কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয়
আজকের লাইফ স্টাইলে যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য আছে, তেমনি আগেকার দিনেও ছিল। তখনকার সময়ে বেশিরভাগ মানুষ সাধারনত বাড়ির বাইরে ক্ষেত খামারে মলত্যাগ করত। শৌচ কাজ করতে সাথে নিত মাটির তৈরি বদনা। হাঁটু ভেঙে বসে পড়ত জমির উপর। পাছা টা জমি থেকে কিছুটা উঁচুতে থাকত। মাথা দুই হাঁটুর মাঝে ঢুকিয়ে দিয়ে হাত দুটো রাখত মাটির বদনার উপর। কোষ্ঠকাঠিন্য যাদের তারা মলত্যাগ করতে সময় নিত।
নিঃশ্বাস বন্ধ করে পেটে চাপ দিয়ে চলত কোঁতাকুতি। কপালে জমে যেত বিন্দু বিন্দু ঘাম। এভাবেই কোন কোন সময় হাতের চাপে মাটির বদনা ভেঙে যেত। কিন্ত মল বের হত না। এখন স্যানিটারি টয়লেট, হাই কমোড, লো কমোড অনেক কিছু আছে। কিন্ত কোষ্ঠকাঠিন্যের যন্ত্রণা রয়েই গেছে। তো এই কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয় ?
খুব দ্রুত ওজন কমাবে কিভাবে ? জেনে নিন উপায়।
প্রথম বিষয় হল খাবার। যে খাবার গুলো কোষ্ঠকাঠিন্য তৈরি করে যেমন – বার্গার, পুরি, সিঙ্গারা, চিকেন ফ্রাই, বিস্কুট, চানাচুর, কেক এবং অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল খাবার। সহজভাবে বলতে গেলে সব আলট্রা প্রসেসড খাবারই কোষ্ঠকাঠিন্য তৈরি করে। । কিছু কিছু ক্ষেত্রে বংশগতভাবেই এ সমস্যা হতে পারে।
এর কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা টয়লেটে বসে থেকেও পেট পরিষ্কার হয় না, যা যন্ত্রণাদায়ক ও বিরক্তিকর বটেও। কারও মলত্যাগ যদি সপ্তাহে দু-তিনবার হয় অথবা পরিমাণে খুব কম হয়, অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টা করেও মলত্যাগ না হয়। মল অস্বাভাবিক রকমের শক্ত বা শুকনো হয়। এ অবস্থাকে কোষ্ঠকাঠিন্য হিসেবে বিবেচিত করা হয়। এ অবস্থা যদি তিন মাসের মতো হয়, তাহলে তাকে দীর্ঘমেয়াদি কোষ্ঠকাঠিন্য বলে।
সব বয়সেই এমন সমস্যা হতে পারে। বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। কারও ক্ষেত্রে যদি রক্তশূন্যতা দেখা দেয় অথবা মল কালো হয়, তাহলে বুঝতে হবে মারাত্মক কোনো সমস্যা হয়েছে। তখন বিলম্ব না করে দ্রুতই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
হু হু করে বাড়ছে কিডনি রোগী। আজীবন যেভাবে কিডনিকে সুস্থ রাখবেন।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ১০ টি উপায়
১. ইসব গুলের ভুসি
এতে ইসবগুলের ভুসিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ, যা অন্ত্রের মধ্যে গিয়ে পানি শোষণ করে খাবারের অবশিষ্ট অংশের সঙ্গে মিশে নরম মল তৈরি করে। প্রতিদিন সকালে ও রাতে খাবারের পর এক গ্লাস পানিতে ১-২ চামচ ইসবগুলের ভুসি গুলিয়ে খেতে পারেন। বড় একগ্লাস পানি নিবেন। তাতে ভুসি ঢেলে দিন। এরপর ভালোভাবে নাড়াচাড়া করে পানির সাথে মিশিয়ে দিন। দেরি না করে খেয়ে ফেলুন। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ইসবগুলের ভুসি দারুণ কার্যকর।
২. নির্দিষ্ট সময়ে মলত্যাগ
প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই মলত্যাগের অভ্যাস করুন। সঠিক সময়ে মলত্যাগ না করার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা হতে পারে। মলত্যাগের বেগ এলে চেপে রাখবেন না। এতে মল থেকে অন্ত্রের গায়ে পানি শোষণ হতে থাকে এবং মল শুকিয়ে যায়। ফলে কোষ্ঠাকাঠিন্যের সমস্যা বাড়তে থাকে। তাই প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে মলত্যাগের চেষ্টা করুন।
বিজ্ঞানের অবাক করা আবিস্কার স্টেম সেল। মৃত মানুষ জীবিত হবে !!
৩. মলত্যাগের সময় সঠিকভাবে বসা
কারও কারও বদ অভ্যাস আছে টয়লেটে মোবাইল দেখা বা পত্রিকা পড়া। কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে এমন টা করা যাবেনা। যাদের সমস্যা নাই তারও এই কুকর্ম করবেন না। কারণ, এতে মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং দীর্ঘ সময় মলত্যাগের অভ্যাস গড়ে ওঠে। মলত্যাগের সময় সঠিকভাবে বসা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য হাইকমোডের থেকে লো কমোড ব্যবহার করা ভালো। এতে সঠিকভাবে বসা যায়। তবে কেউ যদি লো কমোড ব্যবহার না করতে পারেন, তাহলে হাইকমোড ব্যবহারের ক্ষেত্রে পায়ের নিচে একটি টুল দিয়ে নিতে পারেন।
৪. নিয়মিত ব্যায়াম করা
অলসতাপূর্ণ জীবনযাপন কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যতম কারণ। এ জন্য নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এতে করে খাবার মেটাবোলিজম ভালোভাবে হবে। অন্ত্রের পেশির কার্যক্ষমতা বেড়ে যাবে। ফলে মল পায়ুপথের দিকে এগিয়ে যাওয়ার গতি বাড়ানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
মন খারাপ ? কেন খারাপ জানেন না। মন ভালো করার উপায় জেনে নিন।
৫. বিশুদ্ধ পানি পান
শরীরে পানিশূন্যতার জন্য কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। ফাইবার গ্রহণের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পরিমাণে পানি পান করতে হবে। কারণ, ফাইবার শরীর থেকে পানি শোষণ করে নরম মল তৈরি করে। তাই প্রতিদিন অন্তত ২-৩ লিটার পরিমাণ পানি পান করতে হবে।
৬. লেবুর রস
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে লেবুর পানি খুব উপকারী। লেবুতে থাকা সাইট্রিক এসিড পরিপাকতন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ানোসহ শরীর থেকে দূষিত উপাদান বের করতে সহায়তা করে। এ জন্য একটি লেবু কেটে রস বের করে এক গ্লাস অল্প গরম পানির সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে পান করতে হবে। তবে লেবুর সঙ্গে চিনি মেশানো যাবে না। প্রতিবার খাবার গ্রহনের শেষে ১/২ টুকরো লেবুর রস খাবেন।
প্রেমের বিয়ে তারপরেও কেন স্ত্রীর হাতে খুন হচ্ছেন স্বামীরা।
৭. ম্যাগনেসিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়া
যেসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে, সেগুলো বেশি বেশি খেতে হবে। কারণ, ম্যাগনেসিয়াম অন্ত্র থেকে পানি শোষণ করার মাধ্যমে নরম মল তৈরি করে। ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারে রয়েছে—গাঢ় সবুজ রঙের শাকসবজি, অ্যাভোকাডো, কুমড়োর বিচি, বাদাম, তিসি, চিয়া বীজ, ডাল, মটরশুঁটি ইত্যাদি।
৮. কিশমিশ খাবেন
কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রতিকার ও প্রতিরোধে যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা পালন করে কিশমিশ। কারণ, এটি খুব মজাদার ও পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাবার। যা হজমের সমস্যা দূর করে। কয়েকটি কিশমিশ রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমাধানসহ অ্যাসিডিটি দূর করে এবং শরীরে ক্যালরি সরবরাহ করে।
৯. আপেল সিডার ভিনেগার
খাবার গ্রহনের পূর্বে এককাপ পানিতে একচামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে খাবেন। ভিনেগার পেটের এসিডিক পরিবেশ উন্নত করবে, খাবার ভালোভাবে হজম হবে।
১০. খাবার চিবিয়ে খাওয়া
খুব ভালোভাবে মনে রাখবেন। খাবার চিবিয়ে খেতে হবে। চিবিয়ে চিবিয়ে মুখের ভিতরেই খাবারকে তরলে পরিনত করে পেটে পাঠাতে হবে। খাবার ধীরে ধীরে চিবিয়ে খাওয়ার কোন বিকল্প নেই।
জীবনে সফল হতে কেন পিছনে তাকাবেন না। অরফিয়াস পিছনে তাকালেন কেন ?
কোষ্ঠকাঠিন্যের গল্প
শীতের রাত। রেহান এবং কাবির দুই বন্ধু লেপের নিচে শুয়ে আছে। বেশী শীতের কারনে মাথা পর্যন্ত ঢাকা। রেহানের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা। গত তিন দিন যাবত মলত্যাগের ঘটনা ঘটেনি। হঠাৎ রেহানের পায়ু পথ দিয়ে বাতাস ( পাদ ) বেড়িয়ে গেল। দুর্গন্ধ থেকে বাঁচতে রেহান লেপের বাইরে মুখ বের করে বলল – জায়েদ খান।
বিটকেল গন্ধে কাবিরের প্রান যায় যায় অবস্থা। এমন সময় রেহান আবারও বায়ু ত্যাগ করল। লেপের বাইরে মুখ বের করে বলল – জায়েদ খান। কাবির অসহনীয় অবস্থায় পরল। প্রচণ্ড বিরক্ত কাবির প্রতিশোধ নিতে নিজেও বায়ু ত্যাগের চেষ্টা করতে থাকল।
এমন সময় আবারও রেহান ফুস শব্দে বায়ু ত্যাগ করল। যথারীতি লেপের বাইরে মুখ বের করে বলল – জায়েদ খান। লেপের নিচে দুর্গন্ধযুক্ত এসিডিক পরিবেশ। রাগ আর ঘৃণায় কাবিরের গা রি রি করতে লাগল। চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকল বায়ু ত্যাগের।
কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ে কি বলছেন ডাঃ এরিক বারগ।
খানিক পরে কাবির লেপের বাইরে মুখ বের করে বলে উঠল – হিরো আলম।
হঠাৎ গায়ে হাল্কা গরম কিছু অনুভুত হল রেহানের। নিজের হাত টা এগিয়ে দিল সেদিকে। হাতে আঠাল কিছু লাগতেই রেহান চেঁচিয়ে উঠল। কি রে আমার হাতে কি লাগল ?
বন্ধু পায়খানা করে ফেলেছি – বলল কাবির।
সেলিম হোসেন – তাং ২৮/০১/২০২০৫ ইং – প্রতীকী ছবি গুলো পেক্সেল থেকে নেয়া।
Reference : Dr Eric berg, Dr Mujibul Haque, Dr Jahangir Kabir, Dr Mujibur Rahman, Dr Mandell, Dr Jason Faung, Dr Sten Ekberg and many medical health journals.