বাদাম হাতের কাছেই
বাদাম শরীরের জন্য খুব উপকারী। সব বাদামেই রয়েছে স্বাস্থ্যগুণ। তবে চিনা বাদামের সুবিধা হলো এটি বেশ সহজলভ্য। আপনাকে আলাদা আয়োজন করতে হবে না এটা খেতে। তাছাড়া এটি পুষ্টির দিক থেকেও কোনো অংশে কম নয়।Blue Jone নামে পরিচিত পাঁচটি এলাকা। ইউএসএর লোমা লিন্ডা, জাপানের ওকিনাওয়া, ইতালীর সার্ডিনিয়া, গ্রীসের ইকারিয়া, কোস্টারিকার নিকোয়া এখানকার মানুষের গড় আয়ু ৯৯ বছর।
এই সময়কাল তারা সুস্থ ভাবেই বাঁচেন। অবাক ব্যাপার এদের সবার খাদ্যাভাস প্রায় একই রকম। প্রধানত তারা বীজ জাতীয় খাবার খান। বাদাম বীজ জাতীয় খাবারের মধ্যে প্রধান। আসুন আমরা একে একে জেনে নিই কোন বাদামে কি কি পুষ্টি আছে।
সাতটি কারনে চিনা বাদাম খাবেন
২. এই খাবারটি শরীরের চর্বি কমাতেও সাহায্য করে। প্রতিদিন একমুঠো চিনা বাদাম খেতে পারেন পাশাপাশি বাজে খাবার গুলো ত্যাগ করবেন।
৩. রাতে ১০-১৫ টি বাদাম পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ডায়াবেটিস নির্মূলে বিশেষভাবে কার্যকরী। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আমাদের বুড়িয়ে যাওয়াকে স্লো করে দেয়।
৪. শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করতেও এটি সহায়তা করে। প্রতিদিন খেলে আপনার সারাদিনের এনার্জি ঠিক থাকবে।
৫. এতে থাকা ভিটামিন বি৩ মস্তিস্কের সুস্থতা নিশ্চিত করে। তাই প্রতিদিন চিনা বাদাম বা এর মাখন খাবেন, যাতে করে মস্তিকে নিউরনের মাত্রা ঠিক থাকে।
৬. শরীরে সঠিক পরিমাণ পুষ্টি না থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরে কঠিন রোগকে বাসা বাধতে বাঁধা দান করে। তাই প্রতিদিন চিনা বাদাম খেয়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারেন।
১. এটাও শরীরে ইনফ্লামেসন কমায়। এজন্য হৃদযন্ত্র ভালো থাকে। ন্যাচারাল এই দানায় কোন ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া যায় নি। হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী চর্বি, তন্তু, প্রোটিন আর আরজিনি নামের উপাদান থাকে, যা হৃদযন্ত্রকে সুস্থ ও সবল রাখে।
ওজন কমবে দ্রুত। শরীর হবে ফিট এবং স্মার্ট। জেনে নিন ওজন কমানোর জার্নি।
২. হাড়কে ভঙ্গুর দশা থেকে রক্ষা করে এবং হাড়কে সুগঠিত শক্তিশালী করে। কাজু বাদামে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও পটাশিয়াম আছে। নিয়মিত খেলে শরীরে খনিজের চাহিদা পূরণ হয়। এতে ভিটামিন কে আছে, যা হাড়ের জন্য উপকারী। এ ছাড়া রোগপ্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ায় এই সুস্বাদু কাজু।
৩. যারা চোখের সমস্যায় ভুগছেন তাদের খুব কাজে দিবে কাজু। প্রচুর পরিমাণে লুটেন ও জিয়াক্সাথিন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা চোখকে আলোক রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। চোখে ছানি পড়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে এই সাস্থ্যকর খাবার।
৪. পরিমিত মাত্রায় কাজু খেলে রক্তস্বল্পতা দূর হয়। কাজুতে কপার বা তামা থাকে, যা রক্তের সমস্যা দূর করে। রক্তে কপারের অভাব হলে লৌহ স্বল্পতাও দেখা দিতে পারে, যা রক্তশূন্যতা সৃষ্টি করে।
৫. বেশি ওজনের সমস্যায় ভুগলে তাদের জন্য কাজু উপকারী। যাঁরা ওজন কমাতে চান, তাহলে এই সাস্থ্যকর ফ্যাট টি খাবেন। এটা খেলে পেট ভরা থাকবে অনেকক্ষণ, শক্তি পেতে শরীরে জমাকৃত চর্বি ভেঙে শক্তি উৎপন্ন করবে। যেহেতু পেট সহ বিভিন্ন জায়গায় চর্বি ভাঙতে থাকবে তাই ওজন কমবে।
কাঠ বাদাম বা Almond খাবেন যে কারনে
১. কাঠবাদামে রয়েছে ভিটামিন ই, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, জিংক, কপার, সেলেনিয়াম, আয়রন ও ম্যাগনেসিয়াম। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই দানা জাতীয় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা কমায়। হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, রক্তস্বল্পতা দূর করে। এটি চুল ও ত্বকের জন্য ভালো। সাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন একমুঠো করে কাঠবাদাম খেলে এই উপকারগুলো পেতে সাহায্য করবে আপনাকে।
২. কাঠ বাদামে আছে সাস্থ্যকর ফ্যাট। আমাদের মস্তিস্ক প্রায় পুরোটাই ফ্যাটে তৈরি। এতে থাকা ফ্যাট এবং পুষ্টিগুণ মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। মস্তিষ্কের জন্য প্রয়োজনীয় দুটি পুষ্টিগুণ রিবোফ্লাভিন ও এল ক্যারনিটিন। এই উপাদান দুটি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি স্মৃতিভ্রম রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
পিনাট বাটার কেন খাবেন ? দেখুন ডাঃ এরিক বারগের ভিডিও।
৩. প্রতিদিন ৪-৬ টি কাঠ বাদাম ভিজিয়ে খেলে মস্তিষ্কের কাজের উন্নতি ঘটে। শরীরের কোষের প্রাচীর বা মেমব্রেন তৈরিতে প্রয়োজনীয় উপকারী ফ্যাটের উৎস হিসেবে খাবার টি বিশেষ ভূমিকা রাখে। বাড়ন্ত শিশুদের বুদ্ধি বিকাশের জন্য এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার। এছাড়া এটি আলঝেইমার রোগের হাত থেকে রেহাই দিতে পারে। এছাড়াও কোলোন ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটি কোলনকে ভালো রাখতেও কাজ করে।
৪. নিয়ম করে ভেজানো কাঠবাদাম খেলে হার্ট ভালো থাকে। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি উপকারী উপাদান থাকে। যা হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এতে থাকা ভিটামিন-ই হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং ম্যাগনেসিয়াম হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটি অ্যার্টারিকে ক্ষতিকর ইনফ্লামেসন থেকে সুরক্ষা দেয়। নিয়মিত খেলে হৃদযন্ত্র ভালো থাকে এবং ৫০% হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে।
৫. কাঠবাদাম ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। গবেষণায় বলা হয়, খাবারের পর এটি খাওয়া ইনসুলিনের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এতে থাকা প্রচুর ফাইবার কোষ্ঠ কাঠিন্য দূর করে। আর্জিনিন এবং হেলদি ফ্যাটের সঙ্গে এই ফাইবারের উপস্থিতি কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ রোগীদের ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি। এতে থাকা ফসফরাস উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এর মধ্যে থাকা সোডিয়াম রক্তচাপের ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ করে।
৬. বাদাম খাওয়ার পর খিদে কমে যায়। ফলে মাত্রাতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়। সেই সঙ্গে শরীরে প্রয়োজন অতিরিক্ত ক্যালরি জমে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনাও কমে। বিপাকের হার বাড়িয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে।
৭. এটা যেহেতু ইনফ্লামেসন কমায়, তাই লিভারকে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল থাকেনা। বিধায় হার্ট এটাকের সম্ভাবনাও থাকে না। প্রতিদিনের ডায়েটে খাবার টি অন্তর্ভুক্ত করলে হার্টের স্বাস্থ্য নিয়ে আর চিন্তায় থাকতে হবে না। এছাড়া বাদামে প্রচুর পরিমাণ মনো-স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, থাকে ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিডও। কিন্তু কোনরকম ট্রান্স ফ্যাট থাকে না। ফলে হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোকেরও আশঙ্কা কম থাকে।
৮. সুস্থ সবল দাতের জন্য Almond। এতে থাকা ফসফরাস, মিনারেল ও ভিটামিন হাড় ও দাঁতকে সুরক্ষা দেয়। ফসফরাস কেবল হাড় ও দাঁত কে মজবুত করে না বরং এটি অস্টিওপরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় রোগ প্রতিরোধও সাহায্য করে। হাড় ও দাঁতের সুস্বাস্থ্য ও স্থায়িত্বের ওপর ফসফরাস এর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। বয়স জনিত হাড় ও দাঁতের সমস্যার তৈরি হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতেও ফসফরাস খুবই কার্যকরী।
৯. এতে রয়েছে প্রায় ৩.৫ গ্রাম ফাইবার, ৬ গ্রাম প্রোটিন, ১৪ গ্রাম ফ্যাট সহ ভিটামিন ই, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন বি২, ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম। এই সবকটি উপাদানই শরীরকে সুস্থ রাখতে বিশেষ প্রয়োজনে লাগে।
১০ শরীরের কোষের কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এই খাবারে থাকা প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন ই শরীরের প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে থাকা কোষের কর্মক্ষমতার বৃদ্ধি ঘটানোর সঙ্গে সঙ্গে শরীরে যাতে কোনও ক্ষতের সৃষ্টি না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে। ফলে বয়স বাড়লেও শরীরের উপর এর কোনও প্রভাব পরে না। প্রতিদিন একমুঠো Almond খাওয়া শরীরে শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এর মধ্যে থাকা ম্যাঙ্গানিজ, কপার ও রিবোফ্লাবিন শরীরে শক্তি জোগায়। এটি বিপাক প্রক্রিয়া ভালোভাবে হতেও সাহায্য করে।
এটি অ্যালকেলাইন সমৃদ্ধ একটি খাবার। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন-ই রয়েছে অনেক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এগুলো বিভিন্ন ধরনের রোগের হাত থেকে দেহকে সুরক্ষা দেয়। আজ থেকে Almond কে নিয়মিত খাবারে পরিনত করুন।
সব বাদামের পুষ্টি বিবেচনা করে আমি তিনটি বাদাম একসাথে খাই। বাদাম গুলো কে হালকা রোস্ট করি ঘি এবং পিঙ্ক সল্ট সহযোগে। খুবই সুস্বাদু হয় খেতে। আলহামদুলিল্লাহ্
সেলিম হোসেন – তাং ০৪/১১/২০২৪ ইং – ছবি গুলো প্রতীকী
Reference : Dr Eric berg, Dr Mujibul Haque, Dr Jahangir Kabir, Dr Mujibur Rahman, Dr Mandell, Dr Jason Faung, Dr Sten Ekberg and many medical health journals.