মন খারাপ এবং প্রবণতা
শিক্ষার্থীদের মধ্যে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা। গেল বছর দেশে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে ৫১৩ শিক্ষার্থী। অভিমান ও প্রেমের সম্পর্কের মতো আবেগের কারণে আত্মহত্যার হার বেশি। শীর্ষে রয়েছে ঢাকা বিভাগ। আর নারী ও স্কুলগামীদের মধ্যে আত্মহত্যার হারও আশঙ্কাজনক। মুল কারন মন খারাপ, প্রত্যাশা পুরন না হওয়া।
আঁচল ফাউন্ডেশনের সমীক্ষায় উঠে এসেছে ২০২৩ সালের হিসাব। দেখা যাচ্ছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পারিবারিক বিভেদ, লেখাপড়ায় চাপ, পড়াশুনায় খারাপ করা, প্রেম ইত্যাদি নিয়ে বিষণ্ণ হচ্ছেন। মন খারাপ করছেন। বেশিরভাগ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে পরিবারে অভিমান এবং প্রেম বিষয়ে। এর শতকরা হার৪৭।
মন খারাপ অপরাধ বিজ্ঞান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ বি এম নাজমুস সাকিব। তিনি বলেন, ‘সাফল্যের চাবিকাঠি অর্জনের জন্য প্রতিযোগিতা বেশি। শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা চাপ তৈরি হয়। মাথায় ঢোকে তাকে লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছাতেই হবে। আমরা যে দেশে বসবাস করি এখানে শিক্ষার্থীরা নানা ধরনের পরিবার থেকে এসেছে। সবাই প্রায় একইরকম লক্ষ্যের পিছনে ছুটছে। মানুষ সবাই একরকম নয়। তারা ভুলে যাচ্ছেন প্রত্যকের যোগ্যতা আলাদা। যখন সবাই একই ধরনের লক্ষ্য অর্জনে ব্যস্ত। তখন মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে।
মন ভালো করার পথ নির্দেশ
মন কেন খারাপ হয় ? বিভিন্ন কারনে মন খারাপ হতে পারে। অকারনেও অনেকের মন খারাপ হয়। মন খারাপ , বিষণ্ণতা তরুন তরুণীদের মধ্যে বেশি। মন ভালো করার উপায় জেনে নিন।
মন খারাপ হওয়া মানেই জীবন থেকে শান্তি চলে যাওয়া। অনেকের মন এতটাই খারাপ হয় । তাদের জীবন বিষিয়ে ওঠে। তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। আমরা জানব এ থেকে পরিত্রানের উপায়।
বিজ্ঞানের চোখ দিয়ে দেখলে মন খারাপের কারন DOSE
সেটা আবার কি ? DOSE হচ্ছে চারটি হরমোন।
চারটি হরমোন কমে যাওয়ার কারনে মন খারাপ হয়।
D – Dopamine
O – Oxytocin
S – Serotonin
E – Endorphin
বিষন্ন মন ভালো করার উপায় জেনে নিন
এই চারটি হরমোন শরীরে পর্যাপ্ত পরিমানে থাকলে মন ভালো থাকবে। কিভাবে এই হরমোন নিঃসরণ ঘটানো যায়?
Dopamine কেউ প্রশংসিত হলে বা কোন পুরস্কার পেলে শরীরে ডোপামিন নিঃসৃত হয়। প্রোটিন খাবার খেলেও ডোপামিন নিঃসৃত হয়। ডোপামিন নিঃসৃত হলে মনে ভালোলাগার অনুভুতি চলে আসে। প্রশংসা পাবেন পরিবারের, বন্ধুদের অথবা সমাজের এমন কাজ করুন। এটা মন ভালো করার উপায়।
Oxytocin প্রেমের প্রথম পর্যায়ে প্রচুর পরিমান অক্সিটোসিন নিঃসৃত হয়। মা যখন তার সন্তানকে দেখেন তখন মায়ের শরীরে অক্সিটোসিন নিঃসৃত হয়। বন্ধুরা যখন পরস্পর মিলিত হয় তখন অক্সিটোসিন নিঃসৃত হয়। মায়ের সাথে একান্তে কথা বলুন। দূরে থাকলে নিয়মিত ফোন করতে ভুলবেন না।
Serotonin সূর্যের আলো থেকে পাওয়া যায় সেরোটোনিন। এজন্য সূর্যের আলোতে প্রতিদিন সকাল ৯ টা বিকাল ৩ পর্যন্ত সময়ে ৩০-৫০ মিনিট রোদে থাকা দরকার। তাহলে পর্যাপ্ত পরিমান সেরোটোনিন শরীরে নিঃসৃত হবে। সেরোটোনিন মন ভালো করার অন্যতম হরমোন। অতএব প্রতিদিন সূর্যের আলোয় কিছুটা সময় কাটান।
পড়ুন – স্ট্রেস আপনার কি ক্ষতি করে
মন ভালো করার উপায় জেনে নিন
Endorphin ব্যায়াম করলে বা দৌড়ালে এন্ডরফিন নিঃসৃত হয়। অন্যের কথা বলার সময় হাসি মুখে কথা বললেও এন্ডরফিন নিঃসৃত হয়। কারো সাথে সাক্ষ্যাতে ছালাম দিবেন। কেউ কেমন আছেন জিজ্ঞেস করলে আন্তরিক ভাবে বলবেন ” আলহামদুলিল্লাহ ” এন্ডরফিন নিঃসৃত হবে। বুঝতে পারলেন মন ভালো করার উপায় দৌড়ানো।
এই চারটি হরমোন আমাদের শরীরে অপটিমাম লেভেলে থাকলে আমরা প্রানবন্ত থাকি। অতএব DOSE এ মনোযোগ দিন, জীবন আনন্দে ভরে উঠে।
পড়ুন – সরিষার তেলে হার্টের অসুখ !!
মন খারাপ যা করবেন
নিয়মিত দৌড়াবেন তাহলে মন ভাল থাকবে। যখন ডিপ্রেশন চেপে ধরবে তখন শুরু করবেন দৌড়। প্রতিদিনের টেনশন ঝেড়ে ফেলতে দৌড়াবেন। দৌড়ের সবচে ভালো সময় ভোর বেলা। সবসময় এরোবিক জোনে দৌড়াবেন।
হার্ট রেট নির্দিষ্ট মাত্রায় রেখে দৌড়ানো কে এরোবিক জোন বলে। যেমন ঃ ১৮০ সংখ্যা থেকে আপনার বয়স কে বাদ দিবেন। ধরুন আপনার বয়স ৪০ । তাহলে ১৮০-৪০= ১৪০ অর্থাৎ আপনার দৌড়ানোর সর্বোচ্চ হার্ট রেট হচ্ছে ১৪০
জেনে নিন – দ্রুত পেটের মেদ ঝরাতে কি করবেন

মন খারাপ ভালো করবো কিভাবে
এক সন্ন্যাস গুরুর গল্প।
চৈত্র মাস, ভর দুপুর। একজন গুরু রাস্তার পাশে বটতলায় বসে আছেন। তার সামনে বেশ বড় একটা মাঠ। হঠাৎ একজন শিস্য তার কাছে এলেন। গুরু কে বললেন।
শিস্য – গুরু আমার মন খারাপ। কিছুই ভালো লাগছে না। পরিবার, বন্ধু বান্ধব, আপনার সান্নিধ্য কোন কিছুই না। আমি আর বাচতে চাই না। আমি আজ আত্মহত্যা করব। আপনার কোন শেষ উপদেশ থাকলে আমাকে বলুন।
গুরু চুপচাপ- কিছুই বলছেন না।
শিস্য আবারও বললেন – গুরু কিছু বলুন।
গুরু চোখ তুলে তাকালেন। বললেন ” সামনে যে মাঠ টা দেখছ সাত বার চক্রাকারে দৌড়াও।
শিস্য অবাক হলেন। কিন্ত গুরুর আদেশ ! শিস্য দৌড় শুরু করলেন। সাত বার চক্রাকারে ঘুরে এসে গুরুর কাছে বসে পড়লেন।
গুরু বললেন যাও ” এবার তুমি আত্মহত্যা কর”।
শিস্য উঠলেন না। ক্লান্ত দেহে চুপচাপ বসে থেকে কয়েক মিনিটের মধ্য ঘুমিয়ে পড়লেন।
সুস্থ থাকতে যে খাবার গুলো কখনো খাবেন না।
দৌড়ালে এন্ডোরফিন হরমোন নিঃসৃত হয়। এন্ডোরফিন শারীরিক ও মানসিক ব্যথা উপশম করে। যখন আমরা শারীরিক বা মানসিকভাবে আহত হই। তখন এন্ডোরফিন এর প্রয়োজন। আজকেই ঘুম থেকে উঠে দৌড় শুরু করুন।

জেনে নিন – স্ট্রেস থেকে বাঁচতে কি করবেন
সেলিম হোসেন – তাং ০৪/০৪/২০২৪ ইং – ছবি গুলো পেক্সেল থেকে নেয়া।