হেলদি লাইফ স্টাইল
আমরা যেভাবে জীবনযাপন করি, ইংরেজিতে সেটাই লাইফ স্টাইল। জীবনের শুরুতেই আমাদের কে শেখানো হয়, অনেক বড় হতে হবে। গাড়ি হবে, বাড়ি হবে, নাম হবে, যশ হবে, তবেই তো সফল মানুষ। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এরপর ক্যারিয়ার। দৌড় আর দৌড় জীবনের পথে। ধরুন সবই হল, কিন্ত শরীর টা মোটা থলথলে, হাই প্রেশার, ডায়াবেটিস নানান রকম অসুখ। বিছানা, ডাক্তার, টেস্ট আর ঔষধ।
তাহলে কি ভালো লাগবে ? সুন্দরী স্ত্রী কি আনন্দ দিবে ? জীবন উপভোগ করা যাবে ? না, জীবন হবে এক অস্বস্তিকর বিষয়।
একটাই জীবন, একে উপভোগ করতে হলে সুস্থ থাকতে হবে। সুস্থ থাকার বিকল্প নেই। আমাদের জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া উচিত আজীবন সুস্থ থাকা। শরীর সুস্থ থাকলে সব সমস্যা মোকাবেলা করা যাবে অনায়াসে। জীবনের লক্ষ্যে অনড় থেকে পৌঁছানো যাবে সাফল্যের চুরায়।
হেলদি লাইফ স্টাইলের তিনটি দিক। ১. শারীরিক, ২, মানসিক, ৩. আত্মিক
ধরুন, আপনার হাই প্রেশার। নিয়মিত ঔষধ খাচ্ছেন। কিন্ত মানসিক ভাবে চাপে আছেন। এক্ষেত্রে শরীর স্বাভাবিক সেরোটোনিন বা অন্যান্য হরমোন তৈরি করবে না। শরীর মানসিক চাপে থাকলে অতিরিক্ত কর্টিসল তৈরি করবে। এতে করে খাবার হজম হবে না। ইনফ্লামেশন হবে। নানান সমস্যা তৈরি হবে। আত্মাকে প্রশান্তি দিতে কিছু কাজ করতে হবে। আসুন আমরা সব বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেই।
পড়ুন – মোটা থলথলে শরীরকে কিভাবে সহজেই স্লিম ফিগার করবেন।
হেলদি লাইফ স্টাইলে প্রধান বাধা খাবার
কোন খাবার গুলো আমাদের কে অসুস্থ করে, সেটা জানতে হবে প্রথম। তাহলে জেনে নেই কোন খাবার গুলো আমরা খাবনা।
১. প্রসেসড ফুড, শিঙারা, সমোছা, পুরি, কেক, বিস্কুট, চিপস, কোমল পানীয়, চানাচুর, পাউরুটি।
২. যখন খাবার খাবেন তখন এসিডিক ফুড কম খাবেন। যেমন ঃ মাছ, মাংস, ডিম, দুধ। খাবারে ৮০ ভাগ জুড়ে থাকবে এলকালাইন খাবার। শাক সবজি ফলমূল সবই এলকালাইন খাবার।
৩. ফার্মের মাছ অর্থাৎ পুকুর বা বায়োফ্লক্স পদ্ধতিতে চাষ করা। ফার্মের মুরগি, ডিম, গরুর মাংস যে গুলোকে মোটাতাজা করতে প্রচুর স্টেরয়েড ব্যাবহার করা হয় এগুলো খাবেন না। সয়াবিন বা দোকানে যে তেল গুলো পাওয়া যায়, ঐ তেলে রান্না করা খাবার খাবেন না।
৪. দোকানের পাওয়া যায় এমন প্রায় সব খাবারই সুগার মিশ্রিত। যেমন ঃ কেক, পেস্ট্রি, ডোনাট, বার্গার, আইসক্রিম, পিৎজা।
৫. সবচে গুরুত্বপূর্ণ মনে রাখার বিষয় গমের তৈরি কোন খাবার খাবেন না। গম জেনেটিক্যালি মডিফায়েড। এতে Gluten আছে। আমেরিকান হেলথ ইন্সটিউট গবেষণায় জানিয়েছে ৯০ ভাগ রোগের কারন গমের তৈরি খাবার। যারা সুস্থ আছেন তারা মাঝেমধ্যে খেতে পারেন। অসুস্থরা গমের খাবারের কাছেই যাবেন না। যেমন ঃ ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি রোগ ইত্যাদি ইত্যাদি।
রিসার্চ পড়ুন – Gluten সাস্থ্যের কি কি ক্ষতি করে আমাদের।
হেলদি লাইফ স্টাইলে ফুড ইন্ডাস্ট্রি
অনেক বড় ক্ষতি করেছে। তারা প্রডাক্টের বিক্রি বাড়ানোর জন্য কয়েক টক্সিক উপাদান ব্যাবহার করে। যে গুলো আমাদের ক্ষুধা অনুভবের হরমোন ক্ষরন করে। এ কারনে ওসব খাবার খেলে আমাদের একটু পরেই আবার ক্ষুধা লাগে। আবারও ঐ খাবার খেতে ইচ্ছে হয়।
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির গবেষণায় এটা প্রমানিত হয়েছে। চারটি টক্সিক উপাদান তারা ব্যাবহার করে। এগুলো হচ্ছে – MSG, পরিশোধিত আটা বা ময়দা, কর্ণ ফ্লাওয়ার সিরাপ, Gluten.
হেলদি লাইফ স্টাইল Blue zone
২৮৭২ জোড়া জমজের উপর গবেষণা করা হয়। মানুষের সুস্থ থাকা এবং বেঁচে থাকা কিসের উপর নির্ভর করে ? মানুষের বেঁচে থাকা মাত্র ২৫% নির্ভর করে জিনের উপর। বাকি ৭৫% নির্ভর করে আমাদের জীবনযাপন পদ্ধতির উপর। ধরুন আপনার দাদা ১০০ বছর বেঁচে ছিলেন। বাবা বেঁচে ছিলেন ৯০ বছর। যেহেতু বাবা, দাদার জিন আপনি ধারন করছেন, তাই আপনিও বাচবেন ৯০ বা ১০০ বছর। ভুল একেবারেই ভুল।
পৃথিবীর পাঁচটি জায়গার মানুষ ৯০/১০০ বছর বেঁচে থাকেন। গবেষণায় দেখা গেছে, এদের মধ্যে হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হাইপ্রেশার এসব রোগও অনেক কম। এই পাঁচটা অঞ্চল – জাপানের অকিনাওয়া , কোস্টারিকার নিকয়া, ইতালি সারদিনিয়া, গ্রিসের ইকারিয়া এবং ক্যালিফোর্নিয়ার লোমা লিনডা।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের একজন ফেলো Dan Buettner এবং তার সহকর্মীরা এই অঞ্চল গুলো মার্ক করেন । নাম দেন Blue zones. এই অঞ্চল গুলোর মানুষদের মধ্যে হেলদি লাইফ স্টাইলের ভিন্নতা খুব কম। তারা প্রায় একই ধরনের খাবার খান। একই রকমের পরিশ্রম করেন।
তারা বিজ্ঞান সম্মত হেলদি খাবার খেয়ে আসছেন অনাদিকাল থেকে। তাদের খাবারে প্রায় ৯০ ভাগ থাকে প্লান্ট বেজড খাবার। যেমন সালাদ এবং শাক সবজি। এই খাবার থেকে তারা প্রয়োজনীয় পরিমানে ফাইবার, ভিটামিন, মিনারেল পেয়ে থাকে। খাবার হিসেবে তারা আরও গ্রহন করেন – শস্য দানা বা ডাল।
তারা পেট ভরে খান না। পেট ৮০% পূর্ণ হলেই খাবার ছেড়ে উঠে যান। নিয়মিত তারা ফাস্টিং করেন। তারা লাল চাল বা বাদামি চালের ভাতও খান। বাদাম খুবই পুষ্টিকর খাবার। এই বাদাম তাদের খুবই প্রিয় খাবার। পাঁচ অঞ্চলের মানুষেরাই প্রচুর শারীরিক পরিশ্রম করেন।
পড়ুন – আমেরিকার National institute of health blue zones lessons.
হেলদি লাইফ স্টাইলের ৭ টি আবশ্যিক বিষয়
১. হেলদি খাবার আমাদের চিনতে হবে। হেলদি লাইফ স্টাইলের এটি প্রধান অঙ্গ। আমাদের হাতের কাছেই অনেক হেলদি খাবার রয়েছে। যেমন শাক সবজি। দেশী মুরগি, হাঁস, দেশী মুরগির ডিম, ভেড়া/ছাগলের মাংস, দেশী গরুর মাংস, হাসের ডিম, ঘি, মধু, মাখন, সব ধরনের বাদাম, ডাল বা অন্য কোন শস্য দানা, ফলমূল ( প্রধানত দেশী ফল ) নদীর মাছ, সমুদ্রের মাছ। খুব ভালো ভাবে খেয়াল করুন এগুলোই হেলদি লাইফ স্টাইলের খাবার।
মিষ্টি জাতীয় খাবারে ব্যবহার করবেন দেশী চিনি বা লাল চিনি, গুর, নারকেল চিনি।
২. পাকস্থলি কে সুস্থ রাখতে প্রবায়োটিক যুক্ত খাবার খাবার খাবেন। যেমন – কিমচি, সাওয়ার ক্রাউট, টক দই, ডার্ক চকোলেট, পনির এবং আপেল সিডার ভিনেগার।
৩. শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম। উইম হফের শ্বাসের ব্যায়াম করবেন। আবার ডাঃ উইলসের ৪-৭-৮ শ্বাসের ব্যায়াম করতে পারেন। ইউটিউবে সার্চ দিলে পাবেন।
৪. ব্যায়াম করতে হবে। বিকল্প নেই। অন্তত সপ্তাহে ৪/৫ দিন ৩০-৪০ মিনিট ব্যায়াম করবেন।
৫. নিয়মিত ফাস্টিং করতে হবে বা রোজা রাখতে হবে।
৬. মানসিক চাপ ম্যানেজ করতে হবে। এক্ষেত্রে শ্বাসের ব্যায়াম ভালো কাজ দিবে। মেডিটেশন করতে পারেন। নিয়মিত নামাজ আদায় করবেন। সবার সাথে ভালো ব্যাবহার করুন। সামাজিক মেলামেশা বাড়িয়ে দিন। মানসিক চাপ কমে যাবে, আত্মিক উন্নতি ঘটবে।
৭. সূর্যের আলোতে প্রতিদিন ৩০ কাটালেই চলবে।
জেনে নিন – সঠিক ভাবে ফাস্টিং করার নিয়ম। ফাস্টিং করলে কি লাভ হয়।
আপনি যদি এই নিয়ম গুলো পালন করেন। তাহলে শরীরের ওজন সঠিক মাপে থাকবে। অসুখ থাকলে সেরে যাবে, সুস্থ থাকবেন আজীবন। হেলদি লাইফ স্টাইল নিজে অনুসরণ করুন। লেখাটি সবাইকে শেয়ার করে অন্যদের উপকারে আসুন।
Reference : Dr Eric berg, Dr Mujibul Haque, Dr Jahangir Kabir, Dr Mujibur Rahman, Dr Mandell, Dr Jason Faung, Dr Sten Ekberg and many medical health journals.