দি আলকেমিস্ট
ছোট বেলা থেকেই লেখক হবার ইচ্ছা ছিল। পরিবারের কারনে লেখালেখি চালাতে পারেন নি। প্রাথমিক জীবন টা কেটেছে ভবঘুরে হিসেবে। ১৯৮৮ সালে লিখে ফেললেন উপন্যাস দি আলকেমিস্ট । বয়স তখন ৪১। পাওলো কোয়েল হো, ব্রাজিলিয়ান লেখক।
একজন প্রকাশক দি আলকেমিস্ট উপন্যাস টি প্রকাশ করলেন। প্রথম সপ্তাহে বিক্রি হল মাত্র ১ কপি। এরপর আর কেউ বইটি ছুয়েও দেখল না। ছয়মাস পর বিক্রি হল দ্বিতীয় কপি। ক্রেতা প্রথম কপি যিনি কিনেছিলেন তিনিই।
প্রকাশক ব্যবসায়ী মানুষ। লেখক কে ডাকলেন। বললেন ” আপনার বই বিক্রি হচ্ছে না, অযথাই আমার সেলফ এবং গুদাম দখল করে রেখেছে। আপনার সাথে চুক্তি বাতিল করা হল। বই গুলো নিয়ে বিদায় হন। “
দি আলকেমিস্ট প্রকাশিত উপন্যাস
বই গুলো পাওলো প্রকাশকের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে লাগলেন। একজন প্রকাশক রাজি হলেন। তিনি বিক্রি শুরু করলেন।
এবারে বইটি টুকটাক বিক্রি হতে লাগল। প্রথমে ৩০০ কপি, এরপর ৩০০০ কপি, এরপর ১০০০০ কপি। ৯/১০ মাস পর এক ভদ্রলোক আসেন ব্রাজিলে বেড়াতে। বইটি তার নজর কাড়ে। লেখক কে বলেন ” বইটি যদি তুমি ইংরেজিতে অনুবাদ করে দাও, তাহলে আমি আমেরিকাতে এটি বিক্রি করতে পারব।”
জেনে নিন – ওজন কমানোর সবচে সহজ উপায়।
সময় গড়িয়ে দি আলকেমিস্ট
বইটি অনুদিত হয়, আমেরিকাতে যায়। শত সহস্র লক্ষ কপি বিক্রি হল আমেরিকায়। বিল ক্লিনটন, উইল স্মিথ, ম্যাডোনা, জুলিয়া রবার্টস বিভিন্ন সেলিব্রিটি বইটি লুফে নেন। নিউইয়র্ক টাইমসে বইটি টানা ৩০০ সপ্তাহ বেস্ট সেলার হিসেবে অবস্থান ধরে রাখে। এযাবৎ বইটি ৮০ টি ভাষায় অনুদিত হয়েছে। এই বইটিকে বলা হয় বিংশ শতাব্দীর সেরা দশটা বইয়ের একটা।
জীবনে প্রতিনিয়ত হতাশা আমাদের চেপে ধরে। জীবনের চাওয়া আর সপ্ন পুরনের পথে বাধা আর বাধা। সেই বাধা কিভাবে ডিঙাতে হয়। সপ্ন কে আলিঙ্গন করতে হয়। এটাই এই উপন্যাসের মুল প্রতিপাদ্য বিষয়।
আলকেমিস্ট কারা ?
আলকেমিস্ট হচ্ছে এমন ব্যাক্তি, যিনি যে কোন ধাতু কে গোল্ডে রুপান্তরিত করতে পারেন। আলকেমিস্ট এর কাছে ফিলসোফার স্টোন আছে। এটা দিয়ে তিনি ধাতুকে গোল্ডে রূপান্তরিত করতে পারেন। আলকেমিস্ট এর কাছে আরও এক তরল পদার্থ। যার নাম এলিক্সির বা অমৃত সুধা। যা খেলে মানুষ অসুস্থ হয় না, চির তরুন থাকে।
খৃস্ট পূর্ব চতুর্থ শতক। গ্রিস সম্রাট আলেকজান্ডারের দরবার। দূর দেশ থেকে বেড়াতে এসেছেন মারিয়া। সম্ভ্রান্ত এক বিদুষী নারী। এই মারিয়া কেই ইতিহাসের প্রথম আলকেমিস্ট হিসেবে ধরা হয়।
১৭২৭ সাল ২০ শে মার্চ। সকাল বেলায় আবিস্কার হয় বিজ্ঞানি নিউটন ঘুমের মধ্যে মারা গেছেন। মারা যাবার পর তার চুল পরীক্ষা করে অত্যধিক পারদের উপস্থিতি পাওয়া যায়। কেন এত পারদ? এরপর তার অপ্রকাশিত লেখা প্রকাশিত হতে থাকে। নিউটন তার পাণ্ডুলিপিতে লিখেছেন ফিলোসফারস স্টোন বা পরশ পাথর তৈরির রেসিপি। ১০ লক্ষেরও বেশি শব্দ লিখে গেছেন নিউটন এই ফিলোসফারস স্টোন বা পরশ পাথরের উপর।
এরপর অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। ফিলোসফারস স্টোন বা পরশ পাথরের আবেদন নেই। তাহলে লেখক কেন এসময়ে এমন উপন্যাস লিখতে গেলেন।
দি আলকেমিস্ট উপন্যাস লেখা হয়েছে।
কাকে উদ্দেশ্য করে ? আমাদের সবার উদ্দেশ্য করে। আমরা সবাই আলকেমিস্ট। লেখক এখানে বোঝাতে চেয়েছেন আমরা আমাদের সপ্ন পুরনে সেরা চেষ্টা করেই যাব। তাহলেই আমরা নিজেকে পরশ পাথরে পরিণত করতে পারব। আমাদের সপ্ন সোনায় পরিণত হবে।
” যখন মানুষ সর্বান্তকরণে কোন কিছু পেতে চায়, তখন মহাবিশ্বের প্রতিটি কনা লেগে পড়ে সেই চাহিদা মেটাবার যোগসাজসে। ”
এই কথাটি লেখক এই বইয়ে কয়েক জায়গায় উল্লেখ করেছেন।
হতাশা দূর করতে সুখপাঠ্য বইটি পড়ে ফেলতে পারেন। সপ্নকে আলিঙ্গনের পথ খুঁজে পাবেন।
বইটি নিয়ে রিভিউ দেখুন ১০ টি বিষয় শিখে নিন।
সেলিম হোসেন – ১১.০৭.২০২৪ ইং