টক দই এর ১০ উপকারিতা। কফি, টক দই যেভাবে মুখ ফর্সা করে। 10 benefits of sour yogurt.

টক দই এর ১০ উপকারিতা

টক দই (Yoghurt) ও এর ১০টি স্বাস্থ্য উপকারিতা: দীর্ঘ জীবন ও সুস্বাস্থ্যের জন্য 

টক দই, যা ইয়োগার্ট (Yoghurt) নামেও পরিচিত, হলো একটি দুগ্ধজাত খাদ্য। এটি দুধের ব্যাকটিরিয়ার গাঁজন (Fermentation) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়। ল্যাকটোজের গাঁজনের ফলে ল্যাকটিক অ্যাসিড তৈরি হয়, যা দুধের প্রোটিনের উপর কাজ করে দইয়ের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ স্বাদ ও গন্ধ প্রদান করে। এটি পৃথিবীর প্রাচীনতম খাবারগুলোর মধ্যে একটি, যা মানুষ প্রায় ৪,৫০০ বছর ধরে খেয়ে আসছে।

দুধের সব পুষ্টি উপাদান (কেসিন বাদে) দইয়ে থাকে, যা এটিকে একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর খাবার করে তোলে।

ওজন কমানোর সবচেয়ে সহজ এবং সাস্থ্যকর উপায়

টক দই এর ১০ উপকারিতা
টক দই এর ১০ উপকারিতা

 

টক দই ও বিজ্ঞানী এলি মেচনিকফ

২০ শতকের গোড়ার দিকে রাশিয়ান নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী এলি মেচনিকফ (Élie Metchnikoff) একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি লক্ষ করেন যে, বুলগেরিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামের একদল ব্যবসায়ী দারিদ্র্য ও খারাপ আবহাওয়ার মধ্যেও দীর্ঘদিন ধরে সুস্থ শরীরে জীবনযাপন করছেন।

তিনি পর্যবেক্ষণ করে দেখেন যে, তাদের খাদ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো টক দই। এই পর্যবেক্ষণই প্রমাণ করে যে, দই একটি অত্যন্ত উপকারী খাবার, যা মানুষের দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।

হু হু করে বাড়ছে কিডনি রোগী। প্রতিকারের উপায় জেনে নিন

টক দই এর ১০ উপকারিতা
টক দই এর ১০ উপকারিতা

টক দই এর ১০টি অপরিহার্য উপকারিতা

টক দইয়ে থাকা প্রোবায়োটিকস (উপকারী ব্যাকটেরিয়া), ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের একাধিক সিস্টেমকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে:

১. হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি

দইয়ে থাকা প্রোবায়োটিক পাচনতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে এবং খাদ্য হজমে সহায়তা করে। আধুনিক বিজ্ঞান বলে, হজম ক্ষমতা ঠিক থাকলে গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্যসহ পেটের সমস্যা কমে যায় এবং সামগ্রিক সুস্থতা বজায় থাকে।

২. হাড়ের গঠন শক্তিশালী করে

Yoghurt ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন D-এর একটি চমৎকার উৎস। এটি হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে, হাড় মজবুত করতে এবং অস্টিওপোরোসিসের (Osteoporosis) মতো হাড়ের রোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

৩. শরীরের অতিরিক্ত চর্বি ঝরায়

টক দইয়ে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া শরীরের মেটাবলিজম (Metabolism) বাড়ায়। এটি অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। এটি ওজন কমানোর একটি সহজ এবং স্বাস্থ্যকর উপায়।

ফ্যাটি লিভার দূর করুন মাত্র একমাসে ন্যাচারালি

টক দই এর ১০ উপকারিতা

৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি

প্রোবায়োটিক পাকস্থলীর ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। ফলে শরীরের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত হয়। এটি ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং ফাঙ্গাসের বিরুদ্ধে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

৫. চুল এবং ত্বকের জন্য উপকারী

দইয়ে থাকা ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

  • ত্বক: এটি ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা বজায় রাখে, ব্রণ বা অন্যান্য সমস্যা কমায়।
  • চুল: খুশকি ও চুল পড়া কমাতেও এটি সাহায্য করে।

৬. হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখে

টক দইয়ে থাকা ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। নিয়মিত দই খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৭. মানসিক তৃপ্তি আনে

দইয়ের মধ্যে থাকা ভিটামিন B12 এবং ফোলেট মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এটি মানসিক চাপ বা উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে এবং শরীরে ‘সুখী অনুভূতি’ (Happy Feeling) সৃষ্টি করে।

সন্তানেরা বখে যাচ্ছে বাবা মায়ের কারনে। কারন এবং প্রতিকার জেনে নিন

৮. পাকস্থলীর সুস্থতা

নিয়মিত দই সেবন পেটের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। পেটের অস্বস্তি যেমন গ্যাস, অ্যাসিডিটি, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি কমাতে এটি অত্যন্ত কার্যকর।

৯. গরমে শরীর ঠাণ্ডা রাখে

গরমের দিনে টক দই খাওয়া শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে এবং পেটের অস্বস্তি থেকে মুক্তি দেয়। গরমকালে টক দইয়ের লাবাং (Labang) একটি জনপ্রিয় ও মজাদার পানীয়।

১০. রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ

দই খেলে রক্তে গ্লুকোজ বা চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে, যা বিশেষত ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।

জীবনে সফল হতে চান ? তাহলে আব্রাহাম লিঙ্কনের জীবনী আপনার অনুপ্রেরনা

সৌন্দর্য চর্চায় টক দই 

কফির সাথে টক দই মিশিয়ে তৈরি করা স্ক্রাব ত্বককে ফর্সা করতে এবং সতেজতা দিতে পারে।

  • ব্যবহার: কফি গুঁড়োর সাথে দই মিশিয়ে মুখ ও শরীরের অন্যান্য অংশে স্ক্রাব করতে পারেন। এটি মরা কোষ দূর করে ত্বককে কোমল ও তরতাজা করে তোলে এবং ত্বকের জেল্লা বাড়ায়।

কোন ব্রান্ডের টক দই খাবেন?

সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি বাসায় তৈরি টক দই খান, কারণ এতে কোনো বাড়তি চিনি বা প্রিজারভেটিভ থাকে না।

যদি বাজার থেকে কিনতে হয়, তবে কিছু বিষয় মনে রাখবেন:

  • ব্র্যান্ড: Milk Vita Yoghurt বা আড়ং ডেইরি (Aarong Dairy)-এর দইকে প্রথম পছন্দ হিসেবে দেখতে পারেন।
  • সংরক্ষণ: কেনার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যে দোকানদার দইটি নরমাল ফ্রিজে রেখেছে কিনা। ডিপ ফ্রিজে রাখা দই কেনা উচিত নয়, কারণ এতে উপকারী প্রোবায়োটিকস নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

টক দইয়ের গুনাগুন নিয়ে বলছেন, বিশ্ব খ্যাত ডাঃ এরিক বারগ

সেলিম হোসেন – ০২/০১/২০২৫ ইং – প্রতীকী ছবি গুলো পেক্সেলস থেকে নেয়া

তথ্যসূত্র: Dr. Eric Berg, Dr. Mujibul Haque, Dr. Jahangir Kabir, Dr. Mujibur Rahman, Dr. Mandell, Dr. Jason Faung, Dr. Sten Ekberg and many medical health journals.

ব্লগ পোস্টটি প্রয়োজনীয় মনে হলে পরিচিত সবার সুস্বাস্থ্যের জন্য শেয়ার করে দিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *