মেছতা দূর করার উপায়: চিরতরে Melasma মুক্তির গোপন সূত্র
অফিসের জানালায় বসে জাহিদ ইসলাম আষাঢ়ের মেঘেদের দল বেঁধে উড়ে যাওয়া দেখছিল, ঠিক ছুটির পর গার্মেন্টস কর্মীদের মতো। আজকের বিক্রিবাটা নিয়ে সে বেশ খুশি, প্রডাক্ট প্রায় শেষের দিকে। এমন সময় বন্ধু বেলাল আহমেদ হাতে একটি পার্সেল নিয়ে রুমে ঢুকল।
বেলাল: কি ব্যাপার পার্সেল কিসের?
জাহিদ: বলছি, তার আগে চা-খাওয়া। আজ তোকে মাকা পাউডার মেশানো চা খাওয়াব। এতে মধু মিশিয়ে নিয়মিত খেলে লিবিডো উন্নত হয় এবং ইন্টারকোর্স আনন্দময় ও দীর্ঘস্থায়ী হয়। এখন বল তোর পার্সেলে কী?
বেলাল চায়ে চুমুক দিয়ে বলল—এটা তার শ্যালিকার জন্য আনা চিরতরে মেছতা দূর করার উপায়ের ক্রিম। তার সুন্দর মুখে কিছুটা দাগ পড়েছে। জাহিদ তখন বলল, ক্রিম হয়তো নিয়মিত মাখলে মেছতা চলেও যাবে, কিন্তু মূল সমস্যাটা কোথায়—কেন মেছতা হয়? সেটা না জানলে চিরতরে মেছতা দূর করা সম্ভব নয়।
আমাদের খাদ্যাভ্যাস ও লাইফস্টাইল কীভাবে মেলাসমা (মেছতা) এবং হাইপারপিগমেন্টেশনের সাথে সম্পর্কিত, সেই বিষয়েই জাহিদ বেলালকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করল।
আজীবন স্লিম এবং ফিট থাকার সহজ উপায়

মেছতা (Melasma) কী এবং কেন হয়?
মেছতা বা হাইপারপিগমেন্টেশন হলো ত্বকের গভীরে সৃষ্ট প্রদাহের (Inflammation) ফল। সমস্যাটি কেবল ত্বকের উপরে নয়, এটি শরীরের ভেতরের ভারসাম্যের সাথে সম্পর্কিত। তাই ক্রিম মাখলে দাগ চলে গেলেও বার বার ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে।
চিরতরে মেছতা দূর করার জন্য এই অভ্যন্তরীণ প্রদাহ বা ‘ইনফ্লামেশন’ দূর করা সবচেয়ে জরুরি।
মেলাসমা বা হাইপারপিগমেন্টেশনের ৯টি বাহ্যিক কারণ:
গবেষণা অনুসারে, চিরতরে মেছতা দূর করার উপায় জানতে প্রথমে মেছতা হওয়ার ৯টি বাহ্যিক কারণ জানতে হবে:
১. হরমোন ভারসাম্যহীনতা: যাদের হরমোনের ভারসাম্যহীনতা আছে, তাদের ত্বকে ছোপ ছোপ কালো দাগ পড়তে পারে।
২. গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থা এবং প্রসবের পর মায়েরা যখন বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়ান, তখন হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ত্বকে দাগের সমস্যা দেখা দেয়।
৩. জন্ম নিয়ন্ত্রণ: জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি, ইনজেকশন বা প্যাচ ব্যবহারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে মেলাসমা দেখা দিতে পারে।
৪. এইচআরটি (HRT): নারীদের মেনোপজ-পরবর্তী সময়ে হরমোনের ঘাটতি পূরণের জন্য ব্যবহৃত এইচআরটি-এর কারণেও মেলাসমা দেখা দিতে পারে।
৫. ডায়াবেটিস: যাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি (ডায়াবেটিস), তাদের ত্বকে দাগ পড়তে পারে।
৬. থাইরয়েড সমস্যা: থাইরয়েডের সমস্যাও ত্বকের দাগের কারণ হতে পারে।
৭. সূর্যের আলো: সূর্যের আলোর ইউভি রশ্মি ত্বকের জন্য ক্ষতিকারক। এটি থেকে রেহাই পেতে অনেকে সানব্লক ব্যবহার করেন।
৮. অতিরিক্ত তাপ: রান্নাঘরের অতিরিক্ত তাপ বা বসবাসের জায়গাও যদি বেশি তাপে পূর্ণ থাকে, সেক্ষেত্রেও ত্বকে এমন সমস্যা হতে পারে।
৯. ত্বকে আঘাত: কোনো কারণে ত্বকে আঘাত লাগলেও হাইপারপিগমেন্টেশন হতে পারে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই কারণগুলো মেলাসমাকে ট্রিগার করতে পারে, কিন্তু মূল সমস্যা হলো ত্বকের অন্তর্নিহিত প্রদাহ।

চিরতরে মেছতা দূর করার উপায়: খাদ্যাভাসে পরিবর্তন
মেছতা যাতে আর কোনোদিন না হয়, তার জন্য মূল সমস্যা ‘প্রদাহ’ দূর করতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস কেবল মেলাসমা থেকেই মুক্তি দেবে না, বরং ত্বকের লালচেভাব কমাবে এবং বুড়িয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে ধীর করে দিবে।
১. প্রদাহ সৃষ্টিকারী খাবার পরিহার করুন
জাঙ্ক ফুড, আল্ট্রা প্রসেসড ফুড, কারখানায় তৈরি খাবার, কৃত্রিম মিষ্টি, স্বাদ বৃদ্ধিকারী এবং রাসায়নিক সংযোজন মিশ্রিত খাবার শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করে। এই প্রদাহের কারণেই শরীরে ভারসাম্য নষ্ট হয়।
- বাদ দিতে হবে: জাঙ্ক ফুড, ফাস্ট ফুড, আগে থেকে তৈরি খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার, কোমল পানীয় (কোক, পেপসি), দোকানে পাওয়া ফলের জুস, এনার্জি ড্রিংক এবং চিনিযুক্ত চা বা কফি।
- মনে রাখুন: ব্যাগ, ক্যান, পাত্র, জার, বাক্স বা বোতল থেকে যা কিছু বের হয়, তা প্রায় শতভাগ আল্ট্রা প্রসেসড ফুড। এগুলো খাওয়া উচিত নয়।
২. আসল (ন্যাচারাল) খাবার গ্রহণ করুন
আমাদের শরীর প্রাকৃতিক, পুষ্টিকর, তাজা খাবার খাওয়ার জন্য তৈরি।
- খাদ্য তালিকায় রাখুন: শাকসবজি, গোটা শস্য (Whole Grains), মটরশুঁটি, ডাল, বাদাম, বীজ, মাংস, মাছ, ডিম, ভেষজ ও মশলা। খাবারের বেশিরভাগ অংশ জুড়েই থাকবে তাজা খাবার, যা বাসায় নিজে তৈরি করা।
৩. স্বাস্থ্যকর পানীয় পান করুন
কোমল পানীয় বা চিনিযুক্ত পানীয়ের বদলে স্বাস্থ্যকর পানীয় পান করুন:
- ডাবের পানি
- অ্যাপেল সিডার ভিনেগার (লেবুর সাথে মিশিয়ে)
- গ্রিন জুস
- বাদামের জুস

৪. খাবারের নেশা দূর করার কৌশল
বাজে খাবারের নেশা দূর করতে প্রথমত মনস্থির করুন। এই সংকল্পের উপর টিকে থাকতে আপেল সিডার ভিনেগার (উইথ মাদার) অত্যন্ত কার্যকর উপাদান।
- যখনই বাজে খাবার খেতে ইচ্ছে করবে, তখনই এক টেবিল চামচ ভিনেগার কাপে ঢেলে চায়ের মতো চুমুক দিয়ে ধীরে ধীরে খান।
- নিয়মিত টক দই, সাওয়ার ক্রাউট, কিমচি-এর মতো প্রোবায়োটিক যুক্ত খাবার খান। এভাবে ২-৩ মাস চললেই বাজে খাবারের নেশা কেটে যাবে।
৫. কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট বেছে নিন
খাবারে অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট বা চিনি রক্তে ইনসুলিনের দ্রুত উত্থান ঘটায়, যা হরমোনের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে। কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট শরীরে ধীরে ধীরে ইনসুলিন আনে:
- উপযোগী কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট: লাল চালের ভাত, কিনোয়া, ওটস, বাকহুইট, মিষ্টি আলু ইত্যাদি।
যদি খাদ্যাভাস পরিবর্তনের পরেও মেছতা থেকে যায়: আপাতত স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট (যেমন ফল, শস্যদানা) খাওয়া কিছুটা কমিয়ে দিন। খাবারে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট (নারিকেল তেল, অলিভ ওয়েল, ঘি, বাটার, ডিম) এবং ভালো প্রোটিনের (দেশি গরুর মাংস, তৈলাক্ত মাছ) পরিমাণ বাড়িয়ে দিন।
৬. অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাধ্যমে ত্বককে ভেতর থেকে রক্ষা করুন
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত কোষ নতুন করে তৈরি করে। সূর্যের ইউভি রশ্মি ও ঢাকা শহরের বায়ু দূষণ থেকে ত্বককে ভেতর থেকে রক্ষা করতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার জরুরি।
- রঙিন খাবার: যে খাবারে রঙ যত গাঢ় (যেমন বুনো ব্লুবেরি, পালং শাক, বা হলুদ), তাতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ তত বেশি।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার:
- বেরি: ব্লুবেরি, ক্র্যানবেরি, রাস্পবেরি, ডালিম, কিউই।
- শাকসবজি: টমেটো, পেঁয়াজ, ব্রোকলি, লাল বাঁধাকপি, বিট, পালং শাক, কেল।
- মশলা: হলুদ, দারুচিনি, লবঙ্গ, আদা।
- বাদাম: পেকান, ব্রাজিল বাদাম, আখরোট।

গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মায়েদের জন্য মেছতা দূর করার উপায়
যে মায়েরা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ান বা গর্ভবতী, তারাও প্রসেসড ফুড বাদ দিয়ে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট খাবেন। এই নিয়ম অনুসরণ করলে মায়ের মেছতা দূর হবে এবং এটি শিশুর জন্যও ভালো হবে।
বেলাল: ঠিক আছে, বুঝতে পারলাম। আজকে তো মেছতা দূর করার উপায়, সিরিয়াস বিষয় নিয়েই কথা বললাম। কোনো ইন্টারেস্টিং নিউজ কি আছে? থাকলে বল। অনেক সময় কথা হয়েছে, উঠতে হবে।
জাহিদ: হ্যাঁ, দারুণ একটা খবর আছে, বলছি।
প্রোবায়োটিক যুক্ত খাবার গুলো চিনতে হবে

বোনাস স্টোরি: ৪০ কোটি টাকা নিয়ে প্রেমিকা অন্যের সাথে ভেগেছে
কয়েকদিন আগে কানাডার উইনিপেগ শহরে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে। মোটাসোটা চেহারার লরেন্স ক্যাম্পবেল তার প্রেমিকা, সুন্দরী ক্রিস্টাল অ্যান ম্যাককে-কে ভালোবাসতেন। হঠাৎ লরেন্স লটারিতে ৫০ লাখ কানাডিয়ান ডলার (প্রায় ৪০ কোটি টাকা) জিতে যান।
লরেন্স ক্যাম্পবেলের বৈধ আইডি না থাকায় লটারি সংস্থার পরামর্শে টাকাগুলো প্রেমিকা অ্যান ম্যাককে-এর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করতে রাজি হন। ক্যাম্পবেল ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোষণা করেন যে টাকাগুলো তার প্রেমিকার জন্মদিনের উপহার।
কিন্তু কয়েক দিন পরই ম্যাককে নিখোঁজ হয়ে যান। পরে ক্যাম্পবেল জানতে পারেন, ম্যাককে অন্য এক পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন এবং তার সঙ্গেই সময় কাটাচ্ছেন। রাগে ও হতাশায় ক্যাম্পবেল ম্যাককে এবং লটারি সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
মেছতা নিয়ে ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিনের রিসার্চ পড়ুন

তথ্যসূত্র: Dr. Eric Berg, Dr. Mujibul Haque, Dr. Jahangir Kabir, Dr. Mujibur Rahman, Dr. Mandell, Dr. Jason Faung, Dr. Sten Ekberg and many medical health journals.
চিরতরে মেছতা দূর করার উপায়, ব্লগ পোস্টটি প্রয়োজনীয় মনে হলে পরিচিত সবার সুস্থতার জন্য শেয়ার করে দিন। সেলিম হোসেন – ০১/০৭/২০২৫ ইং – প্রতীকী ছবি গুলো পেক্সেলস থেকে নেয়া।









