রাসায়নিকে ভর্তি কসমেটিক্স আইটেম
শুক্রবার এবং শনিবার। উপচে পড়া ভিড় কসমেটিক্সের দোকানে। ভিড় অন্যান্য দিনেও থাকে। কেন এত ভিড় ? এসব দোকানে কৃত্রিম সৌন্দর্যের সামগ্রি বিক্রি করা হয়। যার ডাকনাম ‘কসমেটিক্স’। অল্প সময়ের জন্য সৌন্দর্য দেয়। আকর্ষণ বাড়ায়। দীর্ঘ সময়ের জন্য বোনদের চেহারা এবং সাস্থ্যের সর্বনাশ করে। ফাঁকা করে ভ্যানিটি ব্যাগ ! আসুন বিস্তারিত জেনে নেই।
বর্তমানে সারা বিশ্বে অসংখ্য কসমেটিক্স তৈরির কোম্পানি রয়েছে। তারা নানা ধরনের প্রসাধন সামগ্রী প্রস্তুত করছে। গবেষকগন আর বাছ-বিচার করছেন না। সোজা বলে দিচ্ছেন সবরকম কসমেটিক্স সামগ্রী জনসাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ। কসমেটিক্স ব্যবহারের প্রবনতা বেড়ে চলা আশঙ্কাজনক।
এসব সামগ্রী তৈরি করতে কমবেশি ১৩ হাজার প্রকার রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়। আজকে যে দিকে তাকানো যায়, শুধু অসুখ আর অসুখ। মূলত এই রাসায়নিক উপাদানই এত বেশি অসুখের কারন। হাসপাতালে ভিড়, গাইনি চেম্বারে বসার জায়গা নেই।
বিশ্বব্যাপী ঔষধের ক্ষেত্রে একটা নিয়ম মানা হয়। তা হল, ফার্মেসি থেকে ঔষধ নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরীক্ষা নিরীক্ষা করে। এতে করে ঔষধের মানের ওপর তীক্ষ্ণ নজর থাকে। কোন ঔষধে ঝামেলা পেলে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেয়। কিন্ত প্রসাধনীর ক্ষেত্রে ঠিক ততটা নিয়মকানুন মানা বা ব্যবস্থা নেয়া হয় না।
জেনে নিন কিভাবে আদা পানি খেয়ে লিভার ডিটক্স করবেন

আমাদের দেশে প্রসাধনী সামগ্রী নিয়ে একেবারেই নিরীক্ষা চালানো হয় না। মাঝে মাঝে জলিল মণ্ডলের ভোক্তা অভিযানে উঠে আসে, গা শিউড়ে ওঠা খবর ! উন্নত দেশগুলোতেও অনুমোদিত প্রসাধন সামগ্রীর তেমন পরীক্ষা হয় না। সেখানেও কসমেটিক্সে ব্যবহৃত রাসায়নিক নিয়ে খুব কম পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানো হয়।
এসব অল্প গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফল নিয়ে কাজ করে নিয়ন্ত্রনকারী সংস্থা। প্রডাক্ট বাজারজাত করার অনুমোদন দিয়ে দেয়। এখন আমরা কি করতে পারি ? নিজেরা সচেতন হতে পারি। আমি আশা করি এ লেখা থেকে আপনারা মোটামুটি বুঝতে পেরেছেন। আরও জানুন কি কি সর্বনাশ করতে পারে কসমেটিক্স।
পেটের বিভিন্ন সংক্রমণ ন্যাচারালি প্রতিকার করুন

পারসোনাল কেয়ার বা কসমেটিক্স আইটেমে কি ক্ষতি
১. ইউরিয়া – ছোট বেলায় প্রথম ইউরিয়ার ব্যবহার দেখেছিলাম ইরি ধান ক্ষেতে। তারপর এটা বিস্তৃতি লাভ করেছে। মুচমুচে মুড়িতে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। গবেষণা বলছে বেবি কেয়ার প্রডাক্টে ইউরিয়া আছে। আরও বলছে সব ধরনের প্রসাধন সামগ্রীতেই এটা ব্যবহার করা হয়। এর কারণে ত্বকের অ্যালার্জি, ক্যান্সার বাড়ছে। বিকলাঙ্গ শিশু জন্মের একটা কারন এসব কসমেটিক্স।
২. ডাই–অক্সেন – সাবান, শ্যাম্পু, টুথপেস্ট, মাউথওয়াসে থাকে। প্রতিদিন এগুলো আমরা ব্যবহার করি। ত্বক, স্তন ও লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি রয়েছে এসবে।
৩. ফরমালডিহাইড – প্যাকেটকৃত কসমেটিক্স নষ্ট হতে পারে। তাই সব ধরনের প্রসাধনীতেই ফরমালিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। গবেষণা বলছে, এই রাসায়নিক অ্যালার্জি ও ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি করে থাকে।
৪. ভারী ধাতু – লেড, আর্সেনিক, কেডমিমাম, নিকেল, মারকারি ইত্যাদি ভারি ধাতু রঙিন প্রসাধন সামগ্রীতে ব্যবহার করা হয়। স্বল্পমেয়াদে এগুলো ত্বকের অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। তবে দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে এগুলো ত্বকের নিচে জমা হয়। এরপর শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে শ্বাসকষ্ট, বুক ব্যথা, বমি, মাথা বাথা, ডাইরিয়া, ক্যান্সার, হাড় ক্ষয়, স্নায়ু, লিভার ও কিডনি রোগের কারণ হতে পারে।
হার্ট অ্যাটাকের মহামারি সহজ প্রতিকারের উপায় জেনে নিন

৫. প্যারাবেন – এর আছে জীবাণুনাশক ক্ষমতা। যে কারণে পচন রোধে প্রসাধনীর উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত ডিওডরেন্ট, লোশন ও চুলের প্রসাধন সামগ্রীতে থাকে। আরও থাকে চুলে ব্যবহার করা নারিকেল তেলে। প্যারাবেন ক্যান্সার ও ত্বকের অ্যালার্জির কারণ হতে পারে।
৬. থেলেট – নেল পলিশ, লোশন, পারফিউম, চুলের কসমেটিক্স সামগ্রীতে থাকে। এটি স্তন ক্যান্সার ও বিকলাঙ্গ শিশু জন্ম দেওয়ার কারণ হতে পারে।
৭. ট্রাইক্লোসান – সাবান ও শ্যাম্পুতে জীবাণুনাশক হিসেবে থাকে। হরমোনজনিত সমস্যা, লিভার ও কিডনি রোগের কারণ হতে পারে।
৮. রঙ ও সুগন্ধি – কসমেটিক্স তৈরিতে নানা ধরনের কৃত্রিম রঙ ও সুগন্ধি যোগ করা হয়। এগুলো ত্বকের অ্যালার্জি থেকে শুরু করে ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। উল্লেখিত রাসায়নিক উপাদানগুলো ছাড়াও আরও অনেক রাসায়নিক দ্রব্য দৈনন্দিন ব্যবহার করা কসমেটিক্সে থাকে।
আজীবন কিডনি সুস্থ রাখুন ন্যাচারালি

প্রতিরোধে করণীয়
১. ত্বকের জ্বালাপোড়া, লাল হয়ে যাওয়া অ্যালার্জির লক্ষণ। কোনো প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহার করার সাথে সাথে যদি এমন টা হয়। তাহলে বিপদ দরজায় কড়া নাড়ছে। আঁচ করার সাথে সাথে তা বন্ধ করে দিন।
২. মেকআপ যদি বিভিন্ন অকেশনে ব্যবহার করেন, তাহলে ঠিক আছে। সেক্ষেত্রে হয়ত বছরে ৫/৬ বার মেকআপ নেয়া হতে পারে। কিন্ত মেকআপ যদি মাঝেই মাঝেই নেন, তাহলে বিপদের সমুহ সম্ভাবনা। বিপদ মুক্ত থাকতে মেকআপ নিবেন না। যদি অকেশনে নেন, তাহলে প্রয়োজন শেষে যত দ্রুত সম্ভব মেকআপ পরিষ্কার করুন।
৩. নতুন প্রসাধন সামগ্রী কেনার সময় গায়ে লিখিত উপাদানগুলো দেখে নিতে পারেন। ব্যবহারের আগে ত্বকের চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৪. সাবান ও সুগন্ধি যত কম ব্যবহার করবেন তত ভালো। ইদানিং ন্যাচারাল হোম মেইড সাবান পাওয়া যায়, সেটা ব্যবহার করতে পারেন। ত্বক আদ্র রাখতে ন্যাচারাল উপাদান ব্যবহার করুন। যেমন – অলিভ অয়েল, নারকেল তেল, সরিষার তেল পেট্রোলিয়াম জেলি ইত্যাদি।
ফ্যাটি লিভার দূর করুন মাত্র একমাসে

কসমেটিক্স আইটেম না ব্যবহারে সুস্থতার উদাহরন
তারা রাস্তায় চলাফেরা করে। কখনো ৩/৪ জন মেয়ে দল বেঁধে। আবার কখনো বা একা একা। পিঠে ঝোলানে থাকে ‘কাপড়ের পোটলা’। সারাদিনে প্রচুর হাঁটে। গায়ে রোদ লাগে। তাদের ত্বকের দিকে খেয়াল করুন। দারুন গ্লামারস এদের ত্বক। মুখে ব্রন নেই। শারীরিক গঠনও অনেক সুন্দর।
কসমেটিক্স আইটেম দোকানে উপচে পরা ভিরে এদের পাবেন না। কারন তাদের দামী দামী প্রসাধনী কেনার পয়সা নেই। তাই তারা কখনো মেকআপ নেয় না। তারপরেও এরা এতটা আকর্ষণীয় ত্বকের অধিকারী কিভাবে ? দেহের গঠন কেন অন্য মেয়েদের থেকে সুন্দর ? কারন তারা প্রচুর হাঁটে। আর গায়ে রোদ লাগায়। ফাস্ট ফুড খায় না। এরা আমাদের ‘বেদে মেয়ে’। আজেকেই খেয়াল করবেন। অবাক হয়ে যাবেন !
পারসোনাল কেয়ার বা কসমেটিক্স রিসার্চ পেপার পড়ুন

সেলিম হোসেন – তাং ২৬/১০/২০২৫ ইং – প্রতীকী ছবি গুলো পেক্সেলস থেকে নেয়া
Reference : Dr Eric berg, Dr Mujibul Haque, Dr Jahangir Kabir, Dr Mujibur Rahman, Dr Mandell, Dr Jason Faung, Dr Sten Ekberg and many medical health journals.

