বাদশাহ নামদার
হুমায়ুন আহমেদের লেখা বরাবরই সুপাঠ্য। তার লেখা গুলো পড়লে মনেহয় বইয়ের চরিত্র গুলো চোখের সামনে দিয়ে হাঁটছে। বাদশাহ নামদার লিখতে তিনি যে যত্ন নিয়েছেন, তা অতুলনীয়। মুলত এটা মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের জীবনী। এই মুঘল সম্রাটের জীবন কাহিনী ছিল থ্রিলিং এ ভরপুর। সম্রাট হুমায়ুন ছিলেন একজন কবি, হৃদয়বান স্বামী, সাহসী যোদ্ধা, প্রজাবৎসল অসাধারন সম্রাট।
বাদশাহ নামদার বাবর
সঙ্গত কারনেই হুমায়ুনের বাবা জহির উদ্দিন বাবরের কথা উঠে এসেছে উপন্যাসে। বাবর কেমন আচরন করেছেন পুত্রের সাথে। হুমায়ুন কতটা আশ্বস্ত করতে পেরেছিলেন পিতাকে। পিতা পুত্রের দ্বন্দ্ব, ভালবাসা, সম্পর্ক দারুন ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন এই উপন্যাসে লেখক।
আগস্ট মাস, ১৫২৭ সাল। রাজপুত্র হুমায়ুন এক অকল্পনীয় কাজ করলেন। রাজ কোষের সব অর্থ লুট করলেন, পালিয়ে গেলেন একদল সৈন্য, সেবক সহ বাদাখসানের দিকে। সারা রাজপ্রাসাদ জুড়ে তীব্র হইচই পরে গেল। সবাই হতভম্ব হঠাৎ হুমায়ুন কেন এমন করলেন ? উত্তর নেই।
বাবর তার প্রধান উজির মীর খলিফাকে ডাকলেন। দীর্ঘক্ষণ তার সাথে পরামর্শ করলেন। মৃত্যু দণ্ড ঘোষণা করলেন শাহজাদা হুমায়ুনের। বিরাট এক সৈন্যের দল পাঠালেন হুমায়ুন কে ধরে আনতে। হাতির পায়ের তলায় পিষ্ট করে হত্যা করা হবে তাকে।
রাত অনেক হয়েছে।
সম্রাট বাবর ঘুমাবার প্রস্তুতি নিয়ে শোবার ঢুকেছেন। ইয়েমেন থেকে আনা হালকা সৌরভের আগরবাতি জ্বলছে। হাবশি খোজারা টানা পাখা টানছে। বড় বড় মাটির পাত্রে পানি রাখা আছে। তাদের গায়ে বাতাস পড়ায় ঘর শীতল। হিন্দুস্তানের অতিগরম আবহাওয়া বাবর এখনো সহ্য করে উঠতে পারেন নি। গরমের দিন গুলোতে প্রায়ই তাকে অঘুম কাটাতে হয়।
মাহিম বেগম ঘরে ঢুকে সম্রাট কে কুর্নিশ করলেন। সম্রাট স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন, আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কিছুই ঘটে না। আল্লাহর ইচ্ছায় আমি তোমাকে একটা সুসংবাদ দিচ্ছি। রাজকোষ লুণ্ঠনের অপরাধে তোমার পুত্রকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলাম। তাকে ধরে আনার জন্য আমার বিশাল বাহিনী প্রত্যুষে যাত্রা করার কথা। কিছুক্ষন আগে আমি তোমার পুত্রকে ক্ষমা করেছি।
মাহিমা বেগম কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন, সম্রাট যদি অনুমতি দেন তাহলে আমি সম্রাটের পায়ে চুম্বন করতে আগ্রহী। অনুমতি দিলাম। মাহিমা বেগম সম্রাটের পায়ে মুখ ঘষতে লাগলেন। সম্রাট সামান্য চমকালেন। এই দৃশ্যের সঙ্গে কি তার দুঃস্বপ্নের কোন মিল আছে ? স্বপ্নে একটা পঙ্গু ঘোড়া তার পায়ে মুখ ঘষছিল। মাহিম বেগম তার অতি আদরের স্ত্রী। হুমায়ুন মীর্জার মাতা।
পৃথিবীর বহু ভাষায় অনুদিত, কোটি কোটি কপি বিক্রিত। জীবনে সফলতা কিভাবে আনতে হয়, জানতে বইটি অবশ্যই পড়ুন।
বাদশাহ নামদার হুমায়ুন মীর্জা
আগ্রার অধিবাসীরা আজ খানিক টা উত্তেজিত। প্রধান কাজীর নির্দেশে তিন অপরাধীর শাস্তি হবে। বিশেষ ধরনের শাস্তি বলেই উত্তেজনা। তিন অপরাধীর জন্য তিনটি গাধা হত্যা করা হয়েছে। গাধা গুলির চামড়া ছিলানো হয়েছে। অপরাধীদের গাধার চামড়ার ভেতরে ঢুকিয়ে চামড়া সেলাই করে দেয়া হবে। তারপর তাদের শুইয়ে দেয়া হবে ঘোড়ার গাড়িতে। এই আগ্রা শহরময় ঘুরবে। প্রচণ্ড গরমে গাধার চামড়া এঁটে যাবে অপরাধীদের গায়ে। তাদের মৃত্যু হবে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে।
মুভি রুপ দেখুন – বিখ্যাত উপন্যাস ” ট্রেন টু পাকিস্তান” ।
মাগরিবের নামাদের বাদশাহ নামদার কে জানানো হল, গাধার চামড়া পরিয়ে যে তিন অপরাধীকে সারাদিন ঘুরানো হয়েছে তাদের দুজন মারা গেছে। একজন এখনো জীবিত। হুমায়ুনের নির্দেশে চামড়া থেকে মুক্ত করে তাকে সম্রাটের কাছে আনা হল। তার দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই। সমস্ত শরীর ফুলে গেছে। চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। সম্রাট বললেন, তোমার নাম কি ?
সে অতি কষ্টে বলল, সম্রাট আমি একজন মৃত মানুষ। মৃত মানুষের কোন নাম থাকে না।
তুমি কি অপরাধ করেছিলে?
আপনার এক আমীর আমার অতি আদরের কন্যাকে তার হেরেমে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। আমি সেই নির্দেশ পালন করি নাই। এটাই আমার অপরাধ। আমাকে মিথ্যা হত্যা মামালায় জড়ানো হয়েছিল। মহান কাজি মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন।
আমার সেই আমীরের নাম কি ?
উন্নত দেশ, সেখানকার মানুষের জীবনযাপনের একেবারে গভীর থেকে জানতে হলে পড়ুন পাওলো কোয়েল হো’র লেখা এই বই।
সে নাম বলতে পারল না। ততক্ষনে তার হেঁচকি উঠেছে, শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। সে ঠোঁট নাড়ছে কিন্ত মুখ থেকে কোন শব্দ বের হচ্ছে না। কিছুক্ষনের মধ্যেই তার মৃত্যু হল।
বাদশাহ নামদার হুমায়ুন এরপর একটি রাজকীয় ফরমান জারি করলেন। যে কোন মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আগে বাদশাহ নামদারের অনুমতি নিতে হবে। এছাড়াও তিনি যুদ্ধে ব্যাবহার হয় এমন একটি দামামার ব্যবস্থা করলেন। কোন প্রজা যদি মনেকরে তার উপর বিরাট অবিচার করা হচ্ছে, তাহলে সে দামামায় বাড়ি দিয়ে সম্রাটের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবে।
এই কাজটা করতে হবে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে। এই সময় সম্রাটের শোবার ঘরের জানালা খুলে যায়। তিনি জানালায় মুখ বের করে প্রজাদের দর্শন দেন। এই দর্শনের নাম ” ঝড়োয়া কি দর্শন”। প্রজারা সম্রাট কে দেখে আশ্বস্ত হয় যে, বাদশাহ নামদার বেঁচে আছেন। রাজত্ব ঠিকমত চলছে।
সেলিম হোসেন – তাং ০৩/১০/২০২৪ ইং – ছবি গুলো পেক্সেল থেকে নেয়া।