সংঘাতে কাশ্মীরে নিহত ২৬ জন
কাশ্মীর—পৃথিবীর ভূস্বর্গ—একদিকে যেমন অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি, তেমনই অন্যদিকে দীর্ঘ কয়েক যুগের রাজনৈতিক সংঘাত, দুঃখ ও নৃশংসতার প্রতীক। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের মতো, কাশ্মীরিদের জীবনেও রক্ত, আত্মত্যাগ এবং ভালোবাসার অসংখ্য গল্প রচিত হয়েছে। এই সংঘাতের মূল কারণ ও এর মানবিক মূল্য বুঝতে হলে আমাদের ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকাতে হবে।
ইতিহাসের প্রেক্ষাপট: ১৯৪৭ সালের বিভাজন
১৯৪৭ সাল পর্যন্ত প্রায় ৫০০ দেশীয় রাজ্য ব্রিটিশ সার্বভৌমত্বের অধীনে ছিল, যার মধ্যে কাশ্মীর ছিল বৃহত্তম। এই রাজ্যটি প্রধানত মুসলিম অধ্যুষিত হলেও শাসন করতেন হিন্দু মহারাজা হরি সিং। জনপ্রিয় কাশ্মীরি নেতা শেখ আব্দুল্লাহ ভারত ও পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে কাশ্মীরকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে চেয়েছিলেন।
ভারত যখন স্বাধীনতার আলো দেখল, তখন হরি সিং এবং শেখ আব্দুল্লাহ কাশ্মীরের ভাগ্য নির্ধারণের জন্য সময় চাইলেন। কিন্তু ১৯৪৭ সালের অক্টোবরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সমর্থনে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের লোকেরা কাশ্মীরে অভিযান শুরু করলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়।
দ্রুত ওজন কমাতে যে সাস্থ্যকর উপায় অবলম্বন করবেন।

জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ ও নিয়ন্ত্রণ রেখা
অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে মহারাজা হরি সিং ভারতে যোগ দেওয়ার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। শেখ আব্দুল্লাহ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নেহরুর বন্ধু হওয়ায় এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন।
জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে ১৯৪৯ সালের জানুয়ারিতে যুদ্ধ থামে। জাতিসংঘ একটি যুদ্ধবিরতি রেখা (Ceasefire Line) তৈরি করে, যা আজও কাশ্মীরকে পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর এবং ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বিভক্ত করে রেখেছে। বর্তমানে এই রেখাটি লাইন অফ কন্ট্রোল (LOC) নামে পরিচিত। জাতিসংঘ এই সমস্যা সমাধানের জন্য কাশ্মীরি জনগণের মতামতের ভিত্তিতে একটি গণভোটের (Plebiscite) অনুমোদন দিলেও তা কখনোই কার্যকর হয়নি।
পরকীয়া কি ? মানুষ কেন এই বিপদে পা দেয়।

রাজনৈতিক অধিকারের বিলুপ্তি ও সংঘাতের জন্ম
হরি সিংয়ের অন্তর্ভুক্তির চুক্তিতে কাশ্মীরকে বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হয়েছিল। ভারতের নিয়ন্ত্রণে ছিল শুধু প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র এবং টেলিযোগাযোগ। কাশ্মীরের নিজস্ব সংবিধান, পতাকা এবং স্থানীয়ভাবে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী বলার অধিকার ছিল।
কিন্তু এই স্বায়ত্তশাসন বেশিদিন টেকেনি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ ভূমিসংস্কার ব্যবস্থা বাস্তবায়ন এবং স্বাধীন কাশ্মীরের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলায় ১৯৫৩ সালে ভারত সরকার তাকে কারাগারে পাঠায়। পরবর্তী দশকগুলোতে ভারত সরকার কাশ্মীরে পুতুল সরকার বসায় এবং আইনগতভাবে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা ধীরে ধীরে ভেঙে দিতে থাকে। কাশ্মীরি জনগণের অধিকার বারবার অগ্রাহ্য করা হয়।
ছাগল নিয়ে তুলকালাম বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে।

ক্ষোভের বিস্ফোরণ ও গেরিলাদের উত্থান
দীর্ঘ ২০ বছর কারাগারে থাকার পর শেখ আব্দুল্লাহ মুক্তি পান, কিন্তু তাকে এমন একটি আপস রফায় স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয় যেখানে তিনি জাতিসংঘের গণভোটের দাবি ছেড়ে দেন।
শেখ আব্দুল্লাহর মৃত্যুর পাঁচ বছর পর, ১৯৮৭ সালে রাজ্যে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ ওঠে। বিরোধী দলীয় প্রার্থীদের গ্রেফতার করা হয় এবং তাদের সমর্থকদের উপর হামলা চলে। ইয়াসিন মালিকের মতো তরুণ নেতারা, যারা গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ছিলেন, ব্যাপক সমর্থন লাভ করেন। কাশ্মীরিদের প্রতি ভারতের আচরণের প্রতিবাদে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ আগ্নেয়গিরির মতো বিস্ফোরিত হয়।
১৯৮৮ সালের শেষভাগ থেকে ১৯৮৯ সালের মধ্যবর্তী সময়ে তরুণ গেরিলারা গোপনে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ১৯৯০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে কাশ্মীর জুড়ে ভয়াবহ নির্মমতা চালায় ভারতীয় সৈন্যরা। স্বাধীনতাকামী কাশ্মীরিদের মিছিলে গুলি চালানো হয় এবং হাজার হাজার মানুষ নিহত হন, বহুজনকে গ্রেফতার করা হয়।
কাশ্মীরের প্রচলিত কথায় তার আঁচ পাওয়া যায়: “সূর্যাস্তের সময় যদি আকাশে লালিমা দেখা যায়, তবে তারা বলে, কোথাও খুন হয়েছে।”
দ্রুত ওজন কমাতে যেভাবে খাবেন বুলেট কফি।

মানবতা ও আত্মত্যাগ: আদিল হুসেনের গল্প
ভূস্বর্গ কাশ্মীরে সংঘাতের এই দীর্ঘ ইতিহাসে বারবার উঠে এসেছে মানবতা ও আত্মত্যাগের করুণ গল্প। ২০২২ সালের ২২শে মে দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার পেহেলগামের বাইসারন উপত্যকার এক ঘটনা তেমনই এক সাক্ষ্য বহন করে।
প্রতিদিনের মতো কাশ্মীরি যুবক সৈয়দ আদিল হুসেন শাহ তাঁর ঘোড়া নিয়ে পর্যটকদের উপত্যকা ঘোরানোর কাজে ব্যস্ত ছিলেন। হঠাৎ গুলির শব্দ শুনে তিনি দেখেন কয়েকজন বন্দুকধারী পর্যটকদের দিকে অস্ত্র তাক করে আছে। নিজের জীবনের তোয়াক্কা না করে আদিল দ্রুত বন্দুকধারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি একজন বন্দুকধারীর কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন এবং ধ্বস্তাধ্বস্তি শুরু করেন।
আদিলের এই অদম্য প্রতিবাদের ফলে বন্দুকধারীরা তাকে গুলি করে হত্যা করে। কিন্তু আদিলের অল্প সময়ের এই প্রতিরোধ বেশ কয়েকজন পর্যটককে পালাতে এবং নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে সাহায্য করে। আদিল সেই পর্যটকদের পরিচিত বা আত্মীয় ছিলেন না, তবুও তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তাদের জীবন বাঁচাতে। তাঁর আত্মত্যাগের এই খবর উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন আদিল। তাঁর মা-বাবা, স্ত্রী এবং ছোট ভাইদের জন্য তাঁর চলে যাওয়া এক অপূরণীয় ক্ষতি। কাশ্মীরের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ এই সাহসিকতার প্রশংসা করে বলেন, “শুনেছি তার প্রাণ এমনি এমনি যায়নি। সাহসিকতার সঙ্গে এই হামলা ঠেকানোর চেষ্টা করছিলেন তিনি।”
ঢাকাইয়া দোকানদার ক্রেতার মহা বিরক্ত।

উপসংহার
আদিল হুসেন শাহ কাশ্মীরি জনগণের প্রতিচ্ছবি—শান্ত, নম্র এবং মানবিক। এই অঞ্চলটি আজও রক্ত ঝরানো সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের মাঝে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলার মধ্যেই কাশ্মীরিরা শয়ে শয়ে নিহত হচ্ছে। ঝিলাম, সুরু, বা ইন্দাস নদীর জল আবারও আদিলদের রক্তে লাল হচ্ছে।
কাশ্মীরি জনগণের আত্মত্যাগ, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বঞ্চনা এবং অবিচার এই অঞ্চলের সংঘাতের প্রধান চালিকা শক্তি। কাশ্মীর তখনই শান্ত হবে যখন এর জনগণের রাজনৈতিক অধিকারকে সম্মান জানানো হবে এবং মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সংঘাতের দীর্ঘমেয়াদি সমাধান সূত্র খুঁজে বের করা হবে।
কাশ্মীর কিভাবে মুসলিম দেশ হয়ে উঠল। ভিডিও দেখুন।

ব্লগ পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করে দিন। সেলিম হোসেন – তাং ০২/০৫/২০২৫ ইং – ছবি গুলো পেক্সেল থেকে নেয়া।









