ছাগল কাণ্ডে মতিউর: বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তান
সাম্প্রতিক সময়ে ছাগল নিয়ে দুটি ঘটনা ব্যাপক আলোচিত হয়েছে—একটি বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রতীক হিসেবে, অন্যটি পাকিস্তানে লোক ঠকানোর এক অদ্ভুত কৌশল হিসেবে। কাস্টমস কর্মকর্তা মতিউর রহমানের কাণ্ড যখন বাংলাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে, ঠিক তখনই পাকিস্তানের করাচিতে দেখা গেল কোরবানির পশুর দাঁতে প্লাস্টিক বসানোর ঘটনা।
অবলা প্রাণী ছাগল নিয়ে কিছু তথ্য
এই প্রাণীটি আমাদের সংস্কৃতি এবং কোরবানির ঐতিহ্যের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। দুটি আলোচিত ঘটনার আগে চলুন ছাগল সম্পর্কে কিছু মৌলিক তথ্য জেনে নিই:
-
দুধ উৎপাদনের সময়কাল: ছাগল একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী। নিয়মিত দোহন করলে এরা প্রায় দুই বছর পর্যন্ত দুধ দেয়। দুধ উৎপাদন ধরে রাখতে মা ছাগলকে দুই বছর পর আবার গর্ভধারণ করাতে হয়।
-
আয়ু: ছাগলের গড় আয়ু সাধারণত ৯ থেকে ১২ বছর। তবে বাড়িতে ঠিকঠাক যত্ন করলে ১৫-১৮ বছর পর্যন্তও বাঁচতে পারে। এর মাংস সুস্বাদু এবং প্রোটিনের ভালো উৎস।
-
জাত: পৃথিবীতে প্রায় ৩০০ রকমের জাতের ছাগল রয়েছে, যা আকার, আয়তন ও বৈশিষ্ট্য ভেদে একে অপরের থেকে আলাদা। বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের একটি দল ২০১৮ সালে বিখ্যাত ‘ব্ল্যাক বেঙ্গল গোটের’ জেনোম সিকোয়েন্সিং বা পূর্ণাঙ্গ জীবন রহস্য উন্মোচন করে আমাদের জন্য সম্মান বয়ে এনেছেন।
স্ত্রী কর্তৃক পুরুষাঙ্গ কাটা যাচ্ছে স্বামীদের।

ছাগল কাণ্ড বাংলাদেশ: দুর্নীতিবাজ মতিউর
একটি দেশী খাসি কিভাবে গোটা জাতির সামনে এক কাস্টমস কর্মকর্তার দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরল, সেই গল্পটা চমকপ্রদ।
১৫ লাখ টাকার ছাগল থেকে কেঁচো খুঁড়তে সাপ
গত কোরবানির ঈদ উপলক্ষে একটি দেশী খাসিকে হাটে আনা হয় বিক্রির জন্য। যখন মতিউর রহমানের ছেলে ইফাত সেটি ১৫ লাখ টাকায় কিনে নেয়, তখন ছাগলটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে পড়ে। এত চড়া দামে ছাগল কেনার উৎস নিয়ে শুরু হয় খোঁজখুঁজি।
এতেই থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়ে। জানা যায়, ক্রেতার বাবা হলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্মকর্তা মতিউর রহমান, যিনি বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের মালিক। প্রথমে মতিউর রহমান নিজের ছেলেকে অস্বীকার করলেও নানান চাপে পড়ে পরে স্বীকার করেন যে, ১৫ লাখ টাকা ব্যয় করা ছেলেটি তারই। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সাংবাদিক ও সোশ্যাল মিডিয়ার তীব্র চাপে একপর্যায়ে মতিউর বোরখা পরে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।
ভিডিও দেখুন – যেভাবে ধরা পড়লেন মতিউর।

আদালতের কাঠগড়ায় মতিউর
দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ইং তারিখে মতিউর রহমান ধরা পড়েন। ঐদিন সকালে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে পুলিশ তাঁকে ও তাঁর প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজকে গ্রেপ্তার করে।
বিকেল পাঁচটায় হাতকড়া পরা অবস্থায় মাইক্রোবাসে করে তাঁকে আদালতে আনা হয়। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে মতিউর আদালতে বলেন, ‘তাঁর পরিবারের কেউ দুর্নীতিবাজ নন। ছাগল আমার জীবনে অভিশাপ।‘
মামলার শুনানির সময় প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী জিজ্ঞাসা করেন, ‘মতিউর সাহেব, সেই ছাগলটি কোথায়?’ জবাবে তিনি বলেন, ‘পিপি সাহেব, ছাগলটি আছে।’ বর্তমানে মামলা চলমান, অপেক্ষা করা হচ্ছে বিচারের ফলাফলের জন্য।
পড়ুন – স্বামীর পুরুষাঙ্গ কেন কাটলো স্ত্রী।

ছাগল কাণ্ড পাকিস্তান: প্লাস্টিকের দাঁত!
মতিউর কাণ্ডের মতো দুর্নীতির ঘটনা নয়, বরং লোক ঠকানোর এক হাস্যকর কৌশল দেখা গেল পাকিস্তানে।
করাচির গুলবার্গ চৌরঙ্গী এলাকায় কোরবানির পশুর হাট বসেছিল। বেপারিরা সিন্ধু প্রদেশ থেকে ছাগল এনে হাটে তুলেছিলেন। এক ভদ্রলোক সাতটি খাসি পছন্দ করে বেপারির কাছ থেকে কেনেন এবং দাম পরিশোধ করেন।
কোরবানির পশু কেনার একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম হলো দাঁত পরীক্ষা করা। ভদ্রলোক যখন ছাগলগুলোর দাঁত পরীক্ষা করতে যান, তখন অবাক হয়ে দেখেন—একে একে সব ক’টির মুখেই প্লাস্টিকের দাঁত বসানো!
পশু কেনাবেচায় প্লাস্টিকের দাঁত বসানোর এই আশ্চর্য ঘটনা জানার পর তিনি সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ বেপারিকে গ্রেফতার করে এবং সাতটি ছাগল জব্দ করে থানায় নিয়ে যায়। নিরীহ প্রাণীর মুখে প্লাস্টিকের দাঁতের এই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়।
পড়ুন – মতিউরের গ্রামের এলাহি কাণ্ড।

আমাদের দায়িত্ব
দুর্নীতি ও প্রতারণা—দুটি ভিন্ন ঘটনা হলেও এর মূল শিকড় আমাদের সমাজের গভীরে।
আমরা সবাই যেন আমাদের আশপাশের ঘুসখোর এবং দুর্নীতিবাজদের জীবনযাপন ও কেনাকাটার দিকে খেয়াল রাখি। তাদের তথ্য সংগ্রহ করুন, প্রয়োজনে ভিডিও ধারণ করুন এবং প্রয়োজনীয় সময়ে কাজে লাগান। আগামী প্রজন্মের জন্য দেশটাকে সুন্দর করা আমাদের দায়িত্ব।
আপনার দুর্নীতিবাজ বন্ধু বা আত্মীয়-স্বজনদের সতর্ক করতে পোস্টটি শেয়ার করে দিন। সেলিম হোসেন – ১৫/০৬/২০২৪ বি.দ্র.: এই পোস্টে ব্যবহৃত ছবিগুলো প্রতীকী (পেক্সেল থেকে নেওয়া)।

