সাস্থ্যকর খাবার সবজি রেসিপি ও বিটরুটের ৭টি আশ্চর্য উপকারিতা
আপনার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় সবজিকে প্রধান খাবার হিসেবে গণ্য করা উচিত। সাধারণত আমরা সবজি যেভাবে রান্না করি, তা ভাতের সাথে খাওয়ার জন্যই উপযুক্ত। কিন্তু আপনি যদি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা (হেলদি লাইফ স্টাইল) অনুসরণ করতে চান, তবে সবজি খেতে হবে সরাসরি মাছ, মাংস বা ডিমের সাথে, অথবা শুধু সবজিই হতে পারে আপনার প্রধান খাবার। এক্ষেত্রে রান্নার পদ্ধতিতে সামান্য ভিন্নতা আনলেই সবজির পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ণ রাখা সম্ভব।
১. স্বাস্থ্যকর সবজি রান্নার সহজ রেসিপি
এই রেসিপিটি বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন সবজিগুলো নরম ও সুস্বাদু হয় এবং পুষ্টিগুণ বজায় থাকে।
উপকরণ:
- পছন্দমতো সবজি: ৪ কাপ (পেঁপে, গাজর, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বরবটি ইত্যাদি কিউব করে কাটা)। যারা ওজন কমাতে চান না, তারা অল্প পরিমাণে আলু যোগ করতে পারেন।
- তেল: ১/২ কাপ খাঁটি সরিষার তেল বা ঘি (রান্নার জন্য)।
- পাঁচফোড়ন: ১ চা চামচ।
- হলুদ গুঁড়া: ১ চা চামচ।
- মরিচ গুঁড়া: ১/২ চা চামচ (স্বাদমতো)।
- আদাবাটা: ১ চা চামচ।
- জিরা বাটা: ১ চা চামচ।
- ধনে গুঁড়া: ১/২ চা চামচ।
- লবণ: স্বাদমতো।
- ঘি (পরিবেশনের জন্য): ২ টেবিল চামচ।
- গরম মসলা গুঁড়া/ম্যাজিক মসলা: ১/২ চা চামচ।
যেভাবে তৈরি করবেন:
১. সবজি প্রস্তুত: সবজি ভালোভাবে ধুয়ে নিন। সবজি কাটার পর আবার ধোওয়া হলে পুষ্টিগুণ অনেকটাই চলে যায়।
২. ফোড়ন দিন: গরম প্যানে সরিষার তেল বা ঘি দিয়ে তাতে পাঁচফোড়ন দিন।
৩. সবজি যোগ: যে সবজিগুলো দেরিতে সিদ্ধ হয় (যেমন পেঁপে, গাজর) সেগুলো প্রথমে দিন, তারপর বাকি সবজি মিশিয়ে ভালোভাবে নাড়তে থাকুন।
৪. মসলা যোগ: হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, আদাবাটা, জিরা বাটা, ধনে গুঁড়া এবং লবণ যোগ করে কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে দিন।
৫. সিদ্ধ করা: পাত্রটি ঢেকে রাখুন। সবজি নিজের পানিতেই সিদ্ধ হবে। যদি প্রয়োজন হয়, সামান্য গরম পানি দিতে পারেন।
৬. ফিনিশিং: সবজি সেদ্ধ হয়ে এলে তাতে পরিবেশনের জন্য রাখা ঘি এবং গরম মসলা গুঁড়া বা ম্যাজিক মসলা দিন। ভালোভাবে মিশিয়ে নামিয়ে পরিবেশন করুন।

২. স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক: সুস্বাদু বাদাম মাখা রেসিপি
স্ন্যাক হিসেবে চিপস বা অস্বাস্থ্যকর খাবার নয়, বরং বাদাম হতে পারে সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর বিকল্প। বাদাম মাখা রেসিপিটি খুবই সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর।
প্রস্তুত প্রণালী:
- বাদাম টেলে নিন: পরিমাণ মতো চীনাবাদাম একটি পাত্রে ভালোভাবে টেলে নিন।
- উপকরণ মেশান: চুলা থেকে নামিয়ে টেলে নেওয়া বাদামের মধ্যে পেঁয়াজ কুচি, কাঁচামরিচ কুচি, সামান্য পিঙ্ক সল্ট এবং খাঁটি সরিষার তেল দিন।
- সবজি যোগ: শসা কুচি, টমেটো কুচি এবং ক্যাপসিকাম কুচি যোগ করুন।
- মাখান: সব উপকরণ একসাথে ভালো করে মাখুন।
- লেবুর রস: উপর থেকে একটু লেবুর রস ছিটিয়ে নিন।
ব্যাস! তৈরি হয়ে গেল আপনার মুখরোচক ও স্বাস্থ্যকর বাদাম মাখা।

৩. বিটরুটের জুস: কেন এটি সুপার টনিক?
বিটরুট একটি অসাধারণ সবজি, যা একই সাথে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে, প্রদাহ কমায় এবং মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। সপ্তাহে অন্তত তিন দিন বিটরুটের জুস খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত।
বিটরুটের ৭টি স্বাস্থ্য উপকারিতা
১. নারীদের জন্য বিশেষ উপকারী (মনোপজ): একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর নারীদের মনোপজের সময় উচ্চ রক্তচাপ, বুক ধড়ফড় করা, মাথাব্যথা এবং উদ্বেগ দেখা দিতে পারে। বিটরুটে থাকা নাইট্রেটস রক্তনালী প্রসারিত করে ও রক্তচাপ কমিয়ে দেয়, যা এই সমস্যাগুলো মোকাবেলায় সাহায্য করে।
২. জ্বালা-পোড়া বা প্রদাহ কমায়: বিটরুটে থাকা নাইট্রেট এবং বেটালাইনস (এক ধরনের পিগমেন্ট) রক্তনালীর প্রদাহ কমিয়ে দেয়। এই উপাদানগুলো শরীরে রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
৩. হজম ক্ষমতা বাড়ায়: হজমের সমস্যায় ভুগলে বিট খাওয়া শুরু করা উচিত। বিট আঁশযুক্ত খাবার হওয়ায় কোষ্ঠকাঠিন্য, ডাইভার্টিকুলাইটিস এমনকি কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।

৫. ভুলোমনাদের জন্য: বিট মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দেয় এবং ব্লাড সুগার ঠিক রাখে, যা মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৬. ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়: প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পিগমেন্ট থাকার কারণে লাল বিট কার্সিনোজেনের বিরুদ্ধে কাজ করে বলে ধারণা করা হয়, যা কোলন ক্যান্সারের জন্য দায়ী।
৭. চোখের স্বাস্থ্য: সবুজ বিট কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যায়। এটিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (যেমন লুটেইন) বয়স সম্পর্কিত চোখের রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এবং চোখের চারপাশের স্নায়ু টিস্যুগুলির স্বাস্থ্য উন্নত করে।
যতদিন বাঁচবেন কিডনি সুস্থ থাকবে, জেনে নিন উপায়।

বিটরুট ও গাজরের জুস রেসিপি
বিটরুটের সাথে গাজর যোগ করা যেতে পারে, কারণ গাজরে থাকা ফাইবার হজম হতে দেরি হয় এবং বেশি সময় পেট ভরা রাখে।
উপকরণ:
- বিট (খোসা ছাড়ানো): ২ কাপ
- গাজর (খোসা ছাড়ানো): ২ কাপ
- পানি: আধা কাপ
- লেবুর রস: ৫ টেবিল চামচ
- পিঙ্ক সল্ট: এক চিমটি
- পুদিনা পাতা: কয়েকটি
যেভাবে তৈরি করবেন:
বিট, গাজর ও পুদিনা পাতা একসাথে ব্লেন্ড করে নিন। এতে পানি, লেবুর রস ও লবণ ভালোভাবে নেড়ে মিশিয়ে নিন। এই টনিকটি রোজা রেখে ইফতারে বা ফাস্টিং শেষেও পান করা যেতে পারে।
মজার গল্প: ক্যাটারিং চেখে দেখা হয়নি
শিল্পপতি আওলাদ হোসেন এবং তার স্ত্রী একবার এক দূতাবাস কর্মকর্তার ডিনারের দাওয়াত খেতে গেলেন। আওলাদ হোসেন ভালো ইংরেজি জানলেও তার স্ত্রী একেবারেই জানতেন না।
ডিনার শেষে গাড়িতে করে ফেরার পথে তারা খাবার কেমন হয়েছিল তা নিয়ে গল্প শুরু করলেন।
স্ত্রী বললেন, “পালং পনিরটা হয়েছিল একেবারে বাজে, আর গাজরের হালুয়াটা ছিল কাদার মতো।”
আওলাদ স্ত্রীর সাথে একমত হয়ে বললেন, “ঠিক বলেছো। শুধু ক্যাটারিং ছাড়া আর কোনো কিছুই ভালো ছিল না।”
স্ত্রী অবাক হয়ে বললেন, “কী বলছেন! আমি তো ক্যাটারিং চেখেই দেখিনি! সেটা কোন টেবিলে ছিল?”
(আসলে আওলাদ হোসেন ক্যাটারিং বলতে খাবার পরিবেশন ব্যবস্থাটিকে ভালো বলেছিলেন, কিন্তু তার স্ত্রী ভেবেছিলেন ‘ক্যাটারিং’ বুঝি খাবারের টেবিলে রাখা কোনো একটি পদের নাম!)


