মোসাদ বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর, স্মার্ট গোয়েন্দা সংস্থা !! 1 detective department Israel

মোসাদ
মোসাদ আইখম্যান অপারেশন 

মোসাদের কার্যক্রম এবং বিভিন্ন অপারেশান, তাদের শত্রুর চোখে ভয়ঙ্কর করে তুলেছে। পরিচিতি পেয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর, স্মার্ট গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবে !! আসুন আমরা একটু পিছনের দিকে তাকাই। জানতে পারব মোসাদের বেশ কিছু থ্রিলিং অপারেশনের কথা।   

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে। হিটলার পরাজিত। ইহুদিদের গনহারে হত্যা করা হয়েছে। যা হলোকাসট নামে সারা বিশ্বে পরিচিত। ইহুদীরা চলে যায় ফিলিস্তিনে। সেখানে তারা রাষ্ট্র গঠন করে। এই রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। 

হিটলারের গনহত্যার অন্যতম মাধ্যম ছিল গ্যাস চেম্বার। এই গ্যাস চেম্বারে কয়েক হাজার ইহুদি কে নিজ তদারকিতে পৌঁছে দিয়েছিলেন কর্নেল এডলফ আইখম্যান। ১৯৪৫ এর যুদ্ধের পর তিনি আর্জেন্টিনাতে পালিয়ে আত্মগোপন  করেন। 

১৯৬০ সালে বুয়েন আয়ারস শহরে তাকে খুজে বের করে এবং অপহরন করে ইসরাইলে নিয়ে আসে। বিচারের মুখোমুখি করে এবং মৃত্যুদণ্ড দেয় , তা কার্যকর করে। 

মোসাদ

পড়ুন – এম পি আনোয়ার কেন নিখোঁজ হলেন 

মোসাদ খালেদ মেশাল অপারেশন 

জর্ডানের বাদশা হোসেন তখন ক্ষমতায়। ১৯৯৭ সালে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান খালেদ মেশালকে জর্ডানে বিষ ব্যবহার করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল।হামাসের গুরুত্বপূর্ণ নেতা খালেদ মিশাল বাচ্চাকে স্কুলে দিয়ে নিজ গাড়িতে বাসায় ফিরছিলেন। আচমকা এই গোয়েন্দারা তার উপর আক্রমন করে, খালেদের কানে একপ্রকার বিষ ঢেলে দেয়। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে পৌঁছে যান খালেদ।

ইসরায়েলি এজেন্টরা ধরা পড়ে যায়। এই অভিযান ব্যর্থ হয়। এরপর খালেদ মেশালের জীবন বাঁচানোর জন্য প্রতিষেধক সরবরাহ করতে বাধ্য করা হয় ইসরায়েলকে। মোসাদের তৎকালীন প্রধান ড্যানি ইয়াটম তার খালেদের চিকিৎসার জন্য জর্ডানে যান।

মোসাদ

মোসাদ এন্টাবি অভিযান 

এটা ছিল মুলত ইসরাইলের সামরিক অভিযান। উগান্ডার এন্টাবিতে। এই অভিযানে গোয়েন্দা তথ্য প্রদান করেছিল গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ আর অভিযান চালিয়েছিল ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।

তেল আবিব থেকে এথেন্স হয়ে প্যারিস যাচ্ছিল এক বিমান। একশ জন যাত্রীকে জিম্মি করা হয়। মোট যাত্রী ছিল ২৫০ জন। ইসরায়েলি কমান্ডো বাহিনী সফলভাবে ১০০ জন জিম্মিকে উদ্ধার করেছিল। 

যারা বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন তাদের মধ্যে ‘পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অফ প্যালেস্তাইনের’ দুই সদস্য এবং তাদের দুই জার্মান সহযোগী ছিলেন। তারা ওই বিমান উগান্ডায় নিয়ে গিয়েছিলেন। জিম্মিদের উদ্ধার করতে ইসরায়েল অভিযান চালায়।

এই ঘটনায় তিনজন জিম্মি, বিমানের হাইজ্যাকাররা, বেশ কয়েকজন উগান্ডার সৈন্য এবং ইসরায়েলের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ভাই ইয়োনাতান নেতানিয়াহুর মৃত্যু হয়েছিল।

মোসাদ

পড়ুন – হৃদয় বিদারক ঘটনা – ভুল বিচারে ফাঁসি  

মোসাদ অপারেশন ব্রাদার্স

১৯৮০-র দশকের গোড়ার দিকে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মেনাহেম বেগিনের নির্দেশে এই সংস্থা এক অভিনব পন্থায় নকল ডাইভিং রিসোর্টের আড়ালে সুদান হয়ে ৭০০০ এরও বেশি ইথিওপিয়ান ইহুদিকে ইসরায়েলে পাচার করেছিল।

শত্রু ‘আরব লিগের’ অন্তর্গত দেশ সুদান। তাই সেখানে গোপনে কাজ করে এই সংস্থার এজেন্টদের একটা দল সুদানের লোহিত সাগর উপকূলে একটি রিসর্ট স্থাপন করেছিল। এই রিসর্টকে তারা গোপন ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করত। 

দিনের বেলায়, ওই এজেন্টরা হোটেলের কর্মীর ছদ্মবেশ ধারণ করে কাজ করতেন। রাতে প্রতিবেশী ইথিওপিয়া থেকে গোপনে পায়ে হেঁটে আসা ইহুদিদের পাচার করতেন মোসাদ এজেন্টরা। তাদের আকাশ বা সমুদ্রপথে দেশের বাইরে পাঠানো হতো ইথিওপিয়ান ইহুদিদের। এই অভিযান কমপক্ষে পাঁচ বছর ধরে চলেছিল। পরে যখন এই তথ্য প্রকাশ্যে আসে তখন সুদান ছেড়ে পালিয়ে যান মোসাদ এজেন্টরা। 

মোসাদ

মোসাদ মিউনিখ অলিম্পিকস অপহরণ

অলিম্পিক আয়োজন হয়েছিল জার্মানির মিউনিখে। সময় কাল ১৯৭২। অলিম্পিকে অংশগ্রহণ কারী দুই ইসরাইলি সদস্যকে অপহরন এবং হত্যা করে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী। বন্দী করে আরও নয়জনকে। 

পশ্চিম জার্মান পুলিশ জিম্মিদের উদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। সব জিম্মি নিহত হন। এরপর মোসাদ ‘ফিলিস্তিন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের’ একাধিক সদস্যকে নিশানা করে। এই তালিকায় মাহমুদ হামশারিও ছিলেন। 

মাহমুদ হামশারির প্যারিসে অবস্থিত অ্যাপার্টমেন্টের ফোনে বিস্ফোরক লাগানো হয়েছিল। যার ফলে গুরুতর আহত হন তিনি। বিস্ফোরণে একটা পা হারিয়েছিলেন তিনি এবং শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যুও হয়।

পড়ুন – কিভাবে মদ খেয়ে মারা গেল সাগরিকা এবং পারুল  

মোসাদ
মোসাদ  ইয়াহিয়া আয়াশ 

ইয়াহিয়া আয়াশ একজন হামাসের বোমা প্রস্ততকারক। তার বোমা তটস্থ রেখেছিল ইসরাইলি সৈন্যদের। হামাসের সামরিক শাখার একজন অন্যতম প্রধান নেতা ছিলেন ইয়াহিয়া আয়াশ। ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে জটিল আক্রমণ পরিচালনায় দক্ষতার জন্য পরিচিতি ছিল তার। এই দক্ষতার কারণে ইসরায়েলি নিরাপত্তা সংস্থার জন্য সে দেশের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’-এর তালিকায় নামও ছিল। ক্রমে ইসরায়েলের প্রধান নিশানা হয়ে ওঠেন তিনি।

১৯৯৬ সালে মোসাদ ইয়াহিয়া আয়াশ কে হত্যা করতে অভিযান পরিচালনা করে । এজেন্ট রা একটা মটোরোলা আলফা মোবাইল ফোনে বিস্ফোরক ঢুকিয়ে দেয়। ৫০ গ্রাম বিস্ফোরক রাখা হয়েছিল ওই মোবাইল ফোনে। ২০১৯ সালের শেষের দিকে, ইসরায়েল হত্যার কিছু বিবরণের উপর থেকে সেন্সরশিপ তুলে নেয় এবং ‘চ্যানেল ১৩ টিভি’ ইয়াহিয়া আয়াশের সঙ্গে ফোনে তার বাবার শেষ কথোপকথনের একটা রেকর্ডিং সম্প্রচার করে।

মাহমুদ হামশারি এবং ইয়াহিয়া আয়াশ, দু’জনের দুইজনকে হত্যাকাণ্ডই ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তুকে নিশানা করে মারার জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের এক দীর্ঘ এবং জটিল ইতিহাসকে তুলে ধরে।

মোসাদ

মোসাদ ইয়োম কিপ্পুর যুদ্ধ

১৯৭৩ সাল মিশর এবং আকস্মিক হামলা চালায় ইসরাইলের উপর। উদ্দেশ্য ইসরাইলের কব্জা থেকে সিনাই উপদ্বীপ এবং গোলান মালভূমি উদ্ধার করা।  আক্রমণের সময় হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছিল ইহুদিদের প্রায়শ্চিত্তের দিন ইয়োম কিপ্পুরেকে। যে কারণে যুদ্ধের প্রাথমিক দিনগুলোতে ইসরায়েল প্রস্তুত ছিল না।

মিশর ও সিরিয়া দুই ফ্রন্টে ইসরাইলকে আক্রমণ করে। মিশরীয় বাহিনী সুয়েজ খাল অতিক্রম করে। প্রত্যাশিত হতাহতের মাত্র একটা অংশই তাদের আক্রমণের দ্বারা প্রভাবিত হয়। অন্যদিকে সিরিয়ার বাহিনী ইসরায়েলি অবস্থানে আক্রমণ করে এবং গোলান মালভূমিতে প্রবেশ করে।

সোভিয়েত ইউনিয়ন সিরিয়া এবং মিশরকে এই আক্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করেছিল। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে একটি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থার জোগান দিয়েছিল। ইসরায়েল ওই বাহিনীকে প্রত্যাহার করতে সক্ষম হয়েছিল। যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য জাতিসংঘের তরফে প্রস্তাব দেওয়ার চারদিন পর ২৫শে অক্টোবর যুদ্ধ শেষ হয়েছিল।

মোসাদ

মোসাদ  অপারেশন ডায়মণ্ড 

তাদের আরও একটি রোমহর্ষক কাজ। এমন অনেক অনেক রোমহর্ষক উদাহরন আছে এই ভয়ঙ্কর সংস্থার। সেই সাথে ইসরাইলকে তারা নিরাপদ রেখেছেন।  কিন্ত ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস গতকাল সবাইকে হতবাক করে দিয়ে ইসরাইলের অভ্যান্তরে আক্রমন চালিয়েছে, যুদ্ধ চলছে ।

মোসাদ হতভম্ব, নির্বাক, ইসরাইলের সব গর্ব, অহংকার একদম মাটিতে। আতঙ্কিত ইসরাইলিরা দক্ষিনাঞ্চল ছেড়ে পালাচ্ছেন। একটা বিষয় স্পষ্ট, দিনের পর দিন শুধুমাত্র শক্তি দিয়ে একটা জনগোষ্ঠীকে দমিয়ে রাখা যায় না। শাসন করতে শক্তির সাথে প্রয়োজন ইনসাফ। আমরা আশাকরি ইসরাইলের বোধোদয় ঘটবে, ফিলিস্তিনিরা তাদের ন্যায্য পাওনা ফিরে পাবে। 

মোসাদ ঃ বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর, স্মার্ট গোয়েন্দা সংস্থা !! আসলেই কি ? হামাসের হামলা কি প্রমান করল। 

যুদ্ধ বন্ধ হোক, শান্তি চাই।

মোসাদ

সেলিম হোসেন – তাং – ০৮/১০/২০২৩ ইং – ছবি গুলো প্রতীকী। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *