ছোলা বুটের উপকারিতা
আমাদের দেশে গ্রাম, গঞ্জ প্রায় সবখানেই এখন পাকা রাস্তা। কোথাও কোথাও কাঁচা রাস্তা এখনো আছে। যখন এমন রাস্তা ঘাট ছিল না। ছিল না মালামাল টানতে ভ্যান, রিক্সা বা গাড়ি। তখন ঘোড়ার পিঠে ভারী পন্য ভর্তি বস্তা তুলে দেয়া হত। পিঠের দুই পাশে দুটো বস্তা তুলে দিয়ে টাইট করে বেঁধে দেয়া হত। ঘোড়া হেলে দুলে চলতে চলতে পৌঁছে যেত দুরের কোন হাট বা বাজারে।
তো মালটানা ঘোড়ার প্রধান খাবার ছিল ছোলা। ছোলা ঘোড়াকে শক্তির জোগান দিত। সুস্থ রাখত। Blu zones এর অধিবাসীরা বাঁচে ৯০-১০০ বছর বাচেন। তাদের প্রধান খাবার হল শস্য দানা। যার অন্যতম হচ্ছে ছোলা। পৃথিবীর পাঁচটা অঞ্চল কে বলা হয় Blu zones। এই পাঁচটা অঞ্চল হচ্ছে – জাপানের অকিনাওয়া , কোস্টারিকার নিকয়া, ইতালি সারদিনিয়া, গ্রিসের ইকারিয়া এবং ক্যালিফোর্নিয়ার লোমা লিনডা।
ছোলা কিভাবে খাবেন। চার উপায়ে ছোলা খেতে পারেন।
শুকনো ভাজা – স্প্রাউটেড – কাঁচা – সিদ্ধ
শুকনো ভাজা টা রাস্তা ঘাটে হকাররা বিক্রি করে। চাইলেই ছোট কাগজের ঠোঙায় ১০/২০ টাকার দিয়ে দেয়। এটি খেতে পারেন। এতে অন্যান্য উপায়ে খাওয়ার চেয়ে এনার্জি অনেক বেশি পাওয়া যায়। প্রোটিনও বেশি থাকে। ফ্যাট কম থাকে, ফাইবার থাকে সবার চেয়ে বেশি। বিকেলের নাস্তায় ১০/২০ টাকার কিনে খেতে পারেন অনায়াসেই।
স্প্রাউটেড ছোলাও অনেক পুষ্টিকর। এক্ষেত্রে হজম শক্তি টা বিবেচ্য বিষয়। এটি সালাদের সাথে খেতে পারেন। কাঁচা ছোলার চেয়ে এতে ময়েসচার থাকে ৭ গুন বেশি, সিদ্ধ ছোলার চেয়ে আরও বেশি। প্রান শক্তিতে থাকে ভরপুর, যা অন্য উপায়ে খেলে পাবেন না। প্রোটিনও বেশি থাকে। আরও কিছু উপাদান বেশি থাকে। শর্করা থাকে সিদ্ধ বা কাঁচার চেয়ে কম। ফ্যাট কম থাকে। প্রান শক্তিতে থাকে ভরপুর।
ভিডিও দেখুন – কিভাবে এই শস্য দানা স্প্রাউটেড করবেন।
কাঁচা খেতে পারেন।
যদি হজম শক্তি ভালো থাকে। পুষ্টি গুন অক্ষুন্ন থাকে ভেজানো কাঁচা দানায়। অল্প কয়েকটি দানা খেতে চিবিয়ে চিবিয়ে। এটি একটি ভালো অভ্যাস স্বাস্থ্যের জন্য।
সিদ্ধ খেতে পারেন।
ছোলা থেকে পুষ্টি পেতে হলে ভুনা ছোলা খাবেন না। সিদ্ধ করে নিতে পারেন। এরপর সালাদ তৈরি করে খাবেন।
এরপর নাস্তার সময় সালাদে পরিমান মত খেতে পারেন। সিদ্ধ খেতে চাইলে ৮-১০ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখবেন। এতে করে ছোলায় থাকা কেমিক্যাল দূর হয়ে যাবে। সময় নিয়ে ভালোভাবে সিদ্ধ করবেন।
সিদ্ধ করে এর সঙ্গে টমেটো, শসা, চাটমশলা এবং অল্প অলিভ অয়েল বা সরিষার তেল দিয়ে সালাদ তৈরি করবেন। স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী হবে। এ ছাড়া এর সাথে টক দই মিশিয়ে নিতে পারেন।
কোনো খাবারই অতিরিক্ত গ্রহণ করা শরীরের জন্য ভালো নয়। একজন সুস্থ ব্যক্তি প্রতিদিন ২৫-৩০ গ্রাম ছোলা খেতে পারবেন। বিভিন্ন রোগে আক্রান্তরা কতটুকু ছোলা খেতে পারবেন এ বিষয়ে চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে নেবেন।
একমাসে ১০ কেজি ওজন কমাবেন কিভাবে।
ছোলা খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা
১. প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার। এটি প্লান্ট বেজড প্রোটিন।
এতে আছে প্রচুর ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়। কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের সমস্যা কমায় এবং শরীরে থাকা ক্ষতিকর টক্সিক উপাদান বের করে দিতে সাহায্য করে।
২. নিয়মিত খেলে ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে থাকে। প্রচুর আয়রন আছে এই শস্য দানায়। ফলে এটি দেহে লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন বাড়িয়ে রক্ত স্বল্পতার সমস্যা প্রতিরোধ করে।
৩. গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম অর্থাৎ এটি রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ায়। এই শস্য দানার আঁশ রক্তে উপস্থিত গ্লুকোজের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই ডায়াবেটিস রোগীরা তাদের খাদ্যতালিকায় এই খাবার রাখতে পারেন।
৪. যাদের হাই কোলেস্টেরল আছে তাদের মাছ-মাংস কম খেতে বলা হয়। তারা প্রোটিনের চাহিদা পুরনে নিশ্চিন্তে খেতে পারেন। আবার শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
৫. একটি এটি কম ক্যালরিযুক্ত খাবার। তাই এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখতে পারে।
৬. এটি ভিটামিনসমৃদ্ধ হওয়ায় ত্বক এবং চুলের উপকার করে। ত্বক উজ্জ্বল করে এবং চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
এতে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বিভিন্ন রসায়ানিক উপাদান বিভিন্ন ক্যানসার এবং টিউমার বৃদ্ধি রোধ করে।
৭. এতে প্রচুর আয়রন আছে। ফলে এটি দেহে লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন বাড়িয়ে অ্যানিমিয়ার সমস্যা প্রতিরোধ করে।
৭. শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং অ্যাথেরোসক্লেরোসিস, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক প্রতিরোধ করে।
৮. নিয়মিত খেলে দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকে।
৯. কাঁচা ছোলা ফোলেটের একটি ভালো উৎস, যা জেনেটিক সমস্যা যেমন নিউুরাল টিউব ডিফেক্টস প্রতিরোধ করে।
কাঁচা ছোলায় বিভিন্ন ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, কপার, জিংক থাকে যা বোন মিনারেল ডেনসিটিকে উন্নত করে এবং বয়সের সঙ্গে সম্পর্কিত রোগ যেমন অস্টিওপোরেসিস দূর করে।
১০.এতে সালফার নামক খাদ্য উপাদান থাকে, যা জ্বালাপোড়া দূর করে।
জেনে নিন – কিভাবে আজীবন ঔষধ ছাড়া সুস্থ থাকবেন।
এ ছাড়া রয়েছে ভিটামিন বি১, বি২, বি ৬ এবং প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, বিভিন্ন খনিজ উপাদান যেমন ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, কপার ও আয়রন।
ছোলা খেতে সাবধানতা
শরীরে বিশেষ কোন রোগ থাকলে যে কোন খাবারই জেনে শুনে খাওয়া উচিত। এতে প্রচুর পটাশিয়াম থাকে। তাই কিডনিজনিত সমস্যায় আক্রান্তদের জন্য এটা ক্ষতিকর।
পেটে ব্যাথা থাকলে খাওয়া উচিত নয়।
কৌটা জাত কোন ছোলা দোকান থেকে কিনবেন না। ওগুলোতে নানান রাসায়নিক মিশানো থাকে। যা সাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
রেফারেন্স
- USDA National Nutrient Database: “Black Beans, Boiled, Without Salt”
- American Heart Association: “The Skinny on Fats”
- Office of Dietary Supplements: “Nutrient Recommendations: Dietary Reference Intakes (DRI)”
- Harvard School of Public Health: Fiber: “Fiber”
- National Institutes of Health Office of Dietary Supplements: “Vitamin C”
- USDA National Nutrient Database: “Chickpeas (garbanzo beans, bengal gram), mature