ময়ূর পালক নিয়ে আগ্রহ, কিন্ত ময়ুর রান্না ! হ্যা, ইউটিউবার গ্রেফতার ইন্ডিয়াতে। ৫ টি মজার তথ্য। Interested in peacock feathers, but peacock cooking! Yes, YouTuber arrested in India. 5 fun facts

ময়ূর পালক
ময়ূর পালক নিয়ে আগ্রহ, কিন্ত ময়ুর রান্না 

২০২৪ সাল ১১ ই ভারতীয় মিডিয়া এনডিটিভি একটি সংবাদ প্রকাশ করে। তেলেঙ্গনা রাজ্যে একটি ঘটনা ঘটে। একজন ইউটিউবার ময়ুর জবাই করে রান্না করেছেন। ময়ুর পালক নিয়ে অনেকের আগ্রহ আছে। কিন্ত ময়ুরের মাংস ?

ভারতের জাতীয় পাখি ময়ূর। ময়ূরের মাংস রান্না করে খাওয়া এবং তা ভিডিও করে ইউটিউবে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ভারতীয়  ইউটিউবার প্রণয় কুমারের বিরুদ্ধে। তিনি ভারতের তেলঙ্গানা রাজ্যের সিরসিল্লার বাসিন্দা। জাতীয় পাখি রান্না করে খাওয়ার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিতর্কের সৃষ্টি হয় । প্রতিবাদ জানান রাজ্যবাসী। বিতর্কের এক পর্যায়ে ইউটিউব থেকে ভিডিওটি সরিয়ে নেন প্রণয় কুমার।

পড়ুন – মদের ব্রান্ড কিভাবে এত জনপ্রিয় হল।  

ময়ূর পালক ঠাকুর ঘরে রাখলে কি হয়? 
১. নেতিবাচকতা দূর করতে: যদি মনে হয় ঘরে কোনও ধরনের নেতিবাচক শক্তি বিদ্যমান। তাহলে ময়ূর পালক রেখে দিতে পারেন। রোজকার ঘরোয়া অশান্তি, পারিবারিক সমস্যা থাকলে, ময়ূর পালক অনেক কাজে দেবে। ঘরে ময়ূরের পালক রাখলে দ্রুত নেগেটিভ শক্তি পজিটিভে পরিণত হয়। এমন ধারনা অনেকেই পোষণ করেন ভারতে।
ময়ূর পালক
বালিশের নিচে ময়ূর পালক রাখলে কি হয়?
২. টাকার অভাবে আছেন। দায় দেনায় টাকার সমস্যা কুলিয়ে উঠতে পারছেন না।  যে বালিশে মাথা রেখে ঘুমান তার নিচে রাখুন ময়ুর পালক। আর্থিক সমস্যা দূর হবে। ব্যাবসায়িক লোকসান থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে সহজে। ঘুমানোর সময় যদি মাথার বালিশের নীচে পালকের সাথে এক টাকার কয়েন রাখেন তবে রোগ ব্যধি থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়। টাকার অভাব দূর হতে সময় লাগে না। অনেকেই এমন বিশ্বাস রাখেন ভারতের অনেক অঞ্চলে।
বইতে ময়ূর পালক কেন থাকে?
৩. যেহেতু ভগবান কৃষ্ণ (ভগবান কৃষ্ণকে প্রভাবিত করার মন্ত্র) ময়ূর পালক পছন্দ করেন। তাই এগুলিকে আপনার বইয়ে রাখলে তা আপনার জীবনে তাঁর আশীর্বাদ এবং সাফল্য নিয়ে আসবে । পড়াশুনায় অমনোযোগী ছেলে মেয়েদের বইয়ের ভিতরে ময়ুর পালক রাখা হয়। কারণ এটি আপনার পড়াশোনায় বাধা সৃষ্টিকারী নেতিবাচক শক্তিকে ধ্বংস করে। সাধারণত ভারতে মায়েরা সন্তানদের বইয়ের পাতায় এটা রেখে দেন।
ময়ুর ময়ূরী কি যৌন সঙ্গম করে 
৪. ময়ুর পাখির যৌনতা নিয়ে একটি প্রচলিত কথা আছে। তারা অন্যান্য পাখি বা প্রাণীর মত যৌন সঙ্গম করেন।  ২০১৭ সালে  ময়ূর যৌনতা করে না। ময়ূরের অশ্রুজলে গর্ভবতী হয় ময়ূরী! এমন ভারতীয় হাইকোর্টের এক বিচারপতি।তিনি ভারতের রাজস্থান হাইকোর্টের বিচারপতি মহেশচন্দ্র শর্মা।
তিনি দাবি করেছেন গরুকে জাতীয় পশু ঘোষণা করতে হবে। এই প্রসঙ্গে তার যুক্তি‚ জাতীয় পাখি ময়ূরের মতোই পবিত্র প্রাণী গরু। তাই গরুকেও জাতীয় পশু করতে হবে। কিন্তু কেন ময়ূর পবিত্র? কারণ‚ বিচারপতির দাবি‚ ভারতের জাতীয় পাখি যৌনতা করে না। ময়ূরের চোখের পানি পান করে ময়ূরী। 
তাতেই সে গর্ভবতী হয়। স্বাভাবিকভাবেই বিচারপতির এই মন্তব্য হাসির খোরাক হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। অনেকেই ছবি‚ এমনকী ভিডিও পোস্ট করেন যেখানে দেখা যাচ্ছে ময়ূর-ময়ূরী সঙ্গমরত। 
ময়ূর পালক
ময়ূর পালক এবং সিংহাসন 

৫. মোঘল সম্রাটদের আভিজাত্য আর চাকচিক্য বিশ্বব্যাপী আজও আলোচনার বিষয়। মোঘল দের ৫ম সম্রাট শাহজাহান। তার রত্নময় সিংহাসনের সংখ্যা ছিল ৭টি। তবে এদের মধ্যে ময়ূর সিংহাসনই ছিল সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও জঁমকালো। শিল্পের সমঝদার বেবাদল খাঁর তত্ত্বাবধানে ১৬২৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৬৩৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় ৮ বছর সময় ধরে এটি তৈরি করেছিলেন। ব্যায় হয়েছিল তৎকালীন সময়ে ৮ কোটি রুপি। আগ্রার তাজমহল নির্মাণে শাহজাহান ব্যয় করেছিলেন ৪ কোটি রুপি। অপূর্ব ময়ূর সিংহাসনটি ছিল স্বর্ণ, হীরা ও দুর্লভ মরকত মণি খচিত।

সিংহাসনের ৪টি পায়া খাঁটি স্বর্ণ দ্বারা নির্মিত ছিল। ১২টি মরকত মণির স্তম্ভের উপর চন্দ্রাতপ ছাদ আচ্ছাদন করা হয়েছিল। ছাদের চারদিকে মীনা করা মণি-মুক্তা বসানো ছিল। এর ভেতরের দিকটা সবটাই মহামূল্যবান চুনী ও পান্নার দ্বারা মুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। প্রত্যেক স্তম্ভের মাথায় মণি-মাণিক্য খচিত একজোড়া ময়ূর মুখোমুখি বসানো হয়েছিল। প্রতিজোড়া ময়ূরের মধ্যস্থলে এক একটি মণি-মাণিক্য নির্মিত গাছ এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছিল, যেন ময়ূর দুটি ঠুকরে গাছের ফল খাচ্ছে এরূপ দৃশ্য প্রতীয়মান হতো।

পুরো সিংহাসনে অনেকগুলো স্বর্ণ দ্বারা নকশা করা।  নকশার মাঝে ফাঁকা অংশটুকু কারুকার্য করা হয় ক্ষুদ্রাকৃতির মূল্যবান হীরা দিয়ে। হীরা-পান্না দ্বারা সুসজ্জিত তিনটি সিঁড়ির সাহায্যে উঠানামার ব্যবস্থা ছিল। সিংহাসনের উপরের চাঁদোয়ার চারকোণে বসানো হয়েছিল সারিবদ্ধ মুক্তা। চাঁদোয়াটির নিচেও ছিল হীরা আর মুক্তার বাহারি নকশা। রকমারি জহরত দিয়ে সাজানো ময়ূরগুলোর লেজ ছিল নীল রঙের মনি দিয়ে তৈরি। এক একটি বিরাট আকারের চুনি বসানো ছিল ময়ূরের বুকে। সেখান থেকে ৫০ ক্যারটের একটি হলুদ রঙের মুক্তা ঝুলে থাকতো। সিংহাসনটিতে ঠেস দিয়ে বসবার জন্য ভিন্ন ভিন্ন দিকে অগণিত মণি-মুক্ত শোভা পেতো।

ভিডিও দেখুন – ময়ুর এর দাম এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে। 

ময়ূর পালক

১৫৮৭ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে পারস্যের মহামান্য সম্রাট আব্বাস তৎকালীন ১ লক্ষ টাকা মূল্যের একটি হীরা বাদশাহ জাহাঙ্গীরকে উপহার দেন। সম্রাট শাহজাহান এই হীরাটিকেও ময়ূর সিংহাসনে সংযোগ করেছিলেন। মজার ব্যাপার হলো, সম্রাট সিংহাসনে আরোহণ করার পরই মনে হতো, ময়ূর পালক মেলে নাচতে শুরু করেছে। পেখমে বসানো রত্নরাজি ভাগে ভাগে দেখা যেত।

সিংহাসনের আশেপাশেই থাকতো একটি রাজদ-, তলোয়ার, একটি ঢাল, একটি ধনুক এবং কিছু তীর। প্রতিটি অস্ত্রই ছিল বহুমূল্যবান প্রস্তর দ্বারা নির্মিত। সিংহাসনের দু’পাশে ছিল দুটি লাল ভেলভেটের ছাতা। ৮ থেকে ৯ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট ছাতা দুটির ডাটে ছিল হীরা ও মণিমুক্তা বসানো। এর ঝালরও ছিল মুক্তাখচিত। আরও একটি তথ্যে জানা যায়, সিংহাসনটি লম্বায় ১০ ফুট, প্রস্থে ৭ ফুট এবং উচ্চতায় সর্বোচ্চ ১৫ ফুট ছিল।

সম্রাট শাহজাহানের স্বর্ণনির্মিত ও নানা ধরনের মণি-মাণিক্য খচিত ময়ূর সিংহাসনে বিশ্বখ্যাত কোহিনূর হীরক খ-টি অপূর্ব দ্যুতিময় হয়ে ওঠে। ১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দে পারস্য সম্রাট (বর্তমান ইরান) দুর্ধর্ষ নাদির শাহ দিল্লী আক্রমণ করেন এবং নগরীর প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে হত্যা করে দিল্লীর মোঘলদের ধনভাণ্ডার ও ময়ূর সিংহাসনসহ সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যান। কিন্তু নাদির শাহ পরবর্তীকালে দেখতে পান, তার লুট করা সব ধন-সম্পদের মধ্যে বিশ্বখ্যাত হীরক (কোহিনূর) খণ্ডটি অনুপস্থিত ।

অবাক করা অপহরনের কাহিনী যা আগে কখনো শুনেন নাই। 

প্রণয় কুমারের ভিডিও টি ভারতের বনবিভাগের নজরে আসে। তারা ভিডিও দেখেন এবং স্থান পরিদর্শনে যান। তারা প্রণয় কুমারের বাড়িতে ময়ূর পালক দেখতে পান। কুমারের ধারণ করা ভিডিওটি যাচাই-বাছাই শেষে ময়ুর হত্যার অভিযোগে কুমারকে গ্রেপ্তার করেন। তবে তার রান্না করা মাংস ময়ূরের কিনা সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নন বন কর্মকর্তারা।

কুমারকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে সিরসিল্লার পুলিশ সুপার অখিল মহাজন বলেন, ইউটিউবার প্রণয় কুমারের বিরুদ্ধে রাজ্যের প্রচলিত ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ময়ূর পালক

সেলিম হোসেন – তাং – ২০/০৯/২০২৪ ইং – ছবি গুলো প্রতীকী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *