মোটা হই না কেন
মোটা হবো কেন
বেশিরভাগ মানুষ সমস্যায় আছেন, কিভাবে ওজন কমাবেন। সেই ভাবনায়। আবার অল্প কিছু মানুষ কম ওজন নিয়ে হতাশ আছেন। কারন প্যান্ট কিনতে গেলে পছন্দের প্যান্ট টা কোমরে লাগে না। অন্যদের শার্ট কত সুন্দর মানায় অথচ আমার শরীরে কেমন ঢোলা হয়, কাঁচা বাজারের ব্যাগের মত। যেই বোনেরা চিকন তারা তো টেনশনে খেতেও পারেন না। ঘুমাতেও মাঝরাত পেরিয়ে যায়। মুখে ব্রন উঠে, ত্বকের গ্লামার নষ্ট হয়ে যায়। তো আসেন উপায় গুলো জেনে নিই।
মোটা হওয়ার ১০ টি উপায়।
১. ওজন বাড়াতে চাইলে সর্বপ্রথম যেটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সেটা হল মোটা হবেন কিন্ত শরীরে চর্বি জমবে না। অর্থাৎ আপনার শরীরে মাংসপেশি বাড়াতে হবে। তাহলে দেখতে ভালো লাগবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। আর যদি শরীরে চর্বি জমে যায়। সাময়িক ভাবে দেখতে ভালো লাগবে। কিন্ত অচিরেই বিভিন্ন রোগের আক্রমন শুরু হবে। যা ভবিষ্যতে মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।
২. অনেকেই প্রচুর পরিমান খাচ্ছেন। কিন্ত মোটা হচ্ছেন না। তাদের ক্ষেত্রে মুল সমস্যা হতে পারে আই বি এস। এই সমস্যা থাকলে আপনি যতই খান শরীরে সঠিক মেটাবলিজম হবে না। খারাপ মেটাবলিজমে শরীরে পুষ্টি আসবে না। পুষ্টি না পেলে মোটা হবেন কিভাবে ? সম্ভব নয়। অতএব আই বি এস থাকলে এটা দূর করুন সবার আগে। এটা দূর করতে পাকস্থলির হজম ক্ষমতা বাড়াতে হবে।
৩. কারও কারও দেখবেন দ্রুত চুল পেকে যায়। হাইপার থাইরয়েডিজম এর কারনে এমন হতে পারে। আরও একটা কারন থাকতে পারে। সেটা হল প্রোটিন হজমে সমস্যা। দীর্ঘদিন গ্যাসের ট্যাবলেট খাচ্ছেন। আপনি নিশ্চিত থাকুন, পাকস্থলীর ভালো এসিড কমে গেছে। এ অবস্থায় প্রোটিন হজমে সমস্যা দেখা দিবে। ওজন কমে যাবে। মোটা হতে পারবেন না। সাস্থ্যকর ভাবে ওজন বাড়াতে ভালো প্রোটিন জাতীয় খাবার অপরিহার্য।
ভিডিও দেখুন – কিভাবে মাসল গেইন করে ওজন বাড়াবেন, ডাঃ এরিক বার্গ।
৪. মোটা হতে খেয়ে ব্যায়াম করবেন। যারা ওজন কমাতে চান, তারা ব্যায়াম করবেন খালি পেটে। কিন্ত আপনি তো ওজন বাড়াতে চাচ্ছেন, তাই না। আপনি ব্যায়াম করবেন কিছু খাওয়ার পর। ভালো হয় ব্যায়ামের পূর্বে দুটো ডিম বা কলা খেলে। বেশি কার্যকর হবে যদি জিমে যান। জিমে আপনার প্রধান কাজ হবে ওজন নেয়া। যদি জিমে যাওয়ার সুযোগ না থাকে, তাহলে ডাম্বেল কিনে বাড়িতেই করতে পারেন। জিমে গেলে একদিন পর পর যাবেন। প্রতিদিন টানা জিম করবেন না। অর্থাৎ একদিন জিম পরদিন শরীর হিলিং হবে।
৫. ওজন বাড়াতে চাইলে অবশ্যই খাদ্যতালিকায় সাস্থ্যকর খাবার রাখতে হবে। এ ধরনের কিছু খাবার হলো কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, আখরোট, পেস্তাবাদাম, চিনাবাদাম, খেজুর, কিসমিস, আলুবোখারা, ননিযুক্ত দুধ, টক দই, পনির, ক্রিম, মুরগির মাংস, গরুর মাংস, ভেড়ার মাংস, ছাগলের মাংস ও কলিজা, আলু, মিষ্টি আলু, চকলেট, কলা, আ্যভোকাডো, পিনাট, মাখন ইত্যাদি।
৬. প্রতিদিনের খাবারে যথেষ্ট পরিমান শাকসবজি রাখবেন। এতে পেট ভালোমত পরিস্কার হবে। যাদের ওজন বাড়েনা তাদের মধ্যে একটা কমন সমস্যা কষা পায়খানা। কষা সমস্যা থাকলে ইসবগুলের ভুসি এবং চিয়াসিড একসাথে খাবেন। চিয়াসিড ভিজিয়ে রাখবেন আধা ঘণ্টা এরপর এতে ইসবগুলের ভুসি মিশিয়ে খেয়ে নিবেন। এতে করে নিয়মিত পেট পরিস্কার হবে।
৭. টেনশন মুক্ত থাকবেন। বলতে পারেন, টেনশন তো চলে আসে কি করব ? হ্যা, টেনশন সবারই হয়। এটাকে ম্যানেজ করতে হয়। যেহেতু আপনি রেগুলার ব্যায়াম করছেন । ব্যায়াম টেনশন মুক্ত থাকতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি টেনশন মুক্ত থাকতে নিশ্বাসের ব্যায়াম খুবই কার্যকরী। 4 -7- 8 breathing session লিখে ইউটিউবে সার্চ দিন পেয়ে যাবেন নিশ্বাসের ব্যায়াম।
কেন লিভার ক্ষতিগ্রস্ত। লিভার কে সুস্থ রাখার উপায় কি ?
৮. মেইন ডিস দিনে তিনবার খাবেন। বেশি খেতে গেলে হজমে সমস্যা হবে। হজমে গোলমাল হলে কোন কিছুই কাজে লাগবে না। অনেকেই দিনে পাঁচ ছয়বার খাবার কু পরামর্শ দিবে। সেদিকে কান দিবেন না।
৯. ঘুম ভালো হতে হবে। রাত দশটার মধ্যে বিছানায় চলে যাবেন। মোবাইল ফোন সহ সবরকম ডিভাইস দূরে রাখবেন। ভোরবেলায় ঘুম থেকে উঠবেন। ঘুম ভালো হলে শরীরে সারাদিনের গৃহীত পুষ্টি সঠিক ভাবে কাজ করবে।
১০. আমাদের শরীর থেকে প্রতিদিন ১০-২০ বিলিয়ন কোষ ক্ষয় হয়। আবার সেইসাথে তৈরিও হয়। আমাদের ভালো খাবার সুস্থ কোষ তৈরি করে। তাই কোন জাঙ্ক ফুড খাবেন না। যেমন বার্গার, চিকেন ফ্রাই, পিতজা, ভাজাপোড়া খাবার ইত্যাদি। নিয়ম গুলো অনুসরণ করুন। ওজন বাড়বেই। একটি সুস্থ শরীর পাবেন। জীবন হবে আনন্দের।
মোটা মানুষের গল্প
গল্প টি লিখেছেন শেখ সাদি। পারস্যের ( আজকের ইরান ) অমর কবি। আজ থেকে আট শত বছর আগে। কিন্ত এই গল্পের শিক্ষা সবসময়ই থেকে যাবে।
দেশের নাম খোরাসান। ভারি সুন্দর এক দেশ। সেই দেশে ছিল দুইজন সাধু ব্যাক্তি। একজন ছিল বেশ মোটাসোটা। দিনে তিন বেলা গলা পর্যন্ত না খেলে তার অস্থির লাগত। অন্যজন ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। হালকা পাতলা শরীর। কোন অযাচিত মেদ নেই শরীরে। অতিরিক্ত খাওয়া পছন্দ করতেন না। সাধারণত দিনে তিনি মাত্র একবার খেতেন। তবে দুজনের বন্ধুত্ব ছিল দারুন।
একবার তারা একসাথে দেশ ভ্রমনে বের হলেন। পাহার পর্বত ছাড়িয়ে, বন জঙ্গল পেরিয়ে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন তারা। নতুন দেশ, নতুন মানুষ। নিত্যনতুন অভিজ্ঞতা। খুব ভালো লাগছিল তাদের। আনন্দে কেটে যাচ্ছিল দিনগুলো। এই ভাবে ঘুরতে ঘুরতে একদিন নতুন এক শহরে পৌঁছল দুই বন্ধু। শহরে ঢোকামাত্র গ্রেফতার করা হল তাদের। বাদশাহর সৈন্যরা ধরে নিয়ে গেল কাজীর দরবারে। বিচারে রায় দেয়া হল এরা গুপ্তচর।
ছোলা পুরুষকে শক্তিশালী করে, নারী পুরুষ উভয় কে সুস্থ রাখে।
সাধু দুইজন বলতে থাকে – আমারা নিরপরাধ, আমাদের কোন দোষ নেই। আমরা দেশে দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছি। নিরীহ মানুষ, দয়া করুন আমাদের উপর। কিন্ত কেউ তাদের কথা শুনল না। তাদের কে বন্দী করে রাখা হল এক ” আয়না ঘরে”। দরজা বন্ধ করে দেয়া হল। যাতে করে না খেতে পেয়ে দুজন মারা যায়। গুপ্তচরের শাস্তি ভয়ংকর।
রাজার পক্ষ থেকে অধিকতর তদন্ত চলছিল। প্রমান পাওয়া গেল, লোক দুজন গুপ্তচর নয়। তারা সাধু ব্যাক্তি। মনের আনন্দে বেরিয়েছে বিভিন্ন দেশ ঘুরে দেখতে। দ্রুত বাদশার লোকেরা গেল বন্দীদের মুক্ত করতে। দরজা ভেঙে উদ্ধার করতে হবে ওদের। কিন্ত এতদিন না খেয়ে থাকলে তো মানুষ বাঁচে না। নিশ্চয়ই ওরা বেঁচে নেই। দরজা খুলে অবাক হল সৈন্যরা। একজন এখনো বেঁচে আছে। যার শরীর হালকা পাতলা তিনিই বেঁচে আছেন। মোটা লোকটা পটল তুলেছে। সবাই অবাক।
স্বামী স্ত্রীর একান্ত সময় ভরে উঠবে আনন্দ আর ভালবাসায়।
তখন একজন জ্ঞ্যানী লোক বলল ” এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। মোটা লোকটাই মারা যাবে কারন সে ছিল ভোজন রসিক। খাবার ছাড়া তার এক মুহূর্ত চলে না। কিন্ত পাতলা লোকটা সংযমী। না খেয়ে থাকার অভ্যাস তার আছে। সে বন্দী কারাগারে ফাস্টিং করে কাটিয়েছে।
লোকটি সবার উদ্দেশ্যে বলল – যারা অভাবের মধ্যে দিন কাটায়, তারা অভাব কে সহ্য করতে পারে। কিন্ত যারা ভোগ বিলাসে জীবন কাটায় তারা সামান্য বিপদেই কাতর হয়ে পরে। এমনকি মারাও যায়। ওদের দুজনের ভাগ্যে সেরকম ঘটনাই ঘটেছে।
আমরা খেয়াল রাখব, থলথলে চর্বি যুক্ত শরীর আমরা বানাব না। আমাদের শরীর হবে পেশীবহুল, অযাচিত চর্বি মুক্ত।
সেলিম হোসেন – ১৭/০৯/২০২৪ ইং – ছবি গুলো প্রতীকী।
Reference : Dr Eric berg, Dr Mujibul Haque, Dr Jahangir Kabir, Dr Mujibur Rahman, Dr Mandell, Dr Jason Faung, Dr Sten Ekberg and many medical health journals.