পেছনে ফেলে আসা পরিবেশ, প্রতিবেশ। আগেকার দিনে বিয়ে হত কিভাবে ? দুটি গ্রামীণ গল্প। 2 story of the olden days of Bengal

পরিবেশ

পরিবেশ আমাদের বাংলা  

পেছনে ফেলে আসা , প্রতিবেশ। আমাদের কে টানে অতীতে, নস্টালজিয়ায়। সময় চলে আপন গতিতে, সময়ের সাথে পরিবেশ, সামাজিক যোগাযোগ, মানুষের অভ্যাস, আচার আচরন বদলে যেতে থাকে। বর্তমান সময়ে বিবাহযোগ্যা কন্যার পিতা পাত্র হিসেবে পছন্দ করেন, সরকারি চাকুরীজীবী। এখানেও অনেক বাছ বিচার আছে, চাকুরিভেদে পাত্রের গুরুত্ব কমবেশি হয়। আগেকার দিনে কিভাবে বিয়ে থা ব্যাবস্থা করা হত ? আমরা সেটা জানব, তার আগে পুরনো দিনের গল্প শুনি। 

আজকের দিনে আমদের চারপাশে রাস্তা ঘাট বাড়ি ঘরের দৃশ্য দ্রুত পরিবর্তন হয়। আগেকার দিনে তেমন টা হত না। গ্রাম বাংলা ছিল প্রায় নিশ্চল। মানুষ গুলোও এখনকার মত ধূর্ত, ধান্দাবাজ ছিল না। সারাদিন কাজকর্ম, গল্প গুজব, সময় বিশেষে খেলাধুলা, সন্ধ্যার পর ঘুম। এভাবেই চলছিল জীবন। 

এক যে ছিল টেপা, তার ছিল এক টেঁপি। দাদীর মুখে এমন গল্প শুনেছেন। 

পরিবেশ

 

আগের দিনের গ্রামীণ গল্প ১ 

এক নতুন জামাই এসেছে শ্বশুরবাড়িতে। জামাইয়ের জন্য খাওয়া দাওয়ার আয়োজন চলছে। জামাইও বেশ খেতে পছন্দ করেন। খাবার সামনে আসলে কোন পরিবেশে আছেন খেয়াল থাকেনা। খেতে শুরু করেন পরিবেশের তোয়াক্কা করেন না। তবে জামাই মানুষ হিসেবে ভালো এবং চটপটে। 

পাটি বিছিয়ে জামাই কে খাবার দেয়া হয়েছে। সম্বন্ধীর বউ এবং শালিরা আপ্যায়নের জন্য নিবেদিত। জামাই পাটিতে বসলেন। রসিকতা পূর্ণ বাক্যালাপ চলছে। নিজেদের গাছের খেজুর রস এবং অরগানিক গরুর দুধে তৈরি পায়েস অসাধারন সুগন্ধ ছড়াচ্ছে। পায়েস এর সুগন্ধ জামাইকে দিশেহারা করে তুলল। পরিবেশ লজ্জা বা ক্রাইটেরিয়ার ধার ধারলেন না। নিজেই এক চামচ তুলে নিয়ে মুখে দিলেন। মুখে পুরে দিয়ে বুঝলেন কি বোকামি টা করে ফেলেছেন ! পায়েস ছিল প্রচণ্ড গরম, জিহ্বা পুড়ে গেল। লজ্জা থেকে বাঁচতে জামাই হা করে উপরে ঘরের চালের দিকে তাকালেন। 

মাদকের বিষাক্ত ছোবল এখন ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামেও। 

পরিবেশ

পরিবেশ টা ভিন্ন। জামাই এমন ভান করলেন যে, তিনি ঘরের চালে কাঠের স্ট্রাকচার দেখছেন। বললেন – ভাবীজান আপনাদের ঘরের চালের কড়ি কাঠ গুলো খুবই সুন্দর। খুবই দামী হবে নিশ্চয়ই ! আমি তো এতক্ষন আশ্চর্য হয়ে ওটাই দেখছিলাম। জিহ্বার যন্ত্রণা সামলে কোনমতে বলতে পারলেন জামাই।   

ভাবীদের মধ্যে ছোটজন বেশ বাকপটু। তিনি বললেন – কাঠ গুলো আপনার ছোট সমন্ধি “জিহ্বা পোড় হাট” থেকে কিনছে। জিহ্বা পোড়া আমাদের বাড়ি বেশি দূরে না। আপনার ভাইরে কমুনে। তিনি আগামীকাল আপনারে ওই হাটে নিয়ে যাবে। বেড়াইয়া আইসেন। ছোট ভাবী কাপড়ের আঁচলে মুখ ঢেকে হাসি আটকালেন।   

জেনে নিন – কিভাবে সহজে ওজন কমাবেন এবং সুস্থ থাকবেন।  

পরিবেশ

আগের দিনের গ্রামীণ গল্প ২ 

খালেক কোলকাতা থেকে লেখাপড়া শেষ করে গ্রামে এসেছে। তার বাবা গ্রামের মাতব্বর। সম্পদশালী কৃষক মানুষ। ছেলের যেহেতু পড়াশুনা শেষ, বিয়ের জন্য উঠেপড়ে লাগলেন। কিন্ত পাত্রি কই ! এতবড় শিক্ষিত ছেলে তার জন্য শিক্ষিতা পাত্রী চাই। কিন্ত তখনকার সময়ে তো মেয়েরা স্কুলেই যেত না খুব একটা। মহা মুসিবত, ঘটককে ডাকলেন খালেকের বাবা। 

শোন ঘটক, তুমি তো জান, আমার ছেলের মত শিক্ষিত ছেলে দশ গ্রামে আর একটা নাই। মাসাআল্লাহ, আমার ছেলে দেখতে শুনতেও অনেক সুন্দর। এখন তার জন্য সুন্দরী শিক্ষিতা পাত্রী খোঁজও। তোমার জন্য ভালো পুরস্কার থাকবে। বললেন খালেকের বাবা। আপনি কোন চিন্তাই করবেন না, একদম সঠিক মেয়ের খোঁজ নিয়ে আসব। পান চিবাতে চিবাতে বললেন, অশিক্ষিত ঘটক। 

ঢাকায় রিক্সা চালুর রম্য কাহিনী। হেলদি লাইফ স্টাইলের সাথে মিলে যায়। 

পরিবেশ

রাত দিন ধরে খোঁজাখুঁজি করলেন ঘটক। শেষ পর্যন্ত সাত গ্রাম পরে একটা শিক্ষিতা মেয়ের খোঁজ পেয়ে সেখানে গেলেন। ঘটক মেয়ের বাবার সামনা সামনি বসে আছেন। মেয়ের বাবা স্থানীয় হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক। ঘটক ছেলের অনেক প্রশংসা করলেন।

বললেন ” এমন ছেলে আর একটা পাবেন না, মাস্টার সাহেব। কোলকাতা থেকে লেখাপড়া শেষ করেছে। যেমন জ্ঞ্যান গরিমা তেমন দেখতেও সুন্দর। আর তার বাবার তো অনেক জমিজমা, সহায় সম্পদ। আপনার মেয়ে রানীর হালতে থাকবে।” 

মেয়ের বাবা চুপাচাপ ঘটকের কথা শুনছিলেন। এবারে তিনি বললেন ” আমার মেয়েও অনেক গুণবতী। সে শিক্ষিতা, সুন্দরী।  যাই হোক, ছেলে শিক্ষিত, এই সেই কত কথা বললেন। তা, ছেলের নলেজ আসলে কেমন ? 

অশিক্ষিত ঘটক নলেজ মানে কি, জানেন না। পড়লেন বিপদে, কয়েক সেকেন্ড ভাবলেন। এরপর বললেন, নলেজ ভালই, ইদানিং তো আর দেখি নাই। ছোটবেলায় যখন গামছা পরে পুকুরে গোসল করত, তখন গামছার ফাক দিয়ে দেখেছি, নলেজ টা বেশ বড় ।  

পরিবেশ

আগেকার দিনে বিয়ে এবং পরিবেশ  

এবারে আসি বিয়ে থা ব্যবস্থাপনায়। আবহমান বাংলায় চাহিদার ধরন এখনকার মত ছিলনা। ছোট বেলায় মুরুব্বীদের মুখে শুনেছি, অতীতে কন্যার পিতাগন পাত্র নির্বাচন করতেন এটা দেখে যে, পাত্রের বাড়িতে কয়টা খড়ের গাদা আছে, কয়টা টিনের ঘর আছে। বাড়িতে টিনের ঘর আর খড়ের গাদা দেখেই কন্যার পিতা বুঝতে পারতেন পাত্রের আর্থিক অবস্থা। 

 

 

এরপর দেখা হত বংশ পরিচয়। এভাবেই কথাবার্তায় উভয় পক্ষ মিলে গেলেই বিয়ে সম্পন্ন হত।

ঈদের পর একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে খড়ের গাদা সহ টিনের ঘর বাড়ি চোখে পড়ল অনেক দিন পর। গ্রামের নাম ঢালারচর,উপজেলা বেড়, জেলা পাবনা। 

কুয়াশায় ঢাকা গ্রাম বাংলার দৃশ্য ভিডিওতে। 

সেলিম হোসেন – ২০/০৭/২০২২ ইং – পোস্টের ছবি গুলো পেক্সেল থেকে নেয়া।  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *