স্যান্ডেল
আপনি কত দাম দিয়ে কিনতে চান ? ১০০ – ৫০০ টাকা। অর্থাৎ যে গুলো সাধারন মানের। ঘরে, বাথরুমে, বাজারে যেতে ব্যাবহার করা হয়। কিন্ত এত দাম !! সত্যিই বিষয় টা চমকে দেয়ার মত। পুরো বিষয় টা আমরা জানব। তার আগে নেনে নেই, জুতার ইতিহাস।
স্যান্ডেল বা জুতা আবিস্কারের কাহিনী
মিশর, নামটা শুনলেই পিরামিডের কথা মনে পরে। ইতিহাস থেকে যতটুকু জানা যায় মিশরীয়রাই প্রথম জুতা বা স্যান্ডেল আবিস্কার করেন। পেপাইরাস নামক এক গাছের পাতা দিয়ে স্যান্ডেল বানানো হত। ইতিহাসের অনেক সমালোচক ধারণা করেন, মিশরীয়রাই প্রথম বিক্রির জন্য জুতা তৈরি শুরু করেন। এরপর পার্সিয়ানরা নরম চামড়া দিয়ে জুতা তৈরি করেছিল। আবার অনেকে ধারণা করেন ঠিক একই ধরনের জুতা একই সময় ব্যবহার করত গ্রীস, রোমান ও মেসোপটেমিয়ানরা। সে সময়কার জুতার কোন ডান-বাম পার্থক্য ছিল না।
জুতার মানের উপর নির্ভর করত সামাজিক মান মর্যাদা। জুতা বহন করার জন্য সে সময় অনেকে ক্রীতদাস রাখতেন। নানান অনুষ্ঠানে এসব দাস-দাসীদের কাজ ছিল জুতা সংরক্ষণ করা ও মনিবের পা ধুয়ে দেয়া। এসব ক্রীতদাসরা নিজেরা জুতা পরিধান করতেন না। কারন তাদের জন্য জুতা পরা নিষেধ ছিল।
আরেক ধরনের জুতা কাঠের, সাইজে বড় এবং ভারী। এগুলো পড়ানো হত আসামীদের। যাতে তারা কষ্ট পায়, পালিয়ে যেতে না পারে। মধ্য যুগেই জুতায় ভিন্ন মাত্রা শুরু হয়। শুধু পা ঢাকতে নয়, নানান ডিজাইনের জুতা, স্যান্ডেল বাজারে চলে আসে। কিছু মানুষ স্যান্ডেল পরিত্যাগ করে বুটের মত জুতা পরা শুরু করে। মধ্যযুগের শেষের দিকে জুতার উপর বিভিন্ন কারুকাজ করে অলংকার বসানো হয়। আমেরিকার আদিবাসি রেড ইন্ডিয়ান এবং এস্কিমোরা বুট জাতীয় জুতা ব্যবহার করতেন।
পড়ুন – স্ত্রীর ভালোবাসা কিভাবে আজীবন পেতে পারেন।
স্যান্ডেল বা জুতার আধুনিকায়ন
খুব বেশি দিনকার কথা নয়, চার’শ বছর আগ পর্যন্ত আমেরিকাতে মানুষ শুধু এক ধরনের জুতাই পরত। প্রথম আমেরিকাতে সু-মেকার নিয়ে আসে থমাস বিয়ার্ড নামের এক ভদ্রলোক এবং নিজেও সুমেকার ছিলেন। ১৫’শ সালের শেষের দিকে তিনি প্রথম লন্ডন থেকে জুতা তৈরির কারিগর নিয়ে আসেন।
এরাই পরবর্তিতে জুতার মান উন্নয়ন সহ বিভিন্ন প্রকার মেশিনারি আবিস্কার করে অনেক জুতা বাজারজাত করা শুরু করে। তারই ধারাবাহিকতায় লাইমেন ব্লেইক প্রথম জুতার বিভিন্ন অংশ জোড়া দেবার মেশিন আবিস্কার করেন। গর্ডন মেকাই জুতার উপরিভাগের সাথে তলার সংযোগের উন্নয়ন করেন।
১৮’শ সালে গোড়ার দিকে জন এডাম ডাগির প্রথম জুতার ফ্যাক্টরী চালু করেন। জান মেটলিঞ্জার সেসময় যে জুতা তৈরির মেশিন আবিস্কার করেন তা দিয়ে প্রতিদিন ৭০০ জুতা তৈরী করা যেত। যখন হাতে জুতো বানানো হতো কেউ তখন কোনদিন ভাবতেও পারেনি যে শুধুমাত্র মেশিন দিয়ে কখনো জুতা তৈরি করা সম্ভব। ১৬’শ সালের কথা; ফ্রান্সের মেয়েরা তখন হাই হিল পরা শুরু করে। উচ্চ বিলাসিতা শ্রেণীর মেয়েদের তখন প্রত্যেকের প্রায় ২০ জোড়া জুতা থাকত।
প্রতিটি ভিন্ন অনুষ্ঠানে তারা আলাদা ধরনের জুতা ব্যাবহার করত। তবে বর্তমানে আমেরিকার ধনাঢ্য পরিবারে লোকেরা তাদের উচ্চমূল্যের জুতা সংরক্ষণের জন্য আলাদা ওয়াকিং রুম ব্যবহার করে থাকে। ঐ রুমের তাপমাত্রা বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তবে একটি চরম সত্য বিষয়। পৃথিবীর বহু দরিদ্র দেশের মানুষ এখনো জুতা কেনার সামর্থ্য অর্জন করেনি।
জেনে নিন – শুধুমাত্র রাসেল ভাইপার নয়, চারিপাশে থাকা আরও নয়টি বিষাক্ত সাপের পরিচয়।
চটি স্যান্ডেল
ভাবছেন, ছাগল মতিউর বা ড্রাইভার আবেদ আলী এই চটি স্যান্ডেলের ক্রেতা। না বিষয় তা নয়। ঘটনাটি আমাদের দেশে নয়। ঘটনাটি কুয়েতের। কুয়েতে একটি দোকানে দুই ফিতার এক জোড়া স্যান্ডেল বিক্রি হচ্ছে। যে দাম লেখা আছে তাতে চক্ষু চরকগাছ। এত দাম ! ৪ হাজার ৫৯০ সৌদি রিয়াল। বাংলা টাকায় দাড়ায় ১ লাখ ৪৩ হাজার।এ ধরনের চটি স্যান্ডেল কি আমরা বাইরে চলতে ব্যাবহার করি। না করি না। এটা আমরা ব্যাবহার করি বাথরুমে। স্যান্ডেল জোড়া অপেক্ষায় থাকে বাথরুমের দরজার সামনে।
অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অসংখ্য মানুষ, বিশেষ করে ভারতীয়রা ওই ভিডিও শেয়ার করেন । বিভিন্ন রকম মন্তব্য করেন। একজন কৌতুক করে লেখেন, ‘তাহলে সারা জীবন ধরে আমরা টয়লেটে ৪ হাজার ৫০০ রিয়াল দামের স্লিপার ব্যবহার করছি!’
ভিডিও দেখুন – মাত্র হাজার টাকায় পাচ্ছেন ভালো মানের জুতা।
চটি স্যান্ডেল নিয়ে
আরেকজন খানিকটা হতাশা নিয়ে লেখেন, “যারা ধনী তারা এটা কিনবেন, তাদের কাছ থেকে যেভাবে পারে কোম্পানি গুলো টাকা নিয়ে যাচ্ছে।” তৃতীয় আরেকজন লেখেন, ‘আমাদের পরিবার শৌচাগারে এই স্লিপার ব্যবহার করে।’‘ভারতে আমরা ৬০ রুপিতেই এ ধরনের স্লিপার পেয়ে যাই,’ লেখেন আরেক ব্যবহারকারী। ইনস্টাগ্রামে একজন লেখেন, “আমরা এটাকে হাওয়াই চটি বলি। ”
আর বাংলাদেশে আমরা ৬০/৭০ টাকায় অনায়াসেই ভালো মানের এমন চটি কিনতে পারি। ভ্যানের উপর হরহামেশা ঢাকা শহরে বিক্রি হয়। ফুটপাতেও বিক্রি হয়।
জানোউবার ভিডিওতে দেখা যায়, হাতে গ্লাভস পরা এক ব্যক্তি কাচে ঘেরা একটি বাক্স থেকে নীল-সাদা রঙের একটি চটি বের করে তার গুণমান দেখাচ্ছেন। সেটির ফিতা কতটা ভালো, সেটি কতটা নরম…। কাচের বাক্সের ভেতর আরও কয়েক রঙের চটি দেখতে পাওয়া যায়।
জীবনে সফল হতে হলে অবশ্যই ভালো গল্প বলার দক্ষতা থাকতে হবে।
সেলিম হোসেন – ০৯/০৯/২০২৪ ইং
ছবি গুলো প্রতীকী