সহিংস মুভি গুলোর ৫ টি
প্রচণ্ড গোলাগুলি, বোমাবাজি, খুন, রক্ত, সেক্স সব মিলিয়ে তৈরি হয় একই সহিংস মুভি। এটা দেখে কিশোর, তরুন, তরুণীরা প্রচণ্ড উত্তেজনা অনুভব করেন। হারিয়ে যান এক কল্পনার জগতে। আমার আজকে দেখব, তাদের মনোজগতে কি পরিবর্তন হয়। বাস্তবে কি ঘটনা ঘটতে পারে। তার আগে সহিংস মুভি সম্পর্কে ধারনা নেই।
১. ” তাজারু” ইন্ডিয়ান মুভি
শহরময় চলছে খুন, ধর্ষণ। চলছে ভিকটিম পরিবার গুলোতে আহাজারি। কেন এত অনাচার ? কারন পত্রিকায় নাম উঠতে হবে, পাবলিসিটি বাড়বে। গুণ্ডামিতে যত পাবলিসিটি তত দ্রুত আন্ডারওয়ার্ল্ড জগতে পদায়ন। এরকমই এক দুর্ধর্ষ আন্ডারওয়ার্ল্ড জগত নিয়ন্ত্রণ করে গ্যাংস্টার ডলি।
ডলি কে থামাতে হবে। শহরে ফেরাতে হবে শান্তি শৃঙ্খলা। তাকে থামানোর দায়িত্ব এসে যায় ইন্সপেক্টর শিবার ওপর । বাকি মুভি জুড়ে পুরোটাই চলে শিবা আর ডলির ইদুর বিড়াল খেলা। এমনি একটি মুভি তাগারু, যা ২০১৮ সালের ব্লকবাস্টার তকমা অর্জন করে।
সুপারস্টার শিব রাজকুমার থাকা সত্ত্বেও এই মুভিতে নজর কাড়বে ভিলেন ডলি ক্যারেক্টারে অভিনয় করা দুর্ধর্ষ অভিনেতা ধনঞ্জয়। এই ভিলেন দারুন ভাবে কেটেছে দর্শক হৃদয়ে।
আমাদের পূর্ব পুরুষদের বিনোদনের গল্প পড়তে আপনার ভালোই লাগবে।
২. ” গজ কিশোরী ” ইন্ডিয়ান মুভি
ইয়াস এখন সুপার স্টার। সে সুপার স্টার বনে গেছে মুলত কেজিএফ মুভি দিয়ে। আমরা আলোচনা করছি সহিংস মুভি নিয়ে। এর আগে ইয়াস কিছু সহিংস মুভি দিয়ে ভালো পরিচিতি পায়। তেমনি একটি মুভি গজ কিশোরী। মন্দিরে বড় কর্তা চাচ্ছিলেন তার ছেলে কৃষ্ণ ও ধর্ম জাতক হয়ে মন্দিরে হাল ধরুক। কিন্তু কৃষ্ণ ধর্মে-গরমে কোন আগ্রহ নেই।
তবে ভাগ্য তাকে নিয়ে ফেলে এক বনের ভিতর। যেখানে গিয়ে সে পায় তার পূর্বজীবনের খোঁজ। মিথলজির সাথে একশন এর চমৎকার মিশন। এখানে সহিংসতা আছে, কল্পনা আছে। মুভিটি দর্শকদের ভালোভাবে নাড়া দেয়।
৩. ” ভেলাইকারান ” ইন্ডিয়ান মুভি
ফুড বিজনেস বর্তমানে সবথেকে লাভজনক বিজনেস। এর একটা একই সাথে এতে জড়িত আছে খাদ্য ভেজালের মত দুর্নীতি। সেই সাথে এখন যুক্ত হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াতে ফুড মার্কেটিংয়ের নানা রকম ফন্দি।
এই সবকিছুতে এক মোড়কে মুড়িয়ে ভেলাইকারান নামে চমৎকার এক থ্রিলার বানিয়েছেন পরিচালক মোহন রাজা।
রেড বোলে ছিলেন শিব কাটতে, তবে এটা মালায়লাম ফাজিল এ প্রথম তামিল সিনেমা হিসেবে খুব উল্লেখযোগ্য। নানা রকম কুকর্ম দিয়ে পরিপূর্ণ এই মুভি। দারুন আলোচিত হয় দর্শকদের মাঝে।
জামাইদের আচরন কি সব দেশে একই রকম ? জামাই কাণ্ডে ভাইরাল নিউজ।
৪. রেবেল মুন: পার্ট টু—দ্য স্কারগিভার হলিউড মুভি
ওটিটি প্লাটফর্ম নেটফ্লিক্স এর জন্য সহিংস মুভি টি নির্মাণ করেছেন জ্যাক স্নাইডার। মুভিটি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাচ্ছে আগামী ২১ ডিসেম্বর। এর দ্বিতীয় পর্ব তৈরি হবে। সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত এখনি ফাইনাল। দ্বিতীয় পর্ব ‘দ্য স্কারগিভার’ একই প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাবে আগামী বছরের ১৯ এপ্রিল। এতে অভিনয় করছেন সোফিয়া বুতেল্লা। এই মহাজাগতীয় গল্পে কোনো এক গ্যালাক্সিতে অবস্থিত কৃষিনির্ভর এক কলোনিকে দেখা যাবে। যারা স্বৈরাচারী নেতা রিজেন্ট ব্যালিসেরাসের ইম্পেরিয়াম আর্মির আগ্রাসনের কবলে পড়েছে। ঘটবে একের পর এক সহিংস ঘটনা।
৫. দ্যা টারমিনেটর এনিমে হলিউড মুভি
সেই ১৯৯০ এর দশক থেকে চলে আসছে ‘দ্য টার্মিনেটর’। ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল মারপিটে ভরপুর এই সহিংস মুভি। মুলত বৈজ্ঞানিক কল্প নির্ভর কাহিনী। এরপর বেশ কয়েকটি পর্ব রিলিজ হয়েছে এবং যথারীতি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই মুভিগুলোতে আর্নলড শোয়ার্জনিগার অভিনয় করে বিখ্যাত হয়ে আছেন। আর্নলড শোয়ার্জনিগার অভিনিত টার্মিনেটর টু: জাজমেন্ট ডে সিনেমা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে তুমুল জনপ্রিয়। টার্মিনেটর নিয়ে এবার ‘এনিমে’ নির্মাণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে নেটফ্লিক্স। স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ইতোমধ্যে এই সিরিজের ট্রেলার প্রকাশ করা হয়েছে। তরুন তরুণীরা এবারো হুমড়ি খেয়ে পড়বে এই সহিংস মুভি দেখতে।
সহিংস মুভি দেখলে কি হয়
তরুন তরুণীদের বিনোদনের প্রধান আকর্ষণ সহিংস মুভি ও গেমস। এসব মুভি বা ভিডিও গেমসে দেখানো সহিংসতা সাময়িকভাবে বিনোদন দিলেও দীর্ঘ মেয়াদে মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায়। করতে পারে মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত ক্ষতিগ্রস্ত।
মানুষ কেন সহিংস হয়। কীভাবে সহিংস হয়ে ওঠে জানতে মনোবিজ্ঞানে অনেক গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। অহিংস যোগাযোগের প্রবক্তা মার্কিন মনোবিজ্ঞানী মার্শাল রোজেনবার্গের মতে, মানুষ জন্মগতভাবে সহিংস নয়। মানুষ যখন তার চারপাশে সহিংস ঘটনা অবলোকন করে, তখন অবচেতন মনে প্রভাব পরে। হতে পারে সেটা মুভি, গেমস বা বাস্তবতায়।
শিশুদের আক্রমণাত্মক আচরণ নিয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করেন অ্যালবার্ট বান্দুরা। সোশ্যাল লার্নিং থিওরির প্রবক্তা তিনি কানাডিয়ান-আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী। তার গবেষণার ফলাফল ষাটের দশকে করে বেশ হইচই ফেলে দেয়। ‘বোবো ডল এক্সপেরিমেন্ট’ নামে পরিচিত সেই গবেষণায় মোট ৭২ শিশুকে তিনটি দলে ভাগ করা হয়।
নাটক সিনেমা দেখা নিয়ে ডঃ আহাম্মদ উল্লাহ কি বলছেন।
প্রথম দলের শিশুদের সামনে একজন তরুণ মডেল একটা বোবো ডলকে (মানুষ আকৃতির পুতুল) সহিংসভাবে শারীরিক আঘাত করে। পাশাপাশি মৌখিকভাবেও তিরস্কার করে। দ্বিতীয় দলের শিশুদের সামনে তরুন মডেল বোবো ডলের সঙ্গে এই ধরনের কোনো আচরণ করে না। বরং স্বাভাবিকভাবেই শিশুদের সঙ্গে বিভিন্ন খেলনা দিয়ে খেলে। সবশেষ দলটির সামনে তরুন মডেল উপস্থাপন করা হয় না। তিনটি দলেরই শিশুদেরকে ছেলে এবং মেয়ে উপদলে ভাগ করা হয়। ছেলেদের সামনে ছেলে মডেল এবং মেয়েদের সামনে মেয়ে মডেলকে উপস্থাপন করা হয়। পরে দেখা যায়, যে দলের শিশুরা তরুণ মডেলের মাধ্যমে বোবো ডলকে সহিংসভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হতে দেখেছে, তাদের মধ্যে অন্য দলগুলোর তুলনায় আক্রমণাত্মক আচরণ বেশি দেখা গেছে। এই পরীক্ষায় মেয়েশিশুর তুলনায় ছেলেশিশুদের মধ্যে আক্রমণাত্মক আচরণের প্রবণতা বেশি দেখা গেছে।
ভয়ংকর খুন ও মারামারি আছে, এমন অ্যাকশন বা থ্রিলার সিনেমা বা ভিডিও গেমে সহিংসতা দেখার যে ক্ষতিকর প্রভাব, তার সঙ্গে এই পরীক্ষণের ফলাফল সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। এ ধরনের মুভিতে কেন্দ্রীয় চরিত্র প্রচুর পাওয়ারফুল হন। মারপিট খুনোখুনিতে সিদ্ধহস্ত থাকেন। সমাজে ঘটে চলা সব ধরনের অন্যায় কে তিনি সায়েস্তা করে নিজ হাতে, অস্ত্র নিয়ে সহিংস উপায়ে। এ ধরনের মুভি বা ভিডিও গেম অল্প বয়সীরা পছন্দ করে ও নিয়মিত দেখে। এ থেকে তাদের মধ্যে অবচেতনভাবেই সহিংস আচরণ অনুকরণের প্রবণতা তৈরি হতে পারে। আরও সুনির্দিষ্ট করে বলতে চাইলে মুভি বা ভিডিও গেমে সহিংস আচরণ দেখার ক্ষতিকর দিক গুলো নিম্নরূপ
সহিংসতা সংবেদনশীলতা কমিয়ে দেয়
ভার্চ্যুয়াল জগতে সহিংস মুভি দেখা বা গেমস খেলা শিশু-কিশোর ও তরুণদের মধ্যে নিষ্ঠুরতা বিষয়ে নির্লিপ্ততা চলে আসতে পারে। বাস্তব জীবনে ঘটা সহিংস আচরণ তাদের কাছে মনে হতে স্বাভাবিক ঘটনা। অন্যের দুঃখকষ্টে সমব্যথী হওয়ার পরিবর্তে তাদের মধ্যে দেখা দিতে পারে ভাবলেশহীন অনুভুতি। সুস্থ–স্বাভাবিক একজন মানুষকে অন্যের দুঃখকষ্ট আবেগ প্রবণভাবে তাড়িত করে। অন্যের বিপদে সুরক্ষা দেওয়ার ইচ্ছা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসে। কিন্তু সহিংস ভিডিও দেখতে থাকা ব্যক্তির মধ্যে এই মানবিক গুণের বিকাশ না–ও ঘটতে পারে।
মিন ওয়ার্ল্ড সিনড্রোম:
অনবরত সহিংস মুভি বা গেমস এর সংস্পর্শ অল্প বয়সীদের মধ্যে পৃথিবী সম্পর্কে একটি বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে পারে। তারা বিশ্বাস করতে শুরু করে, মানুষ মাত্রই সহিংস এবং পৃথিবীটা একটি খারাপ জায়গা। ফলে ভয়, সন্দেহ ও অন্যদের প্রতি অনাস্থা বেড়ে যেতে পারে।
মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে মানসিক সাস্থ্যের :
গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্রাতিরিক্ত সহিংস মুভি বা চলচ্চিত্র দেখলে উদ্বেগ, বিষণ্নতা ও মানসিক চাপ বাড়ে। সহিংসতার ভিডিও বা গ্রাফিক চিত্র তরুণদের মস্তিষ্কে যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে, তাতে তাদের অস্থিরতা বেড়ে যেতে পারে। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যেতে পারে। দেখা দিতে পারে ঘুমের সমস্যা। দীর্ঘদিন এমনটা চলতে থাকলে তা মানসিক রোগে রূপ নেয়। মারামারির ভিডিও দেখতে দেখতে মানুষের মধ্যে সহিংস আচরণ বেড়ে যায়।
আচরনে হিংস্রতা আসতে পারে :
সহিংস মুভি বা বিষয়বস্তুর সংস্পর্শ শিশু-কিশোর ও তরুণদের মধ্যে আক্রমণাত্মক চিন্তা, মনোভাব এবং আচরণ বাড়িয়ে তুলতে পারে। বিভিন্ন সিনেমা বা ভিডিও গেমে সহিংস আচরণকে পুরষ্কৃত হতে দেখলে দর্শক আনন্দিত হয়। এই আনন্দ তাদেরকেও অনুরুপ আচরনে উৎসাহিত করতে পারে। সহিংস আচরণের মাধ্যমে কোনো উদ্দেশ্য সফল হতে দেখলে তাদের মধ্যে সেই আচরণ অনুকরণের প্রবণতা দেখা দেয়। ফলে তাদের মধ্যে সহিংস আচরণ বেড়ে যায় ও সমস্যা সমাধানের মাধ্যম হিসেবে তারা সহিংসতাকেই বেছে নিতে চায়।
সহিংস মুভি নয়, মানসিক সাস্থ্যের যত্ন নিন
সহিংস ঘটনা, ভিডিও বা বিষয়বস্তুর সংস্পর্শ সমস্যা সমাধানের দক্ষতা তৈরিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কারও কোনো ক্ষতি না করে, কাউকে আঘাত না করেও যে সমস্যা সমাধান করা যায়। কিন্ত সহিংস চলচ্চিত্র এই বোধ তৈরি হওয়া বা চর্চা করার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বিভিন্ন মিডিয়ায় দেখা সহিংস কৌশল এবং অ্যাকশন মুভিগুলোতে সহিংসতার মাধ্যমে খুব সহজে এবং দ্রুত একটি সমস্যা সমাধান করতে দেখা যায়।
যারা এসব সিনেমা বা ভিডিও দেখে অভ্যস্ত, তাদের কাছে ধৈর্য নিয়ে ধাপে ধাপে একটি সমস্যা সমাধান করা সময়ের অপচয় মনেহয়। পরিবর্তে আক্রমণাত্মকভাবে কোনো কিছু আদায় করাকে মনে হয় তুলনামূলকভাবে সহজ আর বাঁচে সময়। সামাজিক পরিস্থিতিতেও তারা আলোচনার পরিবর্তে আক্রমণাত্মক উপায়ে কোনো কিছু সমাধানের চেষ্টা করে।
সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে :
পারস্পরিক বন্ধুত্ব বা পারিবারিক সম্পর্কের ক্ষতি বয়ে আনতে সহিংস চলচ্চিত্র। মমত্ববোধের অভাব ও আক্রমণাত্মক আচরণ তরুণদের সুস্থ সামাজিক সম্পর্কগুলো তৈরি করতে এবং বজায় রাখতে বাধা তৈরি করতে পারে। ধীরে ধীরে তারা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে।
সহিংস সিনেমা বা ভিডিও দেখে যে সবাই সমানভাবে প্রভাবিত হবে, এমনটি বলা যায় না। ব্যক্তির মেজাজ, ব্যক্তিত্ব, পারিবারিক পরিবেশ, সামাজিক অবস্থা ইত্যাদির ভিত্তিতে এর প্রভাব নির্ভর করে। সিনেমা ও ভিডিও গেমে সহিংসতার প্রভাব সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং নিজের ভেতর পরিমিতিবোধ তৈরি করাই এ ব্যাপারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। যারা ইতিমধ্যে এ ধরনের কনটেন্ট বা বিষয়বস্তুর প্রতি আসক্ত হয়েছেন, তাঁরা নিজেকে সময় দিয়ে ধীরে ধীরে এখান থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে পারেন। প্রয়োজনে কাউন্সেলিং সেবা নিতে পারেন।
সেলিম হোসেন –