সুস্থ আর উজ্জ্বল ত্বক মনকে উৎফুল্ল করে। ভালোলাগা ধরে রাখতে মেয়েরা অনেকে টাকা খরচ করে ত্বকের পিছনে। তবে পুরোটাই ভুল জায়গায়। কেমিক্যাল কস্মেটিক্সের পিছনে। সুস্থ ও উজ্জ্বল ত্বকের জন্য সঠিক কাজটি করতে হবে। প্রয়োজন নিয়মিত যত্ন, ভালো খাদ্যাভাস। মুলত খাদ্যের ভিটামিন মিনারেল ত্বককে ভিতর থেকে উজ্জ্বল করে, সুস্থ রাখে।
ত্বকের জন্য সবচেয়ে ভালো খাবার হল ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার। যা সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে। বাইরের চাপ থেকে নিরাপদে রাখে। উজ্জ্বল ত্বকের জন্য কি কি খাবার দরকার, সেগুল নিয়ে বিস্তারিত জানিয়ে দিচ্ছি।
ন্যাচারালি আজীবন মেছতা মুক্ত থাকার উপায়

১. বেরি জাতীয় ফল
বেরি জাতীয় ফল, স্বাদে বেশ ভালো। সাম্প্রতিক এক গবেষণার তথ্য অনুসারে, বেরি জাতীয় এই ফলগুলো খুবই পুষ্টিকর। প্রায় সবাই জানি যে, প্রাকৃতিক ফল স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী এবং তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। বেরি জাতীয় ফলগুলোতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস থাকে।
এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস মানবদেহের ত্বকের ক্ষতি করতে পারে এমন উপাদান থেকে রক্ষা করে। এই উপাদান টি আমাদের কোষকে সুস্থ রাখে। এটি ফাইবার এবং ত্বকের অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি বুড়িয়ে যাওয়াকে ধীর করে দেয়। বলিরেখা এবং ফ্রি র্যাডিক্যালের কারণে ত্বকের ক্ষতি কমাতে সাহায্য করতে পারে। এগুলিতে অ্যান্থোসায়ানিনও থাকে, যা কোলাজেনের ভেঙে যাওয়া কমিয়ে দেয়। একই সাথে নতুন নতুন কোলাজেন তৈরি করে।
কোলাজেন হল ত্বকের গঠনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় প্রোটিন। এটি ত্বকের কোষগুলিকে মেরামত করতে সাহায্য করে। ত্বককে আর্দ্র, মসৃণ এবং দৃঢ় রাখে। এছাড়াও, বেরি ত্বকের প্রদাহ কমায় এবং ক্ষত নিরাময়ের কাজ করে। আমাদের দেশে জাম বেরি জাতীয় ফল। ইদানিং স্ট্রবেরিও পাওয়া যায়।
দ্রুত ওজন কমাবেন সাস্থ্যকর উপায়ে

২. চিয়াসিড
সাস্থ্য বিজ্ঞানিরা এই বীজকে সুপার ফুড ঘোষণা করেছেন। এ কারনে সারা বিশ্বে এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ক্ষুদ্র বীজগুলিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ওমেগা-৩ আছে। এই প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড উজ্জ্বল ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। চিয়াসিড এছারা আরও যে কাজ গুলো করে।
- ত্বকের ক্ষতিকারক উপাদান গুলোকে দূর করে।
- যাদের বয়স কিন্ত দেখতে বেশি বয়স্ক লাগে তারা নিয়মিত খাবেন।
- ত্বককে প্রদাহ থেকে রক্ষা করে।
- ব্রণের কারণে তৈরি হওয়া লালচে ভাব দূর করে।
- ত্বকের দাগ কমাতে সাহায্য করে।
- ত্বককে পরিস্কার এবং সুস্থ রাখে।
৩. অ্যাভোকাডো
অ্যাভোকাডো বেশ জনপ্রিয় খাবার। বিভিন্ন ভাবে এটি খাওয়া যায়। যাদের এটি খাওয়ার সুযোগ আছে, তারা ত্বকের যত্নে এগিয়ে আছেন। অ্যাভোকাডো ভিটামিন সি, ই, ক্যারোটিনয়েড এবং স্বাস্থ্যকর চর্বির চমৎকার উৎস। এই পুষ্টি উপাদানগুলি ত্বকের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বকের আর্দ্রতা এবং স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
- ক্যারোটিনয়েড অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। ত্বককে অতিবেগুনী রশ্মির সংস্পর্শ থেকে রক্ষা করে। ত্বকের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। এছাড়াও, ক্যারোটিনয়েড ত্বকের সঠিক গঠন এবং উজ্জ্বলতা প্রদান করে।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ছাড়াও আছে ভিটামিন ই। এর ময়েশ্চারাইজিং এবং নিরাময় বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। এটি ত্বকের সুস্থতার পথের বাধা গুলি দূর করে।
যে বই বদলে দিতে পারে আপনার জীবন

৪. সামুদ্রিক মাছ
রুপচাদা, কোরাল, ইলিশ, স্যামন, ম্যাকেরেল, হেরিং এবং সার্ডিনের মতো চর্বিযুক্ত মাছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। যা ওমেগা-৩ নামেও পরিচিত। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বকের জন্য ত্বকের জন্য অসাধারন উপকারি। এর মধ্যে আরও রয়েছে
- অকালে বুড়িয়ে যাওয়া ঠেকানোর ক্ষমতা।
- ব্রন প্রবনতা দূর করে।
- ত্বকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- ত্বকের জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তি দেয়।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে। সূর্যের আলো থেকে সৃষ্ট প্রদাহ, এ থেকে ত্বককে রক্ষা করে।

৫. আখরোট
আখরোটের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ থাকে। এগুলি ভিটামিন ই এবং ভিটামিন বি৫ এরও একটি চমৎকার উৎস। এই মচমচে বাদামে ত্বকের জন্য অনেক উপকারিতা রয়েছে। প্রতিদিন ৩/৪ টা বাদাম খেলে যে উপকার পেতে পারেন।
- ত্বক ন্যাচারালি পরিস্কার থাকবে। অযাচিত ফেসওয়াস লাগবে না।
- অকালে ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া ঠেকাবে।
- ত্বকের ময়েশ্চারাইজিং ধরে রাখবে।
- ত্বকের প্রদাহ এবং ব্রণ কমাবে।
- রোসেসিয়া এবং একজিমার মতো ত্বকের সংক্রমণের কারণ হতে পারে এমন সংক্রামক জীবাণু ধ্বংস করে আখরোট।
৬. ডার্ক চকলেট
ডার্ক চকলেট বাজার থেকে কিনলে প্যাকেটের গায়ের লেখা খেয়াল করুন। কমপক্ষে ৭০ ভাগ চকলেট কথা লেখা থাকতে হবে। এতে ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং খনিজ পদার্থের মিশ্রণ থাকে। যা ত্বককে ভেতর থেকে পুষ্টি জোগায়।
ত্বকের সাস্থ্য এবং তারুন্য ধরে রাখে। ডার্ক চকোলেটে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড ত্বককে সূর্যের আলোর ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। কোলাজেনের ভেঙে যাওয়া প্রতিরোধ করে। ত্বকের ঘনত্ব এবং হাইড্রেশন উন্নত করে। পরিমিত পরিমাণে ডার্ক চকোলেট খেলে ত্বকের গঠন মসৃণ হবে এবং বলিরেখাও কম পড়বে।
বউয়ের হাতে বেলুনের বারি কেন খেল অমিত

৭. সবুজ চা
গবেষণায় দেখা গেছে যে, গ্রিন টি তে প্রদাহ বিরোধী এবং ক্যান্সার বিরোধী কার্যকারিতা রয়েছে। এটি বিভিন্ন ত্বকের রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। গ্রিন টি ভিটামিন ই এবং ভিটামিন বি১২ সমৃদ্ধ যা কোলাজেনের মাত্রা বজায় রাখে। ত্বকের কোষ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। গ্রিন টি পান করলে ত্বকের বার্ধক্য দেরিতে আসে। ত্বকের ছিদ্রগুলি খুলে যায় এবং ত্বক উজ্জ্বল দেখায়।
গ্রিন টি নিয়ে বিস্তারিত জানতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

৮. টমেটো
টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে লাইকোপিন, বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই থাকে।
- লাইকোপিন একটি খাদ্যতালিকাগত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বকের ক্যান্সার এবং অতিবেগুনী রশ্মির কারণে ত্বকের অন্যান্য ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে।
- টমেটোতে থাকা ভিটামিন সি কোলাজেন উৎপাদন বাড়াতে এবং ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা উন্নত করতে সাহায্য করে।
এছাড়াও, টমেটো খাওয়া ত্বকের জ্বালাপোড়া কমাতে এবং ক্ষত নিরাময়কে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করতে পারে।
কোথায় কামড় দিল সাপ, যে কারনে নিউজ ভাইরাল

৯. মিষ্টি আলু
মিষ্টি আলু বিটা ক্যারোটিনের একটি চমৎকার উৎস। যা শরীরে ভিটামিন এ তে রূপান্তরিত হয়। ভিটামিন এ একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা ত্বককে সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
এতে ভিটামিন সি এবং ইও প্রচুর পরিমাণে থাকে।
যা ত্বককে কোমল, উজ্জ্বল এবং সুস্থ রাখার জন্য অপরিহার্য। মিষ্টি আলু পেটের জন্যও ভালো। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। যা সুস্থ ত্বকের সাথে সম্পর্কিত।
মিষ্টি আলু হতে পারে একটি দারুন এক বেলার খাবার

১০. ব্রকলি
ত্বকের জন্য কোন সবজি খাবেন ? ব্রকলি খান, এটি ত্বকের জন্য সেরা। ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই সমৃদ্ধ এবং এতে লুটেইন রয়েছে। এই ক্যারোটিনয়েড যা আপনার ত্বককে বিপজ্জনক রাসায়নিক এবং ফ্রি র্যাডিকেল থেকে রক্ষা করে। এই ক্রুসিফেরাস সবজিটি খেলে আপনার ত্বক উজ্জ্বল এবং দাগমুক্ত থাকবে। একই সাথে ত্বক মিইয়ে পরা ত্বক পুনরায় উজ্জ্বল হবে।

১১. টক জাতীয় ফল
সাইট্রাস অর্থাৎ টক ফল ত্বকের জন্য ভালো। কারণ এগুলি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। প্রকৃতিতে পাওয়া এই ভিটামিন কার্যকরভাবে ফ্রি র্যাডিকেল ধ্বংস করতে এবং ত্বকের বার্ধক্য রোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, সাইট্রাস ফলগুলি অতিরিক্ত পিগমেন্টেশনের কারণে সৃষ্ট কালো দাগ দূর করতে পারে। কালো দাগ দূর হলে, ত্বক উজ্জ্বল, সুন্দর দেখাবে।
বিজ্ঞান ভিত্তকি লম্বা হওয়ার উপায়

১২. ক্যাপসিকাম বা বেল পেপার
ক্যাপসিকামে ভিটামিন সি, এ এবং বিটা ক্যারোটিনের মতো অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। যা রোদের কারণে ত্বকের বলিরেখা এবং ক্ষতি প্রতিরোধে সাহায্য করে। এগুলি ত্বককে মসৃণ করতে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা এবং প্রাণশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করতে পারে।
নিজেকে সুন্দর দেখাতে, আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে এই ১২ টি খাবারের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখুন। সেই সাথে হেলদি লাইফ স্টাইল অনুসরন করুন। আজীবন কোন কেমিক্যাল কস্মেটিক্স লাগবে না।
ত্বকের উজ্জ্বলতায় ব্রিটিশ একাডেমির রিসার্চ পেপার দেখুন

সেলিম হোসেন – ০৫/০৭/২০২৫ ইং – প্রতীকী ছবি গুলো পেক্সেলস থেকে নেয়া।