ফাস্টিং কি অটোফেজি কি
অসংক্রামক রোগ গুলো আমাদের আজীবন ভোগায়। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, পেটে গ্যাস। অটোফেজি শরীর কে সব ধরনের রোগ থেকে নিরাময় করে। এমনকি ক্যান্সার দূর করে জীবন হতে পারে আনন্দের। আজীবন সুস্থ থাকতে আমাদের ফাস্টিং এবং অটোফেজি সম্পর্কে পরিস্কার ধারনা থাকতে হবে। প্রতিদিন বাসায় খাবার তৈরিতে, প্রয়োজনীয় জিনিস ব্যাবহারের পর উচ্ছিষ্ট তৈরি হয়। এই উচ্ছিষ্ট আমরা ডাস্টবিনে ফেলে দেই, গ্রাম এলাকায় নির্দিষ্ট জায়গায় গর্ত করে পুঁতে ফেলা হয়। এখানেই অটোফেজির রহস্য রয়েছে।
অটোফেজি কাকে বলে
অটো অর্থ নিজে নিজে, ফেজি অর্থ খাওয়া ( গ্রিক শব্দ ) তাহলে মুল অর্থ দাঁড়াচ্ছে নিজেই নিজেকে খাওয়া। ২০১৬ সালে জাপানের চিকিৎসক বিজ্ঞানী ইয়োশিনোরি ওসুমিকে এই আবিষ্কারের জন্য নোবেল প্রদান করা হয়। The secret of successful fasting এই বইটি প্রচার হওয়ার পরপরই ইউরোপ, আমেরিকানরা, ফাস্টিং এ ঝুকে পরে, বইটি বিখ্যাত চিকিৎসা বিজ্ঞানী হেলমুট লুটজনারের লেখা।
জেনে নিন – কিভাবে মন ভালো করবেন।

অটোফেজির উপকারিতা
আমরা বেঁচে থাকতে, সুস্থ থাকতে প্রতিদিন যে খাবার আমরা গ্রহন করি, এর থেকে শরীরে উচ্ছিষ্ট তৈরি হয়। এই উচ্ছিষ্ট দূর করা একান্ত প্রয়োজন, এটা দূর না করলে , এগুলো শরীরে জমা থেকে আমাদের কে ধীরে ধীরে অসুস্থ করে তোলে, আমার আক্রান্ত হই ডায়াবেটিসে, উচ্চ রক্ত চাপে, ক্যান্সারে, নানাবিধ রোগে। এর থেকে রেহাই পেতে আমাদের প্রয়োজন অটোফেজি।
পড়ুন – যেভাবে সহজে ওজন কমাবেন এবং সুস্থ থাকবেন।

যদি আমরা দীর্ঘক্ষন খাওয়া বন্ধ করি, তখন দেহের কোষগুলো বাইরে থেকে কোনও খাবার না পেয়ে নিজেই নিজের রোগজীবাণু সৃষ্টিকারী কোষ ও বর্জ্য-আবর্জনা খেতে শুরু করে।
তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল এই প্রক্রিয়া আমাদের শরীরের অব্যাবহার যোগ্য কোষগুলোকে পুনরায় নতুন কোষে রুপান্তর করে যেটা সত্যি বিস্ময়কর ! , আর এই পুরো প্রক্রিয়াকেই অটোফেজি বলা হয়।
নিরাময়
আমাদের বাড়িতে যেমন ডাস্টবিন থাকে বা কম্পিউটারে রিসাইকেলবিন থাকে, তেমনই মানবদেহের প্রতিটি কোষেও একটি করে ডাস্টবিন আছে যার নাম লাইসোজোম। আমরা প্রতিদিনই যে খাবার গ্রহণ করি সে খাবার নিয়ে কোষগুলো খুব ব্যস্ত থাকে, লাইসোজোম নামক ডাস্টবিনটি ভরে যায় আবর্জনায়। যেহেতু আমরা প্রতিদিন নিয়মিত খাবার গ্রহন করি, তাই কোষ গুলো লাইসোজোম পরিস্কারের সুযোগ পায় না।
ডাস্টবিন যেমন নিজে ময়লা পরিস্কার করতে পারে না। আমাদের হাত লাগাতে হয়।
তেমনি কোষের আবর্জনা পরিস্কার করতে প্রয়োজন ফাস্টিং।
জেনে নিন – কোন বদভ্যাস রাতের ঘুম নষ্ট করে।

৩ টি উপায়ে ফাস্টিং করতে পারেন।
১. ওয়াটার ফাস্টিং অর্থাৎ ফাস্টিং চলাকালীন সময়ে কিছু খাবার খাওয়া যাবে। কি কি খাবার খাওয়া সেটা বলে দিব।
২. ড্রাই ফাস্টিং অর্থাৎ একেবারেই না খেয়ে থাকা।
৩. রোজা ( সিয়াম )
তারুন্য ফিরে পেতে, নব যৌবন লাভ করতে, সুস্থ থাকতে অটোফেজি বিনা ঔষধে সবচেয়ে কার্যকরী উপায়।
অটোফেজি সব ধরনের রোগ থেকে নিরাময় করে।
ফাস্টিং কি


ফাস্টিং কি এর ৮ টি উপকারিতা জানি
২. স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে – আমাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের স্মৃতি কমে আসে। দীর্ঘ সময় উপবাস এর ফলে আমাদের মস্তিষ্কের কোষগুলো নতুন করে তৈরি হয়, এতে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা হয় এবং স্মৃতিহ্রাস কমিয়ে দেয়।
৩. স্টেম সেলের রিজার্ভ বৃদ্ধিতে – স্টেম সেল আমাদের শরীরের নানা রকমের কোষ তৈরির কাজ করে। এই ফাস্টিং স্টেম সেলের রিজার্ভ বাড়াতে সাহায্য করে। ২০ ঘণ্টা ফাস্টিং সম্পন্ন পর থেকে স্টেম সেল তৈরি হতে থাকে।
৪. ইনফ্লেমেশন কমাতে – এই ফাস্টিং আমাদের শরীরে নানা রকমের ইনফ্লামেশন কমাতে সাহায্য করে।
৫. অটোফেজি – এই সময় শরীর তার অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষয়প্রাপ্ত কোষগুলোকে অটোফেজি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঝেড়ে ফেলে বা নতুন করে তৈরি করে।

৬. অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে – ফ্রি রেডিক্যাল কমিয়ে দেয়, ফলে কমে যায় অক্সিডেটিভ স্ট্রেস।
৭. এন্টি এজিং – ফাস্টিং এর সময় আমাদের শরীর গ্রোথ হরমোন নিঃসরণ করে। এর ফলে শরীরে বয়সের ছাপ দেরিতে পড়ে।
৮. ওজন কমাতে – যদিও অনেকেই হয়ত এই কারণটাকে সামনে রেখেই ফাস্টিং কে বেছে নিবেন, তবুও এই কারণটিও আমাদের জীবনকে উপভোগ্য করতে বিরাট ভুমিকা রাখবে।
৯. ফাস্টিং কি পরিপাকতন্ত্রের বিশ্রাম – আমাদের জন্মের পর থেকে আমাদের পরিপাক তন্ত্র একটানা কাজ করে যাচ্ছে। ফাস্টিং আমাদের পরিপাক তন্ত্রকে এর খুবই প্রয়োজনীয় বিশ্রামের ব্যবস্থা করে দিতে পারে। হয়তবা একারনেই আল্লাহ আমাদের জন্য একমাসের রোজা ফরজ করেছেন। প্রতিজ্ঞা করুন রোজার মাসে অসাস্থ্যকর খাবার খাবেন না। অসাস্থ্যকর খাবার খেলে একমাস রোজা রাখার পুরো সাস্থ্যগত বেনিফিট পাবেন হাতছাড়া হবে।

সেলিম হোসেন – ২৩/০২/২০২৪ ইং – কিছু ছবি প্রতীকী।
Reference : Dr Eric berg, Dr Mujibul Haque, Dr Jahangir Kabir, Dr Mujibur Rahman, Dr Mandell, Dr Jason Faung, Dr Sten Ekberg and many medical health journals.