বিশ্ব সেরা দশ গোয়েন্দা সংস্থা
প্রতিটি দেশ জাতীয় নিরাপত্তা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক প্রভাব কে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। এ জন্যই গঠন করে গোয়েন্দা সংস্থা। এই সংস্থা গুলো গোপন কার্যক্রমের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে। এই তথ্য রাষ্ট্রকে শত্রুর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ এবং সামরিক ও কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে। আমরা আজকে বিশ্বের কিছু বিখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থা সম্পর্কে জানব। যারা তাদের কাজের দক্ষতা, দক্ষ পরিচালনা এবং শক্তিশালী গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের জন্য সুপরিচিত।
গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ (CIA)
প্রতিষ্ঠা: ১৯৪৭
ইতিহাস ও ভূমিকা: সিআইএ প্রতিষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর। এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বেসামরিক গোয়েন্দা সংস্থা। এটি বিদেশি গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, গোপন মিশন পরিচালনা এবং সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সিআইএ যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষায় অন্যতম শক্তিশালী সংস্থা। যুদ্ধকালীন গোয়েন্দা তৎপরতা, বৈশ্বিক সন্ত্রাস মোকাবিলা এবং কূটনৈতিক কৌশল বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এ সংস্থা বিশেষভাবে কার্যকর।
দাম্পত্য জীবন কেন অসহ্য, জেনে নিন কারন গুলো
গোয়েন্দা সংস্থা এমআই৬ (MI6)
সংস্থার পূর্ণ নাম: Secret Intelligence Service (SIS)
প্রতিষ্ঠা: ১৯০৯
ইতিহাস ও ভূমিকা: এমআই৬
এমআই৬ যুক্তরাজ্যের প্রধান আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থা। সংস্থাটি ব্রিটিশ সরকারের জন্য বিদেশি গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমে কাজ করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই এমআই৬ কার্যক্রম শুরু করে। তারপর থেকে আজ অবধি ব্রিটেন কে বহিঃ রাষ্ট্রের হুমকি থেকে নিরাপদ রেখেছে।
কার্যক্রম: বিশ্বযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে গোপন মিশন পরিচালনা এবং ইরাক যুদ্ধসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক মিশনে এমআই৬-এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এছাড়াও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনায় সংস্থাটি অত্যন্ত দক্ষ।
গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ (Mossad)
দেশ: ইসরায়েল
সংস্থার পূর্ণ নাম: The Institute for Intelligence and Special Operations
প্রতিষ্ঠা: ১৯৪৯
ইতিহাস ও ভূমিকা: সারা বিশ্বে মোসাদ তার কার্যক্রম দিয়ে আলোচনায় এসেছে। তাদের কার্যক্রম সাহসী প্রক্রিয়ায় পরিচালনা করে। মোসাদ ইসরায়েলের মূল গোয়েন্দা সংস্থা । এটি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও অত্যন্ত প্রভাবশালী। সংস্থাটি প্রধানত সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম, বিদেশি গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করে।
কার্যক্রম: ১৯৭২ সালে অলিম্পিকে এক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। এই হত্যাকাণ্ডের আসামীদের ধরতে তৎপর হয় মোসাদ। তারা পরিচালনা করে ‘অপারেশন র্যাথ অফ গড’। যেখানে তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেয়। এছাড়াও ইরান, সিরিয়া, এবং অন্যান্য মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক দেশগুলোকে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে সংস্থাটি।
ঔষধ ছাড়াই হাইফো থাইরয়েড থেকে চির মুক্তি জেনে উপায়।
গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই (ISI)
দেশ: পাকিস্তান
সংস্থার পূর্ণ নাম: Inter-Services Intelligence
প্রতিষ্ঠা: ১৯৪৮
ইতিহাস ও ভূমিকা: পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই । এটি পাকিস্তানের নিরাপত্তা এবং কৌশলগত স্বার্থে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে। আফগান যুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় আইএসআই সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে মুজাহিদিনদের সহায়তা করেছে।
কার্যক্রম: কাশ্মীর ইস্যু, আফগানিস্তানের রাজনীতি এবং সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমে আইএসআই-এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংস্থাটি বিভিন্ন সময়ে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কেও গভীর প্রভাব ফেলেছে।
গোয়েন্দা সংস্থা র (RAW)
দেশ: ভারত
সংস্থার পূর্ণ নাম: Research and Analysis Wing
প্রতিষ্ঠা: ১৯৬৮
ইতিহাস ও ভূমিকা: ভারতের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’। ভারতীয় স্বার্থ রক্ষায় এবং বিদেশি গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে বিশেষভাবে কাজ করে। “র” প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৬২ সালে চীন-ভারত যুদ্ধ এবং ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর। এরপর ভারত তার নিরাপত্তা এবং প্রতিবেশী দেশ গুলোর খবরদারি করতে র কে ব্যাবহার করছে।
কার্যক্রম: কাশ্মীর ইস্যু, সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সংস্থাটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া আঞ্চলিক নিরাপত্তা বজায় রাখতেও র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
ন্যাচারাল উপায়ে একমাসে ১০ কেজি ওজন কমাতে চান, জেনে নিন উপায়
গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি ( KGB )
দেশ: রাশিয়া
সংস্থার পূর্ণ নাম: Federal Security Service
প্রতিষ্ঠা: ১৯৯৫
ইতিহাস ও ভূমিকা: আজকের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এক সময় কেজিবির প্রধান ছিলেন। কেজিবি থেকে উদ্ভূত এফএসবি রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা হিসেবে কাজ করে। এটি রাশিয়ার সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম, গুপ্তচরবৃত্তি এবং রাজনৈতিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে।
কার্যক্রম: আন্তর্জাতিক স্তরে এফএসবি বিশেষ করে রাশিয়ার স্বার্থ রক্ষায় এবং বিদেশি হুমকি মোকাবিলায় কাজ করে আসছে। এটি রাশিয়ার গোপন তথ্য রক্ষা এবং শত্রুদের মোকাবিলা করতে অত্যন্ত দক্ষ।
গোয়েন্দা সংস্থা এমএসএস (MSS)
দেশ: চীন
সংস্থার পূর্ণ নাম: Ministry of State Security
প্রতিষ্ঠা: ১৯৮৩
ইতিহাস ও ভূমিকা: অন্যান্য দেশের মত চীনেরও রয়েছে শক্তিশালী গোয়েন্দা বিভাগ। যার সংক্ষিপ্ত নাম MSS। দেশের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে। এটি বিশেষত বিদেশি গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং চীনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে।
কার্যক্রম: MSS চীনের অর্থনৈতিক গুপ্তচরবৃত্তি, কৌশলগত গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনায় অত্যন্ত সক্রিয়। এটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চীনা স্বার্থ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএসই (DGSE)
দেশ: ফ্রান্স
সংস্থার পূর্ণ নাম: General Directorate for External Security
প্রতিষ্ঠা: ১৯৮২
ইতিহাস ও ভূমিকা: ফ্রান্সের গোয়েন্দা সংস্থা নাম General Directorate for External Security। ফ্রান্সের এই প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা মূলত বিদেশি গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমে কাজ করে। ইউরোপের মধ্যে অন্যতম প্রভাবশালী সংস্থা হিসেবে ডিজিএসই বিশ্বব্যাপী ফ্রান্সের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছে।
কার্যক্রম: ডিজিএসই ইউরোপীয় এবং মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করেছে। এছাড়াও ফ্রান্সের বৈশ্বিক কূটনৈতিক এবং সামরিক কৌশল বাস্তবায়নে এ সংস্থার বড় ভূমিকা রয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থা বিএনডি (BND)
দেশ: জার্মানি
সংস্থার পূর্ণ নাম: Bundesnachrichtendienst
প্রতিষ্ঠা: ১৯৫৬
ইতিহাস ও ভূমিকা: বিএনডি জার্মানির বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা এবং এটি ইউরোপে অন্যতম প্রভাবশালী গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক হিসেবে বিবেচিত। সংস্থাটি জার্মানির নিরাপত্তা, সামরিক এবং অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে থাকে।
কার্যক্রম: বিএনডি মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা এবং ইউরোপে সন্ত্রাসী কার্যক্রম মোকাবিলায় সক্রিয়ভাবে কাজ করে আসছে। এছাড়াও জার্মানির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও কূটনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
গোয়েন্দা সংস্থা এনআইডি (NID)
দেশ: উত্তর কোরিয়া
সংস্থার পূর্ণ নাম: National Intelligence Service
প্রতিষ্ঠা: ১৯৫১
ইতিহাস ও ভূমিকা: উত্তর কোরিয়ার স্বৈরশাসক নির্ভর করে এই গোয়েন্দা সংস্থার উপর। তারা তাকে খুব ভালো সাপোর্ট দিচ্ছে। উত্তর কোরিয়ার এই গোপনীয় সংস্থা বিদেশি গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং দেশটির আভ্যান্তরিন স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করে। এনআইডি অন্যান্য দেশের গুপ্তচরবৃত্তি এবং আন্তর্জাতিক হুমকির বিরুদ্ধে সতর্ক নজরদারি পরিচালনা করে।
কার্যক্রম: এনআইডি দক্ষিণ কোরিয়া এবং পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি এবং কৌশলগত তথ্য সংগ্রহের কাজে বিশেষভাবে জড়িত। এছাড়া আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমেও এটি সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
আমরা সেরা বিশ্বের সেরা গোয়েন্দা সংস্থা গুলোর কাজ সম্পর্কে জানতে পারলাম। বিশ্বের এই বিখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের নিজ দেশের জাতীয় স্বার্থ, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং বৈশ্বিক ক্ষমতা রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এদের দক্ষতা, কর্মপরিধি এবং গোপন মিশনের মাধ্যমে তারা বিশ্বের নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করে আসছে।
গোয়েন্দা গল্প আপনার কোন উপকারে লাগতে পারে।
সেলিম হোসেন – ০৮/১০/২০২৪ ইং – ছবি গুলো প্রতীকী