প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন এবং ব্যর্থতার উপর সফলতাকে চাপিয়েছেন। একটি অসাধারন গল্প। 1 Wonderful story Abraham linchon

আব্রাহাম

প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন 

আমেরিকার সর্বকালের সেরা প্রেসিডেন্ট হিসেবে ধরা হয় তাঁকে। আমেরিকায় দাসদের স্বাধীনতা লাভের পেছনে তাঁর অবদানই সবচেয়ে বেশি। আমেরিকার ১৬ তম প্রেসিডেন্ট। রাজনীতি ও খ্যাতির দিক দিয়ে তিনি নি:সন্দেহে পৃথিবীর ইতিহাসের সফলতম মানুষদের একজন। কিন্তু তাঁর শুরুটা কিন্তু ব্যর্থতার গল্প দিয়েই।

আব্রাহাম লিঙ্কনের ছেলেবেলা 

আব্রাহাম লিংকনের জন্ম ১৮০৯ সালে ক্যানটাকি অঙ্গরাজ্যের হডজেনভিলে কাঠের তৈরি একটি জীর্ণ ঘরে। বাবা টমাস লিংকন ও মা ন্যান্সি লিংকনের দ্বিতীয় সন্তান । হডজেনভিলে জন্ম হলেও আব্রাহাম তাঁর পরিবারের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে বসবাস করেন। অভাবী একটি পরিবার। ১৮১৬ সালে লিংকন পরিবার দক্ষিণ ইন্ডিয়ানার পেরি কাউন্টি নামক স্থানে আবাস গড়ে। বাবা টমাস লিংকন ছিলেন কখনো কৃষক, কখনো কাঠমিস্ত্রি। অভাবী মানুষের যা হয় আর কি ! পেরি কাউন্টিতে আসার দুই বছর পর মারা যান আব্রাহামের মা ন্যান্সি লিংকন।

পড়ুন – স্বামী স্ত্রীর একান্ত মিলন হবে আরও মধুর আরও আনন্দের। 

আব্রাহাম

এরপর বড় হতে থাকেন সৎ মায়ের আশ্রয়ে। আগের মা ন্যান্সি হ্যাংকস লিংকনের দুঃখজনক মৃত্যুর পরই তার জীবনে সবচেয়ে প্রভাব রেখেছেন সৎ মা সারা বুশ জনস্টন। নয় বছরের ছেলেটিকে সন্তানের চেয়ে বেশি আদর করতেন। লেখাপড়া শিখতে উৎসাহ দিয়ে গিয়েছেন জীবনভর। ফলে বিদ্যায় দিকে এগিয়েছেন, নিজেকে শিক্ষিত করেছেন ও অনেক বই পড়েছেন লিংকন।

আব্রাহাম লিংকনের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। ছিলেন মূলত স্বশিক্ষিত। বন্ধুদের পুরোনো বই সংগ্রহ করে পড়তেন। বন্ধুদের কাছ থেকে বই ধার করার জন্য কখনো কখনো মাইলের পর মাইল হেঁটে যেতেন। তাঁর শিক্ষার পেছনে অবদান রাখেন তাঁর মা–বাবা। মাঝেমধ্যে কারও কাছ থেকে পড়ালেখার বিষয়ে সাহায্য পেলেও তা ছিল সামান্য। 

আব্রাহামের লেখাপড়া 

১৮৩০ সালে আব্রাহামের পরিবার আবারও স্থানান্তরিত হয়ে চলে আসে দক্ষিণ ইলিনয়ের ম্যাকন কাউন্টিতে। এত দিন বাবাকে বিভিন্ন কাজে সাহায্য করেছেন। কিন্ত তাঁর নিজের কোনো উপার্জন ছিল না। মিসিসিপি নদীতে নৌকা চালানোর কাজ শুরু করেন। এটা দিয়েই তিনি কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। এরপর একটা দ্বৈত মালিকানাধীন মুদিদোকান চালান। ব্যবসাটি লাভজনক হলেও একসময় তিনি নিজের অংশটুকু বিক্রি করে দেন। এরপর কাজ শুরু করেন পোস্টমাস্টার হিসেবে। আইন বিষয়ে পড়াশোনার ইচ্ছা থাকলেও কোথাও ভর্তি হতে ব্যর্থ হন লিংকন। অগত্যা নিজে নিজেই পড়তে শুরু করেন আইনবিষয়ক বই। দুই বছর পর ইলিনয় বারে আইন বিষয়ে পড়ার সুযোগ পান। এ সময় তাঁর জীবনে আসে প্রেয়সী রুথলেজ। বিয়ে করতে চান তাঁকে। কিন্তু টাইফয়েড জ্বরে মারা যান রুথলেজ। 

জেনে নিন – সফল হওয়ার সাতটি উপায়। 

আব্রাহাম

 

প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনের ব্যর্থতা  

২৩ বছর বয়সে তাঁর চাকরি চলে যায়। সেই সময়ে তিনি তাঁর প্রথম নির্বাচনেও হারেন। ২৯ বছর বয়সে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ এর সদস্য হওয়ার জন্য নির্বাচন করেন এবং যথারীতি হারেন। ১৮৪৮ সালে, ৩৯ বছর বয়সী লিংকন ওয়াশিংটনের জেনারেল ল্যান্ড অফিসের কমিশনার হওয়ার জন্য নির্বাচন করে পরাজিত হন।

৪৯ বছর বয়সে সিনেটর হওয়ার জন্য নির্বাচনে দাঁড়িয়ে শোচনীয় ভাবে পরাজিত হন। এত ব্যর্থতার পরও তিনি রাজনীতি না ছেড়ে চেষ্টা করে যান। অবশেষে ১৮৬১ সালে, ৫২ বছর বয়সে তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগের প্রায় পুরোটাই ছিল ব্যর্থতার গল্প। তিনি কি সফল হয়ে গেলেন ? না, তাকে আরও অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে।

সবেমাত্র ১৬ তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। সারা আমেরিকায় অস্থির, টালমাটাল পরিবেশ বিরাজমান । এমন সময় কতিপয় ব্যাক্তি লিঙ্কনের কাছে আসলেন।
অভিযোগ করলেন আপনি সরকার চালাতে ব্যর্থ।
 
লিঙ্কন বললেন ” মহোদয়গণ, ধরুন আপানার সমুদয় সম্পত্তি সোনায় রুপান্তর করলেন। বস্তায় ভরে একব্যাক্তির কাঁধে তুলে দিলেন। তিনি কাঁধের বোঝাটি নিয়ে দড়ির উপর দিয়ে পার হচ্ছেন।
দড়িটি টানা হিসেবে টাঙানো আছে নায়াগ্রা জলপ্রপাতের উপর। তিনি খুব কষ্টে পার হচ্ছেন।
তখন কি আপনারা দড়ি ধরে নাড়াচাড়া করবেন। চিৎকার করে পরামর্শ দিবেন ডানে বাঁয়ে সরে যাবার ? জানি আপনারা সেটা করবেন না। শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় অপেক্ষা করতে থাকবেন।
 
 
আব্রাহাম
 
তো আমার সরকারও একটা ভারি বোঝা বহন করে চলেছে। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। আমাদের জ্বালাতন করবেন না। চুপচাপ থাকুন, আমাদের কাজ করতে দিন। আমরা অবশ্যই ঈশ্বরের কৃপায় আপনাদের গচ্ছিত আমানত নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে যথাস্থানে পৌঁছে দিব।

এরপর তিনি ইতিহাস বদলে দেন।

আব্রাহামের সফলতা 

প্রেসিডেন্ট হিসেবে ‘সিভিল ওয়ার’র কমান্ডার ইন চিফ ছিলেন। সাফল্যের সঙ্গে পরিচালনা করে জাতিকে নিরাপদে রেখেছেন। ১৮৬১ সালের ১২ এপ্রিল থেকে ১৮৬৫ সালের ৯ মে পর্যন্ত এই সশস্ত্র যুদ্ধ কালোদের দাসত্বের বিরুদ্ধে। এটিই তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় নৈতিক, সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংকট।

মার্কিন কংগ্রেসে ‘থার্টিন্থ অ্যামেন্ডমেন্ট’ পরিচালনায় প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন। তার বিলটির বাংলায় নাম ‘দাসত্ব বা বন্ধন মোচন, স্বাধীনতা; প্রচার, ঘোষণা। বিলটি তৈরি এবং ১ জানুয়ারি, ১৮৬৩ সালে প্রকাশ করেছেন নিজেই। বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে যেসব দাস এখনো বিদ্রোহী হিসেবে বন্দি আছে, তাদের যেন মুক্তি দেওয়া হয়। তাতে প্রাতিষ্ঠানিকভাবেও যুক্তরাষ্ট্র দাস ব্যবস্থা চিরকালের জন্য দূর করা সম্ভব হয়েছে। তার এই সফলতায় বিশ্বের অনেক দেশ উৎসাহিত ও অগ্রসর হয়েছে। 

কোন অফিসে চাকরি করলে ডেটিং যাওয়ার জন্য ছুটি পাওয়া যায়। 

আব্রাহাম

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল ও জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনে করা হয় আব্রাহাম কে। বহু বছরের দাসপ্রথা বিলোপ করে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মহান বীর হিসেবে বিবেচিত হন। নৈতিক, সাংস্কৃতিক, সাংবিধানিক এবং রাজনৈতিক সংকটে আব্রাহামের অবিচল নেতৃত্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বের বুকে উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির আধুনিকীকরণে তিনি অসামান্য ভূমিকা পালন করেন।    

১৮৬৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধে ইউনিয়ন বাহিনী যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, তখন কনফেডারেটের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে পরিচিত জন উইলকস বুথ ওয়াশিংটন ডিসির ফোর্ডস থিয়েটারে আব্রাহাম লিংকনকে তাঁর মাথার পেছনে গুলি করে হত্যা করেন। এমন সময় তাঁকে হত্যা করা হয়, যখন আমেরিকান জাতির পুনর্মিলনের মহান কাজটি সম্পন্ন করার জন্য তাঁকে অনেক প্রয়োজন ছিল। আব্রাহাম লিংকন চলে গেছেন কিন্তু মানবতার সবচেয়ে অন্তরায় দাসপ্রথা বিলুপ্ত করে পৃথিবীর বুকে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। 

পড়ুন – পারস্যের বীর নাদির শাহ কিভাবে সফল হলেন। 

আব্রাহাম

আব্রাহাম এবং একটি কোরানের আয়াত 

আপনার আশপাশে খেয়াল করুন। বিপদ্গ্রস্ত, দুর্ভাগাদের কি দেখতে পান ? প্রতিটি ঘরেই শোক, বিরহ, কষ্ট, যাতনা আছে। কারও কষ্টে বুক ভেঙে যাচ্ছে, কারও গাল বেয়ে ঝরে পরছে অশ্রু। সমাজে শুধু আপনি একাই সমস্যাযুক্ত নন। কত মানুষ রোগের যন্ত্রণা ভোগ করছেন। কেউ বিনা কারনে জেল খানায় আটকে আছেন দিনের পর দিন। আবার মুহূর্তের মধ্যেই সব সমস্যা দূর হয়ে যেতে পারে। বছরের পর বছর অপেক্ষায় থাকা নিঃসন্তান বাবা মা সন্তান লাভ করেন হঠাৎ করেই। 

একারনে মহান আল্লাহ আমাদের উদ্দেশ্য করে বলেন ” তোমরা কি একথা ভেবে বসে আছ যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে অথচ এখনো তোমাদের পূর্ববর্তীদের মত তোমাদের পরিক্ষা করা হয়নি ? তারা অভাবগ্রস্ত, রোগাক্রান্ত ও প্রকম্পিত হয়েছিল। ”  সুরা বাকারা – আয়াত – ২১৪ 

সেলিম হোসেন – ১৫/০৮/২০২২ ইং 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *