চা এর ইতিহাস
পৃথিবীতে চা পানের ইতিহাস হাজার হাজার বছরের পুরনো। ধারনা করা হয় এই পানীয় পান শুরু হয়েছিল চীনে। প্রায় ৫০০০ বছর পূর্বে, খৃষ্টপূর্ব ২৭৩৭ সালে।
চা পাতা দেশে দেশে
চীনে দেশে – চীনে প্রচলিত গল্প অনুসারে চীনের সম্রাট শেননং গোসল করতে চেয়েছিলেন। তার জন্য রাজকর্মচারীরা পানি গরম করছিল। হঠাৎ গাছের শুকনো পাতা গরম পানিতে পড়ে গেলে পানি সুগন্ধ ছড়ায় এবং সতেজ স্বাদের হয়ে ওঠে। তখন থেকেই পানীয় টি জনপ্রিয় হতে শুরু করে।
চিকিৎসায় ব্যবহার – প্রাচীন চীনে প্রথমদিকে পানীয় টি পান করা হতো ঔষধি গুণের জন্য। হজম ক্ষমতা বাড়ানো, বিষাক্ততা দূর করা ইত্যাদি কাজে।
জাপান দেশে – ৮ম শতকে এটি জাপানে প্রবেশ করে, মূলত বৌদ্ধ ভিক্ষুদের মাধ্যমে। সেখানে পানীয় টি ধর্মীয় আচার এবং শিল্পরূপে পরিণত হয়। সেখানে পানীয় টি খাওয়ার অনুষ্ঠান উদযাপিত হতে শুরু করে।
ভারত এবং আমাদের দেশে – যদিও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আদিবাসীরা প্রাচীনকাল থেকে এই পাতার ব্যবহার করতেন। ব্রিটিশরা ১৮শ শতকে ভারতের আসাম ও দার্জিলিংয়ে বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ শুরু করে এবং ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়। তারই ফলশ্রুতিতে আমাদের দেশের মানুষের মাঝেও পানীয় টি পানের অভ্যাস গড়ে উঠে।
ইউরোপে চা পাতা – ১৬শ শতকে পর্তুগিজ ও ডাচ ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে প্রথম ইউরোপে আসে। এরপর ইংল্যান্ডে এটি অভিজাত সমাজে জনপ্রিয় পানীয় হয়ে ওঠে।
পানীয় টি আজ বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় সাস্থ্যকর পানীয়। বিশ্বে প্রতিদিন প্রায় ২০০ কোটির বেশি কাপ পান করা হয়।
চা পাতা চীনা কথা
তৃষ্ণা নিবারন বা ক্লান্তি দূর নয়। উদ্দিপনা ধরে রাখতেই শুধু নয়। পানীয় টি নিয়ে চীনাদের মধ্যে একটি দর্শন কাজ করে। এটি পান করাকে আধ্যাত্মিক সাধনা মনে করে চীনারা।
চীনারা মনে করে, পানীয় টি পরিবেশন এবং পান করা এক বিশাল শিল্প কলা। তারা যেন তেন ভাবে পানীয় টি তৈরি করেন না। প্রতিটি ধাপে থাকেন মনযোগী। এর জন্য প্রয়োজন ফুটানো পানি এবং সরঞ্জাম। পানীয় টি পানের সময়। একসাথে পান করার সময় সবার দিকে গুরুত্ব আরোপ করেন।
কফি কোথা থেকে এল, কে আবিস্কার করল।
পানীয় টি তৈরিতে কেমন পানি দরকার ? খনিজ ও রাসায়নিক মুক্ত পরিচ্ছন্ন পানি। হাজার বছর ধরে তারা ব্যাবহার করেছেন ইয়াংসি নদীর পানি। সুউচ্চ পর্বত থেকে ধেয়ে আসা ঝর্না, বৃষ্টির পানি। এসব পানিতে চমৎকার পানীয় তৈরি হয়।
দ্বিতীয়ত তারা ব্যাবহার করে আসছেন। নদীর পানি, পুকুর বা কুয়ার পানি।
এরপরের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটির কাপ, কেটলি, চামচ, ট্রে, চিনির কৌটা, দুধের বাটি। গ্রিন টি, ব্লাক টি, উলাং টি সব ধরনের চা’ই চীনারা পান করেন। পরিবেশনের সময় পানীয়ের বিপরিত রঙের কাপে ঢালা হয়। পানকারীদের রুচি, একাগ্রতা, মৌনতা বিবেচনা থেকে বাদ পরে না।
চা পানীয় তৈরি চীনা নিয়মে
১. কোন পানি নিতে হবে, সেটা আগেই বলেছি। লাইনের ক্লোরিন মিশানো পানি নিবেন না।
২. পানি কে পুরোপুরি ফুটান। পানি ফোটার পরে এক মিনিট অপেক্ষা করুন। চুলা নিভিয়ে দিন।
৩. প্রয়োজনীয় পাতা নিন। এককাপের জন্য ২ মিলি গ্রাম পাতা। ওজন সঠিক হওয়া একান্ত প্রয়োজন।
৪. শুকনো পরিস্কার কেটলিতে পাতা ঢালুন। এবার ফুটন্ত পানি কেটলিতে ঢালুন। কেটলির ঢাকনা লাগিয়ে দিন।
৫. পাতা কে ভালোভাবে ভিজতে দিন। ৫ মিনিট ধরে ভেজান। ৫ মিনিট পরে লিকার কাপে ঢালুন।
৬. এবার চায়ের সাথে আপানার পছন্দের সামগ্রি মিশাতে পারেন। মনে রাখবেন দুধ এবং চিনি চায়ের গুনাগুন নষ্ট করে দেয়।
৭. চা কখনো পুনরায় গরম করে খাবেন না।
জেনে নিন – বিশ্বের সবচেয়ে দামি ৭ টি চায়ের কথা।
পানীয় হিসেবে চা কেই গ্রহন করুন। সব ধরনের দোকানে পাওয়া কোমল পানীয় বর্জন করুন। আপনার শরীর আপনাকেই সুস্থ রাখতে হবে। সুস্থ শরীর জীবন কে আনন্দময় করে। সেই বন্ধু বা নিকটজনকে পোস্টটি শেয়ার করুন যিনি বাজে পানীয় তে অভ্যস্ত।
চা সাস্থ্য পরিচর্যায়
বর্ষা বা শীতকাল। যে কোন সিজনেই ঠাণ্ডা সর্দির প্রকোপ বাড়ে। বর্ষাকালে ছেলে বুড়ো সবাই কমবেশি ঠাণ্ডায় ভুগে। শীতকালেও একই অবস্থা। সর্দি, কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জায় অনেকেই আক্রান্ত হয়। এসব রোগের ন্যাচারাল নিরাময় করতে পারে এই পানীয়।
সর্দি কাশি ইনফ্লুয়েঞ্জায় এককাপ গরম পানীয় হতে তাৎক্ষনিক ঔষধ। কারন এতে পলিফ্যানল ও থায়াফ্লোবিন রয়েছে। ফলে পান করায় ভাইরাস নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। যে কোন ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধে এতে থাকা থায়ারুবিন ক্ষিপ্রতার সাথে ফ্লু ভাইরাস প্রতিহত করে।
অতএব এককাপ এই গরম পানীয় হতে ফ্লু ভাইরাস নিরাময়ে উপকারি ঔষধ। এই পানীয় জীবাণু ধ্বংসকারী। ফার্মাসিউটিক্যালস উৎপাদিত ঔষধ পথ্যের তুলনায় সর্দি কাশি নিরাময়ে এককাপ পানীয় অনেক অনেক উপকারী।
শুধু তাই নয় এর ধুমায়িত লিকারে লবন মিশিয়ে গরগরা করলে মুখ গহবরের জীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়।
চা নির্দোষ পানীয় কিন্ত চীনা মদ
মজার একটি সত্য ঘটনা। মার্শাল টিটো, জন্ম ১৮৯২ সালে। তিনি ছিলেন সাবেক যুগোস্লোভিয়ার প্রেসিডেন্ট। তখন সার্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া, স্লোভেনিয়া একসাথে ছিল। দোর্দণ্ড প্রতাপশালী টিটো, সারা পৃথিবীতে তার নাম ছড়িয়েছেন। একশ দিন হয়ে গেল হাসপাতালের বেডে টিটো, ডাক্তাররা আশা ছেড়ে দিয়েছেন। জোসিপ ব্রোজ টিটো আর বাচবেন না। কিন্ত টিটো বেঁচে আছেন এবং প্রতিদিন রাষ্ট্রের রিপোর্ট গুলো পড়ছেন। ৯২ বছর বয়সে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ছেন, কোন এলোমেলো কথা বলছেন না।
পার্টি প্রেসিডিয়ামের ১৪ সদস্য পালা করে ২৪ ঘণ্টা তার পাশে থাকছেন। তারা প্রত্যেকেই প্রতিদিন টিটোর সাথে ১০/১৫ মিনিট রাষ্ট্রীয় আলোচনা করছেন। সরকার ও পার্টির সব প্রশাসনিক যন্ত্রই উঠিয়ে আনা হয়েছে বেলগ্রেড থেকে স্লোভেনিয়ারঈই রাজধানীতে। হাসপাতালের পুরো আটতলা জুড়ে বসেছে প্রেসিডেন্টের ক্যাবিনেট। এখানে চাপাতা এবং চীন কিভাবে এল ? হ্যাঁ, এখন সেটাই বলছি।
সবজি খাবেন কব্জি ডুবিয়ে, সুস্থ থাকবেন আজীবন।
চারপাশে তুমুল আলোচনা, টিটোর জীবনী শক্তির উৎস কি ? জানা গেল উনি মেল সিল্কওয়ার্ম টনিক চিউ খেতেন। যা চীনে তৈরি একধরনের মদ। বোতলের গায়ে লেবেলে লেখা আছে, এই চিউ অতি কৌশলের সাথে বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে তৈরি করা হয়েছে। এর প্রধান উপাদান হচ্ছে যৌন সঙ্গম করেনি এমন পুরুষ সিল্কওয়ার্ম। এই রেশম পোকা গুলো শুধুমাত্র সুনটেক প্রদেশেই পাওয়া যায়।
এই মদ খেতে হাল্কা এবং সুস্বাদু। এটা বংশ বৃদ্ধির অঙ্গকে খুবই শক্তিশালী করে। কিডনির উপকার করে, শুক্রাণু বাড়ায় দ্রুত গতিতে। হাড়ের মজ্জা বৃদ্ধি করে। স্নায়ুতন্ত্র, যৌন অক্ষমতা, স্বপ্নদোষ এবং হাঁটুর দুর্বলতার বিরুদ্ধে শক্তিশালী ঔষধ রুপে কাজ করে।
আসলে টিটো এটা খেতেন নাকি টিটোকে নিয়ে মুখরোচক আলোচনা। সত্য টা জানা যায় নি। তবে দুটো প্রশ্ন উঠেছিল এই মদ নিয়ে। ১. কিভাবে পুরুষ সিল্কওয়ার্ম কে চিন্হিত করা হয়। ২. এই পুরুষ সিল্কওয়ার্ম যে সঙ্গম করেনি সেটা মদের কোম্পানি বুঝল কিভাবে ?
সেলিম হোসেন – তাং ১৮/০৭/২০২৪ ইং – ছবি গুলো প্রতীকী