সন্তানের প্রতি পিতার ভালোবাসা
আমাদের সন্তানেরা আমাদের খুব প্রিয়। তাদের কে আমরা অনেক ভালোবাসি। তাদের ভবিষ্যৎ আমাদের কে উদ্বিগ্ন করে তোলে। কারন সন্তানদের কিছু আচরন ভুল মনে হয়। শুধু ভুল নয়, মনে হয় বিপজ্জনক। একারনে আমরা তাদের বকাঝকা করি, মারধর করি। আমারা খেয়াল করিনা আমাদের বেড়ে ওঠার সময় ও পরিবেশ এবং তাদের বেড়ে ওঠার সময় ও পরিবেশ এক নয়। এ কারনেই সন্তানদের অনেক আচরন, কাজকর্ম আমাদের কে রাগান্বিত করে। আমারা মেজাজ হারাই। তবে কি করলে সন্তানেরা সঠিক পথে থাকবে, আমরা সেটা জানব।
তার আগে জেনে নিই একজন বিখ্যাত পিতার ঐতিহাসিক কাহিনী। এই পিতাটি হলেন মোঘল সম্রাট বাবর। সম্রাটের কাছাকাছি জায়গা সম্বরে ছিলেন বাবের বড় ছেলে শাহজাদা হুমায়ুন মীর্জা। গত চারমাস তাদের মধ্যে দেখা সাক্ষ্যাত হয়নি। ইতিমধ্যে সম্রাট হুমায়ুক কে দুটো চিঠি লিখেছিলেন। কিন্ত হুমায়ুন একটি চিঠিরও উত্তর দেন নি। হুমায়ুনের এমন আচরনে রীতিমত রাগান্বিত সম্রাট বাবর।
বাবর সিংহাসনে বসে আছেন। দিনের প্রথমার্ধের রাজকার্য শুরু হয়েছে, এই সময় খবর এল হুমায়ুন এসেছেন। সম্রাট বললেন, তাকে এখনি রাজসভায় উপস্থিত হতে বল। খবর বাহক, ভীত গলায় বললেন ” হুমায়ুন মীর্জার পক্ষে সম্ভব না, তিনি অপারগ।”
কেন ? তিনি অচেতন অবস্থায় আছেন, তার জীবন সংশয়ে আছে। সম্রাট বাবর রাজসভা ভেঙে দিয়ে ছুটে গেলেন সন্তান কে দেখতে। কোথায় হুমায়ুন মীর্জা ? দেখে মনে হচ্ছে একজন মৃত মানুষ পরে আছে। হুমায়ুন মীর্জার ব্যাক্তিগত চিকিৎসক বললেন ” সব চিকিৎসা দেয়া হয়েছে, উনাকে জীবিত ফিরে পাওয়ার আশা নেই।” শুধুমাত্র আল্লাহপাক যদি দয়া করেন, তাহলেই উনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।
সহিংস মুভি দেখে যা অর্জন করছেন
দিল্লির চিকিৎসকদের সভা বসল। তারাও বললেন ” সম্রাট পুত্র আমাদের চিকিৎসার অতীত। তার জন্য আল্লাহপাকের কাছে আমরা প্রার্থনা করতে পারি। এর বেশি কিছু করতে পারি না। ডাকা হল সুফি সাধক মীর আবুল কাশিম কে। তিনি তখন সম্রাট কে বললেন ” পুত্রের প্রানের বিনিময়ে আপনি যদি আপনার অতি প্রিয় কিছু দান করেন তাহলে হয়তো বা শাহজাদার জীবন রক্ষা পেতে পারে। বাবর বললেন ” আমার কাছে নিজের প্রানের চেয়ে প্রিয় আর কিছু নাই।” আমি শাহজাদার জন্য আমার প্রান দিতে প্রস্তত।
হতভম্ব মীর আবুল কাশিম বললেন ” আলম্পানাহ, আপনি এটা কি বললেন ? এই কাজ আপনি করতে পারেন না, আপনি বরং কোহিনুর হীরা দান করে দিন। বাবর বললেন ” আমার পুত্রের জীবনের দাম কি সামান্য একখণ্ড হীরা ?
অচেতন হুমায়ুন মীর্জা বিছানায় শুয়ে আছেন। ঘরের দরজা জানালা বন্ধ। ঘরের ভিতরে তিনটা মোমবাতি জ্বলছে। সম্রাট বাবর ছাড়া শাহজাদার সাথে আর কেউ নেই। বাবর পুত্রের মাথার পাশ থেকে ঘুরতে শুরু করলেন। তিনি মনে মনে বললেন ” পুত্রের ব্যাধি আমি আমার শরীরে ধারন করলাম। পরম করুনাময়, তুমি আমার পুত্রকে সুস্থ করে দাও। সম্রাট তিনবার চক্কর দেয়ার পর অচেতন হুমায়ুন চোখ মেলে তাকালেন। ডাকলেন “বাবা”, আপনি এখানে কি করছেন ?
পুত্রের কালান্তক ব্যাধি শরীরে ধারন করে পঞ্চাশ বছর বয়সে সম্রাটের মৃত্যু হয়। ৬ই জমাদিয়াল আউয়াল ৯৩৭ হিজরি, ২৬ সে ডিসেম্বর, ১৫৩০ খৃষ্টাব্দ। তার তিন দিন পর হুমায়ুন মীর্জা সিংহাসনে বসেন।
জেনে নিন ন্যাচারালি একমাসে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায়।
সন্তানের সাথে যে ১০ টি ভুল করছেন
১. সারাক্ষন সন্তান কে সন্ত্রস্ত রাখা। এটা ধরোনা, ওটা করোনা। পাশাপাশি চলে মারধর করা। সন্তান কে শাসন করতে হবে। নির্দিষ্ট অপকর্ম বা অন্যায়ের জন্য। তাই বলে সবসময় বকাঝকা করা সন্তানের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। মন বিজ্ঞানিরা বলেন, পরীক্ষায় খারাপ ফলাফলের জন্য অনেকে সন্তানকে বাজে কথা বলেন। এতে সন্তান লেখাপড়ার আগ্রহ টাই হারিয়ে ফেলতে পারে। এভাবে চললে সন্তানের সাথে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক খারাপ হতে পারে বাবা মায়ের।
২. যেদিন সন্তানের বিশেষ দিন থাকে, সেদিন কি ব্যস্ত থাকেন ? যেমন ধরুন, পরীক্ষার রেজাল্টের দিন, স্পোর্টসের দিন। যত কাজই থাকুক বিশেষ দিন গুলোতে সন্তান কে সময় দিন। সে যখন পুরস্কার পাবে, তখন আপনাকে পাশে পেলে আনন্দে তার বুক ভরে যাবে। বিশেষ দিন গুলোতে তার পাশে না থাকা, সন্তান কে হীনমন্যতায় ফেলে দেয়। ছুটির দিনে যেতে পারেন, বাচ্চাদের দাদা দাদি বা নানা নানীর কাছে। আবার চিড়িয়াখানা বা অন্য কোথাও বেড়াতে নিয়ে যেতে পারেন। সন্তানকে সাথে নিয়ে ঘরদোরের কাজ করুন।
৩. বাসায় ফিরেই ব্যস্ত হয়ে পড়া বড় ধরনের ভুল। সন্তানের পাশে শুধু দৈহিক ভাবে নয়, আত্মিক ভাবেও থাকুন। সে যখন খেলাধুলা করে, তার সাথে খেলাধুলায় মাঝে মধ্যে যোগ দিন। সময় ভালো কাটবে, সন্তানের মনে এই খেলার আনন্দ দাগ কেটে থাকবে আজীবনের জন্য। আজকে তার সাথে এই যে সময় টা ব্যয় করলেন, ২০ বছর পর যত কাজই থাকুক আপনার সন্তানও আপনার জন্য সময় ব্যয় করবে।
৪. অটিজম বাড়ছে, বাড়ছে বাচ্চাদের খিটখিটে মেজাজ। কেন এমন হচ্ছে ? কোন কোন বাবা মা নিজেরা একটু আরাম করতে বাচ্চাদের হাতে মোবাইল বা অন্য ডিভাইস তুলে দেন। কার্টুন দেখিয়ে দেখিয়ে খাবার খাওয়ান। এসব কারনেই বাচ্চারা ডিভাইসে আসক্ত হয়ে মেজাজ হারাচ্ছে, অটিজম বাড়ছে। সৃজনশীল খেলনা কিনে দিন। বাস্তবে বাচ্চাদের অন্য শিশুদের সাথে খেলার সুযোগ করে দিন। বিজ্ঞানীরা বলেন ” সৃজনশীল খেলনা, মানুষের সংস্পর্শ শিশুর বুদ্ধিমত্তা, কল্পনা শক্তি ও শব্দ ভাণ্ডার কে সমৃদ্ধ করে।
৫. ছোট বলে বাচ্চাদের কথাকে আমরা প্রায়ই অগ্রাহ্য করি। তাদের কে বলি তুমি ছোট এসব বুঝবে না। এমন কথা মাঝে মাঝেই বললে বাচ্চাদের আত্মবিশ্বাস নষ্ট হতে পারে। যা তার পরবর্তী জীবনে প্রভাব ফেলবে। তাই বাচ্চারা কিছু বললে, গুরুত্ব অনুযায়ী তার অর্থ ভালোভাবে বুঝিয়ে দিন।
সন্তানের প্রতি দায়িত্ব নিয়ে কথা বলছেন শায়খ আহমাদ উল্লাহ
৬. অনেক মা বাবাই ভাবেন সন্তানকে টাকা পয়সা সম্পর্কে যত দেরিতে ধারনা দেয়া যায় ততই ভাল। কিশোর বয়স হলে সন্তানকে কিছু হাত খরচ দিন। সে কি কিনল, কত বাচল এগুলোর হিসাব নিন। বাজারে গেলে তাকে সাথে নিয়ে যান। কিভাবে কাঁচা বাজার কিনতে হয়, মাছ কিনতে হয় সে শিখে যাবে। টাকা পয়সার ব্যবস্থাপনা জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই বাচ্চাদের আয় ব্যয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিন।
৭. বাচ্চাদের প্রয়োজন আনন্দময় শৈশব। আমাদের শৈশব ছিল আনন্দের, প্রতিদিন খেলাধুলা, লাফালাফি আরও কত কিছু। কিন্ত এই ঢাকা শহরে আনন্দ প্রকাশের সুযোগ খুব সীমিত। এই সীমিত সুযোগের মাঝেই সময় পেলেই বাচ্চাকে নিয়ে হাঁটতে বের হোন। রাস্তায়, পার্কে, জাদুঘরে, সি বিচে সেখানে সে নতুন নতুন মানুষের দেখা পাবে। তার ভাবনার পরিধি বাড়বে। এছাড়া বাসায় তাকে নতুন নতুন কাজে তাকে জড়িয়ে দিতে পারেন।
৮. সুযোগ পেলেই বাচ্চাকে জড়িয়ে ধরুন। বিজ্ঞানীরা বাবা মা বাচ্চাকে জড়িয়ে ধরলে তাদের স্ট্রেস কমে যায়। তার মধ্যে নিরাপত্তা বোধের জন্ম হয়, অসুখ বিসুখ কম হয়। এছাড়া জড়িয়ে ধরলে পরস্পরের মধ্যে মমতা বৃদ্ধি পাবে।
৯. বিভ্রান্ত মুলক কথা বলবেন না। যেমন বাচ্চাকে বললেন রাত ৮ টার পরে মোবাইল, টিভি দেখবে না। পরদিন দেখা গেল আপনি কোন কাজে ব্যস্ত আছেন, বাচ্চাকে বসিয়ে দিলেন মোবাইল দিয়ে। এমন টা করবেন না। এতে বাচ্চারা কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল বুঝতে পারে না।
১.০. আপনার সন্তান কে আপনিই সবচেয়ে ভালো চিনেন। কোন কারনে বাইরের কাউকে দিয়ে সন্তানকে শাসন করাবেন না। এতে আপনার প্রতি সন্তানের আস্থা কমে যাবে। সন্তানের ভবিষ্যৎ নিজেই নির্ধারণ করুন। কারন তার খাওয়া, চলাফেরা, পোশাক আসাক, পড়াশুনা আপনিই সবচেয়ে ভালো জানেন। বাইরের মানুষের প্রচুর পরামর্শ পাবেন, সেদিকে কান দিবেন না। কোন যৌক্তিক পরামর্শ থাকলে নিতে পারেন।
সেলিম হোসেন – তাং – ২০/০৪/২০২৪ ইং – ছবি গুলো প্রতীকী