শৈশবের স্মৃতি নাড়ীর টান। খুশবন্ত সিং কাঁদলেন শৈশবের ভিটায়। Khushwant Singh cried at his childhood home

শৈশবের স্মৃতি

শৈশবের স্মৃতি নাড়ীর টান

শীতের কুয়াশা ঢাকা সকালে পুকুড় ঘাটে আলসেমিতে বসে থাকা। রোদ পোহানোর সাথে পাটালি গুর আর মুড়ি খাওয়া। দল বেঁধে গ্রামের মেঠো পথে স্কুলে যাওয়া। শুকিয়ে যাওয়া ছোট খালে পুঁটি মাছ ধরা। শৈশবের স্মৃতিময় সেই জায়গায় ফেরাকে বলি নাড়ীর টান।  

বিকেলে গোল্লা ছুট, দারিয়াবান্ধা, কুতকুত বা কড়ি খেলা। গরমের দিনে পুকুর বা নদীতে গোসল করতে করতে চোখ লাল করে ফেলা। শৈশবের স্মৃতি আমাদের অনেকেরই। যখনই আমরা আমাদের বেড়ে ওঠার জায়গায় ফিরে যাই। আবেগ তারিত হই। অতীত মনে পরে, বাতাসে সেই পুরনো দিনের গন্ধ ভেসে এসে নাকে লাগে। সোশ্যাল মিডিয়ায় শৈশবের স্মৃতি নিয়ে স্ট্যাটাস দেই। 

কোনো মানুষকে যদি প্রশ্ন করা হয়- জীবনের কোন সময়ে ফিরে যেতে চান? আমার মনে হয় ৯৮ শতাংশ মানুষ বলবেন- শৈশবে ফিরে যেতে চাই। শৈশবের স্মৃতি রোমন্থন আমাদের সাধারণ চর্চার বিষয়। শৈশবের একটি সুন্দর দৃশ্যের বর্ণনা দিতে দিতে আমাদের চোখ চিক্চিক্ করে ওঠে। আমাদের হৃদয়ে আনন্দের অনুরণন ছড়িয়ে পড়ে। মন অজান্তেই খুশিতে ভরে ওঠে। পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক জীবনে চলার পথে একটু স্মৃতি রোমন্থন আমাদের সবুজ ও সতেজ করে তোলে।

পুরনো দিনের টেপা টেঁপির গল্প। গ্রাম বাংলার বিনোদন। 

শৈশবের স্মৃতি
মানুষ ফিরতে চায় বিস্ময়-ভরা শৈশবে

শৈশবের সেই দিনগুলি আজো মনে পড়ে

শৈশব ছেড়ে ক্রমে কৈশোর, তারুণ্যের পথে হেঁটে যাওয়া প্রাকৃতিক নিয়ম। কিন্তু শৈশব আমাদের সঙ্গেই থেকে যায়। সুখে, দুঃখে, স্থিরতায়, মগ্নতায়, অনুভবে বারবার তার দেখা পাওয়া যায়। মানুষ চিন্তাশীল এবং সুন্দরের পূজারী। সম্ভবত সে কারণেই চিন্তায় চেতনায় বারবার ফিরে আসে শৈশবের দিনগুলো। হতে পারে সেখানে সব প্রাপ্তি সুখের প্রাপ্তি নয়, কিন্তু প্রথম প্রাপ্তিগুলো থাকে শৈশবের অনেকখানিজুড়ে। 

ভারতের বিখ্যাত সাংবাদিক, লেখক, আইনজীবী। উনার বিখ্যাত উপন্যাস ” ট্রেন টু পাকিস্তান।” পাকিস্তান অধিকৃত পাঞ্জবের মরু অঞ্চলের হাদালি গ্রামে জন্ম গ্রহন ১৫ ই আগস্ট ১৯১৫ তে।

বড় আয়তনের গ্রাম, সেখানে বাস করতেন কিছু শিখ পরিবার এবং সিংহ ভাগ মুসলমানেরা। মায়ের দুধ ছাড়ার পর, খুসবন্তের মা চলে যান দিল্লিতে। তিনি দাদির কাছে বড় হন। হাদালিতে খুব সুন্দর সময় গ্রীষ্মের সকাল। এসময় মরুভুমির উপর দিয়ে হিমেল ঠাণ্ডা বাতাস বয়ে যায়। 

ইঁদুর বিড়ালের ঐতিহাসিক ঘটনা, কি হয়েছিল ইউনেস্কোর হেড অফিসে। 

শৈশবের স্মৃতি
মানুষ ফিরতে চায় বিস্ময়-ভরা শৈশবে

শৈশবের স্মৃতি ছবি প্রতিকী  

একটু বড় হলে তিনিও দিল্লি গিয়ে পড়াশুনা শুরু করেন। আবার হাদালিতে আসেন, শিখ ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ নিতে খুবই অল্প  সময়ের জন্য। 

ইংল্যান্ড থেকে আইন পড়া সম্পন্ন করেন। অবিভক্ত ভারতের লাহোরের ফিরেন। আইন পেশায় যোগ দেন। যখন লাহোরে আইন পেশায় নিযুক্ত ছিলেন তখন বন্ধুর সাথে একদিনের জন্য এসেছিলেন শৈশবের গ্রাম হাদালিতে। 

এরপর কেটে যায় বহু বছর। ১৯৭১ এ ঢাকায় আসেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বন্দি পাকিস্তানি কয়েকজন সেনার সাথে পরিচয় হয়। যাদের বাড়ি হাদালিতে, খুসবন্তের নিজ গ্রামে।

তিনি সবার বাবার নাম, বাড়ির ঠিকানা নেন। তাদের হাতে লেখা চিঠি, প্রত্যেকের বাড়িতে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন। জানিয়ে দেন তারা নিরাপদ এবং সুস্থ আছেন। 

পড়ুন – মদ খেলে কি হয় ? একটি মজার গবেষণা। 

শৈশবের স্মৃতি
মানুষ ফিরতে চায় বিস্ময়-ভরা শৈশবে

শৈশবের স্মৃতির টানে হাদালিতে   

এতদিনে তিনি ভারতের বিখ্যাত ব্যাক্তিতে পরিণত হয়েছেন। বহুবছর পর শীতের সময়ে ১৯৮৭তে শেষ বারের মত হাদালিতে আসেন। তাকে বিপুল সংবর্ধনা দেয়া হয়। নতুন প্রজন্মের কাউকেই তিনি চিনতে পারলেন না। তিনি তাদের সাথে হাদালির আঞ্চলিক টানে কথা বলা শুরু করেন।

তার সম্মানে সাজানো মঞ্চের সামনে বসে আছেন দুই হাজারের বেশি গ্রামবসি। অন্যরা তার গুণকীর্তন করে বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি আবেগ আপ্লূত হলেন।

সবশেষে তাকে মাইক্রোফোন দেয়া হল।

তিনি বলা শুরু করলেন। এই দিনটির জন্য আমি অপেক্ষা করছিলাম। যেমন আপনারা অপেক্ষা করেন মদিনা এবং মক্কা দেখার জন্য, হজ্বের জন্য । 

জীবনের শেষ সময়ে হাদালিতে ফিরে আসা আমার কাছে হজ্ব আর ওমরার মত। নাড়ীর টান আমি উপেক্ষা করতে পারিনি। 

ভিডিও দেখুন – ৮০ এর দশকের ছোঁয়া পাবেন। বাংলাদেশ একমাত্র টিভি মিডিয়া কেমন ছিল। 

শৈশবের স্মৃতি
মানুষ ফিরতে চায় বিস্ময়-ভরা শৈশবে

মহানবী যেমন বিজয়ী হিসেবে মক্কায় ফিরে তার প্রথম রাতে মক্কার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছেন এবং তার প্রথম স্ত্রীর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করেছেন। ঠিক তেমনি হাদালির গলিতে গলিতে ঘোরার জন্য আমাকে একা ছেড়ে দিলে এবং যে বাড়িতে আমার জন্ম হয়েছে সে বাড়ির চৌকাঠে মাথা রেখে বিশ্রামের সুযোগ দিলে ,তার চাইতে আর কোন কিছুই আমি বেশি পছন্দ করব না। 

শৈশবের স্মৃতি চারণে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলেন না। কথা বলা বন্ধ হয়ে গেল। হাউমাউ করে কাদতে শুরু করলেন ৭২ বছর বয়সী খুসবন্ত সিং।

সেলিম হোসেন – ০৪/০৬/২০২৪ ইং – ছবি গুলো প্রতীকী। 

1 thoughts on “শৈশবের স্মৃতি নাড়ীর টান। খুশবন্ত সিং কাঁদলেন শৈশবের ভিটায়। Khushwant Singh cried at his childhood home

  1. Pingback: ২ লাখ টাকা আয় করুন প্রতিমাসে, ছোট হোটেল থেকে। Earn Tk 2 lakh per month, from small hotel. - OVIZAT

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *