চিরতরে গ্যাস্ট্রিক দূর করার ৬ টি প্রাকৃতিক উপায়: ঔষধ নয়, জীবনযাত্রাই সমাধান
সন্ধ্যার পর ঔষধের দোকানে সবচেয়ে বেশি ভিড় হয় গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ কেনার জন্য। অনেকেই খাবার টেবিলে বা রান্নাঘরেও গ্যাসের ঔষধের পাতা অথবা তরল সিরাপ রাখেন, কেবল বুক জ্বালা বা পেট ফাঁপার আতঙ্ক থেকে মুক্তি পেতে। কিন্তু দিনের পর দিন এই ঔষধ খেয়েও সমস্যা দূর হয় না। আসল সমাধান লুকিয়ে আছে আমাদের জীবনযাত্রায়।
গ্যাস্ট্রিকের সাধারণ সমস্যা ও উপসর্গ
গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটির সমস্যা হলে সাধারণত নিম্নলিখিত অস্বস্তিগুলো দেখা যায়:
-
বুক জ্বালাপোড়া (হার্টবার্ন)
-
পেট ফাঁপা ও বদহজম
-
ক্ষুধামান্দ্য বা অরুচি
-
বুকে, পেটে বা পিঠে ব্যথা
-
সকালে ঘুম থেকে ওঠার সময় সারা শরীরে ব্যথা অনুভব করা
-
নানান রকম শারীরিক অস্বস্তি ও ক্লান্তি
পড়ুন – বেকিং ডাইনিং টেবিলেই রাখুন। জেনে নিন কত জরুরী এই ন্যাচারাল উপাদান।

গ্যাসের ঔষধের দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার: ঝুঁকি ও ক্ষতিকর প্রভাব
অনেকে মাসের পর মাস বা বছরের পর বছর গ্যাসের ঔষধ খেয়ে চলেন। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন বা টানা গ্যাসের ঔষধ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং এটি আরও মারাত্মক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
১. ভিটামিন ও খনিজ লবণের ঘাটতি
শরীরের বিপাক প্রক্রিয়ার জন্য পাকস্থলীতে পর্যাপ্ত অ্যাসিডের প্রয়োজন। ভিটামিন বি১২, ফলিক অ্যাসিড এবং আয়রনের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ লবণ হজম ও শোষণের জন্য অ্যাসিড অপরিহার্য। দীর্ঘদিন ঔষধ সেবনের ফলে অ্যাসিড কম তৈরি হয় এবং এই অত্যাবশ্যকীয় উপাদানগুলোর ঘাটতি দেখা দেয়।
২. হাড়ক্ষয় রোগ (অস্টিওপোরোসিস)
হাড় তৈরি হওয়ার অন্যতম উপাদান হলো ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম শোষণের জন্যও অ্যাসিড প্রয়োজন। ক্রমাগত গ্যাসের ঔষধ খাওয়ার ফলে অ্যাসিডের ঘাটতি হয় এবং ক্যালসিয়ামের অভাবজনিত কারণে হাড়ক্ষয় রোগ (অস্টিওপোরোসিস) হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়।
৩. পাকস্থলীর ক্যানসারের প্রবণতা বৃদ্ধি
গ্যাসের ঔষধ সেবনের কারণে পাকস্থলীর গ্রন্থি থেকে গ্যাস্ট্রিন নামক হরমোন তৈরির প্রবণতা বেড়ে যায়, যা কিছু ক্ষেত্রে পাকস্থলীর ক্যানসার হওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে।
গ্যাস্ট্রিকের ঔষধে যে সব ক্ষতি হতে পারে।

৪. সংক্রামক রোগ বৃদ্ধি
পাকস্থলীর অ্যাসিড ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুকে ধ্বংস করে। কিন্তু গ্যাসের ঔষধ খাওয়ার ফলে অ্যাসিডের ক্ষমতা কমে যায়, এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াগুলো শক্তিশালী হয়ে উঠে এবং সংক্রামক রোগ তৈরি করে।
৫. কিডনি রোগের ঝুঁকি
বিভিন্ন গবেষণা দেখায়, সারা বছর গ্যাসের ঔষধ খাওয়ার ফলে কিডনির কার্যকারিতা কমে যাওয়ার প্রবণতা কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
৬. অম্লত্ব বৃদ্ধি (Acid Rebound)
দীর্ঘদিন গ্যাসের ঔষধ খাওয়ার কারণে কিছু হরমোনের প্রভাবে অ্যাসিড তৈরি হওয়া এতটাই বেড়ে যেতে পারে যে, এক পর্যায়ে স্বাভাবিক গ্যাসের ঔষধ দিয়ে বুকে জ্বালাপোড়ার মতো প্রদাহ প্রশমিত করা সম্ভব হয় না।
ভিডিও দেখুন – সারা জীবন কিভাবে পেটের যন্ত্রণা মুক্ত থাকবেন।

চিরতরে গ্যাস্ট্রিক দূর করার ৬ টি প্রাকৃতিক উপায়
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় খুবই সহজ, শুধু জেনে নিন এবং দৈনন্দিন জীবনে অনুসরণ করুন:
১. সালাদ দিয়ে খাবার শুরু: প্রতিবার খাবার শুরু করার আগে এক বাটি সালাদ (যা আঁশযুক্ত) দিয়ে শুরু করুন।
২. ভিনেগার ব্যবহার: সবজির সাথে ভিনেগার মিশিয়ে খেতে পারেন, অথবা খাবারের আগে বা পরে সামান্য ভিনেগার পানি মিশিয়ে পান করতে পারেন।
৩. খাবার ভালোভাবে চিবানো: খাবার মুখে নেওয়ার পর ভালোভাবে চিবিয়ে খাবেন। মুখে থাকা অবস্থায় খাবারটি অন্তত ৪০ বার চিবিয়ে গিলে ফেলার অভ্যাস করুন।
৪. খাবারের সময় পানি বর্জন: খাবারের মাঝখানে কোনো পানি পান করবেন না। পানি পান করুন খাবার শেষ করার এক ঘণ্টা পর।
৫. রান্নার তেল পরিবর্তন: খাবার রান্নায় খাঁটি সরিষার তেল অথবা নারকেল তেল ব্যবহার করুন।
৬. মাঝে মাঝে কফি এনেমা: শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে মাঝে মাঝে কফি এনেমা করতে পারেন (এটি একটি বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি, অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করুন)।
পড়ুন – সাস্থ্যকর উপায়ে কিভাবে এক মাসে ১০ কেজি ওজন কমাবেন।

যেসব খাবার বর্জন করবেন
সুস্থ থাকতে এবং গ্যাস্ট্রিককে নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিছু খাবার অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে:
-
দোকানে পাওয়া যেকোনো কোমল পানীয় বা কার্বনেটেড ড্রিংকস।
-
মিষ্টি জাতীয় খাবার, যেমন: কেক, মিষ্টি, বিস্কুট ইত্যাদি।
-
চিকেন ফ্রাই, পিজা, চিপস এবং অন্যান্য ভাজা পোড়া বা প্রক্রিয়াজাত খাবার।
আমরা সুস্থ থাকলে তবেই অনেক কাজ করতে পারব। অসুস্থ মানুষ ঔষধ নিয়েই ব্যস্ত থাকে। একজন চিকিৎসক যেমনটি বলেছিলেন: “আমি আমার প্রথম দিকে একজন গ্যাস্ট্রিক রোগীকে মাত্র তিন সাক্ষাতে হেলদি লাইফস্টাইলের মাধ্যমে রোগমুক্ত করে দিয়েছিলাম। উনি আজ পর্যন্ত আর আমার সাথে দেখা করেন নি।”—এতে বোঝা যায়, সঠিক লাইফস্টাইলই রোগমুক্তির চাবিকাঠি।
আপনার সেইসব বন্ধু বা আত্মীয়-স্বজনদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করতে পারেন যারা পেটের সমস্যায় ভুগছেন। সেলিম হোসেন – ২৭/০৭/২০২৪ ইং
Reference: Dr. Eric Berg, Dr. Mujibul Haque, Dr. Jahangir Kabir, Dr. Mujibur Rahman, Dr. Mandell, Dr. Jason Faung, Dr. Sten Ekberg and many medical health journals.

