ময়ূর পালক নিয়ে আগ্রহ, কিন্ত ময়ুর রান্না
২০২৪ সাল ১১ ই ভারতীয় মিডিয়া এনডিটিভি একটি সংবাদ প্রকাশ করে। তেলেঙ্গনা রাজ্যে একটি ঘটনা ঘটে। একজন ইউটিউবার ময়ুর জবাই করে রান্না করেছেন। ময়ুর পালক নিয়ে অনেকের আগ্রহ আছে। কিন্ত ময়ুরের মাংস ?
ভারতের জাতীয় পাখি ময়ূর। ময়ূরের মাংস রান্না করে খাওয়া এবং তা ভিডিও করে ইউটিউবে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ভারতীয় ইউটিউবার প্রণয় কুমারের বিরুদ্ধে। তিনি ভারতের তেলঙ্গানা রাজ্যের সিরসিল্লার বাসিন্দা। জাতীয় পাখি রান্না করে খাওয়ার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিতর্কের সৃষ্টি হয় । প্রতিবাদ জানান রাজ্যবাসী। বিতর্কের এক পর্যায়ে ইউটিউব থেকে ভিডিওটি সরিয়ে নেন প্রণয় কুমার।
পড়ুন – মদের ব্রান্ড কিভাবে এত জনপ্রিয় হল।
ময়ূর পালক এবং সিংহাসন
৫. মোঘল সম্রাটদের আভিজাত্য আর চাকচিক্য বিশ্বব্যাপী আজও আলোচনার বিষয়। মোঘল দের ৫ম সম্রাট শাহজাহান। তার রত্নময় সিংহাসনের সংখ্যা ছিল ৭টি। তবে এদের মধ্যে ময়ূর সিংহাসনই ছিল সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও জঁমকালো। শিল্পের সমঝদার বেবাদল খাঁর তত্ত্বাবধানে ১৬২৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৬৩৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় ৮ বছর সময় ধরে এটি তৈরি করেছিলেন। ব্যায় হয়েছিল তৎকালীন সময়ে ৮ কোটি রুপি। আগ্রার তাজমহল নির্মাণে শাহজাহান ব্যয় করেছিলেন ৪ কোটি রুপি। অপূর্ব ময়ূর সিংহাসনটি ছিল স্বর্ণ, হীরা ও দুর্লভ মরকত মণি খচিত।
পুরো সিংহাসনে অনেকগুলো স্বর্ণ দ্বারা নকশা করা। নকশার মাঝে ফাঁকা অংশটুকু কারুকার্য করা হয় ক্ষুদ্রাকৃতির মূল্যবান হীরা দিয়ে। হীরা-পান্না দ্বারা সুসজ্জিত তিনটি সিঁড়ির সাহায্যে উঠানামার ব্যবস্থা ছিল। সিংহাসনের উপরের চাঁদোয়ার চারকোণে বসানো হয়েছিল সারিবদ্ধ মুক্তা। চাঁদোয়াটির নিচেও ছিল হীরা আর মুক্তার বাহারি নকশা। রকমারি জহরত দিয়ে সাজানো ময়ূরগুলোর লেজ ছিল নীল রঙের মনি দিয়ে তৈরি। এক একটি বিরাট আকারের চুনি বসানো ছিল ময়ূরের বুকে। সেখান থেকে ৫০ ক্যারটের একটি হলুদ রঙের মুক্তা ঝুলে থাকতো। সিংহাসনটিতে ঠেস দিয়ে বসবার জন্য ভিন্ন ভিন্ন দিকে অগণিত মণি-মুক্ত শোভা পেতো।
ভিডিও দেখুন – ময়ুর এর দাম এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে।
১৫৮৭ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে পারস্যের মহামান্য সম্রাট আব্বাস তৎকালীন ১ লক্ষ টাকা মূল্যের একটি হীরা বাদশাহ জাহাঙ্গীরকে উপহার দেন। সম্রাট শাহজাহান এই হীরাটিকেও ময়ূর সিংহাসনে সংযোগ করেছিলেন। মজার ব্যাপার হলো, সম্রাট সিংহাসনে আরোহণ করার পরই মনে হতো, ময়ূর পালক মেলে নাচতে শুরু করেছে। পেখমে বসানো রত্নরাজি ভাগে ভাগে দেখা যেত।
সিংহাসনের আশেপাশেই থাকতো একটি রাজদ-, তলোয়ার, একটি ঢাল, একটি ধনুক এবং কিছু তীর। প্রতিটি অস্ত্রই ছিল বহুমূল্যবান প্রস্তর দ্বারা নির্মিত। সিংহাসনের দু’পাশে ছিল দুটি লাল ভেলভেটের ছাতা। ৮ থেকে ৯ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট ছাতা দুটির ডাটে ছিল হীরা ও মণিমুক্তা বসানো। এর ঝালরও ছিল মুক্তাখচিত। আরও একটি তথ্যে জানা যায়, সিংহাসনটি লম্বায় ১০ ফুট, প্রস্থে ৭ ফুট এবং উচ্চতায় সর্বোচ্চ ১৫ ফুট ছিল।
সম্রাট শাহজাহানের স্বর্ণনির্মিত ও নানা ধরনের মণি-মাণিক্য খচিত ময়ূর সিংহাসনে বিশ্বখ্যাত কোহিনূর হীরক খ-টি অপূর্ব দ্যুতিময় হয়ে ওঠে। ১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দে পারস্য সম্রাট (বর্তমান ইরান) দুর্ধর্ষ নাদির শাহ দিল্লী আক্রমণ করেন এবং নগরীর প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে হত্যা করে দিল্লীর মোঘলদের ধনভাণ্ডার ও ময়ূর সিংহাসনসহ সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যান। কিন্তু নাদির শাহ পরবর্তীকালে দেখতে পান, তার লুট করা সব ধন-সম্পদের মধ্যে বিশ্বখ্যাত হীরক (কোহিনূর) খণ্ডটি অনুপস্থিত ।
প্রণয় কুমারের ভিডিও টি ভারতের বনবিভাগের নজরে আসে। তারা ভিডিও দেখেন এবং স্থান পরিদর্শনে যান। তারা প্রণয় কুমারের বাড়িতে ময়ূর পালক দেখতে পান। কুমারের ধারণ করা ভিডিওটি যাচাই-বাছাই শেষে ময়ুর হত্যার অভিযোগে কুমারকে গ্রেপ্তার করেন। তবে তার রান্না করা মাংস ময়ূরের কিনা সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নন বন কর্মকর্তারা।
কুমারকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে সিরসিল্লার পুলিশ সুপার অখিল মহাজন বলেন, ইউটিউবার প্রণয় কুমারের বিরুদ্ধে রাজ্যের প্রচলিত ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সেলিম হোসেন – তাং – ২০/০৯/২০২৪ ইং – ছবি গুলো প্রতীকী।