শুকতারা কি
ভোর। গেট দিয়ে বের হয়ে আমাকে হাতের ডানে যেতে হয়। পায়ের নিচে সিমেন্ট পাথর মিশানো পাকা রাস্তা। ২ মিনিট সোজা হাঁটার পর আবার ডানে ঘুরলেই মসজিদের রাস্তা। মসজিদে পৌছাতে আরও দুই মিনিট। হাতের বাম দিকে ২০ ফিট চওড়া ড্রেন চলে গেছে বিরাট লম্বা সাপের মত।
ডান পাশে গাছের সারি। তাজা অক্সিজেন ছাড়ছে বাতাসে। বাড়ি ঘর গুলো নীরব। নেরি কুকুর গুলো ঘুমিয়ে আছে। রাত জাগার ক্লান্তিতে একখণ্ড সাদা মেঘের গায়ে হেলান দিয়ে বসে আছে চাঁদ।
পুব আকাশে সগর্বে, সর্বাধিক উজ্জলতা নিয়ে পৃথিবীর দিয়ে চেয়ে আছে একটি তারা। নাম ” শুকতারা “।
শুকতারা কি জোহরা
আমরা শুকতারা নিয়ে আরও বিস্তারিত জানব। প্রশ্ন হল ” জোহরার কথা কেন এল ” ? ইবনে কাসির তাফসির লিখতে গিয়ে মন্তব্য করেছেন। এ ঘটনা গুলো ” হয়তো বা ” ইসরাইলি কাহিনী থেকে এসেছে।
প্রাচীন শহর ব্যাবিলন। সেখানে পাপ কর্ম ব্যাপক ভাবে বেড়ে যায়। তখন আল্লহাতায়ালা দুজন ফেরেশতা প্রেরন করেন ব্যাবিলনে। ফেরেশতা দুজন কে মানবিক প্রবৃত্তি দিয়ে পাঠানো হয়। আল্লাহ তায়াল তাদের কে বলে দিলেন ” আমি ছাড়া কাউকে উপাস্য হিসেবে নিবে না। ব্যাভিচার করবে না। মদ পান করবে না।”
তাদের কাজ ছিল জনগণের সমস্যা সমাধান করা। বিচার ফয়সালা করা ইত্যাদি। তারা ভোর বেলায় আকাশ থেকে ব্যাবিলনে নামতেন। সন্ধ্যা হলে আকাশে ফিরে যেতেন। একদিন অপরূপ সুন্দরী জোহরা তাদের কাছে আসলেন।
পড়ুন – পুলিশ স্বামীর পুরুষাঙ্গ কাটলো স্ত্রী।
ইবনে আব্বাস ( রাঃ ) ইসরাইলি বর্ণনা বিষয়ে জানান। জোহরা নাম টা ফারসি ভাষায় আনাহিদ। স্বামীর বিরুদ্ধে নালিশ নিয়ে গিয়েছিল হারুত, মারুতের কাছে। স্বামীর বিরুদ্ধে বিচার দাবি করেন। সাথে সাথে ফেরেশতা দুজন রায় দিয়ে দেন। এরপর জোহরা দাবি করে বসেন ” তোমরা যে মন্ত্র পড়ে আকাশে উঠ এবং নিচে নাম সেটা আমাকে শিখিয়ে দাও। ”
তারা সুন্দরীর আহ্বানে বিগলিত হলেন। যে ইসমে আজম পড়ে আকাশে উঠতেন এবং নেমে আসতেন। সেটা শিখিয়ে দিলেন।
জোহরা ইসমে আজম পড়ে আকাশে উঠে গেলেন। যখন তিনি নেমে আসবেন, তখন কোন ইসমে আজম পড়বেন ! সেটা ভুলে গেলেন। আর কিছুতেই মনে করতে পারলেন না। তখন সেখানেই তার দেহকে তারায় রূপান্তরিত করা হয়। সেই তারাই এখন ভোর বেলায় পুব আকাশে জ্বলজ্বল করে। আমার বলি শুকতারা। আরবি তে বলে জোহরা তারা।
জেনে নিন – উপগ্রহ, পানিচক্র, মেঘ ও বৃষ্টি, শুকতারা ও সন্ধ্যাতারা।
শুকতারা কখন দেখা যায়।
ভোরে বেলায় শুকতারাকে দেখা যায় পুব আকাশে। সন্ধ্যায় পশ্চিম আকাশে। সন্ধ্যার আকাশে যখন দেখা দেয়, তখন আমরা একে সন্ধ্যা তারা বলি।
শুকতারা কি সংজ্ঞা জেনে নিই
বিজ্ঞানীরা বলছেন শুক্র গ্রহই মূলত শুকতারা। সৌরজগতের দ্বিতীয় এবং পৃথিবীর নিকটতম গ্রহ শুকতারাকে পৃথিবীর ‘বোন গ্রহ’ও বলা হয়। মুলত ভোর বেলায়ই শুকতারা তার সকল সৌন্দর্য উজার করে দেয়।
এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে অবশ্যই ভোর বেলা বিছানা ছাড়তে হবে। হাঁটতে হবে মসজিদের দিকে। সকালের তাজা অক্সিজেন, নীরব চারিপাশ, প্রার্থনা সব কিছু মনকে ভালো লাগায় ভরে দিবে। বিষণ্ণতার অন্ধকার ছাপিয়ে শুরু হবে আলোকিত আরও একটি দিন। আপনার জীবনে। এখনি নিয়ত করে ফেলুন এখন থেকে প্রতিদিন ভোরে বিছানা ছাড়বেন।
সেলিম হোসেন – ১৫/০৭/২০২৪ ইং – ছবি গুলো প্রতীকী।