১.৪৩ লক্ষ টাকার চটি স্যান্ডেল: ইতিহাস, বিলাসিতা ও সামাজিক কৌতুক
আপনি সাধারণ ব্যবহারের জন্য একজোড়া স্যান্ডেল কত দামে কিনতে চান? হয়তো ১০০ থেকে ৫০০ টাকা—যেগুলো ঘরে, বাথরুমে বা বাজারে যেতে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু যদি শোনেন একজোড়া সাধারণ দুই ফিতার চটি স্যান্ডেলের দাম প্রায় ১ লাখ ৪৩ হাজার টাকা (৪ হাজার ৫৯০ সৌদি রিয়াল)! সত্যিই বিষয়টি চমকে দেওয়ার মতো। এই অবিশ্বাস্য মূল্যের ঘটনার আগে চলুন জেনে নেওয়া যাক জুতা বা স্যান্ডেলের দীর্ঘ ইতিহাস।
স্যান্ডেল বা জুতার আবিষ্কারের ইতিহাস
ইতিহাসবিদদের ধারণা, প্রাচীন মিশরীয়রাই প্রথম জুতা বা স্যান্ডেল আবিষ্কার করেন। তারা ‘পেপাইরাস’ নামক এক গাছের পাতা দিয়ে স্যান্ডেল তৈরি করতেন। অনেক সমালোচক মনে করেন, মিশরীয়রাই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির জন্য জুতা তৈরি শুরু করেন।
এরপর পার্সিয়ানরা নরম চামড়া দিয়ে জুতা তৈরি করেন। ধারণা করা হয়, একই সময়ে গ্রীস, রোমান ও মেসোপটেমিয়ানরাও একই ধরনের জুতা ব্যবহার করত। সে সময়কার জুতাগুলোতে ডান-বাম পায়ের কোনো পার্থক্য ছিল না।
ত্বক ফর্সা করতে কেমিক্যাল কসমেটিকস নয়। টক দই ত্বক ফর্সা করতে কার্যকরী।

জুতা যখন সামাজিক মর্যাদার প্রতীক
প্রাচীনকালে জুতার মান নির্ভর করত ব্যক্তির সামাজিক মান-মর্যাদার উপর। ধনী ব্যক্তিরা জুতা বহন করার জন্য ক্রীতদাস রাখতেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এসব দাস-দাসীর কাজ ছিল জুতা সংরক্ষণ করা এবং মনিবের পা ধুয়ে দেওয়া। এসব ক্রীতদাসদের জুতা পরিধান করা নিষিদ্ধ ছিল।
অন্যদিকে, কাঠের তৈরি, সাইজে বড় ও ভারী জুতা পরানো হতো আসামীদের, যাতে তারা কষ্ট পায় এবং পালিয়ে যেতে না পারে।
মধ্যযুগে জুতার বিবর্তন
মধ্য যুগেই জুতায় ভিন্ন মাত্রা যোগ হওয়া শুরু হয়। শুধুমাত্র পা ঢাকার জন্য নয়, নান্দনিক ডিজাইনের জুতা ও স্যান্ডেল বাজারে চলে আসে। একদল মানুষ স্যান্ডেল পরিত্যাগ করে বুটের মতো জুতা পরা শুরু করে। মধ্যযুগের শেষের দিকে জুতার উপর বিভিন্ন কারুকাজ করে অলংকার বসানো হতো। আমেরিকার আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ান এবং এস্কিমোরা বুট জাতীয় জুতা ব্যবহার করতেন।
পড়ুন – স্ত্রীর ভালোবাসা কিভাবে আজীবন পেতে পারেন।

স্যান্ডেল বা জুতার আধুনিকায়ন
প্রায় চারশো বছর আগে পর্যন্ত আমেরিকাতে মানুষ শুধুমাত্র এক ধরনের জুতাই পরত। প্রথম আমেরিকাতে জুতা প্রস্তুতকারক (Shoemaker) নিয়ে আসেন থমাস বিয়ার্ড নামের এক ভদ্রলোক। ১৫০০ সালের শেষের দিকে তিনি লন্ডন থেকে জুতা তৈরির কারিগর নিয়ে আসেন।
এরাই পরবর্তীতে জুতার মান উন্নয়নসহ বিভিন্ন প্রকার মেশিনারি আবিষ্কার করে প্রচুর জুতা বাজারজাত করা শুরু করেন। এর ধারাবাহিকতায়:
- লাইমেন ব্লেইক প্রথম জুতার বিভিন্ন অংশ জোড়া দেওয়ার মেশিন আবিষ্কার করেন।
- গর্ডন মেকাই জুতার উপরিভাগের সাথে তলার সংযোগের উন্নয়ন করেন।
- ১৮০০ সালের গোড়ার দিকে জন এডাম ডাগি প্রথম জুতার ফ্যাক্টরি চালু করেন।
জান মেটলিঞ্জার সেসময় যে জুতা তৈরির মেশিন আবিষ্কার করেন, তা দিয়ে প্রতিদিন ৭০০ জুতা তৈরি করা যেত। একসময় যখন হাতে জুতা বানানো হতো, তখন কেউ কল্পনাই করেনি যে শুধুমাত্র মেশিন দিয়েও জুতা তৈরি সম্ভব হবে।
ষোড়শ শতাব্দীতে ফ্রান্সে মেয়েরা হাই হিল পরা শুরু করে। সে সময়কার উচ্চবিত্ত শ্রেণির মেয়েদের প্রত্যকের প্রায় ২০ জোড়া জুতা থাকত, যা তারা ভিন্ন ভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্যবহার করত। বর্তমানে আমেরিকার ধনাঢ্য পরিবারের লোকেরা তাদের উচ্চমূল্যের জুতা সংরক্ষণের জন্য আলাদা ওয়াকিং রুম ব্যবহার করে থাকে, যে রুমের তাপমাত্রা বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
কিন্তু একটি চরম সত্য হলো: পৃথিবীর বহু দরিদ্র দেশের মানুষ এখনও জুতা কেনার সামর্থ্য অর্জন করেনি।
১ লাখ ৪৩ হাজার টাকার চটি স্যান্ডেল!
ভাবছেন, এত দাম দিয়ে সাধারণ চটি স্যান্ডেল কেনার ক্রেতা কারা? ঘটনাটি আমাদের দেশে নয়, এটি কুয়েতের।
সম্প্রতি কুয়েতের একটি দোকানে দুই ফিতার এক জোড়া সাধারণ স্যান্ডেল বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৫৯০ সৌদি রিয়ালে, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। আমরা সাধারণত এ ধরনের চটি স্যান্ডেল বাথরুমে বা বাড়ির ভেতরে ব্যবহার করে থাকি, যার দাম সর্বোচ্চ ৬০-৭০ টাকা।
‘জানোউবা’ (Janooba) নামের একটি ফ্যাশন ব্র্যান্ড অনলাইনে একটি ভিডিও পোস্ট করে এই চটি স্যান্ডেল প্রদর্শন করে। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা ছিল, “জানোউবায় ৪ হাজার ৫০০ রিয়ালে সর্বশেষ ফ্যাশন”।
ভিডিও দেখুন – মাত্র হাজার টাকায় পাচ্ছেন ভালো মানের জুতা।
সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
এই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায় এবং অসংখ্য মানুষ বিভিন্ন রকম মন্তব্য করতে শুরু করেন।
- একজন কৌতুক করে লেখেন, “তাহলে সারা জীবন ধরে আমরা টয়লেটে ৪ হাজার ৫০০ রিয়াল দামের স্লিপার ব্যবহার করছি!”
- আরেকজন হতাশা নিয়ে লেখেন, “যারা ধনী, তারা এটা কিনবেন। তাদের কাছ থেকে যেভাবে পারে কোম্পানিগুলো টাকা নিয়ে যাচ্ছে।”
- অন্য একজন লেখেন, “আমাদের পরিবার শৌচাগারে এই স্লিপার ব্যবহার করে।”
- একজন ভারতীয় ব্যবহারকারী মন্তব্য করেন, “ভারতে আমরা ৬০ রুপিতেই এ ধরনের স্লিপার পেয়ে যাই।”
- ইনস্টাগ্রামে আরেকজন লেখেন, “আমরা এটাকে হাওয়াই চটি বলি।”
জানোউবার ভিডিওতে হাতে গ্লাভস পরা এক ব্যক্তিকে কাচে ঘেরা একটি বাক্স থেকে নীল-সাদা রঙের একটি চটি বের করে তার গুণমান (ফিতা ও নরমতা) দেখাচ্ছিলেন।
জীবনে সফল হতে হলে অবশ্যই ভালো গল্প বলার দক্ষতা থাকতে হবে।

চটি স্যান্ডেল নিয়ে গোপাল ভাঁড়ের কৌতুক
দাওয়াত ও চটি স্যান্ডেল নিয়ে একটি জনপ্রিয় কৌতুক দিয়ে শেষ করা যাক।
গোপাল ভাঁড় পাশের গ্রামে এক বিয়ের দাওয়াত খেতে গিয়েছেন। তখন উঠানে চাটাই বিছিয়ে সারি করে লোকজনকে খেতে দেওয়া হতো। এক সারির একেবারে প্রথমে বসেছিলেন গোপাল ভাঁড়।
বড় ডিস ভর্তি করে সন্দেশ পরিবেশন করার পালা এলে পরিবেশনকারী দলের নেতা উচ্চ শব্দে জিজ্ঞেস করলেন, “সন্দেশ দেওয়া কোন দিক থেকে শুরু করব?”
গোপাল ভাঁড় নিজের দিকে ইশারা করে বললেন, “দক্ষিণ দিক থেকে শুরু করেন।”
লোকটি গোপাল ভাঁড়ের কথায় রেগে গিয়ে বললেন, “চটি দিয়ে পিটিয়ে একদম সোজা করে দেব।”
গোপাল ভাঁড় তখন দ্রুত বললেন, “ওটা উত্তর দিক থেকে শুরু করেন।”
(গুরুত্বপূর্ণ জিনিস, যেমন সন্দেশ, নিজের কাছে আগে পেতে চান বলেই গোপাল ভাঁড় প্রথমে দক্ষিণ দিক থেকে শুরু করার কথা বলেছিলেন, কিন্তু চটিপেটার ভয় আসতেই তিনি মত পরিবর্তন করে উত্তর দিক থেকে শুরু করার কথা বলেন—কারণ সেই লোক দক্ষিণ দিকেই দাঁড়িয়ে ছিল!)
ভালো লাগলে পোস্টটি শেয়ার করে দিন। সেলিম হোসেন – ০৯/০৯/২০২৪ ইং – ছবি গুলো প্রতীকী



