ওজন বাড়লে কি সমস্যা
হঠাৎ কোন কিছু মনে করতে কষ্ট হচ্ছে। আগে তো এমন হত না ? এখন কেন হচ্ছে ! ওজন টা মেপে দেখুন, বেড়ে গেছে। ওজন বেড়ে গেলে অনেকেরই এমন হয়। বলছি মেদ জমে শরীরের ওজন বৃদ্ধির কথা।
১. সবাই বলে মাসল বাড়াও। কেন, মাসল বাড়াতে হবে কেন ? কারন মাসল খুব দ্রুত গতিময় ছন্দে এনার্জি বার্ন করে। কিন্ত আমরা যেটা জানিনা সেটা হল আমাদের ব্রেইনের এনার্জি ডিমান্ড অনেক বেশি। শরীরের যে অংশ সবচে দ্রুত এনার্জি বার্ন করতে পারে সেটা হচ্ছে ব্রেইন।
ওজন বাড়লে সাথে সাথে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ে। ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স আমাদের ব্রেইনকে ধারাবাহিক গ্লুকোজ হাইপোমেটাবলিজমের মধ্যে রেখে দেয়। অর্থাৎ ব্রেইনের গ্লুকোজ ব্যবহার করার ক্ষমতাই কমে যেতে থাকে। মেডিক্যাল সায়েন্সে মাত্র বিশ বছর আগেও মনে করা হত ব্রেইন টিস্যুর কখনো ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হয় না। কিন্তু গত পাচ বছরে এই ব্যাপারে বেশ কিছু নতুন রিসার্চ প্রকাশিত হয়েছে, এই তথ্যটা একদম নতুনই বলা চলে।
২. যুগের সাথে তাল মেলাতে আমাদের অনেক কিছু শিখতে হয়। তা নাহলে চাকরি ক্ষেত্রে বা ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পরি। কিন্ত শিখতে গেলেই অলসতা অনীহা। কেন এমন হচ্ছে। ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স আমাদের ব্রেইনের সেলুলার লেভেল এইজিং বা বুড়িয়ে যাবার প্রবনতা বাড়িয়ে দেয়। ওজন বাড়লে সাথে সাথে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ে, তাই আমাদের ব্রেইন দ্রুত বুড়ো হয়। ফলে আমাদের দ্রুত শেখার ক্ষমতা হ্রাস পায়। তাই আমাদের ব্রেইন কষ্ট করতে চায় না।
৩. প্রতিনিয়ত আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকম হরমোন নিঃসৃত হয়। তার মধ্যে মনে সুখী ভাব আনতে দরকার ডোপামিন। ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হলে আমাদের ব্রেইনের ডোপামিন প্রোডাকশন-এক্টিভেশান, দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের জন্য ডোপামিন ব্যবহার যেমন কম্প্রোমাইজড হয়।
তেমনি ডোপামিন এক্টিভেশান কম হলেও মানুষ ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্ট হয়ে পড়তে পারেন। মানে একটা আরেকটার অবস্থা ক্রমেই খারাপ করতে থাকে।
এই ৩টা ইফেক্টের সাথে আরো ৫টা জিনিস সরসরি জড়িত। বি-১, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন ডি, আয়োডিন ও ওমেগা-৩ ডেফিসিয়েন্সি, সবগুলোই অপেক্ষাকৃত বেশি ওজনের মানুষে বেশি থাকে।
ওজন বাড়লে আরও কি কি সমস্যা হয়
১. যাদের ওজন বেড়েছে তারা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এ আছেন। এটা ডায়াবেটিকস এর লক্ষন। আর ডায়াবেটিকস হয়ে গেলে অন্যান্য অসংক্রামক রোগ গুলো এমনিতেই চলে আসে। যেমন, কিডনি ডিজিস, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি। অতএব ওজন কমাতে হবে।
২. ওজন বেড়ে গেলে স্ত্রীকে বিছানায় আর আগের মত ভালো লাগবে না। শরীর তখন সারা দিবে না। আগের মত তৃপ্তি আসবে না বিছানায়। মিলনকালীন সময় কমে যাবে। অনুরুপ কথা স্ত্রীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ভালবাসা অক্ষুন্ন রাখতে ওজন কমাতে হবে। সংসারে শান্তি থাকবে, সংসার টিকে থাকবে।
৩. শরীর ম্যাজ মাজ করবে, কাজকর্মে অলসতা আসবে, অকারনে মেজাজ গরম হবে। দিনের বেলায় বা অসময়ে ঘুম চাপবে।
৪. পছন্দের পোশাক পরা যাবে না, পরলেও তা মানাবে না। থলথলে শরীর বা মেদ ভুরিতে কোন পোশাকই মানায় না। পোশাক টাইট হলে হাঁসফাঁস লাগে।
৫. ঘুম থেকে উঠার পর ফ্লোরে পা রাখতে গেলে গোড়ালিতে ব্যাথা লাগবে। কোমর ব্যাথা দেখা দেয় অনেকেরই। আরও অনেক অনেক সমস্যা আছে।
ওজন বাড়লে, স্মৃতি শক্তি কমে গেলে চলবে না, বাড়াতে হবে। কিভাবে বাড়াবেন, জেনে নিন।
১. প্রথমত দেখুন থাইরয়েড নিয়ন্ত্রনে আছে কিনা ? যদি থাইরয়েড অস্বাভাবিক হয় তাহলে বাসা থেকে সব রাসায়নিক কসমেটিক ডাস্টবিনে ফেলে দিন। হেলদি লাইফ স্টাইল অনুসরণ করুন। নিয়মিত ব্যায়াম করুন, গায়ে রোদ লাগান ৩০-৪০ মিনিট প্রতিদিন। নিয়মিত স্পিরুলিনা ক্যাপসুল খাবেন। এরপরেও থাইরয়েড নিয়ন্ত্রনে না আসলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
২. ইন্দানিং প্রায় সব মেডিক্যাল সেন্টারেই পাবেন Homa IR টেস্ট। ওজন বাড়লে Homa IR করে নিন, নিশ্চিত হোন আপনার ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স আছে কিনা। ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স থাকলে তা দূর করার জন্য লো কার্ব ডায়েট ও ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করুন। পাশাপাশি প্রয়োজন ভালো ঘুম, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম।
৩. ওজন বাড়লে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড খাওয়াটা বাড়িয়ে দিন। ডিমের কুসুম, ইলিশ মাছের ডিম, সামুদ্রিক মাছ, নদীর তৈলাক্ত মাছ এক্ষেত্রে সেরা উৎস।
৪. আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ভিটামিন ডি নিন, সুযোগ পেলেই কাঠবাদাম, পনির, টকদই কলিজা খান।
৫. ওজন বাড়লে দোকানের খাবার খাওয়া বন্ধ করুন। কারন এতে ব্যাবহার করা হয় চিনি। কেক, বার্গার, ফ্রায়েড চিকেন, সফট ড্রিঙ্ক, ডায়েট পানীয় সব গুলো বাজে খাবার।
৬. ওজন বাড়লে সোশ্যাল এপে ঘোরাঘুরি একে বারেই কমিয়ে দিন। সকাল ৯ টার আগে এবং রাত ৯ টার পরে কোন ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসে হাত দিবেন না। রুমের সব বাতি নিভিয়ে, রুম অন্ধকার করে রাত ১০ দশটার মধ্যে ঘুমাতে যাবেন। ভোর ৫ টায় ঘুম থেকে উঠবেন।
৭. ওজন বাড়লে নিয়মিত জিমে যান, ওজন নিন। ওজন ট্রেইনিং করে মাসল বিল্ডিং করুন। নিয়মিত শারীরিকভাবে কষ্টকর কাজ করুন। এসব নিয়ম যদি ৬ মাস অনুসরণ করা যায়, তাহলে মেমরি আগের অবস্থায় ফিরে আসে। চেষ্টা করুন সবই হাতের নাগালে।
যদি তাতেও কাজ না হয় শুধু তখনই নিজের থাইরয়েড প্যানেল, CBC, Ferritin, Vitamin D, Homa IR, Random Insulin ইত্যাদি চেক করে ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্টের সঙ্গে কথা বলুন। তবে বেশিরভাগ মানুষেরই প্রথমেই ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্টের কনসাল্টেশান নেয়ার প্রয়োজন নেই, আগে প্রয়োজন ওপরের নিয়মগুলো মেনে চলার।
অনেকেই বিএমআই নিয়ে খুবই চিন্তিত। সাস্থ্য ক্ষেত্রে বি এম আই একটি পুরাতন কনসেপ্ট। শরীর যদি সুস্থ থাকে এবং মাংস পেশীর কারনে যদি ওজন বাড়ে তবে কোন সমস্যা নেই বরং ভাল।
সেলিম হোসেন – তাং ১৮/১১/২০২৪ ইং – ছবি গুলো প্রতীকী
Reference : Dr Eric berg, Dr Mujibul Haque, Dr Jahangir Kabir, Dr Mujibur Rahman, Dr Mandell, Dr Jason Faung, Dr Sten Ekberg and many medical health journals.