সুখ কি ? ১০ টি অভ্যাস মানুষকে সুখী করে। 10 habits that make people happy

সুখ

সুখ কি

অনেক দিন আগের কথা। রাখাল যুবক। সুখী মানুষ কে জানতে বের হলেন ভ্রমনে। মরুভূমির অনেকটা পথ পাড়ি দিলেন। ছোট্ট একটা পাহাড়ের উপরে দুর্গ দেখতে পেলেন।
এটার কথাই বলেছিলেন একজন বৃদ্ধ। বলেছিলেন এখানে একজন জ্ঞানী ব্যক্তি থাকেন। তিনি বলতে পারবেন যুবকের প্রশ্নের উত্তর।
রাখাল যুবক কি করলেন ? রাখাল যুবক দুর্গের গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেন।
জ্ঞানী ব্যক্তি একজন ধনী ব্যবসায়ী। তার কাছে অনেকেই আসছেন, কথা বলছেন, চলে যাচ্ছেন।
জ্ঞানী ব্যক্তির নজর পড়লো রাখাল যুবকের উপর। কাছে ডাকলেন।
কি চাও তুমি?
সুখ

আমি জানতে এসেছি সুখ কি? বললো রাখাল যুবক

এ বিষয়ে  বলতে গেলে অনেক সময়ের প্রয়োজন। আমার হাতে সময় নেই। তুমি বরং এক কাজ কর। ঘন্টা দুয়েক আমার এই দুর্গটা ঘুরে ফিরে দেখো। আর হ্যাঁ, ছোট চামচে দুই ফোঁটা তেল দিচ্ছি এটা যেন পড়ে না যায়। খেয়াল রাখবে।
সুখ
রাখাল যুবক সিঁড়ি বেয়ে উঠানামা করলেন। চামচের তেলে দৃষ্টি নিবদ্ধ, যেন পড়ে না যায়। ঘন্টা দুয়েক পরে জ্ঞানী ব্যক্তির সাথে দেখা করলেন।
জ্ঞানী ব্যক্তি বললেন ” তুমি কি আমার খাবার ঘরের পারস্য থেকে আনা পেইন্টিং, স্যুভেনির গুলো দেখেছো ? মালির পরিশ্রমে ১০ বছর ধরে গড়ে ওঠা ফুলের বাগান গুলো দেখেছো?
না দেখিনি।
তাহলে আবার যাও সবকিছু ভালোভাবে দেখে আসো।

সুখ

রাখাল যুবক সবকিছু ভালোভাবে দেখে আসলেন। মনে লোভা পাহাড় ,ফুলের বাগান, পেইন্টং ইত্যাদি। পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিলেন।
লোকটি বললেন তোমার চামচে তেল কই। তেল তো পড়ে গিয়েছে।
রাখাল যুবকের এতক্ষণে চামচের তেলের কথা খেয়াল হলো।
শোনো যুবক, সুখী হতে তোমার প্রতি আমার উপদেশ।
” প্রতিদিন পৃথিবীর রূপ সুধা উপভোগ করো। তোমার প্রতি অর্পিত দায়িত্ব এবং কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন কর।”
সুখ

মানুষের সুখ কোথায় 

বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের ধারণা, সুখী হওয়ার একমাত্র পথ হচ্ছে অনেক অর্থ-সম্পদের মালিক হওয়া।
জনগণের বড় একটা অংশ চুরি-ঘুষ-দুর্নীতিতে জড়িত। এদের কাজ সিন্ডিকেটবাজি-বিদেশে টাকা পাচার ।
দেশের জনগণকে তাদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করে ভালো থাকতে চায়। বাস্তবতা ভিন্ন। এভাবে অসৎপথে আয়ের মাধ্যমে তারা বিলাসবহুল জীবন কাটাতে পারে।
কিন্ত তাদের অধিকাংশই মানসিকভাবে চরম অশান্তিতে আছে।
সুখ কি

১০ টি অভ্যাস মানুষকে সুখী করে 

১. নিজের এবং অন্যদের প্রতি সদয় হোন 

আমরা নিজের উপর জুলুম করি। মাঝে অন্যদের উপরও চড়াও হই। আমাদের কঠোরতা দিনশেষে আমাদের কে অসুখী করে। জীবনে সুখী হওয়ার প্রথম পদক্ষেপ হল বিনয়ী হওয়া। অন্যের প্রতি দয়া করা।

আমাদের কাছের মানুষ, প্রিয়জন তাদের প্রতি সদয় হতে হবে। আর এটা আমার নিজের জন্যই, নিজের সুখের জন্য। আমার যতটুকু সক্ষমতার প্রতি পরিবার পরিজন কাছের মানুষদের প্রত্যাশা থাকে। শান্ত মেজাজে তাদের প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করা। ধৈর্য ধারন করা, সহনশীলতা দেখানো একজন সুখী ব্যাক্তির বৈশিষ্ট।

২. সহানুভূতি দেখাতে হবে 

সঠিক একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এরপরও দেখা গেল কেউ আপনার তীব্র সমালোচনা করছে। বিষয় টা আপনি মেনে নিতে পারছেন না। ভাবছেন আমি তো অফিসের জন্যই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এতে আমরা অনেক লাভবান হব। মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আপনার শান্তি নষ্ট হচ্ছে।

কি করবেন ? সহানুভূতি দেখান। কারন যিনি সমালোচনা করছেন। তার জ্ঞ্যান কম। আর কম জ্ঞ্যানের মানুষ বকবক করে বেশি। মনে মনে লোকটার জ্ঞ্যান গরিমার উন্নতি কামনা করুন। দেখবেন আপনি দারুন কমফোরট ফিল করছেন।

সুখ কি

৩. অতীত কে মুছে দিতে হবে 

অতীত যদি আপানাকে তাড়িত করে তাহলে আপনি ভুল পথে আছেন। অতীত থেকে বের হয়ে আসতে হবে। অতীতের ভুল ধরে আঁকড়ে থাকলে শুধু কষ্ট বাড়ে। জীবন একটি বিরাট ব্যাপার এবং এর উত্থান-পতন থাকবেই।

তাই এগিয়ে যেতে অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। অতীতের ভুলগুলো যেন আগামিদিনের কাজে বাধা না হয়। জীবনে ভালো থাকা ব্যাক্তিরা অতীত নিয়ে হাহুতাশ করে না।

৪. কৃতজ্ঞতা নিজের জন্য উপকারী 

দোষ খুঁজে বের করা সহজ। অভিযোগ করা  আরও সহজ। কিন্তু তাতে মোটেও লাভ হয় না। যে ছেলেটি ক্লাসে অন্যদের বিরুদ্ধে স্যারকে নালিশ দিত, তাকে কেউ পছন্দ করত না। সে নিজেও ভালো থাকত না, অন্যদেরকেও বিরক্ত করত।

একটি পরিপূর্ণ জীবন অর্জনে আমাদের সাহায্য করে কৃতজ্ঞতা। প্রতিদিন আমাদের সাথে অনেক ভালো ঘটনা ঘটে। আমাদের আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা দরকার। এই কৃতজ্ঞতা আমাদের ভালো থাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে মন শান্ত হয়ে যায়। শরীরে একপ্রকার আরাম চলে আসে।

কৃতজ্ঞতা অনুশীলন বিভিন্ন উপায়ে করা যেতে পারে। কেউ আপনার জন্য সামান্য কাজ করে দিলেও ধন্যবাদ জানান আন্তরিকভাবে। প্রতিদিন কাজটি করতে থাকুন। একমাসে একটা ফলাফল দেখতে পাবেন। যদি মুসলিম হন, তাহলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে আদায় করুন।

মেডিটেশন করতে পারেন। আপনার ধর্ম অনুযায়ী প্রার্থনা করতে পারেন। এসবই আপনাকে শান্ত করবে। সারাদিন অনেক ভালো অনুভব করবেন।

সুখ কি

৫. সুখ পেতে সুস্থতা জরুরী 

সাস্থ্যের চেয়ে বড় সম্পদ দুনিয়াতে অন্য কিছু নেই। তাই, সুখী থাকার জন্য আপনার শরীরের যত্ন নেওয়া অপরিহার্য। ন্যাচারাল হেলদি খাবার খাবেন। নিয়মিত ব্যায়াম করুন, খোলা আকাশের নিচে হলে বেশি ভালো হয়। এটা দারুন কাজে দিবে। প্রতিদিনের মানসিক চাপ কমাতে নিশ্বাসের ব্যায়াম করুন। অবশ্যই ভালো ঘুম দিতে হবে।

সঠিকভাবে কাজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সারাদিনের কাজ ভালোভাবে করলে রাতটা আনন্দ নিয়ে আসে। নিজেকে তৃপ্ত মানুষ মনে হয়। অসুস্থ ব্যাক্তি কখনো তার কাজ ভালো ভাবে সম্পন্ন করতে পারে না।

৬. সুখ হল নিজের পছন্দের কাজ করা 

যখন মেসে থাকতেন, তখন নিজেই রান্না করতেন। এখন আর সময় হয় না। সপ্তাহে অন্তত একদিন রান্না করুন। দেখবেন অনেক ভালো অনুভব করছেন। এভাবেই প্রতিদিন কাজের বিরক্তি এড়াতে আপনার শখের কাজটা করতে পারেন।

যেমন আগে বই পড়ার অভ্যাস ছিল কিন্ত এখন সময় পান না। মোবাইল স্ক্রল বন্ধ করুন ৩০ মিনিট বই পড়ুন। অনেক ভালো ফিল করবেন। আমরা ছোট বেলায় বা একটু হয়েও এক একজন ভিন্ন ভিন্ন কাজে আনন্দ পেতাম। যেমন কেউ ক্রিকেট দেখায় আনন্দ পেতাম।

সময় বের করে একটু ক্রিকেট বিষয়ক নিউজ দেখতে পারেন ভালো লাগবে। এভাবেই নিজেই পছন্দের কাজ অল্প সময় করতে পারেন। একমাসেই ভালো ফলাফল দেখতে পাবেন।

সুখ কি

৭. সুখী মানুষ সোশ্যাল এ্যাপ থেকে দূরে থাকে 

স্মার্ট ফোন, সেই সাথে নানান রকম সোশ্যাল এ্যাপ। এই সোশ্যাল মিডিয়ায় আছে বিভিন্ন রকম অশান্তির ফাঁদ। এই ফাঁদে পরে আমরা খুব কমই অফলাইনে যাওয়ার সময় পাই। নিজের অজান্তেই সেই ফাঁদে পা দেই। তারপর মেজাজ গরম, অশান্তি শুরু হয়।

এই অবিরাম ভার্চুয়াল সংযোগের যুগে। এই অভ্যাসটি সামগ্রিক সুস্থতার জন্য বেশ ক্ষতিকর। তাই বেশ কিছু সময়ের জন্য সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে অফলাইনে থাকতে হবে। অফালাইনের সময়টুকু মানসিক ও শারীরিকভাবে আমাদেরকে রিচার্জ করে তুলবে

সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপগুলিতে আপনার স্ক্রলিং সীমিত করুন। রাত ৯ টার কোন এ্যাপে ঢুকবেন না। সকাল ৯ টার আগে কোন এ্যাপ খুলবেন না। দিনের বেলায় প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া সবমিলিয়ে আপনি ২০ মিনিট অবসর সময় সোশ্যাল এ্যাপে কাটাতে পারেন।

৮. না বুঝে ঝাপ দিবেন না 

সুখী মানুষের একটি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস হল তারা সাবধানে বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়। আমাদের জীবনের কিছু সমস্যা সম্পূর্ণরূপে এড়ানো যায়, যদি আমরা সমস্ত সম্ভাব্য পরিস্থিতি বিবেচনা করি এবং এর পরেই পদক্ষেপ নিই।

কোন সমস্যা সামনে এসে গেছে। কিন্ত এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। এক্ষেত্রে কোন রাখঢাক করা যাবেনা। যারা এ বিষয়ে অভিজ্ঞ বা জ্ঞ্যানী তাদের সাহায্য নিতে হবে। সাহায্য চাইতে কখনও ভয় পাবেন না।

সাহায্য চাইলে পরামর্শ পাওয়া যায়। যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সমস্যা সমাধান করে দেয়। আর অভিজ্ঞদের সাহায্য না নিলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটে। যা জীবনকে অসুখী করে তোলে।

সুখ কি

৯. সুশৃঙ্খল জীবনে সুখ আসে 

রুটিন হলো সুখী ও সুশৃঙ্খল জীবনের অলঙ্ঘনীয় সুত্র। আমাদের কাজের প্রতিদিনের রুটিন থাকতে হবে। কিছু নিয়ম এবং অভ্যাস সারাজীবন ধরে চলতে পারে। খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠা। দিন শুরু করার আগে সকালের নীরবতা উপভোগ করা।

এই অভ্যাস আমাদের বেশি কাজ করার ক্ষমতা দেয়। সকালে কয়েক ঘন্টা সময় বিঘ্নতা ছাড়াই কাজ করা যায়। রাতে দ্রুত ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। এক্ষেত্রে ভালো ঘুম হবে। ফলস্বরূপ দারুন এক সকাল পাওয়া যাবে। সুখী মানুষেরা এই নিয়ম মেনে চলেন।

১০. বর্তমান কে সুন্দর করুন  

বর্তমানকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। অতীত এবং ভবিষ্যৎ সবসময় আমাদের মনকে দূরে সরিয়ে রাখে। কিন্তু বর্তমান ছাড়া অন্য কিছুতে ডুবে থাকা অকাজের বিষয়।

আজকে চোখে পরা ছোট ছোট জিনিস গুলো আমাদের উপভোগ করতে হবে। খেয়াল করে দেখুন টবে সুন্দর ফুল ফুটেছে। রাস্তার আইল্যান্ডের গাছেও লাল, বেগুনি, হলুদ নানান রঙের ফুল।

ব্রেকফাস্টের সালাদ টা অনেক সুস্বাদু ছিল। অফিসে সাস্থ্যকর বাটার চা অনেক মজাদার। বাইরে বেরিয়ে দেখুন এই ঢাকা শহরেও আকাশে পাখি উড়ছে। ভ্যানের উপর লেবু ছড়িয়ে ডাকছে লেবু ওয়ালা, নিন স্যার মাত্র ১৫ টাকা হালি। হাসিমুখে অফিসের পিয়ন দুপুরের লাঞ্চ রেডি করছে। চারিদিকে সুখ। ভাবুন, বর্তমানকে নিয়েই ভাবুন।

সুখ কি

সেলিম হোসেন – তাং ৩০/০৪/২০২৪ ইং – ছবি গুলো প্রতীকী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *