অ্যাডাল্টরি এবং সুখের খোঁজ
লিন্ডা একেবারে হাফিয়ে উঠেছেন। জীবন কে মনে হচ্ছে বৈচিত্রহীন। অথচ কি নেই ? গাড়ি আছে, বাড়ি আছে, ভালো চাকরি আছে, অঢেল টাকা আছে, ফুটফুটে দুটো সন্তান আছে। আরও আছে একজন বিশ্বস্ত ভালো স্বামী। তাহলে আর কি চাই ! অপার সৌন্দর্যের দেশ সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে বাস করেন। যেখানে হাজারও মানুষ অবকাশ যাপনে আসেন বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে। বিশ্বের আন্তর্জাতিক মিটিং গুলো হয় এ শহরেই।
অ্যাডাল্টরি এবং আমাদের ভাবনা
আমাদের অনেকেই একটা ধারনা রাখি যে, টাকা পয়সা, গাড়ি বাড়ি, ভালো স্বামী বা স্ত্রী থাকলেই জীবনে সুখে থাকা যায়। আমাদের ধারনা পরিস্কার হবে পাওলো কোয়েল হোর লেখা এই উপন্যাস টি পড়লে। পাওলোর লেখায় বরাবরই মানুষের জীবনের গভীরতম দিক টি ফুটে উঠে। লেখকের লেখা মাক্তুব এবং আলকেমিষ্ট বই দুটো পড়ার সুযোগ আমার হয়েছে। সেই দুটো বইতেও বিষয় টি লক্ষ্য করেছি।
আধুনিক লাইফ স্টাইলে আমরা সবাই খুবই ব্যস্ত। আমরা কেউ কারও দিকে কোন খেয়াল করি না। পরস্পর দেখা হলে আমরা একজন আরেক জনের সাথে হাসি মুখে কথা বলি। কিন্ত সবার বুকের ভেতরেই আছে শূন্যতা। এই উপন্যাসে লেখক একজন ধনী লোকের স্ত্রীর পুরনো প্রেমিকের সাথে যোগাযোগ এবং পরকীয়ার কথা দারুন ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। যা আমাদের সমাজে অহরহ ঘটে চলেছে।
অ্যাডাল্টরি এবং সমাজের উঁচু শ্রেণী
উঁচু শ্রেণী শব্দটি এমন একদল ব্যক্তিকে বোঝায় যারা সমাজে সর্বোচ্চ স্থান এবং মর্যাদা দখল করে । এই ব্যক্তিদের সবচেয়ে ধনী হিসাবে বিবেচনা করা হয়। সামাজিক শ্রেণিবিন্যাসে শ্রমজীবী এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উপরে অবস্থান করে। তাদের সংসার জীবনে কি ঘটে ? সেটা আমাদের দেশের কোন লেখকের গল্প বা উপন্যাসে উঠে আসে না। তারা কেমন জীবনযাপন করেন আমরা সে সম্পর্কে অল্পই জানতে পারি। আবার প্রচুর গুজব প্রচলিত হয়। বিশেষ করে মিডিয়ার মানুষ হলে তো কথাই নেই। পাওলো কোয়েল হো দারুনভাবে তুলে ধরেছেন এলিট শ্রেণির যাপিত জীবন।
অ্যাডাল্টরি থেকে কিছু লেখা
লিন্ডা একটি সংবাদপত্র অফিসে চাকরি করেন। বেশ সম্মানের সাথে করেন। তার স্বামী দেশের ৩০০ ধনী ব্যাক্তিদের মধ্যে একজন। বিয়ের দশ বছর অতিবাহিত করেছেন তারা। লিন্ডার মনোজগতে চলছে নানান সমস্যা। তার পুরনো প্রেমিক জ্যকব একজন বড় রাজনীতিবিদ। জ্যাকব বিয়ে করেছেন একটি ধনী এবং নামকরা পরিবারে। লিন্ডার উপর দায়িত্ব পরে জ্যাকবের নির্বাচনপূর্ব একটি সাক্ষ্যাতকার নেয়ার। লিন্ডা জ্যাকবের অফিসে ঢুকেন।
জীবনে যারা সফল হতে চান তাদের জন্য অবশ্য পাঠ্য পৃথিবীব্যাপী বেস্ট সেলার বই ” দি আলকেমিস্ট ” বইটি।
সাক্ষ্যাতকারের এক পর্যায়ে তারা নস্টালজিক হয়। জ্যাকব এগিয়ে যায় দরজার দিকে। ফিরে আসে, চুমু খায় লিন্ডা কে। লিন্ডা জ্যাকব কে মনে করিয়ে দেয়, এটা তো অনেক আগের বিষয়। আমি ভালবাসতাম জ্যাকব কে, কিন্ত তুমি এখন একজম অধ্যাপিকার স্বামী। আর আমিও একজন সাংসারিক মহিলা যার একজন বিত্তবান ও কর্মঠ স্বামী আছে।
লিন্ডা তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। মনে করিয়ে দেয় আমরা এখন আর ছোট্টটি নেই। তবে বিষয় টা বেশ ভালো লাগে লিন্ডার । কল্পনায় হারিয়ে যায়। আমরা অ্যাডাল্টরির হুবুহু লেখায় পড়ি ………
আমি একটা জাপানিজ রেস্টুরেন্ট কল্পনা করলাম এবং অবৈধ সুখ অনুভুত হল। আমি নিয়ম ভাঙতে পেরেছি এবং সারা পৃথিবী আমার দিকে উপুর হয়ে চেয়ে নেই। এমন সুখ আমি অনেক দিন পাইনি। আমার খুব ভালো লাগছিল। সাহসী আর সুখী মনে হল। তারপর স্কুলে পড়ার সময়ের আমার একটা সপ্ন পুরনের জন্য এগিয়ে গেলাম।
হাঁটু গেড়ে বসলাম। তারপর জিপার নামিয়ে মুখের ভিতর পুরে নিলাম তার শিশ্ন। সে আমার চুল মুঠো করে ধরল এবং মাথার ছন্দ নিয়ন্ত্রন করছিল। এক মিনিটেরও কম সময়ে সে ফুরিয়ে গেল। ” ঈশ্বর, এত ভাললাগা”। আমি কিছু বললাম না। কারন যদিও সে দ্রুতই নিস্তেজ হয়ে গেল তবু তারচেয়ে মুহূর্তটা আমার জন্য ছিল বেশি সুখের।
বই পড়লে মস্তিস্কে কি পরিবর্তন হয় জেনে নিন। বলছেন ফিলোসফার আহসান আজিজ সরকার।
অ্যাডাল্টরি উপন্যাসে লেখক তার নিজস্ব দক্ষতায় ফুটিয়ে তুলেছেন, উঁচু শ্রেণির যৌন জীবন। এখানে তারা কতটা জটিল, কতটা দ্বিধাহীন। অ্যাডাল্টরি পড়লে আরও জানতে পারবেন রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ শুধু আমাদের দেশেই নয়, পৃথিবীর উন্নত দেশেও ব্যাপকতর। ওসব দেশেও রাজনীতিবিদরা নিজেদের পজিশন ধরে রাখতে মুখোশ পড়েন। নিজেদের ব্যাক্তিগত অপকর্ম যেন প্রকাশ না পায় সেদিকে সচেষ্ট থাকেন।
অ্যাডাল্টরি উপন্যাসটি অনুবাদ করেছেন কবির কল্লোল। তিনি খুব ভালো অনুবাদ করেছেন তা বলা যাবে না। অনুবাদক আরও যত্ন নিয়ে অনুবাদ করতে পারতেন। সে ক্ষেত্রে পাঠক আরও অনেক বেশি হৃদয়ঙ্গম করতে পারতেন। তবে যাই হোক, ধীরে ধীরে পড়া শুরু করবেন। কাহিনীর গভীরতা আছে একারনে পড়তে ভালো লাগবে।
সেলিম হোসেন – তাং ১৩/১০/২০২৪ ইং – ছবিগুলো প্রতীকী