ঢাকা শহরের যানজট
ধীর গতির শহর হিসেবে আমাদের রাজধানী প্রথম হয়েছে। কারন ঢাকা শহরের যানজট। শুধু ঢাকা নয় আমাদের অন্যান্য শহর গুলোও ধীর গতির অবস্থান জানান দিচ্ছে। ময়মনসিংহ (৯), চিটাগাং (১২) তম অবস্থানে আছে, ভারতের কলিকাতা আছে ৬ এ, মুম্বাই আছে ১৩ তে। এটা যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ব্যুরো অফ ইকনমিক রিসার্চের ফল।
আমাদের মধ্যে যারা বিদেশের অন্যান্য শহর গুলোতে যাতায়াত করেছেন, তারা ভালভাবে বুঝতে পারেন ঢাকা শহরের যানজট আমাদের জন্য কি বিরক্তিকর, কতটা ক্ষতিকর ! এ শহরে অনেক নতুন নতুন রাস্তা, ফ্লাই ওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে, মেট্রোরেল হয়েছে । কিন্তু ঢাকা শহরের যানজট কমেনি। শহরে চলাচলের গতি বাড়েনি, যা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
৫০,৬০ বা ৭০ এর দশকেে এ শহর অনেক নিরিবিলি ছিল, ফাঁকা ফাঁকা ছিল। তখন ঢাকা শহরের যানজট এতটা অসহনীয় ছিল না। এখনকার মত তখনও রাস্তায় লক্কর ঝক্কর মার্কা বাস কালো ধোঁয়া উড়িয়ে ছুটে চলত। শহরবাসী আদর করে বাস গুলোকে বলত মুড়ির টিন। এখন যেমন নারী পুরুষ ভীড়ের মধ্যে গাদাগাদি করে সিটি বাসে চলাচল করে, তখনও মুড়ির টিনে শুধু পুরুষেরা ভীড়ে চিরে চ্যাপ্টা হয়ে চলাচল করত।
রিক্সা এবং হেলদি লাইফ স্টাইলের গল্প।
পুরান ঢাকার লোকেরা বরাবরই রঙ্গ প্রিয়।
এমন একজন ঢাকাইয়া মুড়ির টিনে উঠেছেন। যাবেন গুলিস্তান, প্রচণ্ড ভীড়। নাদুস নুদুস একলোক তার সামসামনি দাঁড়িয়ে, হাতলের নাগাল পাচ্ছেন না। ভীর সামলাতে পারছেন না। ভদ্রলোক ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত।
পুরান ঢাকাইয়ার কাঁধে মাথা রেখে দাঁড়ানো অবস্থায়ই ঘুমিয়ে পড়লেন।
তিনি সদয় হলেন, কিছু বললেন না।
বাস গুলিস্তান এসে পড়ল, ঢাকাইয়ার নামার সময় হল। কিন্ত ভদ্রলোক তার শরীরের উপর ঘুমিয়ে আছেন। তিনি ভদ্রলোকের শরীরে আস্তে আস্তে টোকা দিলেন, লোকটার নড়াচড়া নেই। এরপর আস্তে লোকটার শরীরে ঝাঁকি দিলেন, তবুও নড়ে না।
এবার লোকাটার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললেন ” এই যে ভাইজান আছেন না গেছেন গা হেই পারে ? লাছ টা অহন ছরান না আমার উপরে থেইকা। আমি হালায় নামুম। বাড়ির কাছে আইছা গেছিগা।”
এবার ঘুম ভেঙে গা ঝাড়া দেন ভদ্রলোক। ভয়ার্ত চোখে এদিক ওদিক তাকান।
বলেন ” লাশ ? কিসের লাশ, কোথায় লাশ ?
ঢাকা শহরের যানজট এবং মাছের বাজার
ইলিশ মাছ, এখন রাজাদের মাছ। বাজারে ইলিশ মাছের চেয়ে ক্রেতা থাকে অনেক বেশী। তাই অধিক দামের কারনে যাদের আর্থিক অবস্থা রাজাদের মত তারা কিনতে পারেন ইলিশ মাছ। কিন্ত আজ থেকে চার যুগ আগে ঢাকা শহরে মাছ বাজারের অবস্থা এমন ছিল না। তখন মাছ বাজারে ইলিশ ইলিশ মাছ থাকত বেশী ক্রেতা থাকত কম।
একদিন বাজারে প্রচুর ইলিশ মাছের আমদানি, কিন্ত ক্রেতা বেশ কম। সভাবতই দামও অনেক কম। বেশ কিছু মাছের দোকানদার অলসভাবে বসে আছেন। দু একজন ক্রেতা দেখলেই ত্রাহি স্বরে ডাকছেন।
দুপুর গড়িয়ে গেছে, দু একটা কুকুর ঘুরাঘুরি করছে, দু তিনটে বিড়াল কে দেখাগেল একটার পিছনে আরেক টাকে ছোটাছুটি করতে। মাছের ডালায় ইলিশ মাছে ভর্তি, প্রচুর মাছি উড়ছে ভন ভন করে। রুপালি ইলিশ গুলো ঢাকা পরেছে ছোপ ছোপ কালো দাগে। দোকানদারের মন বেশ খারাপ। এমন সময় এক ক্রেতা এসে হাজির।
ঢাকাইয়া ক্রেতা। মনে সাধ জাগল মশকরা করার। ক্রেতা মাছিতে ঢাকা পরা দোকানদারকে বললেন ” আগে তো জানতাম এইটা মাছের বাজার। মাউছারা বেচে, খইরদাররা কিনে। আপনে ভাই মাছ বাজারে ‘ মৌ চাক ‘ লইয়া বইছেন ক্যা। ”
মাছের ব্যাপারি – ” আপনে হালায় বুঝবার পারেন নাই ক্যা। বাটপার, চোট্টা, ঠগবাজ, ফেরেবাজ বাজারে মাছির লাহান ভ্যানভ্যান করবার লাগছে। তাই মাছ বেচা ছাইড়া দিছি। অহন ‘মধুর চাক’ বেচি। খাটি মানুষ অইলে ভিতরে মধু পাইব, নইলে হালায় পুঙ্গার মধ্যে কামড় খাইব।”
ক্রেতার উপর ঢাকাইয়া দোকানদার যখন ত্যাক্ত বিরক্ত।
ঢাকা শহরের যানজট এবং ঘোড়ার গাড়ি
ঢাকা শহরের যানজট তখন ছিল না। পুরনো ঢাকার চলাচলের প্রধান বাহন ছিল ঘোড়ার গাড়ি। খটখট শব্দে ছুটে চলত সরু রাস্তা ধরে। ঘোড়ার গাড়ির এক গাড়োয়ান, ছুটির দিনে বের হয়েছেন রাস্তায়। লোকজন রাস্তায় বেশ কম । গাড়োয়ান রাস্তায় গাড়ি চালাচ্ছেন বেশ জোরে। এমন সময় একজন লোক রাস্তার মাঝখান দিয়ে হেলেদুলে হেঁটে যাচ্ছিলেন। গাড়ির খটখট শব্দ শুনেও তিনি হাটার ধরন পাল্টান নাই। হেঁটে চলছেন আপন মনে, রাস্তার একপাশে সরে যাওয়ার কোন গরজ নেই।
গাড়োয়ান লোকটিকে রাস্তার একপাশে সরানোর চেষ্টা করলেন, কিন্ত সফল হলেন না। ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে গাড়ি থামালেন। দ্রুত পায়ে হেঁটে লোকটির কাছে গেলেন। সশব্দে ছালাম দিলেন ” আচ্ছালামুয়ালাইকুম, আপনের আব্বাজানে কিমুন আছে ?
লোকটি একটু হকচকিয়ে যায়। থতমত খেয়ে বলেন ” আমার আব্বারে আপনি চিনেন ? কিন্ত আমিতো আপনারে চিনবার পারলাম না।”
গাড়োয়ান – ” কওতো হালায়, আপনে আমারে কেমতে চিনবেন ? আমি হইলাম এক ঘোড়ার গাড়ির গাড়োয়ান। আর আপনের বাপ হইল গিয়া ঢাকার নওয়াব ছাব। হেইতো এই রাস্তাডা বানাইছে। আপনে নওয়াব ছাবের ছেলে না ?
লোকটার ফর্সা মুখ কালো হয়ে যায়। কোন টু শব্দ করেন না। রাস্তার একপাশে সড়ে গিয়ে হাঁটতে থাকেন।
ছাগল যখন ক্রেতাকে ছাগল বানিয়ে দেয়।
সেলিম হোসেন – ০৪/১১/২০২৩ – ছবি গুলো প্রতীকী।