স্ট্রেস কি এবং ইবনে সিনা
ইবনে সিনা (Ibn Sina) । যিনি পাশ্চাত্যে আবু আলী সীনা (Avicenna) নামে পরিচিত। তিনি ছিলেন একজন প্রখ্যাত পারস্যের দার্শনিক, চিকিৎসাবিদ, বিজ্ঞানী। ইসলামী স্বর্ণযুগের অন্যতম জ্ঞানী ব্যক্তি। তার জন্ম ৯৮০ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান উজবেকিস্তানের বুকারা অঞ্চলে এবং মৃত্যু ১০৩৭ খ্রিস্টাব্দে ইরানের হামাদান শহরে।
নফস এবং আত্মা
ইবনে সিনা বিশ্বাস করতেন, আত্মা (নফস) ও শরীর পরস্পর সম্পর্কযুক্ত এবং একটির অবস্থা অন্যটিকে প্রভাবিত করে। মানসিক অস্থিরতা (যা আজকের দিনে স্ট্রেস হিসেবে ধরা হয়) শরীরকে অসুস্থ করতে পারে।
আবেগ ও স্বাস্থ্য
তিনি বিভিন্ন আবেগ যেমন ভয়, দুঃখ, রাগ ইত্যাদিকে রোগ সৃষ্টির কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন। উদাহরণস্বরূপ, অতিরিক্ত মনবেদনা মানুষের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। এমন ব্যাখ্যা তিনি দিয়েছেন।
চিকিৎসা পদ্ধতিতে মানসিক পরিস্থিতির গুরুত্ব
ইবনে সিনার মতে, একজন চিকিৎসকের উচিত রোগীর মানসিক ও সামাজিক অবস্থার প্রতি নজর দেওয়া, কারণ সেগুলোর ওপর নির্ভর করে রোগীর রোগমুক্তি।
ঔষধ ছাড়াই কিভাবে আজীবন সুস্থ থাকবেন, জেনে নিন উপায়।
সমাজের কল্যানে এই গুণী ব্যক্তির গুরুত্বপূর্ণ অবদান
চিকিৎসা খাতে
তার সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থ “আল-কানুন ফি ত্বিব্ব” (The Canon of Medicine)। বহু শতাব্দী ধরে ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যে চিকিৎসাশাস্ত্রে পাঠ্যপুস্তক হিসেবে ব্যবহৃত হতো। তিনি রোগ নির্ণয়, ওষুধ ও শল্যচিকিৎসায় মৌলিক অবদান রেখেছেন।
দর্শন শাস্ত্রে
তিনি গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটলের (Aristotle) দর্শনের ওপর ভিত্তি করে ইসলামি দর্শনের উন্নয়ন করেন। তাঁর কাজ পরে ইউরোপীয় রেনেসাঁ যুগে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।
বিজ্ঞানের অন্যান্য ক্ষেত্রে
গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, রসায়ন ও মনোবিজ্ঞানসহ বিভিন্ন শাস্ত্রে তিনি লেখালেখি করেন। ইবনে সিনাকে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে “মেডিসিনের পিতা” বলা হয়। তাকে ইসলামী যুগের সবচেয়ে প্রভাবশালী চিন্তাবিদদের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
যখন স্নায়ু বা নার্ভ উত্তেজিত হয়। সব স্নায়ু উত্তেজিত হলে নিউরোট্রান্সমিটার ‘এড্রেনালিন’ স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে বেড়ে যায় রক্তচাপ, ঘুমে সমস্যা, কমে যায় ক্ষুধা এবং বুক ধড়ফড় করা অনুভূত হয়। সাধারন অর্থে এটাই স্ট্রেস।
ইবনে সিনাকে নিয়ে আরও জানতে পড়ুন।
পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার
এই সমস্যা জীবন ধ্বংস করে। কিভাবে করে ? তার একটি প্রমাণ আমরা দেখব। পরীক্ষামূলক প্রমাণ। পরীক্ষাটি চালিয়েছিলেন জগদ্বিখ্যাত ব্যাক্তি ইবনে সিনা।
স্ট্রেস কি অনুধাবন করতে
দুটো নিরীহ ভেড়ার বাচ্চা নেন তিনি। বাচ্চা দুটোকে দুটি খাঁচায় রাখেন। ভেড়ার খাঁচার বিপরীতে রাখেন একটি নেকড়ে। আলাদা অন্য একটি খাঁচাতে। বাচ্চা দুটোকে এমনভাবে রাখা হয় । এতে একটি বাচ্চা নেকড়েকে দেখতে পায়। অপর টি দেখতে পায় না।
যে বাচ্চাটি নেকড়েকে দেখতে পায়। সেটি ভীত হয়, ম্যা ম্যা করে। ঘুম কমে যায়। ধীরে ধীরে খাওয়া বন্ধ করে। একমাসের মাথায় বাচ্চাটি মারা যায়। অন্যদিকে যেটি নেকড়েকে দেখতে পায় না। সেটি খাবার দাবার ঠিকমত খায়, ঘুমায়। এক মাসের মাথায় এ বাচ্চাটি হৃষ্টপুষ্ট হয়ে উঠে।
আমরাও প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হই। ভেড়া যেমন নেকড়ে কে ভয় পায়, আমরা স্ট্রেস কে। এই সমস্যাকে যদি পাত্তা দেয়া হয় তাহলে আমাদের অবস্থা হবে, মরে যাওয়া ভেড়ার মত। আর ম্যানেজ করলে আমরা পাব সাস্থ্যকর সুন্দর জীবন। থাকব ফিট। কাজকর্ম করব আনন্দে।
স্ট্রেস হরমোন কমানোর উপায়
১. কর্টিসল হরমোন ক্ষরন কমাতে হবে। ব্যায়াম করতে হবে নিয়মিত। অবশ্যই নিজের শারীরিক সক্ষমতা অনুযায়ী পরিমিত পরিমানে।
২. উইম হফের নিঃশ্বাসের ব্যায়াম খুবই কার্যকরী। যা প্রতিদিন করতে হবে।
৩. কর্টিসল ক্ষরন কমাতে মাছের তেল খেতে পারেন। খেতে পারেন মাছের ডিম। অবশ্যই নদী অথবা সামুদ্রিক মাছ।
৪. সর্বোপরি আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ জীবন কে সহজ করে দিবে। নিয়মিত প্রার্থনা করতে হবে। ফোকাস থাকবে প্রতিদিন ধেয়ে আসা চ্যালেঞ্জের ইতিবাচক দিকে । নিজের একটুখানি চেষ্টায় সবরকম চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সহজ হবে।
৫. রম্য গল্প পড়ুন। এটা দারুন কাজে দেয়।
প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস এবং বিয়ের গল্প
তরুনেরা অনেকেই বিয়ে করতে ভয় পাচ্ছেন। বিয়ের কথা মনে হলে তাদের স্ট্রেস শুরু হয়। বিয়ে নিয়ে সক্রেটিসের একটি মজার গল্প আছে।
একবার তাকে জিজ্ঞেস করা হল বিবাহ এবং কৌমার্য ( বিয়ে না করা ) এ দুটোর মধ্যে কোন টি ভালো। একজন পুরুষের জন্য। সক্রেটিস বললেন ” যে পন্থাই অবলম্বন কর না কেন পরিণামে পস্তাতে হবে। ঐ যে আমাদের একটি প্রবাদ আছে ” বিয়ে হচ্ছে দিল্লিকা লাড্ডু। ” যে খায় সে পস্তায়, যে খায় না সেও পস্তায়।
সক্রেটিস পরে অবশ্য উপদেশ দিয়েছেন। যেভাবে হোক বিয়ে কর। যদি ভালো স্ত্রী পাও তাহলে তোমার লাভ। আর যদি মন্দ স্ত্রী পাও তাহলে দেশের লাভ। কারন এক্ষেত্রে তুমি দার্শনিক হবে।
মন কেন খারাপ ? জানেন না। জেনে নিন মন ভালো করার উপায়।
সেলিম হোসেন – ১০/০৫/২০২৪ ইং – ছবি গুলো প্রতীকী।
Reference : Dr Eric berg, Dr Mujibul Haque, Dr Jahangir Kabir, Dr Mujibur Rahman, Dr Mandell, Dr Jason Faung, Dr Sten Ekberg and many medical health journals.