক্ষন খেলাধুলায় ব্যস্ত। দাদি ঘুড়ি বানানোর আঠা পাচ্ছি না – বলল নাতি লাল চাঁদ।

আঠা গাছ থেকে পাড়তে হবে। কিন্ত তোর দাদা তো রাগ করে ঘোষ পাড়ায় চলে গেছে। আসুক, তারপর বানাস – বলল রাহেলা বেগম। নাতি নাছোড় বান্দা – আমাকে ঘুড়ি বানিয়ে দিতেই হবে। বলতে বলতে গলার স্বর চড়ে লাল চাঁদের।

লাল চাঁদ গল্প শুনতে পছন্দ করে। রাহেলা নাতিকে থামানোর উপায় কাজে লাগায়। ঠিক আছে তুই আরাম করে পাটিতে শুয়ে পর। আমি তোকে গল্প শোনাই। টেপা আর টেপির গল্প।

অনেক বছর আগে আমাদের এই গ্রামে বাস করত এক বয়স্ক দম্পতি। তাদের কোন ছেলে মেয়ে ছিল না। বাড়িতে দুজনেই বাস করতে করতেন। গ্রামের লোকজন বুড়োকে টেপা এবং বুড়িকে টেপি বলে ডাকত। টেপা প্রায় সময়ই টেপির সাথে রাগারাগি করতেন। মাঝে মধ্যে বুড়িকে মারধরও করতেন। মার খেয়ে বুড়ি চিৎকার করে কান্না করত। সে কান্নার রেশ চলত অনেকক্ষণ।

টেপা আর টেপির গল্প

তাদের বাড়িতে ছিল একটা বড় তেতুল গাছ। সেই তেতুল গাছে থাকত একপেত্নি। টেপা টেপির নিত্যকার কর্মকাণ্ডে তার নজর ছিল। বুড়ির উপর এই অত্যাচার দেখে পেত্নির মায়া হয়। একদিন মার খেয়ে বুড়ি মন খারাপ করে বারান্দায় বসে আছে। পেত্নি গাছ থেকে নেমে আসে। বুড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। পেত্নিকে দেখে চমকে উঠে বুড়ি। পেত্নি বলে ভয় নেই। আমি তোমাকে সাহায্য করতে এসেছি। তোমার টেপা তো গোসলের আগে শরীরে তেল মাখে, তাই না ?

ভিডিও দেখুন – বাংলার সবুজ ঘাস আর মাটিতে বৃষ্টি পরার দৃশ্য। 

টেপা টেপির গল্প

টেপি – হ্যা মাখে।

পেত্নি ঃ হ্যা, তাহলে কাজটা সহজ হবে। তুমি একটা তেলের বোতলের ভিতরের লুকিয়ে থাকবে। খেলা জমে যাবে।

টেপি ঃ আমি আস্ত মানুষ টা বোতলের ভিতরে কিভাবে লুকাব ?

পেত্নি ঃ এটা আমার কেরামতি। বোতলের ভিতরে কিভাবে ঢুকাব সেটা নিয়ে ভাবতে হবে না। এ কাজটা আমার কাছে পানির মত সোজা। এমন কাজ আমি করতে পারি বলেই, তোমরা সারা গ্রামের মানুষ আমাকে ভয় পাও। তুমি তেলের বোতল টা নিয়ে আস।

টেপি ঃ বোতলের ভিতরে না হয় ঢুকলাম, তাতে কি হবে ?

পেত্নি ঃ এখানেই তো মজা। টেপা এমন শিক্ষা পাবে, জীবনে আর কোন দিন তোমার গায়ে হাত তুলবে না, গালমন্দ করবে না।

পেত্নি তার মন্ত্র বলে বুড়িকে বোতলের ভিতরে ঢুকিয়ে দিল। বুড়া বাড়ি ফিরে বুড়িকে কোথাও খুজে পেল না। জোরে জোরে ডাকাডাকি করল, টেপির খবর নেই। মনে মনে ভাবল, নিশ্চয়ই পাড়া বেড়াতে গেছে। যাকগে, জাহান্নামে যাক। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে টেপা তেলের বোতল হাতে নিল। যেইনা বোতলের মুখ খুলল, অমনি বেরিয়ে আসল বুড়ি।

কিছু ক্রেতার উপর দোকানদাররা খুব বিরক্ত হন। কোন সে ক্রেতা ? 

টেপা টেপির গল্প

টেপা আর টেপির গল্প

বোতল থেকে বুড়িকে বের হতে দেখে বুড়ো ভয় পেয়ে গেল। হাতের বোতল পরে গেল মাটিতে। সমস্ত তেল পরে মেঝে একাকার। সম্বিত ফিরে রাগে উম্মত হয়ে ধরতে গেল বুড়িকে। তেল পরে পিচ্ছিল মাটিতে আছাড়ে পড়ল টেপা। উঠে দৌড়ে ধরল টেপি কে, তৈলাক্ত পিচ্ছিল টেপি ছুটে গেল সহজেই। জোরাজুরিতে বুড়ো দরজার চৌকাঠের পড়ল। কোমরে প্রচণ্ড ব্যাথা পেয়ে চিৎকার করে উঠল টেপা।

টেপি দূরে দাড়িয়ে হাসতে লাগল। কি মিনসে, কেমন লাগে ? মরদগিরি দেখাও, তাই না। ব্যাথা যন্ত্রণায় কোঁকাতে কোঁকাতে বুড়ো বলল ” মরে গেলাম রে টেপি, আমার কোমরে তেল মালিস করে দে। আমি আর কোন দিন গালমন্দ করব না, মারধর করব না। এখন গরম তেল আর রসুন দিয়ে ছ্যাঁক দে আমার কোমরে।

সেই থেকে আর কোনদিন বুড়িকে মারত না। যতদিন বেঁচেছিল, তারা শান্তিতে ছিল রে লাল চাঁদ। টেপা আর টেপির গল্প তো শুনলি। তুই একটু এদিক ওদিক খেয়াল করিস তো কোন গাছের ডালে পেত্নি আছে কি না।

প্রেম এবং মাদক একসাথে চলছে। 

টেপা টেপির গল্প

যখন স্মার্ট ফোন, টিভি, কম্পিউটার এরকম নানান ধরনের ডিভাইস ছিল না, তখন বড়দের মুখে গল্প শোনাটাই ছিল বিনোদন। টেপা আর টেপির গল্পের মত অসংখ্য গল্প ছড়িয়ে আছে বাংলার আনাচে কানাচে। আপনাদের শোনাতে থাকব সেসব গল্প।

সেলিম হোসেন – ১৩/০৯/২০২৪ ইং – ছবি গুলো প্রতীকী – টেপা আর টেপির গল্প

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *