আফটার দ্যা প্রফেট
লেখিকা – লেজলি হেইজেলটন
জন্ম ইংল্যান্ডে ১৯৪৫ সালে। পেশা সাংবাদিকতা । ১৯৬৬ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত জেরুজালেম থেকে রিপোর্ট করেছেন। টাইম পত্রিকায়। আরও বিশ্বের সেরা সেরা পত্রিকায়ও লিখেছেন।
ধর্মে ইহুদি, নিজেকে বলেন আজ্ঞেয়বাদি।
২০১১ সালে সাহিত্যে জিনিয়াস এওয়ার্ড পান।
বইটি লেখা হয়েছে মুহাম্মদ ( সঃ ) এর অফাত এবং অফাত পরবর্তী সময় থেকে নিয়ে হুসাইন ( রাঃ ) এর শাহাদত বরণ পর্যন্ত প্রেক্ষাপটে।
অসাধারন লেখনি। অতি জটিল বিষয় কে তিনি আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করেছেন। যারা মুহাম্মদ ( সঃ ) এর অফাত পরবর্তী সময় কি ঘটেছিল জানতে চান। ঐ সময়ের উত্তাল আরবীয় সমাজ কে বুঝতে চান। শিয়া, খারেজি কোথা থেকে এল ? পরিস্কার ধারনা পেতে চান। তাহলে বইটি পড়তে পারেন।
অনুবাদক Abdullah Ibn Mahmud অনুবাদ করেছেন সাবলীল ভাষায়। সেই সাথে বুদ্ধিমত্তার ছাপ রেখেছেন নোট যোগ করে। এক কথায় অসাধারন।
আফটার দ্যা প্রফেট বইয়ের অংশ
” কারবালার ঘটনা শেষে অর্থাৎ হুসাইন ( রাঃ ) এর শাহাদত বরণ করবার পর বেহেশত থেকে দুটি পায়রা নেমে এলো, সেগুলো হুসাইন ( রাঃ ) রক্তে ডানা ভিজিয়ে উড়ে গেল মক্কা মদিনার দিকে। সেখানে লোকে এই পায়রা দেখে জানলো কারবালায় কি হয়েছে। “
” উসমান ( রাঃ ) এর আমলে আরব সাম্রাজ্য আরও বিস্তৃত হল – পশ্চিমে মিসর, পূর্বে পারস্য, উত্তরে কাস্পিয়ান সাগর পর্যন্ত। আর সেই সাথে বাড়তে লাগল ধন সম্পদ। তবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হল যে, যোগ্য লোকের বদলে তিনি আত্মীয় স্বজনদের সরকারি পদে বসাচ্ছেন। আর নতুন নিয়োগ প্রাপ্তরা নাকি দুর্নীতিগ্রস্ত। কষ্টের কাজের স্বীকৃতি না পেয়ে এক উচ্চ পদস্থ জেনারেল তো বলেই বসলেন, ” আমি কি গরুর সিং ধরে থাকব, আর অন্য লোকে দুধ দোহন করে নিয়ে যাবে।”
আফটার দ্যা প্রফেট বইয়ের চুম্বক
” সৎ ভাইকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে ফিরিয়ে আনলেই চলবে না। আরব, মিসর, ইরাক থেকে ওয়ালিদের কঠিন চেয়ে চিঠি আসছে। ওদিকে আয়েশা ( রাঃ ) এর দাবী তো আছেই। সমস্ত উম্মুল মুমিনিনের পক্ষে তিনি দাবী জানিয়েছেন যেন মুসলিমরা এমন দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাড়ায় শাস্তির দাবিতে। ফলাফলে তিনি নিজেই চমকে গেলেন। কয়েক সপ্তাহের মাঝে তিনটি সশস্ত্র বাহিনী চলে এলো তিন সেনা ছাউনি শহর থেকে। ইরাকের কুফা ও বসরা থেকে দুটো, আর দক্ষিনে মিসরের ফুস্তাত থেকে আরেক টি, এ শহরই পরবর্তীতে আমরা চিনি কায়রো হিসেবে।
এরা কিন্ত ‘প্রাদেশিক’ ইতর না। বরং এরা মুসলিম বাহিনীর সেরা সৈন্য। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন যারা তারা অভিজাত মুসলিম।
তাদের দাবী একদম সোজা সাপটা – হয় উসমান ( রাঃ ) অভিযোগের যথাযথ শাস্তি নেবেন, নয়তো তিনি পদত্যাগ করবেন।”
আফটার দ্যা প্রফেট বই পড়তে থাকুন
” দুই বাহিনী একে অন্যের সামনে দাড়িয়ে তরবারিতে শান দিতে দিতে ভাবতে লাগল, আসলেই কি এই জঘন্য কাজে লিপ্ত হওয়ার দরকার আছে ? মুসলিমের রক্ত ঝরানো ফিতনার কি প্রয়োজন আছে ? ‘ তালহা ও জুবায়ের আলীর কাছে আনুগত্য প্রকাশ করেছিলেন, একজন প্রবীণ বসরা বাসী যোদ্ধা বললেন, আর এখন তারা এসেছেন বিদ্রোহ করতে, উসমানের রক্তের বদলা নিতে। তারাই তো আমাদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টিকারী।
যুদ্ধ এড়াবার কোন রাস্তা নেই, আরেক জন বললেন। এই যুদ্ধ যদি না হয়, তাহলে ফোরাত নদীও আজ থেকে উল্টো বওয়া শুরু করবে। মানুষ কি কেবল ‘ আমরা ঈমান আনলাম’ বললেই ছাড়া পেয়ে যাবে, তাদের কি আর পরীক্ষা করা হবে না। “
আফটার দ্যা প্রফেট বইয়ের আলোচনা
আমাদের সমাজে সবাই রাজনীতি বোঝেন। চা দোকানদার থেকে ইউনিভার্সিটি শিক্ষক। গরীব থেকে ধনী সবাই রাজনীতির বিশেষজ্ঞ। দেশীয় বা আন্তর্জাতিক যে কোন বিষয়ে মন্তব্য চাইলে সবাই ব্যাখা দিতে পারদর্শী।
বইটি পড়ার পরে আপনি রাজনৈতিক মন্তব্য করবেন খুবই ভেবে চিন্তে। রাজনীতি কত জটিল আর কঠিন বিষয় জানতে পারবেন আফটার দ্যা প্রফেট বইটিতে। জানবেন রাজনীতির জটিল চক্রে কতটা অসহায় ছিলেন হজরত ওসমান ( রাঃ )। রাজনীতির আবর্তে প্রতিটি দিন কত কঠিন ছিল হজরত আলীর ( রাঃ ) জন্য।
কে হবেন খলিফা ?
হজরত হাসান ( রাঃ ) নাকি মুয়াবিয়া ( রাঃ )
বিতর্কে যখন তুঙ্গে। ইরাকিরা জড়ো হল মসজিদে। তারা হজরত হাসান ( রাঃ ) এর সমর্থক। তাদের দাবি হজরত হাসান ( রাঃ ) খলিফা হবেন। হজরত হাসান ( রাঃ ) শান্তি চান। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। মিম্বরে উঠে গেলেন। বক্তব্য রাখলেন। বললেন ” মুয়াবিয়া ( রাঃ এর সাথে যুদ্ধ চান না শান্তি চুক্তি চান।
ক্ষেপে গেল জনতা। যোদ্ধারা চিৎকার করে বলল ” আপনি দুর্বল, বিভ্রান্ত। ” একজন তো ক্ষেপে চাকু চালিয়ে দিলেন। মেঝেতে পরে গেলেন হজরত হাসান ( রাঃ )। কোপ লেগেছে উরুতে। রক্ত বের হল। আঘাত গুরুতর নয়।
বইটির পাতায় পাতায় এমন উত্তেজনাকর ঐতিহাসিক ঘটনার বর্ণনা। পড়া শুরু করলে থামতে পারবেন না।
যারা ক্ষমতায় আছেন তাদের জন্য আফটার দ্যা প্রফেট বইটি অবশ্য পাঠ্য।