গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা
সন্ধ্যার পর ভিড় লেগে যায় ঔষধের দোকানে। এর মধ্যে একটি ঔষধ প্রায় সবার হাতেই থাকে। সেটা হল গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ। অনেকে ভুলে যেতে পারেন এই ভয়ে খাবার টেবিলেই ঔষধের পাতা। কেউ কেউ গ্যাস ফর্মের আতঙ্কে থাকেন। তারা তরল সিরাপও রাখেন। এরপর গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকেই যায়।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় যা হয়
বুক জ্বালাপোড়া, পেট ফাঁপা, অরুচি, বদহজম, বুকে বা পেটে ব্যথার মতো অবস্থা তৈরি হয়। কোন কোন সময় বুকের বুকের ডান, বাম বা উভয় পাশেই ব্যাথা হতে পারে। পিঠে ব্যাথা হতে পারে। সকালে ঘুম থেকে উঠার সময় সারা শরীর ব্যাথা চেপে ধরতে পারে। নানান রকম ব্যাথা আর অসস্থি দেখা দেয়।
পড়ুন – বেকিং ডাইনিং টেবিলেই রাখুন। জেনে নিন কত জরুরী এই ন্যাচারাল উপাদান।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা এবং গ্যাসের ঔষধ
দিনের পর দিন খেয়ে যাচ্ছেন গ্যাসের ঔষধ। যারা অন্যান্য অসুখে ঔষধ খান, তারাও প্রতিদিন খান গ্যাসের ঔষধ। কেউ কেউ এভাবে মাসের পর মাস টানা গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেয়ে যান। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন বা টানা গ্যাসের ওষুধ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। গ্যাস্ট্রিকের ঔষধে যে সব ক্ষতি হতে পারে।
ভিটামিনসহ বিভিন্ন খনিজ লবণের ঘাটতি
কিছু ভিটামিন ও খনিজ লবণ (যেমন ভিটামিন বি১২, ফলিক অ্যাসিড, আয়রন) বিপাক প্রক্রিয়ার জন্য অ্যাসিডের দরকার হয়। দীর্ঘদিন গ্যাসের ওষুধ খাওয়ার ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণ অ্যাসিড পাকস্থলীতে তৈরি হয় না। ভিটামিনসহ এসব খনিজ লবণের ঘাটতি দেখা দেয়।
হাড়ক্ষয় রোগ
হাড় তৈরি হওয়ার অন্যতম উপাদান হলো ক্যালসিয়াম। আর ক্যালসিয়াম বিপাকের জন্য দরকার অ্যাসিড। ক্রমাগত গ্যাসের ওষুধ খাওয়ার ফলে শরীরে অ্যাসিডের ঘাটতি হয় এবং ক্যালসিয়ামের অভাবজনিত হাড়ক্ষয় রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
ভিডিও দেখুন – সারা জীবন কিভাবে পেটের যন্ত্রণা মুক্ত থাকবেন।
পাকস্থলীর ক্যানসার হওয়ার প্রবণতা বাড়ে
গ্যাসের ওষুধ খাওয়ায় পাকস্থলীর গ্রন্থি থেকে গ্যাস্ট্রিন নামক হরমোন তৈরির প্রবণতা বেড়ে যায়, যা পাকস্থলীর ক্যানসার হওয়ার অন্যতম কারণ।
সংক্রামক রোগ
বিভিন্ন ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুকে পাকস্থলীর অ্যাসিড ধ্বংস করে। কিন্তু গ্যাসের ওষুধ খাওয়ায় এই ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াগুলো শক্তিশালী হয়ে উঠে সংক্রামক রোগ তৈরি করে।
কিডনি রোগ
বিভিন্ন গবেষণা দেখা গেছে, সারা বছর গ্যাসের ওষুধ খাওয়ায় কিডনির কার্যকারিতা কমে যাওয়ার প্রবণতা অনেক গুণ বেড়ে যায়।
অম্লত্ব বৃদ্ধি
দীর্ঘদিন গ্যাসের ওষুধ খাওয়ার কারণে কিছু কিছু হরমোনের প্রভাবে অ্যাসিড তৈরি হওয়া এতটাই বেড়ে যায়, যে বুকে জ্বালাপোড়ার মতো প্রদাহের পর কোনো গ্যাসের ওষুধ দিয়ে প্রশমিত করা সম্ভব হয় না।
তাহলে উপায় কি ? গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়ার। খুবই সহজ, শুধু জেনে নিন এবং অনুসরণ করুন।
১. খাবার শুরু করবেন একবাটি সালাদ দিয়ে।
২. এরপর সবজি খেলে সব্জির সাথে ভিনেগার মিশিয়ে খেতে পারেন। অথবা খাবারের আগে বা পরে খেতে পারেন।
৩. খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে খাবেন। মুখের মধ্যে খাবার টা চল্লিশ বার চিবাবেন।
৪. খাবারের মাঝখানে কোন পানি খাবেন না। পানি খাবেন খাবার শেষ করার এক ঘণ্টা পর। ৫. মাঝে মাঝে কফি এনেমা করবেন। ৬. খাবার রান্নায় ব্যাবহার করবেন খাটি সরিষার তেল অথবা নারিকেল তেল।
আমরা সবসময়ই খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোন খাবার খাবেন কোন খাবেন না। আবারও মনে করিয়ে দেই। দোকানে পাওয়া কোন কোমল পানীয় খাবেন না। মিষ্টি জাতীয় খাবেন না। যেমন ঃ কেক, মিষ্টি, বিস্কুট ইত্যাদি। চিকেন ফ্রাই, পিজা, ভাজা পোড়া জাতীয় খাবার বর্জন করুন।
পড়ুন – সাস্থ্যকর উপায়ে কিভাবে এক মাসে ১০ কেজি ওজন কমাবেন।
আমাদের কে সুস্থ থাকতে হবে। আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। অসুস্থ মানুষ ঔষধ নিয়েই ব্যস্ত থাকে। একটি গল্প বলি বুঝতে পারবেন।
একজন স্বনামধন্য চিকিৎসক। এক পত্রিকার রিপোর্টার তাকে প্রশ্ন করলেন ” আপনার সুদীর্ঘ পেশাগত জীবনে কি কোন ভুল করেছেন ? ” হ্যা করেছি , চিকিৎসক বললেন। সেই প্রথম দিককার কথা। একজন গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা নিয়ে এসেছিল। তাকে হেলদি লাইফ স্টাইলের কথা বলে দিয়েছি। মাত্র তিন সাক্ষ্যাতেই তাকে রোগ মুক্ত করে দিয়েছি। উনি আজ পর্যন্ত আর আমার সাথে দেখা করেন নি।”
পোস্টটি শেয়ার করতে পারেন সেই সব বন্ধু বা আত্মীয় সজনদের যারা পেটের সমস্যায় ভুগছেন। সেলিম হোসেন – ২৭/০৭/২০২৪ ইং
Reference : Dr Eric berg, Dr Mujibul Haque, Dr Jahangir Kabir, Dr Mujibur Rahman, Dr Mandell, Dr Jason Faung, Dr Sten Ekberg and many medical health journals.