প্রোবায়োটিক যুক্ত খাবার কি কি ? ৫ টি প্রোবায়োটিক শারীরিক মানসিক সুস্থতায়। 5 Probiotics for Wellness Fitness

প্রোবায়োটিক যুক্ত খাবার

প্রোবায়োটিক যুক্ত খাবার কি কি 

সুস্থতা আল্লাহর বড় নেয়ামত। সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করুন। আরও কি করবেন, খাবেন প্রোবায়োটিক ? কোথায় পাব প্রোবায়োটিক ? সেটাই আমরা জানব।
আমরা যে খাবারই গ্রহণ করি না কেন, এর সাথে রোগ জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া ঢুকবেই।
আমরা যে খাবার গুলো গ্রহন করি, এর থেকে পুষ্টি তখনই নিশ্চিত হয়, যখন আমাদের পেটের ভিতর ভালো ব্যাকটেরিয়ার অবস্থান সুসংহত থাকে। পেটে খারাপ ব্যাকটেরিয়া বেশি থাকলে, পেট খারাপ হয়, খাবার হজম হয় না।
শরীর পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে, আমরা বিভিন্ন রকম রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারি।
প্রোবায়োটিক যুক্ত খাবার কি কি
প্রোবায়োটিক যুক্ত খাবার কি কি
২০ শতকের গোড়ার দিকে রাশিয়ান নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী এলি মেচনিকফ এক আশ্চর্য বিষয় আবিষ্কার করেছিলেন।
তিনি লক্ষ করেছিলেন অত্যন্ত দারিদ্র এবং খারাপ আবহাওয়ার সঙ্গে লড়াই করেও বুলগেরিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামের একদল ব্যবসায়ী বহুদিন পর্যন্ত সুস্থ শরীরে জীবনযাপন করছেন।
কীভাবে তা সম্ভব!
বিষয়টা তাঁকে ভাবিয়েছিল।
তিনি এদের জীবন যাত্রা পর্যবেক্ষণ শুরু করলেন। তিনি দেখলেন, যে তারা যতটুকুই খাদ্য গ্রহন করুন, সঙ্গে টক দই রাখাটা প্রায় বাধ্যতামূলক।
তিনি এরপর নিজেও বেশ কয়েকদিন যাবত খাদ্যতালিকায় টক দই রাখতে শুরু করলেন। ফলও পেলেন হাতে নাতে। সমগ্র পরীক্ষা থেকে তিনি সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন—অন্ত্রের মধ্যে ভালো ব্যাকটেরিয়ার প্রবেশ করিয়ে সুস্বাস্থ্য গঠন করা সম্ভব।
প্রোবায়োটিক যুক্ত খাবার কি কি
প্রোবায়োটিক যুক্ত খাবার কিমচি

৫ টি প্রোবায়োটিক যুক্ত খাবার  

সেইথেকে আধুনিক প্রোবায়োটিক নিয়ে ধারণার যাত্রা শুরু। এরপর বহু গবেষণায় প্রোবায়োটিকের ভালো দিকগুলি বেরিয়ে এসেছে। তবে প্রোবায়োটিক এর সবচেয়ে সেরা উৎস হচ্ছে জাপান। এরপর আছে কোরিয়া, রাশিয়া। আমরা একে একে ৫ টি প্রোবায়োটিক সম্পর্কে জেনে নেই। তালিকায় আমরা কিমচিকে ১ নাম্বারে রাখলাম।
১. কিমচি
ফারমেনটেড বা গাজন প্রক্রিয়ায় কিমচি তৈরি করা হয়। এতে করে ব্যাকটেরিয়া শর্করাকে ল্যাকটিক অ্যাসিডে রূপান্তরিত করে। এই ল্যাকটিক অ্যাসিড কিমচির স্বাদ বাড়ায়। সেই সাথে প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যাবৃদ্ধি করে। হাজার হাজার বছর জাপানিজ, কোরিয়ান রা খাবার টি খেয়ে আসছে। এখন সারা বিশ্বে জনপ্রিয় এই কিমচি। 

কিমচিতে ল্যাকটোব্যাসিলি নামক প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এই ব্যাকটেরিয়া হজম ক্ষমতায় প্রবেশ করে অন্ত্রের স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে সাহায্য করে।

কিমচিতে অন্যান্য উপকারী ব্যাকটেরিয়া এবং ইস্টও থাকতে পারে। যা সামগ্রিকভাবে অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক।
কিমচি হজম ক্ষমতা বাড়ায়। কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় এবং পেটের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে। কিমচিতে থাকা প্রোবায়োটিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে।
কিমচি ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর, যা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি। ইউটিউব সার্চ দিলেই কিমচি তৈরির সহজ রেসিপি গুলো পাবেন। 
প্রোবায়োটিক যুক্ত খাবার কি কি
প্রোবায়োটিক যুক্ত খাবার সাউয়ার ক্রাউট
২. সাউয়ার ক্রাউট
রাশিয়া জার্মানিরা বংশ পরম্পরায় খেয়ে আসছে সাউয়ার ক্রাউট। ডাঃ মুজিবুর রহমানের সুবাদে আমরা পরিচিত হয়ে এর সাথে। আমি নিজে প্রায় নিয়মিতই এটি খাই। এই প্রোবায়োটিক যুক্ত খাবার টি খেতে সুস্বাদু।

সাউয়ার ক্রাউট হল ফারমেন্টেড বাঁধাকপি। যা ল্যাক্টোব্যাসিলাস নামক প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয়। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো শর্করার গাঁজন ঘটিয়ে ল্যাক্টিক অ্যাসিড তৈরি করে। যা সাউয়ার ক্রাউটকে একটি বিশেষ স্বাদ এবং গন্ধ দেয়।

সাউয়ার ক্রাউট ল্যাক্টোব্যাসিলাস সহ বিভিন্ন ধরণের প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার একটি ভালো উৎস।
প্রোবায়োটিকগুলি হজম প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। প্রোবায়োটিকগুলি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। শরীরের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা শক্তিশালী করে।
এতে একটি অতি প্রয়োজনীয় ভিটামিন পাওয়া যায়। যার নাম ভিটামিন ‘ কে ‘। এটি ছাড়া ক্যালসিয়াম হাড়ে প্রবেশ করতে পারে না রক্ত জমাট বাঁধতেও দরকার। সাউয়ার ক্রাউট ঘরেই তৈরি করা যায়, যা এটিকে একটি জনপ্রিয় খাবার করে তুলেছে।  সাউয়ার ক্রাউটে ক্যালোরি, ফাইবার, ভিটামিন এবং মিনারেলও পাওয়া যায়।
প্রোবায়োটিক যুক্ত খাবার কি কি
প্রোবায়োটিক যুক্ত খাবার পনির
৩. টক দই

আমাদের দেশে বিয়ে বাড়ির দাওয়াত। একদম শেষে পরিবেশন করা হয় দই। এটি বেশি খাওয়া বা রিচ ফুড খাওয়ার জন্য হজম সহজ করতে পরিবেশন করা হয়। দই অর্থাৎ টক দই শত বছর ধরে মানুষ খেয়ে আসছে হজম প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য। বাঙালি দইয়ে চিনি মিশিয়েছে খুব বেশি দিন হয় নি। ১০০/১৫০ বছর হবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে টক দই কি আসলেই হজমে সহায়তা করে ? বিজ্ঞান কী বলে ?

টক দইয়ে থাকে প্রোবায়োটিক। এটা একধরনের উপকারী ব্যাকটেরিয়া ও ইস্ট। যা আমাদের পরিপাকতন্ত্রের জন্য উপকারী। এটি হজমপ্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আমাদের পরিপাকতন্ত্রের মধ্যে এমনিতেই কোটি কোটি ব্যাকটেরিয়া থাকে। খারাপ ব্যাকটেরিয়াও থাকে। এসব মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরে বসবাস করে। প্রোবায়োটিক অর্থাৎ ভালো ব্যাকটেরিয়া অন্ত্রে বেশি থাকা খুব জরুরী।

৪. পনির
বাজারে বিভিন্ন রকম পনির পাওয়া যায়। কিছু নির্দিষ্ট ধরণের পনিরে প্রোবায়োটিক থাকে। যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে। 

পনিরে প্রোবায়োটিক সাধারণত দেখা যায় সেই পনিরগুলোতে যা গাঁজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয় এবং পরে আর গরম করা হয় না।

কিছু পনিরে প্রোবায়োটিকের উপস্থিতি: যেমন কিছু সুইস পনির, গাঁজন প্রক্রিয়ার সময় প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করে। যেমন – কটেজ চিজ, প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া বেশি পরিমাণে থাকে।
মোজারেলা, প্রোবায়োটিকের একটি ভাল উৎস হতে পারে।
পনিরে প্রোবায়োটিক কতটা পরিমাণে আছে, তা পনিরের ধরন, উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং প্রস্তুতকারকের উপর নির্ভর করে।
প্রোবায়োটিক যুক্ত খাবার কি কি
প্রোবায়োটিক যুক্ত খাবার ডার্ক চকলেট
৫. ডার্ক চকলেট
বাজারে বিভিন্ন রকম ডার্ক চকলেট পাওয়া যায়। কেনার দেখে কিনবেন কত শতাংশ ডার্ক। ৭০-৮৫ ভাগ কোকোয়াসমৃদ্ধ চকলেটকেই বলে ডার্ক চকলেট। এতেই পাবেন প্রোবায়োটিক। 
ডার্ক চকলেটে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য উপকারী উপাদান। শরীরে প্রবেশ করা মাত্র টক্সিক উপাদানেরা বেরিয়ে যেতে শুরু করে। ডার্ক চকলেট খেলে ক্যানসারও দূরেও থাকে। ভালো মানের কালো বা ডার্ক চকলেটে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি উপাদান। ডার্ক চকলেট প্রোবায়োটিক যুক্ত খাবার।
যদি কোন বড় ধরনের অসুস্থতা না থাকে, তাহলে ফার্মেসি থেকে কিনেও প্রোবায়োটিক খেতে পারেন।  অসুস্থতা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাবেন।  

সুস্থতা ফিটনেস

আমরা অন্যের সুস্থতার জন্য দোয়া করি। মা বাবার সুস্থতার জন্য দোয়া করি। সুস্থতা কামনা করে স্ট্যাটাস দেই। পাশাপাশি সবাইকে বলব প্রোবায়োটিক যুক্ত খাবার খাবেন।

সেলিম হোসেন – ২৮/০১/২০২৪ ইং

Information source : Dr Eric berg, Dr Mujibul Haque, Dr Jahangir Kabir, Dr Mujibur Rahman, Dr Mandell, Dr Jason Faung, Dr Sten Ekberg and many medical health journals.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *