সাগরের তলদেশ
তিন হাজার বছরের পুরনো জাহাজ পাওয়া গেছে। ভাবতে পারেন !! তিন হাজার বছর !! এত আগে মানুষ কিভাবে জাহাজ তৈরি করত ? সেই জাহাজ সাগরে চলাচলের উপযোগী ছিল। আমারা সব কিছুই জানব। তার আগে আরও কিছু বিষয় জেনে নিই।
সাগরের তলদেশে কি অন্ধকার আছে ?
সাগরের উপরিভাগ থেকে ১০০০ মিটার নিচ পর্যন্ত স্থান কে বলা হয় এ্যাপোটিক জোন। সূর্যের আলো এ্যাপোটিক জোন পর্যন্ত পৌছাতে পারে। এর নিচে অন্ধকার।
পড়ুন – ছাগল কি কাণ্ড ঘটাল বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে।
সাগরের তলদেশে কি আছে ?
মহাসাগরে লুকিয়ে আছে নানা রহস্য। বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে অনেক কিছু সম্পর্কেই জেনেছে বিশ্ব। তবে তা হতে পারে মাত্র একাংশ! পুরো বিশ্বকে ঘিরে রেখেছে ৫টি মহাসাগর। এই মহাসাগরগুলোতে অন্তর্ভুক্ত আছে ছোট ছোট অনেক সমুদ্র। ক্ষুদ্রতম এলাকাগুলোয় মহাসাগরকে সাগর, উপসাগর, উপত্যকা, প্রণালী ইত্যাদি নামে ডাকা হয়।
সাগরের নিচে হ্রদ, নদী, আগ্নেয়গিরি, লেকও আছে। এমন কিছু প্রাণী আছে, যারা সাগরতলের এসব নদীতে ডুবে থাকতে উপভোগ করে। আছে বিভিন্ন রকম পাথর খনিজ ইত্যাদি।
পড়ুন – রীতিমত অবাক হয়ে যাবেন সাগরের তলদেশে এসব কি !!
সাগরের তলদেশে কোথায় পাওয়া গেল জাহাজ।
ইসরায়েলের উত্তর উপকূলে। তিন হাজার বছরের বেশি পুরোনো জাহাজের সন্ধান পাওয়া গেছে। জাহাজটির মালামালও অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে । বৃহস্পতিবার ( ২১/০৬/২০২৪ ) দেশটির পুরাকীর্তি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
বিবিসি জানায়, ইসরায়েলের উত্তর উপকূল থেকে ৯০ কিলোমিটার দূর। ভূমধ্যসাগরের তলদেশে ৫ হাজার ৯০৫ ফুট গভীরতায় জাহাজটি পাওয়া গেছে। নিয়মিত তেল ও গ্যাস জরিপের সময় এটা পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে, জাহাজটি ৩ হাজার ৩০০ বছরের পুরোনো। জাহাজটিতে শত শত অক্ষত মালামাল (অ্যাম্ফোরাই) পাওয়া গেছে।
জাহাজের ধ্বংসাবশেষ এই অঞ্চলে পাওয়া ‘প্রথম ও প্রাচীনতম’। সম্ভবত কোনো ঝড়ের সময় বা জলদস্যুদের আক্রমণের কারণে জাহাজটি ডুবে গিয়েছিল।
লন্ডনে তালিকাভুক্ত এনার্জি সংস্থা এনার্জিন সমুদ্রের তলদেশে জাহাজটির সন্ধান পায়।
জাহাজটিতে পাওয়া গেছে দুই হাতল বিশিষ্ট জগ। এসব জগে ব্রোঞ্জ যুগে সমুদ্রে মদ বা জলপাই তেলের মতো পণ্য সংরক্ষণ করা হয়েছিল। জ্যাকব শারভিট এক বিবৃতিতে বলেছেন, এটি ব্রোঞ্জ যুগের শেষের দিকে একটি সুপরিচিত ঘটনা। এটি একটি বিশ্বমানের ইতিহাস-পরিবর্তনকারী আবিষ্কার।
ধারণা করা হচ্ছে, জাহাজটি খ্রিষ্টপূর্ব ১৩ বা ১৪ শতকের। ব্রোঞ্জ যুগের সে সময় সামুদ্রিক বাণিজ্য বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছিল।
এনার্জিনের এনভায়রনমেন্ট লিড কার্নিত বাহার্তান বলেন, ” আমরা যখন তাদের (আইএএ) কাছে ছবিগুলো পাঠিয়েছিলাম, তখন তাদের কাছে এটি চাঞ্চল্যকর আবিষ্কারে পরিণত হয়েছিল। এটা আমরা কল্পনাও করতে পারিনি।”
এনার্জিন জাহাজটি থেকে কিছু মালামাল বের করতে কাজ শুরু করেছে। শিগগিরই সেসব জনসাধারণের সামনে উপস্থাপন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
সাগরের তলদেশে কতগুলো জাহাজ আছে।
কত গুলো জাহাজ আছে সাগরের তলদেশে ?
সাগরে জাহাজ ডুবি নিয়ে ডেটাবেজ আছে। তবে জাহাজডুবির তথ্যের বিষয়ে প্রতিটি ডেটাবেজে থাকা পরিসংখ্যানে পার্থক্য দেখা যায়।
অনলাইনভিত্তিক এমনই একটি ডেটাবেজ ‘রেক সাইট’। তারা নিজেদের এ-সম্পর্কিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডেটাবেজ হিসেবে দাবি করে।
রেক সাইটে ২ লাখ ৯৬ হাজার ৪০টি নৌযানডুবির তথ্য আছে। তারা ১ লাখ ৭৯ হাজার ১১০টির অবস্থান ডেটাবেজে উল্লেখ করেছে।
গ্লোবাল মেরিটাইম রেকস ডেটাবেজে ২ লাখ ৫০ হাজারের বেশি নৌযানডুবির তথ্য রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কিছু নৌযান এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।
একটি তথ্য অনুযায়ী। শুধু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ই প্রায় ১৫ হাজার জাহাজ ডুবে গিয়েছিল। এই যুদ্ধের সময় প্রশান্ত থেকে আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে যায় অনেক যুদ্ধ জাহাজ এবং ট্যাংকার। যার কোন সন্ধান আজও মেলেনি।
আমরা সমুদ্রে নৌযান বা জাহাজের ধ্বংসাবশেষের যে তথ্য এখন পর্যন্ত পেয়েছি।তাকে মোটেই পূর্ণাঙ্গ চিত্র বলা যাবে না। প্রাপ্ত তথ্যকে প্রকৃত সংখ্যার একটি ছোট ভগ্নাংশ মনে করা হয়।
পানির নিচের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সুরক্ষার বিষয়ে ইউনেসকোর একটি কনভেনশন রয়েছে। ২০০১ সালে কনভেনশনটি গৃহীত হয়। ইউনেসকোর এক বিশ্লেষণে বলা হয়। বিশ্বের সমুদ্রের নিচে ৩০ লাখের বেশি অনাবিষ্কৃত নৌযান বা জাহাজের ধ্বংসাবশেষ আছে।
সেলিম হোসেন – তাং ২৬/০৭/২০২৪ ইং – ছবি গুলো পিক্সেলস থেকে নেয়া।