হজম নিয়ে সমস্যা। হজম শক্তি কমে যাওয়ার ৫ টি কারন। কিভাবে হজম শক্তি বাড়বে ন্যাচারালি। 5 reasons for decreased digestive power

হজম
হজম অর্থ কি

সাধারন অর্থে হজম একটি শারীরিক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মুখে গ্রহন করা খাদ্য প্রথমে ছোট ছোট টুকরো হয়। তারপর পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন এনজাইম দ্বারা দেখে মিশে যাওয়ার উপযোগী হয়। বাকি টা মলমুত্র বেরিয়ে যায়। আমাদের মুখ থেকে মলদ্বার পর্যন্ত খাদ্যনালী। এর সাথে আরও কিছু অংগ মিলে হজমের কাজটি সম্পন্ন করে।

বদ হজম কেন হয় 

১. প্রথম কারন টাই হল খাবার। কোন খাবার খাচ্ছেন, কিভাবে খাচ্ছেন ? ভাজাপোরা শুষ্ক খাবার, বাজে তেল চর্বিতে তৈরি খাবার, গরুর মাংস বা এজাতীয় মাংস। খাওয়ার সময় খুব দ্রুত খাওয়া। ভালোভাবে খাবার টাকে না চিবানো। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, মানসিক অবসাদ। নিয়মিত রাত জেগে ডিভাইস চালানো বা ডিউটি করা।
২. খাবার খাওয়ার সময় একদম ভর্তি করে খাওয়া। হঠাৎ করে খুব বেশি পরিমাণে খাবার নিয়ন্ত্রণ করা। অতিরিক্ত ঝাল খাওয়া।গভীর রাতে বা খুব ভোরে একসঙ্গে অনেক বেশি খাওয়া খাবার সঠিকভাবে পাকস্থলিতে খাদ্যের প্রক্রিয়াকরন না হওয়ার অন্যতম কারণ।
৩. প্যানক্রিয়াস (Pancreas) নামের এক ধরনের অঙ্গ রয়েছে, যাতে ইনফেকশন হলে খাবার সঠিকভাবে হজম হয় না।রক্তে চিনির মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে গেলে পাকস্থলিতে খাদ্যের প্রক্রিয়াকরন দুর্বল হয়ে যায়। অর্থাৎ ডায়াবেটিস থাকলে।
৪. বিভিন্ন রকম ওষুধ খেলেও পাকস্থলির শক্তি কমে। বিশেষত যাঁরা বয়স্ক বা নানা রকম অসুখে আক্রান্ত। হাঁটাচলা বা ব্যায়াম করেন না। মানসিক রোগ বা কেমোথেরাপির ওষুধ খান। এই সমস্যাগুলোও পাকস্থলি দুর্বল হওয়ার জন্য দায়ী। ৫. মাদকদ্রব্য, ধূমপান, অতিরিক্ত চা-কফি, পান, সুপারি, গুল, জর্দা প্রভৃতি হজমশক্তি দুর্বল করে।
হজম
হজম না হলে কি কি সমস্যা দেখা দেয় 
 
ওজন বেড়ে যাচ্ছে। কিছু খাচ্ছেন না তারপরও ওজন বাড়ছে। খেয়াল করুন আপনার পেটে খাদ্যের প্রক্রিয়াকরনে  সমস্যা হচ্ছে কি না।  এই  প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হলে ওজন বেড়ে যেতে পারে। লিপিড প্রোফাইল, ইউরিক এসিড বেড়ে যেতে পারে। রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার মতো শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
হজম শক্তি বাড়ানোর উপায় 
খাবারের সাথে এসিড যোগ করবেন। এসিড কি ? এটা হচ্ছে লেবুর রস, আপেল সিডার ভিনেগার। যাদের সমস্যা বেশি তারা প্রতিবার খাবারের পরে দুই চামচ ভিনেগার পানিতে মিশিয়ে খাবেন। খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে খাবেন। খাবারের সাথে পানি খাবেন না। খাবারের সাথে পানি খেলে হজম ক্ষমতা কমে যায়। পানি খাবেন খাবার গ্রহনের এক ঘণ্টা পর। পানি খাবেন দুই বেলা খাবারের মাঝখানে। পানিতে লেবুর রস বা আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে নিবেন। এতে করে পেটের এসিড লেভেল টা ভালো থাকবে। খাবার পাকস্থলিতে খাদ্যের প্রক্রিয়াকরনে এসিড লেভেল ভালো থাকা জরুরি।
আদা পাকস্থলিতে খাদ্যের প্রক্রিয়াকরনে উপকারিতার জন্য বিখ্যাত। খালি পেটে আদার রস পান করলে তা খাদ্য পাচনে এনজাইমের উৎপাদন বাড়িয়ে তোলে। এটি পাকস্থলিতে খাদ্য পাচনের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এটি পেট ফাঁপা, বদহজম এবং অন্যান্য অস্বস্তি দূর করতে সাহায্য করে। আদা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি যৌগে ভরপুর যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
খাবারের প্রথমে সালাদ খাবেন। এরপর শাকসবজি খাবেন। প্রচুর পরিমান আঁশ থাকে শাকসবজিতে যা হজমে সাহায্য করে। এরপর ফাসটিং করবেন, এটা খুবই কাজের। কমপক্ষে ১৮ ঘণ্টা করবেন। এতে করে শরীরে স্টেম সেল তৈরি হবে। খাবার কে ভেঙে ফেলার ক্ষমতা কমে যাওয়ার অন্যতম কারন ক্ষতিগ্রস্ত পাকস্থলি। এই ক্ষতি সারিয়ে তোলে স্টেম সেল। ২০ ঘণ্টা ফাসটিং করতে পারলে আরও ভালো।
হজম
হজম শক্তি বৃদ্ধির ব্যায়াম 
ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠুন। শরীরের সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যায়াম করুন। হাঁটতে পারেন, জগিং করতে পারেন, দৌড়াতে পারেন। সব ধরনের ব্যায়ামই পাকস্থলির উন্নতি ঘটায়, ফলাফল খাবারকে সঠিক ভাবে শরীর পাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবে। করতে পারেন যোগ ব্যায়াম।
আমরা সবাই সুস্থ থাকতে চাই। সুস্থ থাকার জন্য পাকস্থলির সুস্থতা জরুরি। National Health institute of medicine একটি গবেষণায় বলেছে ৭৫ ভাগ মানুষ এই সমস্যায় আক্রান্ত। তারা বিভিন্ন গবেষণা পত্র প্রকাশ করেছে। আশাকরি আমরা জানতে পেরেছি কিভাবে এই সমস্য থেকে মুক্ত হব। সুস্থ থাকব। লেখাটি অন্যদেরকেও শেয়ার করুন, সবার কাজে লাগবে।
হজম
ডিম খেতে পারেন 
এটি একটি সহজ পাচ্য খাবার। যাদের পেটে বেশি সমস্যা, তারা আপাতত মাছ, মাংস বাদ রাখবেন। প্রতিদিন ডিম খাবেন। আমাদের হেলদি লাইফ স্টাইল অনুসরন করলে প্রতিদিন ৪/৬ টা ডিম খেতে পারেন। ডিমের কুসুমে সবরকম পুষ্টি আছে।
আসেন এবার ডিম নিয়ে কিছু মজার কাহিনী শুনি।
দেশে বিদেশে প্রচলিত আছে কুসংস্কার হিসেবে এসব কাহিনী। আমাদের ছোট বেলায় মায়েরা পরীক্ষার দিনে ডিম খেতে দিতেন না । কারন ডিম খেয়ে পরীক্ষার হলে গেলে শূন্য মার্ক পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ডিম ভাঙা কিছু কথা প্রচলিত আছে। ডিম আনা নেয়ায় হাত থেকে পরে যেতে পারে। হাত থেকে পরে যদি ভেঙে যায় তাহলে আপাতত কোন দুঃসংবাদ শুনতে হবে না। আর যদি না ভাঙে পরে গিয়ে যদি না ভাঙে এক্ষেত্রে কপালে খুবই খারাবি আছে। এমন বিশ্বাস চালু আছে আয়ারল্যান্ড বাসীদের মাঝে।
ডিমের খোসা ফেলে না দিয়ে আগুনে পোড়ানো মানে নিজের কপাল টাও পোড়ানো। সেটা আবার কেমন ? ধরুন খোসা পোড়ালেন, আর এদিকে মুরগীও ডিম পারা বাদ ডি;। বিষয় টি কপাল পোড়ানো ছাড়া আর কি ! এমন বিশ্বাস চীন এবং কোরিয়ার বিভিন্ন এলাকায়। এক ঘর আরেক ঘরে ডিম আনা নেয়া হতেই পারে। তবে কাজটা দিনের আলোতেই সেরে নেয়া ভালো। কারন রাতের অন্ধকারে এ ঘর ও ঘরে আনা নেয়া করলে ভাগ্যের দেবতা অন্ধকারে হারিয়ে যায়। এমন বিশ্বাস গ্রিকদের।
হজম 
সেলিম হোসেন – তাং ২৫/০৮/২০২৪ ইং – ছবি গুলো প্রতীকী । 
Reference : Dr Eric berg, Dr Mujibul Haque, Dr Jahangir Kabir, Dr Mujibur Rahman, Dr Mandell, Dr Jason Faung, Dr Sten Ekberg and many medical health journals.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *