লিভার ধ্বংসের ৭ টি কারন ও প্রতিকার। কিভাবে ক্ষতি করছেন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ লিভারের। 7 causes and remedies for liver damage

লিভার ধ্বংসের ৭ টি কারন

লিভার ধ্বংসের ৭ টি কারন: নীরব ঘাতক থেকে জাতিকে রক্ষার উপায়

বাংলাদেশে হেপাটাইটিস সংক্রমণকে ‘নীরব ঘাতক’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রায় এক কোটিরও বেশি মানুষ হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে আক্রান্ত। এদের মধ্যে পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ রোগী লিভার সিরোসিসে ভোগেন, যা প্রায় ১০ লাখ মানুষের জীবন বিপন্ন করে তুলছে। বেসরকারি হিসাবে, হেপাটাইটিসের কারণে প্রতি বছর ২০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।

জাতিকে এই নীরব বিপদ থেকে রক্ষা করতে লিভার ধ্বংসের মূল কারণগুলো সম্পর্কে সচেতন হওয়া অপরিহার্য।

হু হু করে বাড়ছে কিডনি রোগী। প্রতিকারের উপায় জেনে নিন। 

লিভার
লিভার ধ্বংসের ৭ টি কারন

লিভার আক্রান্ত হলে কী হয়? (সিরোসিস)

যখন লিভারের কোষগুলো মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয় এবং অঙ্গটি তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারায়, তখন সেই পর্যায়কে লিভার সিরোসিস বলে। সিরোসিস হলে যকৃৎ স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে না। এর ফলে:

  • বিপাক প্রক্রিয়া (Metabolism) ব্যাহত হয়।
  • রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না।
  • ওষুধ ও রাসায়নিকের শোষণ বাধাগ্রস্ত হয়।
  • খাদ্যের পুষ্টি উপাদান সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা যায় না।

সিরোসিসে যকৃতে সূক্ষ্ম সুতার জালের মতো ফাইব্রোসিস ছড়িয়ে পড়ে, যা যকৃৎকে সংকুচিত করে দেয় এবং তার নিজেকে পুনরুদ্ধার করার ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়।

লিভার
লিভার ধ্বংসের ৭ টি কারন

লিভার ধ্বংসের ৭টি প্রধান কারণ ও প্রতিকার

জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসের কিছু ভুল আমাদের লিভারকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে দেয়।

১. অপ্রয়োজনীয় ঔষধ সেবন

আমেরিকা ও ইউরোপে তীব্র লিভার ফেইলিওরের (Acute Liver Failure) প্রধান কারণ হলো ঔষধজনিত যকৃৎ রোগ। সময়মতো চিকিৎসা না করালে এই ধরনের লিভার ফেইলিওরে মৃত্যুর সম্ভাবনা ৯০% পর্যন্ত থাকে।

প্রতিকার: প্যারাসিটামল, আইসোনিয়াজিড বা মিথোট্রিক্সেটের মতো সাধারণ ঔষধসহ যেকোনো ঔষধই লিভার ইনজুরি ঘটাতে পারে। তাই নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঔষধ সেবন করা থেকে বিরত থাকুন।

২. শারীরিক পরিশ্রমের অভাব (Sedentary Lifestyle)

সারাদিন অফিস, বাসা বা অলস আড্ডায় সময় কাটানো এবং যাতায়াতে রিকশা, গাড়ি বা লিফট ব্যবহার করার কারণে খাবার থেকে গ্রহণ করা ক্যালোরি তুলনায় অনেক কম খরচ হয়। এতে শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস সৃষ্টি হয়।

প্রতিকার: নিয়মিত ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমের অভ্যাস করুন। ব্যায়াম অতিরিক্ত ক্যালোরি খরচ করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে, শরীরে অক্সিজেন বাড়ায় এবং স্ট্রেস কমায়।

৩. আল্ট্রা প্রসেসড ফুড গ্রহণ

আল্ট্রা প্রসেসড খাবার (Ultra-Processed Food) যকৃৎ বা লিভারের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকারক। এই খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়:

  • সাদা চিনি (White Sugar)
  • বাজে তেল
  • অস্বাস্থ্যকর স্টার্চ
  • স্বাদ বাড়ানোর কৃত্রিম রাসায়নিক

এই খাবারগুলো শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমায় এবং উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হার্টের অসুখসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।

৪. অপরিকল্পিত ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যভ্যাস

ব্যস্ততার কারণে রেস্টুরেন্ট বা পার্টিতে যখন যা পাচ্ছি, তাই খেয়ে নিচ্ছি—যা লিভারের মারাত্মক ক্ষতি করছে। আমাদের খাবারের বেশিরভাগ অংশটাই হওয়া উচিত প্রাকৃতিক।

প্রতিকার: আজই আপনার খাবারের পরিকল্পনা করুন। আপনার খাদ্যতালিকায় স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন। সম্ভব হলে সাপ্তাহিক খাবারের মেনু তৈরি করে ফেলুন।

জেনে নিন – কিভাবে সারাজীবন ঔষধ এবং ডাক্তার থেকে দূরে থাকবেন।    

লিভার
লিভার ধ্বংসের ৭ টি কারন

৫. দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ (Chronic Stress)

দীর্ঘকালীন স্ট্রেস ঘুমের সমস্যা তৈরি করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রায় প্রভাব ফেলে। এছাড়া শরীরে সুপ্ত অবস্থায় থাকা বিভিন্ন ভাইরাসকে স্ট্রেস সক্রিয় করে দিতে পারে, যা লিভারের জন্য ক্ষতিকর।

প্রতিকার: ভিটামিন বি১, ভিটামিন ডি এবং নিয়মিত ব্যায়াম স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন নিশ্বাসের ব্যায়াম (যেমন 4-7-8 breathing session) করুন।

৬. অ্যালকোহল এবং সফট ড্রিংকস

অ্যালকোহল সরাসরি লিভারে চলে যায় এবং ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এছাড়া সফট ড্রিংকস বা কোমল পানীয়গুলি আরও খারাপ, কারণ এতে অ্যালকোহলের পাশাপাশি থাকে প্রচুর পরিমাণে চিনি।

প্রতিকার: অ্যালকোহলকে জীবন থেকে চিরতরে বিদায় দিন এবং চিনিযুক্ত পানীয় পরিহার করুন।

৭. অত্যাবশ্যকীয় ভিটামিন ও ফাইটোনিউট্রিয়েন্টের ঘাটতি

লিভারের সঠিক ফাংশন এবং ডিটক্সিফাই করার জন্য নির্দিষ্ট ভিটামিন ও ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট অপরিহার্য।

প্রতিকার:

  • ব্রকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি এ জাতীয় ক্রুসিফেরাস সবজি খান।
  • রসুন এবং পেঁয়াজসহ প্রচুর সালাদ খান।
  • ঘাস খাওয়ানো গরুর মাংস, নদী ও সমুদ্রের মাছ খান। এসব পুষ্টি লিভারকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

পড়ুন – কিভাবে সহজেই একমাসে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায়। 

লিভার
লিভার ধ্বংসের ৭ টি কারন

একটি গুরুত্বপূর্ণ গল্প: ভোজনের বাড়াবাড়ি

এক ভদ্রলোক দাওয়াতে গেলেন। সুস্বাদু খাবার টেবিলে আসার পর তিনি থামতে পারছিলেন না, প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি খেয়ে ফেললেন। একসময় খাওয়া শেষ করে বিশ্রামের জন্য বসতেই শুরু হলো অস্বস্তি—ডানে, বামে কাত হয়েও আরাম মিলল না।

অস্বস্তি বাড়লে তিনি ডাক্তারের চেম্বারে গেলেন। সব শুনে ডাক্তার দুটি ট্যাবলেট দিয়ে বললেন, “এত খেয়েছেন কেন? আপনি তো বিপদে আছেন। ট্যাবলেট দুটো খেয়ে নিন।”

ভদ্রলোক তখন বললেন, “ঔষধ খাওয়ার জায়গা যদি পেটে খালি থাকত, তাহলে তো আরও একটা রসগোল্লা খেয়ে আসতাম!”

এই হাস্যরসাত্মক গল্পটি আমাদের অসতর্ক খাদ্যাভ্যাসের দিকে ইঙ্গিত করে। দাওয়াতে গিয়ে কিংবা দৈনন্দিন জীবনে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ (বিশেষ করে অস্বাস্থ্যকর খাবার) লিভারের ওপর চরম চাপ সৃষ্টি করে।

নিয়মগুলো অনুসরণ করুন। সুস্থ জীবনধারা বজায় রাখুন এবং লিভারকে রক্ষা করুন।

পরিচিত যিনি লিভারের সমস্যায় ভুগছনে তাকে পোস্টটি শেয়ার করে দিন। সেলিম হোসেন – ১১/০৯/২০২৪ ইং – ছবি গুলো প্রতীকী

Reference : Dr Eric berg, Dr Mujibul Haque, Dr Jahangir Kabir, Dr Mujibur Rahman, Dr Mandell, Dr Jason Faung, Dr Sten Ekberg and many medical health journals.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *