ন্যাচারাল এন্টিবায়োটিক আদা খাওয়ার উপকারিতা
মারজুক রাসেল কে চিনেন ? সম্ভবত চিনেন, তিনি খুব পরিচিত ফিগার। নাটক, সিনেমা, গান, কবিতায় তার দক্ষতা। প্রতিদিনই আদা খান। তিনি একটু ভিন্ন ভাবে আদা খান। কিভাবে খান ? জানাব। আপনিও প্রতিদিন আদা খান। ভাবছেন, লাল চায়ের সাথে খাওয়ার কথা বলছি। হ্যাঁ, চায়ে তো অনেকে খাই। কিন্ত এছাড়াও খাই।
আমাদের দেশের প্রায় সবধরনের তরকারী রান্নাতে আদা ব্যবহার করা হয়। সেই তরকারী আমাদের পেটে যায়। তাই আদাও যায়। এটি একটি ভেষজ উপাদান। যেভাবেই খান না কেন, উপকারী খাদ্যবস্তু। উপকারী ভেষজ হিসেবে তামাম দুনিয়ায় পরিচিত। নানা ধরনের ভিটামিন ও দেহের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ ও পুষ্টি উপাদানে ভরপুর আদা। তাই আদাকে সব রোগ নিরাময়ের দাদাও বলা হয়।
প্রশ্ন হল, তরকারীর আদা কি রোগ নিরাময় করে ? আসলে রান্না করা আদায় খুব কম পরিমানে ঔষধি গুনাগুন থাকে। আদা থেকে ঔষধি গুনাগুন পেতে হলে, ভিন্নভাবে খেতে হবে। তবে অন্য উপায়ে খাওয়া কঠিন নয়, সহজ। আমরা আদা খাওয়ার উপকারিতা বিষয়ে বিস্তারিত জানব। আরও জানব কিভাবে খেতে হবে। রান্না করা আদা রোগ নিরাময়ে তেমন উপকারে আসে না।
ঔষধ ছাড়াই আজীবন সুস্থ থাকার উপায়

আদার পুষ্টিগুণ
আদা পুষ্টি গুনে ভরপুর। ভেষজ ঔষধি হিসেবে প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, ই ও বি৬ । এ ছাড়া রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, সিলিকন, সোডিয়াম, আয়রন, দস্তা, ক্যালসিয়াম, বিটা ক্যারোটিন জাতীয় খনিজ উপাদান। এসব উপাদান দেহের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।
১০০ গ্রাম আদায় থাকে ২ গ্রাম ফাইবার। কি অসাধারন ! ৮০ ক্যালরি, প্রোটিন ১.৮ গ্রাম। শর্করা ১৮ গ্রাম, ফ্যাট ০.৭ গ্রাম। এতে আছে বায়োএকটিভ যৌগ জিঞ্জারল এবং শোগাওল ও জিঞ্জারন। এর সব পুষ্টিগুণ শরীরকে সুস্থ রাখতে নানা দিক থেকে কাজ করে। তাই এই ন্যাচারাল এন্টিবায়োটিক আমাদের প্রতিদিন খাওয়া প্রয়োজন।
সারাজীবন স্লিম এবং সুস্থ থাকার ন্যাচারাল উপায়

আদা খাওয়ার উপকারিতা ১০ টি
১. খাবার হজমে আদা
-
আদা খাওয়ার উপকারিতা, এটা হজম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
-
পেটে গ্যাস, অম্বল বা বমি বমি ভাব দূর করে।
-
খাবার হজমে সমস্যা হলে এক কাপ আদা চা খুব কার্যকর।
২. মর্নিং সিকনেস
-
গর্ভবতী নারীদের সকালে বমি ভাব হলে আদা খাবেন। এককাপ গরম পানি নিবেন। তারমধ্যে আধা ইঞ্চি আদা ভালো করে ছেঁচে নিয়ে ছেড়ে দিবেন। চায়ের মত করে খাবেন।
-
সি-সিকনেস বা ট্র্যাভেল সিকনেসেও মুখে চিবিয়ে খেতে পারেন।
৩. প্রদাহ কমানোয়
-
আদায় আছে শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি যৌগ “জিঞ্জারল”। যা প্রদাহ কমায়।
-
জয়েন্টের ব্যথা বা বাত রোগেও কাজ করে।
৪. কাশি – ঠাণ্ডা লাগায় আদা
-
গলা ব্যথা, কাশি, নাক বন্ধ ইত্যাদি ঠান্ডাজনিত সমস্যায় আদা খুব উপকারী।
-
আদা-চা খেলে বেশ আরাম পাওয়া যায়।
৫. রক্তে শর্করা
-
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত আদা খাওয়া টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো।
ঔষধ ছাড়াই ডায়াবেটিস থেকে মুক্তির উপায়

৬. ইমিউন শক্তিশালী করে
-
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ‘জিঞ্জারল’ থাকায় এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
৭. মাইগ্রেনের জন্য
-
আদা খেলে মাথা ব্যথা ও মাইগ্রেনের তীব্রতা কমে।
৮. পেট ব্যথা মাসিকের সময়
-
মেয়েদের মাসিক চলাকালীন পেট ব্যথা হয়। এসময় কাঁচা আদা চিবিয়ে খাবেন। ব্যাথা উপশম করবে।
৯. কোলেস্টেরল কমায়
-
শরীরে প্রদাহ থাকলে, লিভার কোলেস্টেরল উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। নিয়মিত আদা খেলে প্রদাহ কমে যায়। তাই লিভার কে কোলেস্টেরল উৎপাদন করতে হয় না। বিধায় টেস্ট করলে শরীরে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল পাওয়া যায় না।
১০. ওজন কমানোতে
-
আদা মেটাবলিজম বাড়ায়, ফলে ক্যালরি বার্ন দ্রুত হয়। এ ছাড়া নিয়মিত আদা খেলে চুল পড়া কমানো কিংবা কান ব্যথাসহ নানাবিধ সমস্যায় এটি বেশ দারুণ কাজ করে। এক কথায় বিভিন্ন সমস্যার একটি অন্যতম সমাধান হলো আদা। তাই একে রোগের দাদা বলা হয়।
চমৎকার উপকারি খাবার ব্লাক রাইস

কাঁচা আদার উপকারিতা
আদা কাঁচা খেলে গলাব্যথা দ্রুত উপশম হয়। বাতের ব্যথা দূর করতেও এটি কাঁচা চিবিয়ে খাবেন। কাঁচা আদা খেলে সর্দি-কাশিতে বেশ উপকার পাওয়া যায়। এটি কাঁচা খেলেও আপনার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। দাঁতে থাকা জীবাণু ধ্বংস করতে এটি খেতে পারেন কাঁচা বা রস করে। বমি বমি ভাব দেখা দিলে অল্প করে কাঁচা আদা লবণ দিয়ে খেয়ে নিন।
আদা খাওয়ার নিয়ম
এটি থেকে সম্পূর্ণ উপকার বা এর ঔষধি গুণ পেতে হলে নিয়ম অনুযায়ী এটি খেতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী এটি ছেঁচে বা পিষে খেতে পারেন। এ ছাড়া লিকার চায়ের সঙ্গে ছেঁচে বা পিষে, টুকরো করে কেটে কাঁচা খাওয়া যায়। অনেকেই আদা পিষে ফ্রিজে রেখে খান। তবে এভাবে ফ্রিজে রেখে খেলে এর থেকে ঔষধি গুণ পাবেন না।
যে কারনে প্রতিদিন গ্রিন টি খাবেন আজ থেকেই

আদার অপকারিতা
আদার কি অপকারিতা আছে ? উত্তর হ্যাঁ এবং না দুটোই হতে পারে। কোন জিনিস যত ভালোই হোক তা অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। তেমনি আদাও অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। আপনি সারাদিনে এক বা দের ইঞ্চি পরিমান আদা ছেঁচে বা চিবিয়ে খেতে পারেন। এই পরিমান আদা চিবিয়ে খেতে গেলে ঝালে মুখগহ্বর জলে যেতে পারে। কিন্ত মারজুক রাসেল অনায়াসে চিবিয়ে খেয়ে ফেলেন।
আদা চা ৩/৪ কাপের বেশি পান করলে মাইগ্রেনের সমস্যা কমার বদলে বাড়তে পারে ৷ পাশাপাশি অনিদ্রার সমস্যাও দেখা দিতে পারে। যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তারা এটি বেশি খেলে শরীরে চুলকানি, শরীর ও মুখ ফুলে যেতে পারে। এটি পরিমাণের চেয়ে বেশি খেলে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ বেশি কমে যেতে পারে, যা ক্ষতির কারণ। অতিরিক্ত খেলে ডায়রিয়া, পেটব্যথা এসব সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

আদার বেপারির জাহাজের খবর
‘আদার ব্যাপারীর জাহাজের’ খবর একটি প্রবাদ। বড় বিষয়ে নগণ্য লোকের মাথা ঘামানো বোঝাতে ব্যবহার করা হয়। আদার ব্যাপারীদের একসময় নগণ্য মনে করা হত। জাতীয় অর্থনীতিতে তাদের তেমন অবদান ছিলনা। তারা এখন আর মোটেও নগণ্য বা তুচ্ছ নন। দিন দিন ফুলেফেঁপে বড় হচ্ছে আদার বাজার।
আমরা এখন বিশ্বের ২য় বৃহত্তম আদা আমদানিকারক দেশ। আন্তর্জাতিক আমদানি-রপ্তানি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘ভোলজা’ তথ্যটি প্রকাশ করেছে। প্রতি বছর দেড় লাখ টনেরও বেশি আদা আমদানি হয়। আদা আমদানিতে প্রথমস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তৃতীয় স্থানে আছে ভারত।
২০২২-২৩ অর্থবছরে আদার উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৯২ হাজার টন। মোট চাহিদার প্রায় ৪২ থেকে ৪৫ শতাংশই আমদানি করতে হয়েছে। দেশে আদার চাহিদা বছরে ৩ লাখ টনের বেশি, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ২০২৩ সালের প্রতিবেদন।
চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড থেকে বছরে এক থেকে দেড় লাখ টন আদা আমদানি করা হয়। মেটানো হয় স্থানীয় চাহিদা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের আদার বাজার তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার মত।
দ্রুত পচনশীল এই পন্য। তাই একবারে বেশি পরিমাণে আমদানি করা যায় না। অল্প অল্প করে সারাবছর ধরে জাহাজে বিশেষ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কন্টেইনারে আমদানি করা হয়। নিয়মিত বাজার দর ওঠানামা করে। এ কারনে বাজারের ছোট বেপারি জাহাজের খবর রাখেন।
কেন এত হার্ট অ্যাটাক, জেনে নিন প্রতিরোধের উপায় জেনে নিন

কবে থেকে জাহাজের খবর নেয়া শুরু
দেশে ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তম পাইকারী বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে। এখানকার ব্যবসায়ীরা বলেন, আশির দশক পর্যন্ত আদা উৎপাদনে মোটামুটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল বাংলাদেশ। সারাদেশ থেকে আদার চালান আসতো খাতুনগঞ্জে। দেশের চাহিদা মেটানোর পর অল্প কিছু আদা রপ্তানিও করতেন ব্যবসায়ীরা।
কিন্ত নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি এসে দ্রুত চাহিদা বাড়ে। উল্টো কমতে থাকে আদার উৎপাদন। এতে ঘাটতি দেখা দেয় বাজারে। সেই ঘাটতি মেটাতে খাতুনগঞ্জ ভিত্তিক আমদানিকারকরা প্রথমে চীন থেকে আদা আমদানি শুরু করেন।
এরপর ভারত থেকেও আমদানি শুরু হয়। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলেন, অর্থনীতির আকার বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা। আগে যেখানে মানুষ সপ্তাহে একদিন বা দুইদিন মাংস খেত। বর্তমানে সেখান প্রায় প্রতিদিনই মাংস খায় মানুষ। বিশেষ করে, ব্রয়লার মুরগীর উৎপাদন বাড়ায় ও দাম মোটামুটি কম হওয়ায় মাংস খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। যা আদার চাহিদা বাড়ার অন্যতম কারণ।
আদা খাওয়ার উপকারিতা জানতে একটি রিসার্চ পেপার পড়ুন

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করে দিন। সেলিম হোসেন – তাং ২৯/০৮/২০২৫ ইং – প্রতীকী ছবি গুলো পেক্সেলস থেকে নেয়া।
Reference : Dr Eric berg, Dr Mujibul Haque, Dr Jahangir Kabir, Dr Mujibur Rahman, Dr Mandell, Dr Jason Faung, Dr Sten Ekberg and many medical health journals.